গৌতম রায়
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, তাদের শাসনকালে এই রাজ্যে বর্তমানে শাসকবিরোধী একজন নাগরিকও নিরাপদ নয়। সভা-সমিতি-পত্রপত্রিকায় সরকারের সমালোচনা দূরের কথা, চায়ের বৈঠকে সরকারবিরোধী কোনো কথা বললেও একজন অতি নিরীহ নাগরিককে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি ভারতে এখন সম্পূর্ণভাবে শাসকের মর্জির ওপর নির্ভর করছে। ভারতের একজন নাগরিক, তার নিজের দেশ কেমনভাবে চলছে, সে বিষয়ে ততখানিই নিজের মত প্রকাশ্যে বলতে পারবে, শাসক যতখানি বরদাশত করবে। শাসকের ছাড়পত্রের বাইরে যদি একজন ভারতীয় নাগরিক তার নিজের অভিমত প্রকাশ করে, তখনই তাঁকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হবে। সাতেরো দশকে ইন্দিরা গান্ধী প্রবর্তিত জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে চলছে।
জরুরি অবস্থার সময় ভারতের নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করা হয়েছিল, জরুরি অবস্থার দোহাই দিয়ে। আর এখন কোনো ‘দোহাই’ ছাড়াই চলছে নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করার কাজ। শাসক শিবিরের কোনো মানুষও যদি পরিবর্তিত ভাবনায় এতটুকু শাসকবিরোধিতা করে বসে, তবে তার বিরুদ্ধেও পুলিশ, বিভিন্ন তদন্তকারী এজেন্সিকে লেলিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চরম হেনস্তা করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা চলে—বিজেপির জামানাতেই জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সতপাল মালিকের পুলওয়ামা কাণ্ড ঘিরে মন্তব্যের জেরে সতপাল মালিককে আজও নানা ধরনের হেনস্তা করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দলটির জন্ম বিজেপির মস্তিষ্ক আরএসএসের জঠরে। অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রিত্বকালে এই দল বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারে অংশ নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রায় সাড়ে ছয় বছর বাজপেয়ি মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন। একসঙ্গে এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোটে থেকে তাঁরা লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এনডিএর সব শরিকের একযোগে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, যেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির ওপরেই তথাকথিত রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি ছিল, সেই নির্বাচনী ইশতেহারে সই করে বিজেপির সঙ্গে একযোগে লোকসভার ভোটে লড়েছেন মমতা। জিতে মন্ত্রী হয়েছেন। সেই সম্পর্কের রেশ ধরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে কলকাতায় মমতার তথাকথিত অনশনের সময় সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বিজেপির তৎকালীন জাতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং দিল্লি থেকে উড়ে এসে মমতার অনশন মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই মমতাই এখন মুসলিম ভোটের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে বিজেপিবিরোধিতার অভিনয় করেন, যদিও বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএস সম্পর্কে একটা নেতিবাচক কথা বলা তো দূরের বিষয়, আরএসএসকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে চলেন ধারাবাহিকভাবে।
বিজেপি জাতীয় স্তরে যে পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, সেই পরিবেশেরই ধারাবাহিকতা পশ্চিমবঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছে এখানকার শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। গণতন্ত্রে বিরোধীর যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, সেটাকেই এই তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকার করে না। তারা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ছিল, নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিরোধীশূন্য আইনসভা ছিল তাদের টার্গেট। এই লক্ষ্যে তারা বামপন্থীদের ঘর ভাঙাতে বহু রকমের চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। বামফ্রন্টের সিপিআই (এম) ছাড়া শরিক দলের কোনো কোনো বিধায়ক শাসক তৃণমূলের প্রলোভনে শেষ পর্যন্ত তাদের শিবিরে যোগ দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফরোয়ার্ড ব্লকের তৎকালীন বিধায়ক উদয়ন গুহের নাম বলা যেতে পারে। বাম আমলে এই বিধায়ক থাকা, ২০১১ সালের ভোটেও ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে জেতা, তৃণমূল সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর টিভির টকশোতে নতুন সরকারের কঠোর সমালোচক উদয়ন এখন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের একজন কেষ্টবিষ্টু নেতা।
কেবল নাগরিক সমাজই নয়, আমলাকুলের ভেতরে যাঁরা শাসকের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতে নারাজ, নাগরিক সমাজের প্রতি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কৃতসংকল্প, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা দেওয়ারের ক্ষেত্রে বিরোধীদের প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসূয়া নিয়ে চলেন না, সেই অংশের সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ণ করণিক থেকে আমলা এখন কার্যত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে নজরবন্দী অবস্থায় থেকে নিজেদের পেশাজীবন অতিবাহিত করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমলাকুলকে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করতে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রযুক্তি কৌশল যেভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে, তা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নজরদারির উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে কেনা ‘পেগাসাস’কে পর্যন্ত হার মানিয়েছে।
যেসব আমলা শাসকভজনা শিবিরে পশ্চিমবঙ্গে নাম লেখাননি, সামাজিক গণমাধ্যম, ফেসবুক ইত্যাদিতে তাঁদের ওপর যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসছে, তাকে নিতান্ত কাকতালীয় বলে ধরলে মনে হয় না পরিস্থিতির আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পারব। পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে নিরপেক্ষ পুলিশ বা প্রশাসনের একজন কর্তা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ টেলিফোনে নিজের কাছের মানুষদের সঙ্গে একটু মন খুলে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। এমনই নজরদারির ভেতরে তাঁরা রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো মন্ত্রীর কাছে যদি মন্ত্রীর পরিচিত কেউ দর্শনপ্রার্থী হয়ে তাঁর সরকারি দপ্তরে দেখা করতে যান, তাহলে মন্ত্রীর ঘরে ঢোকার আগে সাক্ষাৎপ্রার্থীকে মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক বা ওই স্তরের কোনো লোকের কাছে (আপ্তসহায়ক সরকারি কর্মী নন, মন্ত্রীর ব্যক্তি পছন্দের নিরিখে তিনি কর্মরত হন। মন্ত্রী বদলের সঙ্গে আপ্তসহায়কও বেশির ভাগ সময়ে বদল হন। এই পদে শাসক দলের কর্মীরাই কর্মরত থাকেন) নিজের মোবাইল ফোনটা জমা রাখতে হয়। অবিশ্বাসের পাহাড় এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের উচ্চতার প্রমাণ দিচ্ছে। এই অবিশ্বাসের পাহাড়কেই এই ভারতে গণতন্ত্রের বুনিয়াদ হিসেবে তুলে ধরতে এ দেশের শাসক উঠে পড়ে লেগেছে।
ভারতে এখন নির্বাচনের বিষয়টি শাসকের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সরকারের ভোটে নির্বাচনী নিয়মকানুনের ধার ধারে না মমতার সরকার। যখন থেকে মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তখন থেকে এই রাজ্যে কোনো প্রকৃত নির্বাচন হয় না। যা হয় তা হলো, ভোটের নামে মমতার ইচ্ছাপূরণ। মমতা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পৌরসভা, পঞ্চায়েতগুলো শাসক তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে গণতন্ত্রকে টুঁটি টিপে মেরে ফেলতে মমতার উদ্যোগ আর সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের লড়াই কিন্তু এই রাজ্যের মানুষ আজও ভোলেনি। কিন্তু মীরা পান্ডেদের মতো মেরুদণ্ডসম্পন্ন আমলাদের প্রতি কতটা হিংসাত্মক, বিদ্বেষপরায়ণ হতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, সে সম্পর্কে ভারতের জাতীয় স্তরে বা আন্তর্জাতিক স্তরে মুক্তবুদ্ধির, গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের সম্ভবত কোনো ধারণাই নেই।
লেখক: ভারতীয় ইতিহাসবিদ
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কণ্ঠরোধের প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে চলেছে, তাকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, যারা বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএসের নিবিড় ছায়ায় জন্ম নিয়ে তাদেরই আঁচলের তলায় লালিত-পালিত হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে ১২ বছর, মানে এক যুগ ধরে, তাদের শাসনকালে এই রাজ্যে বর্তমানে শাসকবিরোধী একজন নাগরিকও নিরাপদ নয়। সভা-সমিতি-পত্রপত্রিকায় সরকারের সমালোচনা দূরের কথা, চায়ের বৈঠকে সরকারবিরোধী কোনো কথা বললেও একজন অতি নিরীহ নাগরিককে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি ভারতে এখন সম্পূর্ণভাবে শাসকের মর্জির ওপর নির্ভর করছে। ভারতের একজন নাগরিক, তার নিজের দেশ কেমনভাবে চলছে, সে বিষয়ে ততখানিই নিজের মত প্রকাশ্যে বলতে পারবে, শাসক যতখানি বরদাশত করবে। শাসকের ছাড়পত্রের বাইরে যদি একজন ভারতীয় নাগরিক তার নিজের অভিমত প্রকাশ করে, তখনই তাঁকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হতে হবে। সাতেরো দশকে ইন্দিরা গান্ধী প্রবর্তিত জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে চলছে।
জরুরি অবস্থার সময় ভারতের নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করা হয়েছিল, জরুরি অবস্থার দোহাই দিয়ে। আর এখন কোনো ‘দোহাই’ ছাড়াই চলছে নাগরিক সমাজের কণ্ঠ স্তব্ধ করার কাজ। শাসক শিবিরের কোনো মানুষও যদি পরিবর্তিত ভাবনায় এতটুকু শাসকবিরোধিতা করে বসে, তবে তার বিরুদ্ধেও পুলিশ, বিভিন্ন তদন্তকারী এজেন্সিকে লেলিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চরম হেনস্তা করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা চলে—বিজেপির জামানাতেই জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সতপাল মালিকের পুলওয়ামা কাণ্ড ঘিরে মন্তব্যের জেরে সতপাল মালিককে আজও নানা ধরনের হেনস্তা করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দলটির জন্ম বিজেপির মস্তিষ্ক আরএসএসের জঠরে। অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রধানমন্ত্রিত্বকালে এই দল বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারে অংশ নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রায় সাড়ে ছয় বছর বাজপেয়ি মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন। একসঙ্গে এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোটে থেকে তাঁরা লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এনডিএর সব শরিকের একযোগে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, যেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির ওপরেই তথাকথিত রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি ছিল, সেই নির্বাচনী ইশতেহারে সই করে বিজেপির সঙ্গে একযোগে লোকসভার ভোটে লড়েছেন মমতা। জিতে মন্ত্রী হয়েছেন। সেই সম্পর্কের রেশ ধরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে কলকাতায় মমতার তথাকথিত অনশনের সময় সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বিজেপির তৎকালীন জাতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং দিল্লি থেকে উড়ে এসে মমতার অনশন মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই মমতাই এখন মুসলিম ভোটের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে বিজেপিবিরোধিতার অভিনয় করেন, যদিও বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএস সম্পর্কে একটা নেতিবাচক কথা বলা তো দূরের বিষয়, আরএসএসকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে চলেন ধারাবাহিকভাবে।
বিজেপি জাতীয় স্তরে যে পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে, সেই পরিবেশেরই ধারাবাহিকতা পশ্চিমবঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছে এখানকার শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। গণতন্ত্রে বিরোধীর যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, সেটাকেই এই তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকার করে না। তারা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ছিল, নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিরোধীশূন্য আইনসভা ছিল তাদের টার্গেট। এই লক্ষ্যে তারা বামপন্থীদের ঘর ভাঙাতে বহু রকমের চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। বামফ্রন্টের সিপিআই (এম) ছাড়া শরিক দলের কোনো কোনো বিধায়ক শাসক তৃণমূলের প্রলোভনে শেষ পর্যন্ত তাদের শিবিরে যোগ দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফরোয়ার্ড ব্লকের তৎকালীন বিধায়ক উদয়ন গুহের নাম বলা যেতে পারে। বাম আমলে এই বিধায়ক থাকা, ২০১১ সালের ভোটেও ফরোয়ার্ড ব্লকের টিকিটে জেতা, তৃণমূল সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর টিভির টকশোতে নতুন সরকারের কঠোর সমালোচক উদয়ন এখন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের একজন কেষ্টবিষ্টু নেতা।
কেবল নাগরিক সমাজই নয়, আমলাকুলের ভেতরে যাঁরা শাসকের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতে নারাজ, নাগরিক সমাজের প্রতি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে কৃতসংকল্প, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা দেওয়ারের ক্ষেত্রে বিরোধীদের প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসূয়া নিয়ে চলেন না, সেই অংশের সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ণ করণিক থেকে আমলা এখন কার্যত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে নজরবন্দী অবস্থায় থেকে নিজেদের পেশাজীবন অতিবাহিত করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমলাকুলকে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করতে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রযুক্তি কৌশল যেভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে, তা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নজরদারির উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে কেনা ‘পেগাসাস’কে পর্যন্ত হার মানিয়েছে।
যেসব আমলা শাসকভজনা শিবিরে পশ্চিমবঙ্গে নাম লেখাননি, সামাজিক গণমাধ্যম, ফেসবুক ইত্যাদিতে তাঁদের ওপর যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসছে, তাকে নিতান্ত কাকতালীয় বলে ধরলে মনে হয় না পরিস্থিতির আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পারব। পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে নিরপেক্ষ পুলিশ বা প্রশাসনের একজন কর্তা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ টেলিফোনে নিজের কাছের মানুষদের সঙ্গে একটু মন খুলে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। এমনই নজরদারির ভেতরে তাঁরা রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো মন্ত্রীর কাছে যদি মন্ত্রীর পরিচিত কেউ দর্শনপ্রার্থী হয়ে তাঁর সরকারি দপ্তরে দেখা করতে যান, তাহলে মন্ত্রীর ঘরে ঢোকার আগে সাক্ষাৎপ্রার্থীকে মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক বা ওই স্তরের কোনো লোকের কাছে (আপ্তসহায়ক সরকারি কর্মী নন, মন্ত্রীর ব্যক্তি পছন্দের নিরিখে তিনি কর্মরত হন। মন্ত্রী বদলের সঙ্গে আপ্তসহায়কও বেশির ভাগ সময়ে বদল হন। এই পদে শাসক দলের কর্মীরাই কর্মরত থাকেন) নিজের মোবাইল ফোনটা জমা রাখতে হয়। অবিশ্বাসের পাহাড় এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের উচ্চতার প্রমাণ দিচ্ছে। এই অবিশ্বাসের পাহাড়কেই এই ভারতে গণতন্ত্রের বুনিয়াদ হিসেবে তুলে ধরতে এ দেশের শাসক উঠে পড়ে লেগেছে।
ভারতে এখন নির্বাচনের বিষয়টি শাসকের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সরকারের ভোটে নির্বাচনী নিয়মকানুনের ধার ধারে না মমতার সরকার। যখন থেকে মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তখন থেকে এই রাজ্যে কোনো প্রকৃত নির্বাচন হয় না। যা হয় তা হলো, ভোটের নামে মমতার ইচ্ছাপূরণ। মমতা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পৌরসভা, পঞ্চায়েতগুলো শাসক তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে গণতন্ত্রকে টুঁটি টিপে মেরে ফেলতে মমতার উদ্যোগ আর সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের লড়াই কিন্তু এই রাজ্যের মানুষ আজও ভোলেনি। কিন্তু মীরা পান্ডেদের মতো মেরুদণ্ডসম্পন্ন আমলাদের প্রতি কতটা হিংসাত্মক, বিদ্বেষপরায়ণ হতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে, সে সম্পর্কে ভারতের জাতীয় স্তরে বা আন্তর্জাতিক স্তরে মুক্তবুদ্ধির, গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের সম্ভবত কোনো ধারণাই নেই।
লেখক: ভারতীয় ইতিহাসবিদ
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে