এ কে এম শামসুদ্দিন
ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর অনেকেই অনুমান করছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার পথ বোধ হয় খুলে গেল। এমন অনুমান করার কারণও আছে। কিছুদিন ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে যে ইতিবাচক কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে মানুষের মনে এমন অনুমান হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সর্বশেষ যে খবর পাওয়া গেছে, তাতে এ বিষয়ে আমাদের কিছুটা আশান্বিত করে বৈকি! আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি হংকংভিত্তিক সংবাদপত্র মর্নিং পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। জেলেনস্কি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের আশাও ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টাও নাকি করেছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেটি নাকি আর হয়ে ওঠেনি। জেলেনস্কি মনে করেন, চীন খুব শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র। একই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও চীন শক্তিশালী। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্কও আছে। অতএব চলমান যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার ওপর তাদের অতিমাত্রায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব কাজে লাগানোর জন্য চীনের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। অপরদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে দেখা করে এসে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ক্রেমলিন সমঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান চায়, এটা একটা সুখবর। এ ক্ষেত্রে শস্য রপ্তানি চুক্তি প্রাথমিক সফলতা হয়তো শিগগিরই এটি যুদ্ধবিরতিতে গড়াতে পারে।’
প্রশ্ন হচ্ছে দীর্ঘ পাঁচ মাস যুদ্ধ পার হওয়ার পর জেলেনস্কির এই উপলব্ধি কেন হলো? যুদ্ধ শুরুর পর ‘তিনি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করে সুযোগ পাননি’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ জাগতেই পারে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জেলেনস্কি ইউরোপ-আমেরিকার বহু দেশের পার্লামেন্টে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন, সে খবর যদি পশ্চিমা প্রভাবিত বহু সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হতে পারে; তাহলে তিনি এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন—সে খবর বিশ্ব মিডিয়ায় একবারের জন্যও প্রকাশিত হলো না; তা বিশ্বাস করতে খটকা লাগে কি? জেলেনস্কির প্রকাশ্যে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য ও মনোভাব বিশ্লেষণ করলে এবং যুদ্ধের পরপর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সঙ্গে ইউক্রেনের যে গভীর যোগাযোগ চলছিল, সে কথা বিবেচনা করলে সহজে উপসংহারে আসা যায় যে ওই মুহূর্তে জেলেনস্কি পশ্চিমাদের খেপিয়ে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, সে অবস্থানে তিনি তখন ছিলেন না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বিভিন্ন মিডিয়ার এযাবৎ যেসব বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়েও কিন্তু বিভ্রান্তি আছে। গত ২২ জুলাই মার্কিন গণমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে যে কয়টি অঞ্চল হারিয়েছে, সেসব অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির প্রশ্নই আসে না। তিনি যোগ করেন, ‘হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার না করে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কেবল যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে। আমরা বিশ্বাস করি, আগে রাশিয়ার কাছে হারানো অঞ্চল মুক্ত করতে হবে। তারপর ঠিক করব কীভাবে আগামী দিনে আমরা বাঁচতে পারি।’ এখানে আরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়। জেলেনস্কি যে যুদ্ধবিরতি বন্ধে চীনের কাছে সাহায্য চেয়েছেন, তা কি কোনো শর্তযুক্ত? রাশিয়াকে কি দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে? চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যদি জেলেনস্কির সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়, তাহলে তিনি কি তাঁর এই দাবির কথা উল্লেখ করেই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার জন্য অনুরোধ করবেন? মর্নিং পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য তা স্পষ্ট করেননি।
বাস্তব চিত্র হলো, পাঁচ মাসেরও অধিক সময় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে ইউক্রেন বর্তমানে এমন এক অবস্থানে চলে এসেছে যে আগামী দিনগুলোতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে পড়বে। রাশিয়া এযাবৎ ইউক্রেনের ২ হাজার ৬১০টি শহর দখল করে নিয়েছে। তারা দনবাসে তাদের অবস্থান সুসংহত করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, সেখানকার শহরগুলোর পুনর্গঠনের সুবিধার্থে রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানীয় সরকারকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে পাঁচ মাসের যুদ্ধে ইউক্রেন বাহিনীর সামনের সারির প্রায় ৮০ শতাংশ যোদ্ধা নিহত ও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইউক্রেন বাহিনীর অবস্থা এমন হয়ে পড়েছে যে নতুন করে সৈনিক রিক্রুট করে তাদের জনবল বৃদ্ধি করার সুযোগও কমে এসেছে। শুরুর দিকে ইউক্রেনের যুবকেরা অস্ত্র হাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন বলে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখিয়েছিলেন, সেই উৎসাহে এখন ভাটা পড়েছে।
বর্তমানে ওই সব যুবকের মধ্যে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের উৎসাহ কম দেখা যাচ্ছে। তাঁদের অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। নতুন কিছু সৈনিক রিক্রুট করা হলেও তাদের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে মূল যোদ্ধাদের মতো দক্ষ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। অতএব যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দেওয়া ভারী অস্ত্রের যতই সাহায্য আসুক না কেন, এসব অস্ত্র পরিচালনা করার মতো দক্ষ জনবলের ঘাটতি সম্ভবত রয়েই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম বা ‘হিমার্স’ ব্যবহার করে এত দিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল ইউক্রেন; সম্প্রতি রাশিয়া সেসব উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে। হিমার্স ছিল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী অস্ত্র। যদিও পেন্টগন রাশিয়ার এ দাবি সত্য নয় বলে বিবৃতি দিয়েছে, তবে ইউক্রেন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। এত দিন রাশিয়ার যুদ্ধের সাফল্যের অনেক দাবিই ইউক্রেন সরাসরি অস্বীকার করলেও হিমার্স ধ্বংসের ব্যাপারে নীরব থাকায় বোঝা যাচ্ছে, রাশিয়ার দাবিটি অমূলক নয়। হিমার্স যে গুদামে রাখা হয়েছিল, সেই গুদাম বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে।
রাশিয়া ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ায় পুতিনের ঘনিষ্ঠ শ্রোয়েডার পাঁচ মাসের অধিক সময় ধরে চলা সংঘর্ষকে যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন। ৩ আগস্ট লুক্সেমবার্গভিত্তিক আরটিএল টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশা ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি তিনি যখন পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন উপলব্ধি করেছেন যে মস্কো সমঝোতার মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান চায়। এখানে বলে রাখা ভালো, গত ২২ জুলাই তুরস্কের মধ্যস্থতায় জাতিসংঘের উপস্থিতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য পরিবহনের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির পর ইউক্রেনের ওদেসাবন্দর থেকে ২৬ হাজার টনের বেশি ভুট্টা নিয়ে প্রথম জাহাজ ১ আগস্ট লেবাননের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এখন থেকে ইউক্রেনের চেকনোমোরস্ক, ওদেসা ও পিভদেন্নি বন্দর থেকে প্রতিদিন খাদ্যশস্যবাহী তিনটি করে জাহাজ ছেড়ে যাবে। ভালো খবর হলো, চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই বিশ্ববাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। বিশ্বে মোট গম রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশই রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে হয়ে থাকে।
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে শ্রোয়েডারের পর্যবেক্ষণ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি বলেছেন, মস্কো ‘সমঝোতা’র মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান চায়। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়ার জনবল ও সামরিক সরঞ্জামাদিও কম খরচ হয়নি। রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো আছে, তা বলা যাবে না। কাজেই রাশিয়া যুদ্ধবিরতির পক্ষে মত দেবে, সেটা অস্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন উঠতেই পারে, মস্কো এখানে সমঝোতা বলতে কী বুঝিয়েছে? ইউক্রেনের ব্যাপারে রাশিয়ার আগে যে কতগুলো শর্ত ছিল, সেগুলো থেকে কি তারা সরে আসবে? শর্তগুলো ছিল: এক. ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হওয়া থেকে সরে আসতে হবে। দুই. দোনেস্ক ও লুহানস্কর স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিতে হবে। তিন. ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো চার. ইউক্রেন সরকারের পরিবর্তন।
এখানে বলা ভালো, গত ২৪ জুলাই মিসরে এক কূটনৈতিক সফরে গিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এক বক্তব্যে আবারও বলেছেন, ‘ইউক্রেনের ইতিহাসবিরোধী সরকারের হাত থেকে নিজেদের মুক্ত করতে দেশটির জনগণকে আমরা অবশ্যই সহায়তা করব। এ জন্য ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তন চায় মস্কো। রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণ ভবিষ্যতে “একসঙ্গে” বসবাস করবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পক্ষে কি ৪ নম্বর শর্ত মানা সম্ভব? তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, রাশিয়া ২ ও ৪ নম্বর শর্ত ছেড়ে দিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে আপস-মীমাংসায় গেল। ইউক্রেনও তা মেনে নিল। তারপরও কি জেলেনস্কির পক্ষে সম্ভব হবে মস্কোর সঙ্গে আপস করে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া? তিনি কি পারবেন এত দিন যে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা আনুমানিক প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য দিয়ে রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে এসেছে, তাদের উপেক্ষা করতে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিশ্বরাজনীতি ও যুদ্ধের বর্তমান বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শিগগিরই যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়।
ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর অনেকেই অনুমান করছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার পথ বোধ হয় খুলে গেল। এমন অনুমান করার কারণও আছে। কিছুদিন ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে যে ইতিবাচক কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে মানুষের মনে এমন অনুমান হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সর্বশেষ যে খবর পাওয়া গেছে, তাতে এ বিষয়ে আমাদের কিছুটা আশান্বিত করে বৈকি! আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি হংকংভিত্তিক সংবাদপত্র মর্নিং পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। জেলেনস্কি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের আশাও ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টাও নাকি করেছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেটি নাকি আর হয়ে ওঠেনি। জেলেনস্কি মনে করেন, চীন খুব শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র। একই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও চীন শক্তিশালী। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্কও আছে। অতএব চলমান যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার ওপর তাদের অতিমাত্রায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব কাজে লাগানোর জন্য চীনের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। অপরদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে দেখা করে এসে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ক্রেমলিন সমঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান চায়, এটা একটা সুখবর। এ ক্ষেত্রে শস্য রপ্তানি চুক্তি প্রাথমিক সফলতা হয়তো শিগগিরই এটি যুদ্ধবিরতিতে গড়াতে পারে।’
প্রশ্ন হচ্ছে দীর্ঘ পাঁচ মাস যুদ্ধ পার হওয়ার পর জেলেনস্কির এই উপলব্ধি কেন হলো? যুদ্ধ শুরুর পর ‘তিনি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করে সুযোগ পাননি’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ জাগতেই পারে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জেলেনস্কি ইউরোপ-আমেরিকার বহু দেশের পার্লামেন্টে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন, সে খবর যদি পশ্চিমা প্রভাবিত বহু সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হতে পারে; তাহলে তিনি এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন—সে খবর বিশ্ব মিডিয়ায় একবারের জন্যও প্রকাশিত হলো না; তা বিশ্বাস করতে খটকা লাগে কি? জেলেনস্কির প্রকাশ্যে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য ও মনোভাব বিশ্লেষণ করলে এবং যুদ্ধের পরপর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সঙ্গে ইউক্রেনের যে গভীর যোগাযোগ চলছিল, সে কথা বিবেচনা করলে সহজে উপসংহারে আসা যায় যে ওই মুহূর্তে জেলেনস্কি পশ্চিমাদের খেপিয়ে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, সে অবস্থানে তিনি তখন ছিলেন না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বিভিন্ন মিডিয়ার এযাবৎ যেসব বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়েও কিন্তু বিভ্রান্তি আছে। গত ২২ জুলাই মার্কিন গণমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে যে কয়টি অঞ্চল হারিয়েছে, সেসব অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির প্রশ্নই আসে না। তিনি যোগ করেন, ‘হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার না করে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কেবল যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে। আমরা বিশ্বাস করি, আগে রাশিয়ার কাছে হারানো অঞ্চল মুক্ত করতে হবে। তারপর ঠিক করব কীভাবে আগামী দিনে আমরা বাঁচতে পারি।’ এখানে আরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়। জেলেনস্কি যে যুদ্ধবিরতি বন্ধে চীনের কাছে সাহায্য চেয়েছেন, তা কি কোনো শর্তযুক্ত? রাশিয়াকে কি দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে? চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যদি জেলেনস্কির সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়, তাহলে তিনি কি তাঁর এই দাবির কথা উল্লেখ করেই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার জন্য অনুরোধ করবেন? মর্নিং পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য তা স্পষ্ট করেননি।
বাস্তব চিত্র হলো, পাঁচ মাসেরও অধিক সময় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে ইউক্রেন বর্তমানে এমন এক অবস্থানে চলে এসেছে যে আগামী দিনগুলোতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে পড়বে। রাশিয়া এযাবৎ ইউক্রেনের ২ হাজার ৬১০টি শহর দখল করে নিয়েছে। তারা দনবাসে তাদের অবস্থান সুসংহত করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, সেখানকার শহরগুলোর পুনর্গঠনের সুবিধার্থে রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানীয় সরকারকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে পাঁচ মাসের যুদ্ধে ইউক্রেন বাহিনীর সামনের সারির প্রায় ৮০ শতাংশ যোদ্ধা নিহত ও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইউক্রেন বাহিনীর অবস্থা এমন হয়ে পড়েছে যে নতুন করে সৈনিক রিক্রুট করে তাদের জনবল বৃদ্ধি করার সুযোগও কমে এসেছে। শুরুর দিকে ইউক্রেনের যুবকেরা অস্ত্র হাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন বলে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখিয়েছিলেন, সেই উৎসাহে এখন ভাটা পড়েছে।
বর্তমানে ওই সব যুবকের মধ্যে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের উৎসাহ কম দেখা যাচ্ছে। তাঁদের অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। নতুন কিছু সৈনিক রিক্রুট করা হলেও তাদের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে মূল যোদ্ধাদের মতো দক্ষ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। অতএব যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দেওয়া ভারী অস্ত্রের যতই সাহায্য আসুক না কেন, এসব অস্ত্র পরিচালনা করার মতো দক্ষ জনবলের ঘাটতি সম্ভবত রয়েই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম বা ‘হিমার্স’ ব্যবহার করে এত দিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল ইউক্রেন; সম্প্রতি রাশিয়া সেসব উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে। হিমার্স ছিল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী অস্ত্র। যদিও পেন্টগন রাশিয়ার এ দাবি সত্য নয় বলে বিবৃতি দিয়েছে, তবে ইউক্রেন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। এত দিন রাশিয়ার যুদ্ধের সাফল্যের অনেক দাবিই ইউক্রেন সরাসরি অস্বীকার করলেও হিমার্স ধ্বংসের ব্যাপারে নীরব থাকায় বোঝা যাচ্ছে, রাশিয়ার দাবিটি অমূলক নয়। হিমার্স যে গুদামে রাখা হয়েছিল, সেই গুদাম বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে।
রাশিয়া ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ায় পুতিনের ঘনিষ্ঠ শ্রোয়েডার পাঁচ মাসের অধিক সময় ধরে চলা সংঘর্ষকে যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন। ৩ আগস্ট লুক্সেমবার্গভিত্তিক আরটিএল টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশা ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি তিনি যখন পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন উপলব্ধি করেছেন যে মস্কো সমঝোতার মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান চায়। এখানে বলে রাখা ভালো, গত ২২ জুলাই তুরস্কের মধ্যস্থতায় জাতিসংঘের উপস্থিতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য পরিবহনের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির পর ইউক্রেনের ওদেসাবন্দর থেকে ২৬ হাজার টনের বেশি ভুট্টা নিয়ে প্রথম জাহাজ ১ আগস্ট লেবাননের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এখন থেকে ইউক্রেনের চেকনোমোরস্ক, ওদেসা ও পিভদেন্নি বন্দর থেকে প্রতিদিন খাদ্যশস্যবাহী তিনটি করে জাহাজ ছেড়ে যাবে। ভালো খবর হলো, চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই বিশ্ববাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। বিশ্বে মোট গম রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশই রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে হয়ে থাকে।
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে শ্রোয়েডারের পর্যবেক্ষণ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি বলেছেন, মস্কো ‘সমঝোতা’র মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান চায়। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়ার জনবল ও সামরিক সরঞ্জামাদিও কম খরচ হয়নি। রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো আছে, তা বলা যাবে না। কাজেই রাশিয়া যুদ্ধবিরতির পক্ষে মত দেবে, সেটা অস্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন উঠতেই পারে, মস্কো এখানে সমঝোতা বলতে কী বুঝিয়েছে? ইউক্রেনের ব্যাপারে রাশিয়ার আগে যে কতগুলো শর্ত ছিল, সেগুলো থেকে কি তারা সরে আসবে? শর্তগুলো ছিল: এক. ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হওয়া থেকে সরে আসতে হবে। দুই. দোনেস্ক ও লুহানস্কর স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিতে হবে। তিন. ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো চার. ইউক্রেন সরকারের পরিবর্তন।
এখানে বলা ভালো, গত ২৪ জুলাই মিসরে এক কূটনৈতিক সফরে গিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এক বক্তব্যে আবারও বলেছেন, ‘ইউক্রেনের ইতিহাসবিরোধী সরকারের হাত থেকে নিজেদের মুক্ত করতে দেশটির জনগণকে আমরা অবশ্যই সহায়তা করব। এ জন্য ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তন চায় মস্কো। রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণ ভবিষ্যতে “একসঙ্গে” বসবাস করবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পক্ষে কি ৪ নম্বর শর্ত মানা সম্ভব? তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, রাশিয়া ২ ও ৪ নম্বর শর্ত ছেড়ে দিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে আপস-মীমাংসায় গেল। ইউক্রেনও তা মেনে নিল। তারপরও কি জেলেনস্কির পক্ষে সম্ভব হবে মস্কোর সঙ্গে আপস করে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া? তিনি কি পারবেন এত দিন যে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা আনুমানিক প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য দিয়ে রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে এসেছে, তাদের উপেক্ষা করতে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিশ্বরাজনীতি ও যুদ্ধের বর্তমান বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শিগগিরই যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে