মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
বাংলাদেশে ১৩তম সিইসি হিসেবে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১ মার্চ একটি দৈনিকে ‘নতুন নির্বাচন কমিশন, পিচ্ছিল পথে চাই সতর্ক পদার্পণ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধে কিছু সতর্কতার কথা উল্লেখ করেছিলাম। তার মধ্যে অন্যতম ছিল গণমাধ্যমে প্রতিদিন কথা না বলা বা নিজেকে অতিরিক্ত উপস্থাপন না করা। কমিশনের যা কাজ সেটাকেই প্রাধান্য দেওয়া।
মাত্র চার মাসের মধ্যেই বর্তমান সিইসি প্রয়োজনাতিরিক্ত কথা বলতে গিয়ে কিছু বেফাঁস কথা বলে ফেলেছেন, যা সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। একজন কমিশনার ‘মধ্যরাতের ডাকাত’ ধরার কথা বলে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং রাজনৈতিক মহলে ‘সরস’ কিছু তর্ক-বিতর্কের রসদ জুগিয়েছিলেন। বিষয়গুলো আমাদের এখনই ভাবিয়ে তুলেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী দিনগুলোতে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ তৈরিতে ব্যস্ত থাকবে নাকি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে নিজেদের আস্থার সংকটে ফেলবে, সেটি এখনই ভাবিয়ে তুলছে।
সিইসি এবং ইসিরা দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞ। অতীতে নির্বাচনী অবস্থা তাঁরা দেখেছেন। নির্বাচন কমিশনকে কতখানি জটিল দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেটি তাঁদের অজানা নয়। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বেশির ভাগ কমিশনই সুনাম নিয়ে যেতে পারেনি। অনেকেই অতিকথনে জড়িয়ে গোটা নির্বাচনব্যবস্থাকেই আস্থাহীনতার সংকটে ফেলে দিয়েছিলেন। আমরা ২০০৬ সালে আজিজ ও মাহফুজ কমিশনের কথা স্মরণ করতে পারি। কে এম নূরুল হুদারও নানা বিতর্কিত কথাবার্তা সম্পর্কে সবাই অবহিত। সে কারণে ভেবেছিলাম, বর্তমান নির্বাচন কমিশন অতীত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিহার করে আগামী নির্বাচনের একটি পরিবেশ গড়ে তোলার কাজে শুরু থেকেই তাদের মেধা, প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার পরিচয় রাখার মধ্যে নিজেদের ব্যস্ত রাখবে। তারা হয়তো মনেপ্রাণে সেই পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যেই কাজ করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অংশীজন, পর্যবেক্ষক, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশন একের পর এক মতবিনিময়ও করছে। কমিশনের এসব উদ্যোগ বেশির ভাগ মানুষই স্বাগত জানাচ্ছে।
বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশ না নিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তাই পরিবেশ সবার আস্থায় নিতে নির্বাচন কমিশনের সতর্কতার বিকল্প নেই।
নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে যাঁরা খোলামনে কথা বলতে আসেন, তাঁদের মতামত শোনা এবং সব চাপ উপেক্ষা করে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রতিশ্রুতি তারা শোনাবে, সেটি সবার কাম্য। কিন্তু শুরু থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বক্তব্যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সে কারণে রাইফেল-তলোয়ার ব্যবহারের মতো অসাংবিধানিক কথাও তাঁর মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইলেন। তির একবার বেরিয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শিকারের গায়ে পড়তেও পারে না-ও পারে। কিন্তু শিকারির হাতে থাকে না। সে কারণে শিকারিকে দক্ষতার সঙ্গেই তির ছুড়তে হয়। ভাষার প্রয়োগেও দক্ষ এবং সচেতন থাকতে হয়। কথা মানুষকে উজ্জীবিত করে যখন সেটি প্রাণবন্ত হয়, আবার কথাই মানুষকে মর্মাহত করে, যখন সেটি আঘাত করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা এখনো জাতিগতভাবে কথা ও ভাষার প্রয়োগে দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি। অশালীন মন্তব্য করতে আমরা অনেকে অভ্যস্ত। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদে যাঁরা থাকেন, তাঁরা বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, সেটাই প্রত্যাশিত।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চলমান আলোচনার প্রারম্ভিক বক্তব্যে সিইসি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান প্রায় প্রতিদিনই করছেন। বিএনপি তাঁর আলোচনাকে গুরুত্বহীন বলে সমালোচনা করছে। তারপরও সেই আবেদনের পাশাপাশি বিএনপিকে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা অথবা সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জনের উপদেশ তিনি কেন দিতে গেলেন, তা মোটেও বোধগম্য নয়। এটি তো তাঁর দায়িত্ব নয়। বোঝাই গেছে, তিনি বিএনপির অংশ নেওয়া বা না নেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেবে কি নেবে না, সেটি সিইসির আহ্বান কিংবা অনুরোধের ওপর নির্ভর করে হয় না। নির্বাচন কমিশনও এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়ে সব দলের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত দলীয় কৌশল ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিত্তিতেই হয়ে থাকে।
নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা। শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানই নয়, নির্বাচনে ভোটদান ও ফলাফল প্রকাশের পরিবেশও নির্বিঘ্ন করতে হয়। সেটি করা গেলে নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ নিতে দ্বিধান্বিত হওয়ার কথা নয়। সে কারণে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত কোনো ধরনের বিতর্ক, সন্দেহ, দ্বিধা এবং অনাস্থা সৃষ্টি করতে পারে—এমন কোনো কথাবার্তা না বলা এবং ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি না রাখার কাজে আত্মনিয়োগ করা। নির্বাচন কমিশন যদি যথার্থ অর্থেই স্বাধীন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সক্ষমতা দৃশ্যমান করে তুলতে পারে ভোটার, অংশীজন, পর্যবেক্ষক মহল, বিদেশি সংস্থা—সবাই নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করবে। সে ক্ষেত্রে কোনো দল অংশ না নিলে তার দায় কারও ওপর চাপানোর সুযোগ থাকবে না। সরকার কোনোভাবে হস্তক্ষেপ না করলে কিংবা নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা না করলে, ভোটের ফলাফল প্রকাশে হস্তক্ষেপ না করলে নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে এ ধরনের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য আরপিওতে আর কোনো বিধিবিধান সংযোজন অথবা বিয়োজন করার প্রয়োজন রয়েছে কি না, অথবা ব্যালটে নাকি ইভিএমে ভোট বিতর্কমুক্ত রাখতে পারবে কি না, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া। এ ছাড়া অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো বিশেষ ধরনের বাধা কিংবা সমস্যা রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করা। জাতির কাছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ অবস্থান তুলে ধরার কোনো বিকল্প নেই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অনেক পক্ষই বাধা হতে পারে। সেসব মোকাবিলায় কমিশনের আইনি ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকাকালেও নির্বাচনে একধরনের প্রভাব বিস্তারের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। অনেকেই নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধা পেয়েছিল, ভোটের ফলাফলও পরিবর্তিত হয়েছে। সুতরাং জটিলতা বহুমুখী। এসব নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। সেগুলোর কোনো একটি বাদ পড়লে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে পারে কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। সে কারণে আগে থেকেই অতীত অভিজ্ঞতা সামনে রেখে বর্তমান কমিশনকে কোথায় কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, নির্বাচনে কালোটাকা, সাম্প্রদায়িকতা, পেশিশক্তি ইত্যাদি কীভাবে নির্বাচনের উদ্দেশ্য ব্যাহত করতে তৎপর—সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি এবং প্রশাসনিক কঠোর নজরদারি কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, সেসবের অতি-আবশ্যকীয় ব্যবস্থাপত্র থাকতে হবে।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর অনাস্থা শুধু এখন নয়। এটি শুরু থেকেই তিলে তিলে তাল হয়েছে। রাতারাতি কোনো একটি কমিশন এ সমস্যার সমাধান পুরোপুরি করতে পারবে না। ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০৮-এর মতো পরিবেশ অন্তত তৈরির ব্যবস্থা করা গেলে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় অর্জনের একটি নতুন ধারা সূচিত হতে পারে। সে লক্ষ্যেই নির্বাচনী আচরণবিধি, আইনি প্রয়োগ, ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতি এবং ভোটদানে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির ব্যবস্থা করাই এই কমিশনের মূল কাজ। কেউ হস্তক্ষেপ করলে কমিশন তা নির্বিঘ্নে জাতির কাছে উপস্থাপন করতে পারে। সেই স্বাধীনতা কমিশনের রয়েছে। সেটির প্রয়োগই কমিশনের জন্য যথার্থ হবে। অন্য কোনো পক্ষ বা বিপক্ষের মধ্যস্থতা করার কাজ নির্বাচন কমিশনের নয়।
বাংলাদেশে ১৩তম সিইসি হিসেবে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১ মার্চ একটি দৈনিকে ‘নতুন নির্বাচন কমিশন, পিচ্ছিল পথে চাই সতর্ক পদার্পণ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধে কিছু সতর্কতার কথা উল্লেখ করেছিলাম। তার মধ্যে অন্যতম ছিল গণমাধ্যমে প্রতিদিন কথা না বলা বা নিজেকে অতিরিক্ত উপস্থাপন না করা। কমিশনের যা কাজ সেটাকেই প্রাধান্য দেওয়া।
মাত্র চার মাসের মধ্যেই বর্তমান সিইসি প্রয়োজনাতিরিক্ত কথা বলতে গিয়ে কিছু বেফাঁস কথা বলে ফেলেছেন, যা সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। একজন কমিশনার ‘মধ্যরাতের ডাকাত’ ধরার কথা বলে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং রাজনৈতিক মহলে ‘সরস’ কিছু তর্ক-বিতর্কের রসদ জুগিয়েছিলেন। বিষয়গুলো আমাদের এখনই ভাবিয়ে তুলেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী দিনগুলোতে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ তৈরিতে ব্যস্ত থাকবে নাকি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে নিজেদের আস্থার সংকটে ফেলবে, সেটি এখনই ভাবিয়ে তুলছে।
সিইসি এবং ইসিরা দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞ। অতীতে নির্বাচনী অবস্থা তাঁরা দেখেছেন। নির্বাচন কমিশনকে কতখানি জটিল দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেটি তাঁদের অজানা নয়। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বেশির ভাগ কমিশনই সুনাম নিয়ে যেতে পারেনি। অনেকেই অতিকথনে জড়িয়ে গোটা নির্বাচনব্যবস্থাকেই আস্থাহীনতার সংকটে ফেলে দিয়েছিলেন। আমরা ২০০৬ সালে আজিজ ও মাহফুজ কমিশনের কথা স্মরণ করতে পারি। কে এম নূরুল হুদারও নানা বিতর্কিত কথাবার্তা সম্পর্কে সবাই অবহিত। সে কারণে ভেবেছিলাম, বর্তমান নির্বাচন কমিশন অতীত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিহার করে আগামী নির্বাচনের একটি পরিবেশ গড়ে তোলার কাজে শুরু থেকেই তাদের মেধা, প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার পরিচয় রাখার মধ্যে নিজেদের ব্যস্ত রাখবে। তারা হয়তো মনেপ্রাণে সেই পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যেই কাজ করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অংশীজন, পর্যবেক্ষক, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশন একের পর এক মতবিনিময়ও করছে। কমিশনের এসব উদ্যোগ বেশির ভাগ মানুষই স্বাগত জানাচ্ছে।
বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশ না নিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তাই পরিবেশ সবার আস্থায় নিতে নির্বাচন কমিশনের সতর্কতার বিকল্প নেই।
নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে যাঁরা খোলামনে কথা বলতে আসেন, তাঁদের মতামত শোনা এবং সব চাপ উপেক্ষা করে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রতিশ্রুতি তারা শোনাবে, সেটি সবার কাম্য। কিন্তু শুরু থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বক্তব্যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সে কারণে রাইফেল-তলোয়ার ব্যবহারের মতো অসাংবিধানিক কথাও তাঁর মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইলেন। তির একবার বেরিয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শিকারের গায়ে পড়তেও পারে না-ও পারে। কিন্তু শিকারির হাতে থাকে না। সে কারণে শিকারিকে দক্ষতার সঙ্গেই তির ছুড়তে হয়। ভাষার প্রয়োগেও দক্ষ এবং সচেতন থাকতে হয়। কথা মানুষকে উজ্জীবিত করে যখন সেটি প্রাণবন্ত হয়, আবার কথাই মানুষকে মর্মাহত করে, যখন সেটি আঘাত করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা এখনো জাতিগতভাবে কথা ও ভাষার প্রয়োগে দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি। অশালীন মন্তব্য করতে আমরা অনেকে অভ্যস্ত। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদে যাঁরা থাকেন, তাঁরা বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, সেটাই প্রত্যাশিত।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চলমান আলোচনার প্রারম্ভিক বক্তব্যে সিইসি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান প্রায় প্রতিদিনই করছেন। বিএনপি তাঁর আলোচনাকে গুরুত্বহীন বলে সমালোচনা করছে। তারপরও সেই আবেদনের পাশাপাশি বিএনপিকে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা অথবা সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জনের উপদেশ তিনি কেন দিতে গেলেন, তা মোটেও বোধগম্য নয়। এটি তো তাঁর দায়িত্ব নয়। বোঝাই গেছে, তিনি বিএনপির অংশ নেওয়া বা না নেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেবে কি নেবে না, সেটি সিইসির আহ্বান কিংবা অনুরোধের ওপর নির্ভর করে হয় না। নির্বাচন কমিশনও এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়ে সব দলের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত দলীয় কৌশল ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিত্তিতেই হয়ে থাকে।
নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা। শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানই নয়, নির্বাচনে ভোটদান ও ফলাফল প্রকাশের পরিবেশও নির্বিঘ্ন করতে হয়। সেটি করা গেলে নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ নিতে দ্বিধান্বিত হওয়ার কথা নয়। সে কারণে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত কোনো ধরনের বিতর্ক, সন্দেহ, দ্বিধা এবং অনাস্থা সৃষ্টি করতে পারে—এমন কোনো কথাবার্তা না বলা এবং ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি না রাখার কাজে আত্মনিয়োগ করা। নির্বাচন কমিশন যদি যথার্থ অর্থেই স্বাধীন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সক্ষমতা দৃশ্যমান করে তুলতে পারে ভোটার, অংশীজন, পর্যবেক্ষক মহল, বিদেশি সংস্থা—সবাই নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করবে। সে ক্ষেত্রে কোনো দল অংশ না নিলে তার দায় কারও ওপর চাপানোর সুযোগ থাকবে না। সরকার কোনোভাবে হস্তক্ষেপ না করলে কিংবা নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা না করলে, ভোটের ফলাফল প্রকাশে হস্তক্ষেপ না করলে নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে এ ধরনের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য আরপিওতে আর কোনো বিধিবিধান সংযোজন অথবা বিয়োজন করার প্রয়োজন রয়েছে কি না, অথবা ব্যালটে নাকি ইভিএমে ভোট বিতর্কমুক্ত রাখতে পারবে কি না, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া। এ ছাড়া অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো বিশেষ ধরনের বাধা কিংবা সমস্যা রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করা। জাতির কাছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ অবস্থান তুলে ধরার কোনো বিকল্প নেই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অনেক পক্ষই বাধা হতে পারে। সেসব মোকাবিলায় কমিশনের আইনি ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকাকালেও নির্বাচনে একধরনের প্রভাব বিস্তারের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। অনেকেই নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধা পেয়েছিল, ভোটের ফলাফলও পরিবর্তিত হয়েছে। সুতরাং জটিলতা বহুমুখী। এসব নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। সেগুলোর কোনো একটি বাদ পড়লে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে পারে কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। সে কারণে আগে থেকেই অতীত অভিজ্ঞতা সামনে রেখে বর্তমান কমিশনকে কোথায় কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, নির্বাচনে কালোটাকা, সাম্প্রদায়িকতা, পেশিশক্তি ইত্যাদি কীভাবে নির্বাচনের উদ্দেশ্য ব্যাহত করতে তৎপর—সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি এবং প্রশাসনিক কঠোর নজরদারি কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, সেসবের অতি-আবশ্যকীয় ব্যবস্থাপত্র থাকতে হবে।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর অনাস্থা শুধু এখন নয়। এটি শুরু থেকেই তিলে তিলে তাল হয়েছে। রাতারাতি কোনো একটি কমিশন এ সমস্যার সমাধান পুরোপুরি করতে পারবে না। ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০৮-এর মতো পরিবেশ অন্তত তৈরির ব্যবস্থা করা গেলে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় অর্জনের একটি নতুন ধারা সূচিত হতে পারে। সে লক্ষ্যেই নির্বাচনী আচরণবিধি, আইনি প্রয়োগ, ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতি এবং ভোটদানে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির ব্যবস্থা করাই এই কমিশনের মূল কাজ। কেউ হস্তক্ষেপ করলে কমিশন তা নির্বিঘ্নে জাতির কাছে উপস্থাপন করতে পারে। সেই স্বাধীনতা কমিশনের রয়েছে। সেটির প্রয়োগই কমিশনের জন্য যথার্থ হবে। অন্য কোনো পক্ষ বা বিপক্ষের মধ্যস্থতা করার কাজ নির্বাচন কমিশনের নয়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে