অ্যাসিডে নষ্ট মাটি, খেতের ফসল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬: ৩৮
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৩

ফসলি জমিতেই গড়ে তোলা হয়েছে পুরোনো ব্যাটারি পোড়ানো ও যন্ত্রাংশ সংগ্রহের কারখানা। এ কারখানায় প্রতিদিন গভীর রাতে পোড়ানো হয় পর্যাপ্ত ব্যাটারি। এ থেকে সিসা বের করা হয়। পরে এসব পোড়া ব্যাটারির নির্গত সিসা ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ আবার ব্যাটারি তৈরির কারখানায় বিক্রি করা হয়। রাতে যখন ব্যাটারি পোড়ানো হয়, তখন আশপাশের অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকায় বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। তা ছাড়া আশপাশের ফসলি জমিতে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া হয়। এতে জমির মাটি নষ্ট হচ্ছে। খেতের ফসল মরে যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ঝিলিম ইউনিয়নের বাবু ডাইং-কেন্দুল রাস্তার ধারে ফসলি জমিতে রয়েছে এই ব্যাটারির কারখানা। এসব ব্যাটারির বিষাক্ত অ্যাসিড ও ধোঁয়ায় পুড়ে ধ্বংস হচ্ছে আশপাশের সরিষা, মসুরসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই ফসলি জমিতে এমন ক্ষতিকর কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, জনবসতিহীন এলাকা হওয়ার সুযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ব্যাটারি ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় এ কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। জেলা শহরের বিশ্বরোড মোড়ের মেসার্স আশরা অটো ও কাজল ব্যাটারি সার্ভিসিং সেন্টারের মালিক ব্যাটারি ব্যবসায়ী খুরশেদ আলম কাজল এ কারখানার মালিক। এ ছাড়া গাইবান্ধার জাহাঙ্গীর ও মহসীন নামে আরও দুজন মালিক রয়েছেন কারখানাটির। এক বছরের জন্য ১৮ কাঠা জমি ইজারা নিয়ে চারদিক ঘিরে ফসলি জমিতে কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গভীর রাতে পোড়ানো হয় পুরোনো ব্যাটারি। আগুনে পুড়িয়ে পুরোনো ব্যাটারি থেকে সিসা বের করা হয়। পরে এসব পোড়া ব্যাটারির নির্গত সিসা ও অন্যান্য পদার্থ ব্যাটারি তৈরির কারখানায় বিক্রি করা হয়।

কারখানার পাশেই ১২ বিঘা ফসলি জমি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নিমগাছি সরকারপাড়া এলাকার আতাউর রহমানের। তিনি বলেন, ওই কারখানা স্থাপনের ফলে তাঁর সরিষাখেতের ক্ষতি হয়েছে। এমনকি আশপাশের সব জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। কারখানার মালিকদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের কেন্দুল গ্রামের কৃষক বশির উদ্দিন বলেন, রাতের আঁধারে পুরোনো ব্যাটারিতে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় বিশাল কুণ্ডলীর সৃষ্টি হয়। তখন তীব্র গন্ধযুক্ত ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। তাঁরা এক বছরের জন্য চুক্তি করে এই ফসলি জমি নিয়েছেন। কিন্তু এভাবে ব্যাটারি পোড়ানো অব্যাহত থাকলে, এ এলাকার সব ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাবে।

জানা গেছে, পুরোনো ব্যাটারির এ কারখানায় কাজ করা বেশির ভাগ লোক নওগাঁ, বগুড়া ও গাইবান্ধার। তাঁরা ব্যাটারির সব যন্ত্রাংশ খুলে আলাদা করেন এবং ব্যাটারি পুড়িয়ে তা বগুড়ায় পাঠান। সেখানে নতুন ব্যাটারিতে আবার এসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়।

কারখানার শ্রমিকেরা বলছেন, এখানে দৈনিক ১০০-১৫০টি ব্যাটারির যন্ত্রাংশ খোলা ও আগুনে পোড়ানো হয়।

কারখানার শ্রমিক আনোয়ার আলী বলেন, পুরোনো ব্যাটারিগুলো খুলে যন্ত্রাংশগুলো আলাদা করা হয়। রাতে ব্যাটারি পুড়িয়ে তা থেকে বিশেষ পদার্থ তৈরি করা হয়। অ্যাসিডের বিষয়ে তিনি বলেন, আশপাশেই গর্ত করে অ্যাসিড রাখা হয়। তবে গড়িয়ে গড়িয়ে কিছু অ্যাসিড আশপাশের জমিতেও যায়। কিন্তু এতে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না।

মেসার্স আশরা অটো ও কাজল ব্যাটারি সার্ভিসিং সেন্টারের মালিক খুরশেদ আলম কাজল বলেন, সারা দেশের সব জায়গায় এভাবেই পুরোনো ব্যাটারি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনি প্রথম এটা নিয়ে এসেছেন। যখন কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছিল, তখন মাঠে ফসল ছিল না। তবে এখন কারও ক্ষতি হলে, তাঁর ক্ষতিপূরণ দেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারখানা স্থাপনের জন্য কোনো অনুমোদন বা লাইসেন্স তাঁর নেই।

রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদা পারভীন বলেন, ফসলি জমিতে পুরোনো ব্যাটারি পোড়ানো ও যন্ত্রাংশ সংগ্রহের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত