শাইখ সিরাজ
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রায় ৪০ বছর বাংলাদেশের কৃষি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে মনে হয়েছে, এই সময়ে এসে কৃষি দারুণ অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু মূল স্রোত থেকে অনেক পিছিয়ে আছেন আমাদের চরের কৃষকেরা। তাঁদের মূল স্রোতের সঙ্গে একীভূত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়নযাত্রা সফল হবে না।
অসংখ্য নদ-নদীবেষ্টিত বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার বড় একটি অংশ চরভূমি হিসেবে পরিচিত। যার বেশির ভাগই মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন। নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে অল্প কিছুসংখ্যক চর এখন মূলভূমির সঙ্গেও যুক্ত। বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ১০ শতাংশ চরভূমি। দেশের প্রায় ৩২টি জেলার ১০০ উপজেলার অংশবিশেষ জুড়ে বিস্তৃত এই চরাঞ্চল। মূলভূমির সঙ্গে যুক্ত চর, দ্বীপচর, উপকূলীয় চর, অস্থায়ী চর—সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস এখন এসব চর এলাকায়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ-ঝুঁকির দেশ হিসেবে পরিগণিত। তীব্র নদীভাঙন, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করে চরের মানুষ বেঁচে থাকে। প্রতিবছর গড়ে ৫০ হাজার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়ে। নদীবাহিত এ দেশের চরাঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠী এই দুর্যোগের প্রথম ও প্রধান শিকার।
মনে পড়ছে ২০০৪ সালের নভেম্বরে গিয়েছিলাম সিরাজগঞ্জের কাওয়াখোলার চরে। যমুনা পাড়ি দিয়ে অনেকটাই ভেতরে। যেতে যেতে যমুনার শাখা নদীগুলোর ভাঙন লক্ষ করছিলাম। উঁচু উঁচু বালুর পাড়গুলো যেভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তাতে হাজারো মানুষের বাড়িঘর, জমিজিরাত, সাজানো সংসার নিমেষেই নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। ট্রলার থামিয়ে দক্ষিণ কাওয়াখোলার চরে নামলাম। নদীভাঙনের প্রবণতা সেখানে তখন অনেক বেশি ছিল। পুরুষেরা ঘরবাড়ি খুলে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত। প্রতিবেদনের জন্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েও ব্যর্থ হলাম। দম ফেলার ফুরসত নেই। খানিকটা এগিয়ে যেতেই লক্ষ করলাম, এক গৃহিণী তখনো পাকসাক করে যাচ্ছেন। দুটো চিত্রই বিপরীতমুখী। তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, ‘নদীর ভাঙন তো আপনাদের উঠোনে চলে এসেছে, আপনি এখনো খাবার পাকাচ্ছেন?’
এমন এক অদ্ভুত উত্তর দিলেন তিনি, যার জন্য আমি বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলাম না। বললেন, ‘এ তো পত্তেকদিনই ভাঙে, যেমন পত্তেকদিনই খাবার খাওয়া লাগে।দূরে গিয়ে আবার ঘর বানব, আবার ভাঙব, আবার ঘর তুইলব, এই যমুনার সাথে যুদ্ধ কইরা টিকা আছি।’
আমি কাছে গিয়ে বসতে চাইলে আমাকে নিজের পিঁড়িটি এগিয়ে দিলেন। বসতে বিব্রত হলাম। ভাঙন এতই কাছাকাছি, যেকোনো মুহূর্তে তাঁর পাকের ঘরটুকুকে গ্রাস করবে। কিন্তু তিনি এত স্বাভাবিক আচরণ করছেন, দেখে বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘চাচি, এযাবৎ কয়বার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন?’
উত্তরে বললেন, ‘গুনি নাইরে বাপ! ৬০-৭০ বার তো অইবই।’
পাশে ঘরের বেড়া খুলছিলেন তাঁর স্বামী। বলে উঠলেন, ‘কী কও! ১০০ বার তো অইবই ঘর ভাঙছে।’
এমন সময় উঠোনে দুজন পুরুষ এসে পৌঁছালেন, ঘরের মালসামাল নেওয়ার জন্য।
গৃহিণী তাঁদের বললেন, ‘সবাই খাইয়া নেও, মালসামাল সব পরে নিয়াম এক লগে।’
আমাদের উদ্দেশ করে বললেন, ‘আইসেন, আমাগরে সাথে বইয়েন।’
আমি তখন সাক্ষাৎকার ধারণ করছি। আমাদের সেই সময়ের চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক শাহ আলমগীর পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন। সেবার আলমগীরের খুব ইচ্ছা হয়েছিল আমার সঙ্গে আউটডোর ট্যুর করার।
আমাদের এই কার্যকলাপ, চরের মানুষদের জীবনের চিত্র কোনোটার সঙ্গেই আলমগীর পরিচিত ছিলেন না। সাক্ষাৎকার শেষে বিস্ময়ভরে আলমগীর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ কী দেখলাম, কী শুনলাম সিরাজ ভাই? একটা পরিবার নদীর ভাঙনে পড়ে ১০০ বার!’
২০০৪ সালের ধারণ করা প্রতিবেদন এটি। সেই থেকে চরের উন্নয়নের জন্য আমার অনুষ্ঠানে জোর তাগিদ দিতে শুরু করলাম।
কি কাছের, কি দূরের—কোনো চরেই বিন্দুমাত্র নাগরিক সুবিধা নেই। শিক্ষা আর স্বাস্থ্যব্যবস্থার কথা অনেক চরের মানুষ শোনেইনি। অসুস্থ হলে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়েই মৃত্যু ঘটে অনেকের। হাড় জিরজিরে পুষ্টিহীন জনসংখ্যা, খাদ্যাভাব যাদের নিত্যসঙ্গী। সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, কোনো বিভাগের অস্তিত্ব নেই যেখানে, দুর্গম বলে এনজিওরাও যায় না। বালুকাময় চরগুলোতে দু-চারটা বাদাম আর সামান্য আলুই তাদের সম্বল। নতুন ফসলের, নতুন প্রযুক্তির বিন্দুমাত্র ছোঁয়াও লাগেনি।
ধু ধু মরুভূমির মতো লাগে দেখতে। হাঁটতে হাঁটতে কাওয়াখোলা গঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছালাম। পাশের জমিতে কয়েকজন কৃষক কাজ করছেন। তাঁদের দিকে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী করছেন?’
‘কিচ্ছুই অয় না, সামান্য বাদাম লাগাইছি, তুলতে আছি।’
আরও কাছে গেলাম, সদ্য তোলা বাদামের কয়টা গাছ হাতে নিয়ে শিকড়ের সঙ্গে ঝুলে থাকা গুটিকয়েক বাদাম দেখে প্রশ্ন করলাম, ‘এত কম কেন?’
বললেন, ‘ও বালো (ভালো) বীজ নাই, তাই অয়-টয় না।’
একটা বাদাম ভেঙে তার ভেতরের বীজ বের করে বললাম, ‘আপনারাও কাছে আসেন, দেখেন মাত্র ছোট ছোট দুটো বিচি। এখনকার বাদাম অনেক বড় হয়।
একটার ভেতরে বড় বড় তিন-চারটা দানাও থাকে। সেগুলোর চাষ করতে পারেন না?’
বললেন, ‘আপনারা তো কৃষি অফিসার, আমাগোরে ভালো বীজ দেন, আমরাও করমু।’
জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনাদের এখানে কৃষি অফিস আছে? কৃষি বিভাগের লোকজন আসে?’
একজন বলে উঠলেন, ‘ও নামও হুনি নাই কোনো দিন!’
কাজ শেষ করে যখন সিরাজগঞ্জের দিকে ফিরলাম, তখন পড়ন্ত বিকেল। সবাই মোটামুটি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। আলমগীরকে সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ফেরদৌস রবিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘বস, কেমন লাগল ট্যুর?’ আলমগীর অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দিলেন, ‘মানুষের জীবনের এই দিকটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। এ আমার জন্য বড় একটা অভিজ্ঞতা।’
ক্যামেরাম্যান শহিদুল্লাহ টিটন মাঝে মাঝে নদীর দৃশ্য ধারণ করছেন। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ডোবার পথে। ট্রলারের শব্দ ছাড়া নেই কোনো কোলাহল। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া যাত্রীবোঝাই ট্রলারের শব্দে তন্দ্রা কাটে। আমরা ছয়জন যে যার মতো চুপচাপ বসে আছি আর ভাবছি, চরের মানুষগুলোর জীবন এতটাই সঙিন! আর আমি মনে মনে পণ করছি, চর নিয়ে আমার কাজ করা এই শুরু। এখন থেকে আমার অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনার, লেখালেখি, সব জায়গাতেই চরের উন্নতির জন্য কথা বলব।
সেই থেকে চেষ্টা করে আসছি চরের কৃষকের কথা তুলে ধরার। এ ছাড়া চরের মানুষের সার্বিক মানোন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ফলে চরের মানুষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ধু ধু বালুর চরে এখন উন্নতমানের ভুট্টা, মরিচ, কুমড়া, বাদামসহ নানা রকমের তরকারির চাষ হচ্ছে, যার সু-প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। চর এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার আরও অনেক সুযোগ রয়ে গেছে। সেই লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে চরের মানুষের মানোন্নয়নে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদানের জন্য খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা এবং তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর আমার ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর আয়োজনে চরের কৃষকদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা ছিল। এ ক্ষেত্রে আমাদের গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছে উন্নয়ন সংস্থা এমফরসি (মেকিং মার্কেটস ওয়ার্ক ফর দ্য চর)। কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেটে কৃষকদের যে দাবিগুলো উঠে এসেছে তার ভিত্তিতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হলো:
১. চরের মানুষের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়নে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন করা যেতে পারে (যেমন চর বোর্ড বা ফাউন্ডেশন)। চরের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে একটি যুগোপযোগী জাতীয় চর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে পার্বত্য এলাকাবহির্ভূত ১৬ উপজেলাকে হাওর, দ্বীপ ও চর উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করে, গেজেট জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে চরাঞ্চলের মাত্র তিনটি উপজেলা সরকারি বিশেষ সুযোগ-সুবিধার আওতায় এসেছে। চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো প্রশাসনিক ইউনিট বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী তালিকা প্রণয়ন করা হলে তা অধিক কার্যকর হবে।
২. চরের কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড বিতরণে বিশেষ কোটা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। চরে কৃষি প্রযুক্তির প্রসার ও আধুনিকীকরণে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান ও প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৩. চরাঞ্চলের জন্য উন্নত ও সহনশীল বীজ উৎপাদন, কৃষক পর্যায়ে বীজ সংরক্ষণসহ কৃষিপণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ, বাজারজাতকরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিপণন ও সংরক্ষণ (হিমাগার ও শস্যগুদাম ঋণ) ব্যবস্থাকরণ প্রয়োজন।
৪. দুর্যোগসহনশীল জীবিকায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. দুর্গম চরে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর (নারীকে অগ্রাধিকার দিয়ে) অধিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন ধরনের সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।
৬. চরের খাস বা পতিত জমি স্বল্প-দীর্ঘ মেয়াদের ভিত্তিতে স্থানীয় চরবাসীর মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়া যেতে পারে। চরের সাধারণ সম্পদ (চরের বালু, জমি, গাছ) ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।
৭. চরের প্রযুক্তিগত সেবা বৃদ্ধি এবং এবিষয়ক দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প গঠন করতে হবে।
৮. দুর্গম চরাঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে জোন বা এলাকাভিত্তিক আধুনিক বিশেষায়িত ক্লিনিক স্থাপন বা ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে পর্যাপ্ত লোকবল ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৯. চরের নারী ও শিশুদের পুষ্টির অধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
১০. চরের শিশুদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও প্রবীণদের বিনোদনের ব্যবস্থা এবং তাঁদের অভিজ্ঞতাপ্রসূত জ্ঞান কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া।
বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে চরের মানুষদের মূলস্রোতে আনতে পারলেই বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাবে কয়েক ধাপ।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রায় ৪০ বছর বাংলাদেশের কৃষি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে মনে হয়েছে, এই সময়ে এসে কৃষি দারুণ অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু মূল স্রোত থেকে অনেক পিছিয়ে আছেন আমাদের চরের কৃষকেরা। তাঁদের মূল স্রোতের সঙ্গে একীভূত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়নযাত্রা সফল হবে না।
অসংখ্য নদ-নদীবেষ্টিত বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার বড় একটি অংশ চরভূমি হিসেবে পরিচিত। যার বেশির ভাগই মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন। নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে অল্প কিছুসংখ্যক চর এখন মূলভূমির সঙ্গেও যুক্ত। বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ১০ শতাংশ চরভূমি। দেশের প্রায় ৩২টি জেলার ১০০ উপজেলার অংশবিশেষ জুড়ে বিস্তৃত এই চরাঞ্চল। মূলভূমির সঙ্গে যুক্ত চর, দ্বীপচর, উপকূলীয় চর, অস্থায়ী চর—সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস এখন এসব চর এলাকায়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ-ঝুঁকির দেশ হিসেবে পরিগণিত। তীব্র নদীভাঙন, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করে চরের মানুষ বেঁচে থাকে। প্রতিবছর গড়ে ৫০ হাজার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়ে। নদীবাহিত এ দেশের চরাঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠী এই দুর্যোগের প্রথম ও প্রধান শিকার।
মনে পড়ছে ২০০৪ সালের নভেম্বরে গিয়েছিলাম সিরাজগঞ্জের কাওয়াখোলার চরে। যমুনা পাড়ি দিয়ে অনেকটাই ভেতরে। যেতে যেতে যমুনার শাখা নদীগুলোর ভাঙন লক্ষ করছিলাম। উঁচু উঁচু বালুর পাড়গুলো যেভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তাতে হাজারো মানুষের বাড়িঘর, জমিজিরাত, সাজানো সংসার নিমেষেই নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। ট্রলার থামিয়ে দক্ষিণ কাওয়াখোলার চরে নামলাম। নদীভাঙনের প্রবণতা সেখানে তখন অনেক বেশি ছিল। পুরুষেরা ঘরবাড়ি খুলে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত। প্রতিবেদনের জন্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েও ব্যর্থ হলাম। দম ফেলার ফুরসত নেই। খানিকটা এগিয়ে যেতেই লক্ষ করলাম, এক গৃহিণী তখনো পাকসাক করে যাচ্ছেন। দুটো চিত্রই বিপরীতমুখী। তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, ‘নদীর ভাঙন তো আপনাদের উঠোনে চলে এসেছে, আপনি এখনো খাবার পাকাচ্ছেন?’
এমন এক অদ্ভুত উত্তর দিলেন তিনি, যার জন্য আমি বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলাম না। বললেন, ‘এ তো পত্তেকদিনই ভাঙে, যেমন পত্তেকদিনই খাবার খাওয়া লাগে।দূরে গিয়ে আবার ঘর বানব, আবার ভাঙব, আবার ঘর তুইলব, এই যমুনার সাথে যুদ্ধ কইরা টিকা আছি।’
আমি কাছে গিয়ে বসতে চাইলে আমাকে নিজের পিঁড়িটি এগিয়ে দিলেন। বসতে বিব্রত হলাম। ভাঙন এতই কাছাকাছি, যেকোনো মুহূর্তে তাঁর পাকের ঘরটুকুকে গ্রাস করবে। কিন্তু তিনি এত স্বাভাবিক আচরণ করছেন, দেখে বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘চাচি, এযাবৎ কয়বার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন?’
উত্তরে বললেন, ‘গুনি নাইরে বাপ! ৬০-৭০ বার তো অইবই।’
পাশে ঘরের বেড়া খুলছিলেন তাঁর স্বামী। বলে উঠলেন, ‘কী কও! ১০০ বার তো অইবই ঘর ভাঙছে।’
এমন সময় উঠোনে দুজন পুরুষ এসে পৌঁছালেন, ঘরের মালসামাল নেওয়ার জন্য।
গৃহিণী তাঁদের বললেন, ‘সবাই খাইয়া নেও, মালসামাল সব পরে নিয়াম এক লগে।’
আমাদের উদ্দেশ করে বললেন, ‘আইসেন, আমাগরে সাথে বইয়েন।’
আমি তখন সাক্ষাৎকার ধারণ করছি। আমাদের সেই সময়ের চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক শাহ আলমগীর পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন। সেবার আলমগীরের খুব ইচ্ছা হয়েছিল আমার সঙ্গে আউটডোর ট্যুর করার।
আমাদের এই কার্যকলাপ, চরের মানুষদের জীবনের চিত্র কোনোটার সঙ্গেই আলমগীর পরিচিত ছিলেন না। সাক্ষাৎকার শেষে বিস্ময়ভরে আলমগীর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ কী দেখলাম, কী শুনলাম সিরাজ ভাই? একটা পরিবার নদীর ভাঙনে পড়ে ১০০ বার!’
২০০৪ সালের ধারণ করা প্রতিবেদন এটি। সেই থেকে চরের উন্নয়নের জন্য আমার অনুষ্ঠানে জোর তাগিদ দিতে শুরু করলাম।
কি কাছের, কি দূরের—কোনো চরেই বিন্দুমাত্র নাগরিক সুবিধা নেই। শিক্ষা আর স্বাস্থ্যব্যবস্থার কথা অনেক চরের মানুষ শোনেইনি। অসুস্থ হলে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়েই মৃত্যু ঘটে অনেকের। হাড় জিরজিরে পুষ্টিহীন জনসংখ্যা, খাদ্যাভাব যাদের নিত্যসঙ্গী। সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, কোনো বিভাগের অস্তিত্ব নেই যেখানে, দুর্গম বলে এনজিওরাও যায় না। বালুকাময় চরগুলোতে দু-চারটা বাদাম আর সামান্য আলুই তাদের সম্বল। নতুন ফসলের, নতুন প্রযুক্তির বিন্দুমাত্র ছোঁয়াও লাগেনি।
ধু ধু মরুভূমির মতো লাগে দেখতে। হাঁটতে হাঁটতে কাওয়াখোলা গঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছালাম। পাশের জমিতে কয়েকজন কৃষক কাজ করছেন। তাঁদের দিকে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী করছেন?’
‘কিচ্ছুই অয় না, সামান্য বাদাম লাগাইছি, তুলতে আছি।’
আরও কাছে গেলাম, সদ্য তোলা বাদামের কয়টা গাছ হাতে নিয়ে শিকড়ের সঙ্গে ঝুলে থাকা গুটিকয়েক বাদাম দেখে প্রশ্ন করলাম, ‘এত কম কেন?’
বললেন, ‘ও বালো (ভালো) বীজ নাই, তাই অয়-টয় না।’
একটা বাদাম ভেঙে তার ভেতরের বীজ বের করে বললাম, ‘আপনারাও কাছে আসেন, দেখেন মাত্র ছোট ছোট দুটো বিচি। এখনকার বাদাম অনেক বড় হয়।
একটার ভেতরে বড় বড় তিন-চারটা দানাও থাকে। সেগুলোর চাষ করতে পারেন না?’
বললেন, ‘আপনারা তো কৃষি অফিসার, আমাগোরে ভালো বীজ দেন, আমরাও করমু।’
জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনাদের এখানে কৃষি অফিস আছে? কৃষি বিভাগের লোকজন আসে?’
একজন বলে উঠলেন, ‘ও নামও হুনি নাই কোনো দিন!’
কাজ শেষ করে যখন সিরাজগঞ্জের দিকে ফিরলাম, তখন পড়ন্ত বিকেল। সবাই মোটামুটি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। আলমগীরকে সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ফেরদৌস রবিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘বস, কেমন লাগল ট্যুর?’ আলমগীর অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দিলেন, ‘মানুষের জীবনের এই দিকটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। এ আমার জন্য বড় একটা অভিজ্ঞতা।’
ক্যামেরাম্যান শহিদুল্লাহ টিটন মাঝে মাঝে নদীর দৃশ্য ধারণ করছেন। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ডোবার পথে। ট্রলারের শব্দ ছাড়া নেই কোনো কোলাহল। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া যাত্রীবোঝাই ট্রলারের শব্দে তন্দ্রা কাটে। আমরা ছয়জন যে যার মতো চুপচাপ বসে আছি আর ভাবছি, চরের মানুষগুলোর জীবন এতটাই সঙিন! আর আমি মনে মনে পণ করছি, চর নিয়ে আমার কাজ করা এই শুরু। এখন থেকে আমার অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনার, লেখালেখি, সব জায়গাতেই চরের উন্নতির জন্য কথা বলব।
সেই থেকে চেষ্টা করে আসছি চরের কৃষকের কথা তুলে ধরার। এ ছাড়া চরের মানুষের সার্বিক মানোন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ফলে চরের মানুষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ধু ধু বালুর চরে এখন উন্নতমানের ভুট্টা, মরিচ, কুমড়া, বাদামসহ নানা রকমের তরকারির চাষ হচ্ছে, যার সু-প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। চর এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার আরও অনেক সুযোগ রয়ে গেছে। সেই লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে চরের মানুষের মানোন্নয়নে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদানের জন্য খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা এবং তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর আমার ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর আয়োজনে চরের কৃষকদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা ছিল। এ ক্ষেত্রে আমাদের গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছে উন্নয়ন সংস্থা এমফরসি (মেকিং মার্কেটস ওয়ার্ক ফর দ্য চর)। কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেটে কৃষকদের যে দাবিগুলো উঠে এসেছে তার ভিত্তিতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হলো:
১. চরের মানুষের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়নে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন করা যেতে পারে (যেমন চর বোর্ড বা ফাউন্ডেশন)। চরের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে একটি যুগোপযোগী জাতীয় চর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে পার্বত্য এলাকাবহির্ভূত ১৬ উপজেলাকে হাওর, দ্বীপ ও চর উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করে, গেজেট জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে চরাঞ্চলের মাত্র তিনটি উপজেলা সরকারি বিশেষ সুযোগ-সুবিধার আওতায় এসেছে। চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো প্রশাসনিক ইউনিট বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী তালিকা প্রণয়ন করা হলে তা অধিক কার্যকর হবে।
২. চরের কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড বিতরণে বিশেষ কোটা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। চরে কৃষি প্রযুক্তির প্রসার ও আধুনিকীকরণে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান ও প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৩. চরাঞ্চলের জন্য উন্নত ও সহনশীল বীজ উৎপাদন, কৃষক পর্যায়ে বীজ সংরক্ষণসহ কৃষিপণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ, বাজারজাতকরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিপণন ও সংরক্ষণ (হিমাগার ও শস্যগুদাম ঋণ) ব্যবস্থাকরণ প্রয়োজন।
৪. দুর্যোগসহনশীল জীবিকায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. দুর্গম চরে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর (নারীকে অগ্রাধিকার দিয়ে) অধিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন ধরনের সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।
৬. চরের খাস বা পতিত জমি স্বল্প-দীর্ঘ মেয়াদের ভিত্তিতে স্থানীয় চরবাসীর মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়া যেতে পারে। চরের সাধারণ সম্পদ (চরের বালু, জমি, গাছ) ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।
৭. চরের প্রযুক্তিগত সেবা বৃদ্ধি এবং এবিষয়ক দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প গঠন করতে হবে।
৮. দুর্গম চরাঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে জোন বা এলাকাভিত্তিক আধুনিক বিশেষায়িত ক্লিনিক স্থাপন বা ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে পর্যাপ্ত লোকবল ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৯. চরের নারী ও শিশুদের পুষ্টির অধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
১০. চরের শিশুদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও প্রবীণদের বিনোদনের ব্যবস্থা এবং তাঁদের অভিজ্ঞতাপ্রসূত জ্ঞান কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া।
বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে চরের মানুষদের মূলস্রোতে আনতে পারলেই বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাবে কয়েক ধাপ।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৫ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৯ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৯ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৯ দিন আগে