রাজশাহীতে রিকশা-অটোরিকশা ছিনতাইকারীচক্রের সদস্যদের হাতে প্রাণ যাচ্ছে চালকদের। বাদ পড়েননি অটোরিকশা গ্যারেজের নৈশপ্রহরীও। সম্প্রতি শুধু রাজশাহীতে এমন তিনটি ঘটনা ঘটেছে।

রাজশাহী মহানগর ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলছেন, চালকদের গলা কেটে রিকশা-অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ২০১৪-১৫ সালের দিকে বেশি ঘটত। তখন তাঁদের আন্দোলন-সংগ্রামে পুলিশি তৎপরতায় এসব কমে এসেছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। এ নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন।

নগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নগরীতে এখনো রিকশা-অটোরিকশা ছিনতাইয়ের সংঘবদ্ধ কোনো চক্রের সন্ধান মেলেনি। মূলত ছিঁচকে ছিনতাইকারীরা ঘটনাগুলো ঘটায়। তবে নগরীর সিটিহাট এলাকায় একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। তাঁরা অটোরিকশায় যাত্রীবেশে উঠে চালকদের সবকিছু কেড়ে নিতেন। পুলিশের তৎপরতায় চক্রটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে।

নগরীর শ্রীরামপুর এলাকার রিকশাচালক আবদুল কাদের (৫৫) দিনে গরু-ছাগল পালনে ব্যস্ত থাকতেন। আর সংসারে সচ্ছলতা আনতে সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতেন। গত বুধবার রাতে রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় তাঁকে গলা কেটে হত্যার পর রিকশাটি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় আবদুল কাদেরের ছেলে সাইফুল ইসলাম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। তবে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে এক অটোরিকশা চালককে হত্যার পর ব্যাটারি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এপ্রিলে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানা-পুলিশ। নগরীর বসরী এলাকার শমসের আলী (৪০) নামের ওই চালককে হত্যার পর লাশ ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। ভাড়ায় শহর থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হত্যা করে সংঘবদ্ধ চক্র।

এদিকে গত ২৯ আগস্ট রাতে নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় অটোরিকশার জন্য আনিসুর রহমান নারা (৭০) নামের গ্যারেজের এক নৈশপ্রহরীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। তারপর গ্যারেজ থেকে একটি অটোরিকশা চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে চুরি হওয়া অটোরিকশাটি।

রিকশা-অটোরিকশার চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩-১৫ সালের দিকে রাজশাহীতে অটোরিকশার জন্য চালককে হত্যার ঘটনা বেশি ঘটত। তারপর ঘটনাগুলো কমে আসে। তবে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালেও এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। গত বছর এ ধরনের ঘটনা কমেছিল। কিন্তু এখন আবার রিকশা-অটোরিকশার জন্য চালকদের প্রাণ যাচ্ছে।

নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি নগরজুড়ে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এতে অপরাধ অনেক কমেছে। তারপরও দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে।