আবেদনে ওষুধ মেলে

রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০৭: ৪৪
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১২: ২৪

শিশু সাইফের বাবা নেই। মা আনোয়ারা খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। গত মাসে সাইফ খুব অসুস্থ হলো। চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হলো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। কিন্তু ওষুধ কেনার টাকা নেই। ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক আনোয়ারাকে পাঠালেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের রোগী কল্যাণ সমিতিতে। একটা আবেদন করে সেখান থেকেই পাওয়া গেল প্রয়োজনীয় ওষুধ। কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে সাইফ বাড়ি ফিরে গেল।

রামেক হাসপাতালে সমাজসেবা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে রোগীদের এ রকম ওষুধ সেবা দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এমন আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি সামাজিক সহযোগিতাও করা হয়ে থাকে। হাসপাতালে রোগীদের ওয়ার্ড চিনিয়ে দেওয়া, টিকিট কাটতে সহায়তা কিংবা অন্যান্য দিকনির্দেশনা দেওয়া সামাজিক সহযোগিতার আওতায় ধরা হয়।

রোগীদের এমন সহযোগিতার জন্য হাসপাতালের বহির্বিভাগে পাশাপাশি দুটি কক্ষ নিয়ে একটি অফিসও রয়েছে। একটি কক্ষে বসেন সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান ও রোকসানা খাতুন। পাশের কক্ষটিতে চলে দাপ্তরিক কার্যক্রম। ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অসহায় যেসব রোগী চিকিৎসা করাতে অক্ষম কিংবা যার কোনো স্বজন নেই, তাদের ওষুধ কিনে দিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী কল্যাণ সমিতির চিরকুটে লিখে দেন। সেটি সমিতির কার্যালয়ে জমা দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হয়। এরপর সমাজসেবা কার্যালয়ে নিবন্ধিত একটি ওষুধের দোকান থেকে তা কিনে রোগীকে দেওয়া হয়। পরে মাস শেষে ওষুধের দাম পরিশোধ করা হয়।

রামেক হাসপাতালের এই কার্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করেন মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে তিন বছর আছি। এক দিনে সর্বোচ্চ ১৬ জনের আবেদন এসেছিল। সবাইকে ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। আবেদন করে কেউ ওষুধ পাননি, এ রকমটি আমি কখনো দেখিনি। যাঁর আবেদন আসে, তাঁকেই দেওয়া হয়। একজন রোগীকে আমরা সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকার ওষুধ কিনে দিতে পারি।’

কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৬ লাখ ২১ হাজার ৯০৭ টাকার ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৯২০ জন রোগীকে কিনে দেওয়া হয়েছে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪৯ টাকার ওষুধ। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে ৩৫৮ জন রোগীকে দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৭০ টাকার ওষুধ। এই তিন মাসে ৫৮০ জন রোগীকে সামাজিকভাবেও সহযোগিতা করা হয়েছে।

রোগী কল্যাণ সমিতি কার্যালয়ের সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান জানান, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের বরাদ্দ, আজীবন সদস্যদের অনুদান এবং জাকাত কিংবা অন্য কোনোভাবে পাওয়া সহযোগিতা থেকে রোগীদের এই ওষুধ সহায়তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁরা রোগীদের সামাজিক সহায়তাও করে থাকেন। তিনি জানান, কে এই সহায়তা পাওয়ার যোগ্য, সেটা ওয়ার্ডের চিকিৎসকই নির্ধারণ করে সুপারিশ করেন। এ পর্যন্ত তাঁদের অর্থের সংকট হয়নি। তাই কোনো আবেদন বাতিলও করা হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত