রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
অধিক মুনাফার লোভে এর আগে ব্যবহৃত অনেক কার্যকর জীবন-রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন করছে না দেশি কোম্পানিগুলো। তাদের যুক্তি, নতুন ওষুধ আসায় পুরোনো ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কম। যদিও পুরোনো ওষুধগুলোর মানবদেহে রেজিস্ট্যান্ট (প্রতিরোধী) হওয়ার কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। ইউরোপ-আমেরিকায় এগুলো দেদার ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুনাফা কম হওয়ায় ওই সব ওষুধ উৎপাদনে অনীহা কোম্পানিগুলোর। এতে ওষুধ নির্বাচনে জটিলতায় পড়ছেন চিকিৎসকেরা। অতিরিক্ত দাম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
নতুন ও পুরোনো ওষুধের পার্থক্য প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত একটি কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার করতে ১০ থেকে ১২ বছর লাগে। এ ক্ষেত্রে যারা প্রথমে সফল ওষুধ আবিষ্কার করে, তারা পেটেন্ট (স্বত্ব) নিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে। কিন্তু যারা পিছিয়ে পড়ে, তারা ওই ওষুধের সঙ্গে অতিরিক্ত উপাদান যুক্ত করে বাজারে আনে। সেই অতিরিক্ত উপাদানের প্রয়োজনীয়তা না-ও থাকতে পারে। অথচ কোম্পানিগুলো সেসব ওষুধ উৎপাদনেই বেশি আগ্রহী হয়। কারণ, সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা করা যায়।
উদাহরণ দিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ধরা যাক, একজন রোগীর ব্যথার মাত্রা কম, তবে প্যারাসিটামলে কাজ হবে না; দীর্ঘদিনের প্রচলিত ওষুধ ‘‘আইবুপ্রোফেন’’ দিতে হবে, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। এটি কার্যকর এবং দামেও কম। কিন্তু রোগীকে সেটা দেওয়া যাচ্ছে না। কেননা, বাজারে এর জোগান নেই। সে ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় হলেও অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। এতে রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াও অন্যান্য ক্ষতি হচ্ছে।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রথম আবিষ্কৃত ওষুধের প্রয়োজনীয়তা
ও কার্যকারিতা সম্পূর্ণরূপে থাকার পরও কোম্পানিগুলোর এসব ওষুধ উৎপাদনে অনীহা। কারণ, এসব ওষুধ উৎপাদনে মুনাফা কম হয়। নতুন ওষুধে কিছু অতিরিক্ত উপাদান যুক্ত থাকে, সেগুলো বিশেষ রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও অনেক ক্ষেত্রে এর কোনো উপযোগিতা নেই। এমনকি অনেক ওষুধের বাড়তি উপাদান কোনো কাজেই আসে না। তারপরও সেগুলো রোগীদের বেশি দামে কিনতে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘মুনাফা কম হওয়ায় আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে উৎপাদিত কার্যকর ওষুধ উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছে। যদিও এসব ওষুধ এখনো সমানভাবে কার্যকর। এর সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা আছে।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘ভোক্তা বা চিকিৎসক পর্যায় থেকে আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। এমন অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
কার্যকর যেসব ওষুধের উৎপাদন নেই
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট জানান, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ‘অ্যাফেড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড’ উৎপাদন করে মাত্র কয়েকটি কোম্পানি। এগুলোর মধ্যে সীমা ফার্মার অ্যাসমাফেন (১৫ মিলিগ্রাম/৫ মিলিলিটার) সিরাপ ২৮ টাকা, বাংলাদেশ ইমিউনিটি কোম্পানির অ্যাফেড্রিন (১৫ মিলিগ্রাম/৫ মিলিলিটার) সিরাপ ৩০ টাকা, সীমা ফার্মা ও জিএ কোম্পানির প্রতিটি ৩০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটের দাম ১ টাকা। পপুলার, রেনাটা, জেসন, গণস্বাস্থ্য ও ইনসেপ্টা ফার্মার ইনজেকশনের দাম ১২ থেকে ৩০ টাকা।
ছত্রাকজনিত সমস্যায় অনেক কার্যকর ‘গ্রিসিওফুলভিন’ জাতীয় ওষুধ বড় কোম্পানিগুলো উৎপাদনই করে না। ছোট কয়েকটি কোম্পানি ওষুধটি বানালেও তা দুষ্প্রাপ্য। প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা।
ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর ‘আইবুপ্রোফেন’ দেশের প্রায় ৩৫টি কোম্পানির উৎপাদনের তালিকায় থাকলেও বাজারে পাওয়া যায় না। একমি ল্যাবরেটরিজের ‘প্রফেন’ মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। প্রতিটি আইবুপ্রোফেন ট্যাবলেটের দাম ১ টাকা এবং প্রতি বোতল সিরাপ ৩০ টাকা।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে কার্যকর ‘অরনিডাজল’ হাতে গোনা কয়েকটা কোম্পানি উৎপাদন করে। কোম্পানিভেদে প্রতি ট্যাবলেটের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা। জেনিথ, ইউনিমেড ইউনিহেলথ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, অপসোনিন, অ্যালকো ফার্মা, স্কয়ার, আলট্রা ও বেক্সিমকো ফার্মা নিয়মিত অরনিডাজল বাজারজাত করে না।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণসহ পুরুষের যৌন অক্ষমতাজনিত সমস্যায় অত্যন্ত কার্যকর স্বল্পমূল্যের নরফ্লক্সাসিন একেবারেই পাওয়া যায় না। যদিও এটি উৎপাদনের অনুমোদন আছে অনেক কোম্পানিরই। ছত্রাকের সংক্রমণে ব্যবহৃত ‘অ্যাম্ফোটারিসিন-বি’ উৎপাদন করে শুধু একটি কোম্পানি।
ম্যালেরিয়ার ওষুধ ‘ক্লোরোকুইন’ এখন পাওয়া যায় না। অ্যালবিয়ন ফার্মা, জেসন ফার্মা, গ্লোব ফার্মা, হাডসন ফার্মা ও রেপকো ফার্মার ক্লোরোকুইন সালফেটজাতীয় ট্যাবলেটের দাম ৩ থেকে ৭ টাকা। ক্লোরোকুইন জাতীয় ইনজেকশনের মধ্যে গণস্বাস্থ্য ফার্মার জি-ক্লোরোকুইন ১০৪ টাকা, জেসনের জ্যাসোকুইন ২১ টাকা, রেপকো ফার্মার রিকুইন ১১ টাকা। চিকিৎসকদের মতে, এই ওষুধ দুটি ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
গনোরিয়া রোগে ব্যবহৃত ‘গাটিফ্লক্সাসিন’ উৎপাদনে নাম নেই শীর্ষস্থানীয় কোনো কোম্পানির। ৬ থেকে ১০ টাকা দামের ট্যাবলেটটি বাজারে নেই, এমনকি ১০০ থেকে ২০০ টাকা মূল্যের ড্রপগুলোও উধাও।
আর্থ্রাইটিস বা বাতজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ৩ টাকা দামের ‘লেফলোনামাইড’ ট্যাবলেট উৎপাদনের লাইসেন্স আছে জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইনসেপ্টা ফার্মার। কিন্তু বাজারে ওষুধটি পাওয়া যায় না। ৫-১২ টাকা দামের হৃদ্রোগের জন্য কার্যকর ‘নেবিভোলল হাইড্রোক্লোরাইড’ খুঁজে পাওয়া যায় না। হৃদ্রোগের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ‘বিসোপ্রলল’ ইদানীং পাওয়া যায় না বলে চিকিৎসকদের অভিযোগ। বছরখানেক আগেও দেশের বেশির ভাগ কোম্পানি ৬-১০ টাকা দামের ওষুধটি বিপণন করেছে।
ত্বকে সংক্রমণসহ বেশ কিছু সমস্যায় ‘টেট্রাসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড’ জাতীয় ওষুধের জুরি মেলা ভার। কোম্পানিভেদে প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ২ থেকে ৪ টাকা। এই ওষুধও এখন দুষ্প্রাপ্য। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের লিসনোপ্রিন, ঘুমের জন্য বার্মিচুরেট, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সিমভ্যাটাটিন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও বহুল ব্যবহৃত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসকেরা নিয়মিত ব্যবস্থাপত্রে এগুলো লিখছেন।
উল্লিখিত জেনেরিকের ওষুধগুলোর মানবদেহে ওষুধপ্রতিরোধী হয়ে ওঠার কোনো প্রমাণ নেই।
কম দামের ওষুধ উৎপাদনে অনীহার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই অভিযোগ সত্য নয়। যাঁরা বলেছেন, তাঁরা জানেন না, পৃথিবীতে বাংলাদেশেই ওষুধের দাম সবচেয়ে কম। এই দেশে এখনো নাপা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তা ছাড়া ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়িত্ব নিতে তাগিদ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা করে ন্যায্যমূল্যে ওষুধ নিশ্চিত করতে। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে দূরে সরে গেছে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো। এ ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়বদ্ধতা রয়েছে। ওষুধের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর শুধু উৎপাদনকারীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করছে। ফলে এই দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বড় দুর্বলতা, সেখানে উপযুক্ত লোকবল নেই। তাই তারা কোম্পানিগুলোর চতুরতা ধরতে পারে না। তিনি বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ হয় স্বল্পসংখ্যক। সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় কোম্পানিগুলো।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, কার্যকর ও প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো উৎপাদনে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করতে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়িত্ব নিতে হবে।
অধিক মুনাফার লোভে এর আগে ব্যবহৃত অনেক কার্যকর জীবন-রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন করছে না দেশি কোম্পানিগুলো। তাদের যুক্তি, নতুন ওষুধ আসায় পুরোনো ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কম। যদিও পুরোনো ওষুধগুলোর মানবদেহে রেজিস্ট্যান্ট (প্রতিরোধী) হওয়ার কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। ইউরোপ-আমেরিকায় এগুলো দেদার ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুনাফা কম হওয়ায় ওই সব ওষুধ উৎপাদনে অনীহা কোম্পানিগুলোর। এতে ওষুধ নির্বাচনে জটিলতায় পড়ছেন চিকিৎসকেরা। অতিরিক্ত দাম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
নতুন ও পুরোনো ওষুধের পার্থক্য প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত একটি কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার করতে ১০ থেকে ১২ বছর লাগে। এ ক্ষেত্রে যারা প্রথমে সফল ওষুধ আবিষ্কার করে, তারা পেটেন্ট (স্বত্ব) নিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে। কিন্তু যারা পিছিয়ে পড়ে, তারা ওই ওষুধের সঙ্গে অতিরিক্ত উপাদান যুক্ত করে বাজারে আনে। সেই অতিরিক্ত উপাদানের প্রয়োজনীয়তা না-ও থাকতে পারে। অথচ কোম্পানিগুলো সেসব ওষুধ উৎপাদনেই বেশি আগ্রহী হয়। কারণ, সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা করা যায়।
উদাহরণ দিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ধরা যাক, একজন রোগীর ব্যথার মাত্রা কম, তবে প্যারাসিটামলে কাজ হবে না; দীর্ঘদিনের প্রচলিত ওষুধ ‘‘আইবুপ্রোফেন’’ দিতে হবে, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। এটি কার্যকর এবং দামেও কম। কিন্তু রোগীকে সেটা দেওয়া যাচ্ছে না। কেননা, বাজারে এর জোগান নেই। সে ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় হলেও অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। এতে রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াও অন্যান্য ক্ষতি হচ্ছে।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রথম আবিষ্কৃত ওষুধের প্রয়োজনীয়তা
ও কার্যকারিতা সম্পূর্ণরূপে থাকার পরও কোম্পানিগুলোর এসব ওষুধ উৎপাদনে অনীহা। কারণ, এসব ওষুধ উৎপাদনে মুনাফা কম হয়। নতুন ওষুধে কিছু অতিরিক্ত উপাদান যুক্ত থাকে, সেগুলো বিশেষ রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও অনেক ক্ষেত্রে এর কোনো উপযোগিতা নেই। এমনকি অনেক ওষুধের বাড়তি উপাদান কোনো কাজেই আসে না। তারপরও সেগুলো রোগীদের বেশি দামে কিনতে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘মুনাফা কম হওয়ায় আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে উৎপাদিত কার্যকর ওষুধ উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছে। যদিও এসব ওষুধ এখনো সমানভাবে কার্যকর। এর সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা আছে।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘ভোক্তা বা চিকিৎসক পর্যায় থেকে আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। এমন অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
কার্যকর যেসব ওষুধের উৎপাদন নেই
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট জানান, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ‘অ্যাফেড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড’ উৎপাদন করে মাত্র কয়েকটি কোম্পানি। এগুলোর মধ্যে সীমা ফার্মার অ্যাসমাফেন (১৫ মিলিগ্রাম/৫ মিলিলিটার) সিরাপ ২৮ টাকা, বাংলাদেশ ইমিউনিটি কোম্পানির অ্যাফেড্রিন (১৫ মিলিগ্রাম/৫ মিলিলিটার) সিরাপ ৩০ টাকা, সীমা ফার্মা ও জিএ কোম্পানির প্রতিটি ৩০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটের দাম ১ টাকা। পপুলার, রেনাটা, জেসন, গণস্বাস্থ্য ও ইনসেপ্টা ফার্মার ইনজেকশনের দাম ১২ থেকে ৩০ টাকা।
ছত্রাকজনিত সমস্যায় অনেক কার্যকর ‘গ্রিসিওফুলভিন’ জাতীয় ওষুধ বড় কোম্পানিগুলো উৎপাদনই করে না। ছোট কয়েকটি কোম্পানি ওষুধটি বানালেও তা দুষ্প্রাপ্য। প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা।
ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর ‘আইবুপ্রোফেন’ দেশের প্রায় ৩৫টি কোম্পানির উৎপাদনের তালিকায় থাকলেও বাজারে পাওয়া যায় না। একমি ল্যাবরেটরিজের ‘প্রফেন’ মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। প্রতিটি আইবুপ্রোফেন ট্যাবলেটের দাম ১ টাকা এবং প্রতি বোতল সিরাপ ৩০ টাকা।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে কার্যকর ‘অরনিডাজল’ হাতে গোনা কয়েকটা কোম্পানি উৎপাদন করে। কোম্পানিভেদে প্রতি ট্যাবলেটের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা। জেনিথ, ইউনিমেড ইউনিহেলথ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, অপসোনিন, অ্যালকো ফার্মা, স্কয়ার, আলট্রা ও বেক্সিমকো ফার্মা নিয়মিত অরনিডাজল বাজারজাত করে না।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণসহ পুরুষের যৌন অক্ষমতাজনিত সমস্যায় অত্যন্ত কার্যকর স্বল্পমূল্যের নরফ্লক্সাসিন একেবারেই পাওয়া যায় না। যদিও এটি উৎপাদনের অনুমোদন আছে অনেক কোম্পানিরই। ছত্রাকের সংক্রমণে ব্যবহৃত ‘অ্যাম্ফোটারিসিন-বি’ উৎপাদন করে শুধু একটি কোম্পানি।
ম্যালেরিয়ার ওষুধ ‘ক্লোরোকুইন’ এখন পাওয়া যায় না। অ্যালবিয়ন ফার্মা, জেসন ফার্মা, গ্লোব ফার্মা, হাডসন ফার্মা ও রেপকো ফার্মার ক্লোরোকুইন সালফেটজাতীয় ট্যাবলেটের দাম ৩ থেকে ৭ টাকা। ক্লোরোকুইন জাতীয় ইনজেকশনের মধ্যে গণস্বাস্থ্য ফার্মার জি-ক্লোরোকুইন ১০৪ টাকা, জেসনের জ্যাসোকুইন ২১ টাকা, রেপকো ফার্মার রিকুইন ১১ টাকা। চিকিৎসকদের মতে, এই ওষুধ দুটি ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
গনোরিয়া রোগে ব্যবহৃত ‘গাটিফ্লক্সাসিন’ উৎপাদনে নাম নেই শীর্ষস্থানীয় কোনো কোম্পানির। ৬ থেকে ১০ টাকা দামের ট্যাবলেটটি বাজারে নেই, এমনকি ১০০ থেকে ২০০ টাকা মূল্যের ড্রপগুলোও উধাও।
আর্থ্রাইটিস বা বাতজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ৩ টাকা দামের ‘লেফলোনামাইড’ ট্যাবলেট উৎপাদনের লাইসেন্স আছে জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইনসেপ্টা ফার্মার। কিন্তু বাজারে ওষুধটি পাওয়া যায় না। ৫-১২ টাকা দামের হৃদ্রোগের জন্য কার্যকর ‘নেবিভোলল হাইড্রোক্লোরাইড’ খুঁজে পাওয়া যায় না। হৃদ্রোগের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ‘বিসোপ্রলল’ ইদানীং পাওয়া যায় না বলে চিকিৎসকদের অভিযোগ। বছরখানেক আগেও দেশের বেশির ভাগ কোম্পানি ৬-১০ টাকা দামের ওষুধটি বিপণন করেছে।
ত্বকে সংক্রমণসহ বেশ কিছু সমস্যায় ‘টেট্রাসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড’ জাতীয় ওষুধের জুরি মেলা ভার। কোম্পানিভেদে প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ২ থেকে ৪ টাকা। এই ওষুধও এখন দুষ্প্রাপ্য। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের লিসনোপ্রিন, ঘুমের জন্য বার্মিচুরেট, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সিমভ্যাটাটিন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও বহুল ব্যবহৃত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসকেরা নিয়মিত ব্যবস্থাপত্রে এগুলো লিখছেন।
উল্লিখিত জেনেরিকের ওষুধগুলোর মানবদেহে ওষুধপ্রতিরোধী হয়ে ওঠার কোনো প্রমাণ নেই।
কম দামের ওষুধ উৎপাদনে অনীহার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই অভিযোগ সত্য নয়। যাঁরা বলেছেন, তাঁরা জানেন না, পৃথিবীতে বাংলাদেশেই ওষুধের দাম সবচেয়ে কম। এই দেশে এখনো নাপা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তা ছাড়া ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়িত্ব নিতে তাগিদ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা করে ন্যায্যমূল্যে ওষুধ নিশ্চিত করতে। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে দূরে সরে গেছে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো। এ ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়বদ্ধতা রয়েছে। ওষুধের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর শুধু উৎপাদনকারীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করছে। ফলে এই দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বড় দুর্বলতা, সেখানে উপযুক্ত লোকবল নেই। তাই তারা কোম্পানিগুলোর চতুরতা ধরতে পারে না। তিনি বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ হয় স্বল্পসংখ্যক। সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় কোম্পানিগুলো।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, কার্যকর ও প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো উৎপাদনে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করতে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়িত্ব নিতে হবে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে