শিল্প কারখানা বাড়ছে কমছে কৃষিজমি

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ১৩
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ৫৪

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় আবাদি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা, রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি, শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এতে কমছে কৃষিজমি। গত ১০ বছরে এ উপজেলায় কৃষিজমি কমেছে ২৭৫ হেক্টর। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যাপক খাদ্য সংকটে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।

কৃষি অধিদপ্তর বলছে, উপজেলার তিন চতুর্থাংশ মানুষ সরাসরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত। এসব মানুষের জীবন-জীবিকা চলে কৃষি থেকে। কৃষিজমি কমতে থাকলে এসব মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলায় বর্তমানে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৬ হাজার ২৮০ হেক্টর। এর মধ্যে এক ফসলি জমির পরিমাণ ২ হাজার ২১২ হেক্টর, দুই ফসলি জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর ও তিন ফসলি জমির পরিমাণ ৫৭০ হেক্টর। ১০ বছর আগে উপজেলায় কৃষিজমি ছিল ৬ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। এ সময়ের মধ্যে কৃষিজমি কমেছে ২৭৫ হেক্টর। উপজেলায় মোট কৃষির সঙ্গে যুক্ত পরিবার রয়েছে ২৩ হাজার ২৫৯টি।

এখন উপজেলায় কৃষক আছেন ২৩ হাজার ২৫৭ জন। ১০ বছর আগে কৃষক ছিলেন ২৪ হাজার ২৫৯ জন। কৃষক কমেছে ১০০২ জন। উপজেলার জনসংখ্যা অনুযায়ী খাদ্য শস্যের চাহিদা গড়ে ৩৩ হাজার ৮৩৫ টন। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ২৪ হাজার ৮৮২ টন। প্রতিবছর খাদ্যঘাটতি দেখা দিচ্ছে ৮ হাজার ৯৫৩ টন খাদ্য শস্য।

প্রস্তাবিত কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কৃষিজমিতে আবাসন, শিল্প কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো রকম অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। জমি যে ধরনেই হোক না কেন কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে গড়ে উঠছে বিভিন্ন অকৃষি স্থাপনা।

এ বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষি উৎপাদন কমে যাবে। খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেবে।

পলাশ সরকারি শিল্পাঞ্চল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক মোস্তফা বলেন, সরকারের উচিত সরকারি নীতিমালার ভেতরে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ বাস্তবায়ন করে কৃষিজমি রক্ষা করা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, পৌর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকেরা, নিজেদের সুবিধার জন্য প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানের সীমানা বাড়াচ্ছেন। কম মূল্যে গ্রামের কৃষিজমিগুলো কিনে দখলে নিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে আর ১০ বছর পরে উপজেলায় কৃষিজমিই থাকবে কি না সন্দেহ।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু নাদির সিদ্দিকি বলেন, প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমিতে বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষিজমির দাম তুলনামূলক কম। তাই জমিতে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ বাড়ছে। উপজেলায় প্রতিবছর এক হেক্টর করে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে।

আবু নাদির আরও বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে গ্রামগুলোর উন্নয়ন করতে হবে। এ ছাড়া পরিকল্পিত নগরের পাশে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য জমির বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। কম মূল্যে কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দেশে চরম খাদ্যসংকট দেখা দেবে। ইতিমধ্যে কৃষিজমির পরিমাণ বাড়াতে বসতবাড়ির আঙিনায় সবজির আবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বহুতল ভবনের ছাদেও কৃষি আবাদের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত