হাসান মামুন
নিত্যপণ্যের দাম একযোগে বেড়ে যাওয়ার সময়টায় যদি ওষুধের দামও বাড়ে, তাহলে বিপদের শেষ থাকে না। দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে ওষুধ সেবন করে সুস্থ থাকতে হয়। অনেকে আছেন নিয়মিত ওষুধ সেবনকারী ও জটিল রোগী। দরিদ্র ও অসচেতন জনগোষ্ঠীতে অবশ্য চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা নেই। তবে তারাও সময়ে-সময়ে রোগাক্রান্ত হয়ে কারও না কারও পরামর্শে ওষুধ সেবন করে থাকে। ওষুধের দাম বেড়ে গেলে তাদেরও সংকটে পড়তে হয়। বেশ কয়েক মাস আগে প্যারাসিটামলসহ কিছু জেনেরিক বা গ্রুপের ওষুধের দাম একযোগে বাড়ানো হয়েছিল। এগুলো তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এগুলোর দাম নির্ধারণ করে থাকে। দীর্ঘদিন বাড়ানো হয়নি, এমন সব ওষুধের দামই নাকি তখন বাড়ানো হয়। তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিল বেশি। তা খবরও হয়েছিল। এসব ওষুধ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিতেও তৈরি হয়। তার উৎপাদন ক্ষমতা অবশ্য সামান্য। বেসরকারি কোম্পানিগুলোই প্রধানত এসব তৈরি করে। তারা বলছিল, অনেক আগে নির্ধারিত দামে ওই সব ওষুধ সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই ছিল ওই মূল্যবৃদ্ধি।
এর বাইরেও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত, যেগুলোর দাম বেসরকারি কোম্পানি নির্ধারণ করে। তাদের অবশ্য এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ঔষধ প্রশাসনের সম্মতি নিতে হয়। ধরে নেওয়া যায়, ইতিমধ্যে যেসব ওষুধের দাম বেড়েছে, তাতে সংস্থাটির সম্মতি রয়েছে। সম্মতি প্রদানের প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না, তা কিন্তু নয়। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। সাধারণভাবে এটুকু বলা যায়, নীরবে বেশ কিছু ওষুধের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার বেশি। সুখের কথা, আমাদের প্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৮ শতাংশই নিজেরা উৎপাদন করি। ইউরোপসহ বেশ কিছু দেশে ওষুধ রপ্তানিও হয়। বিদেশে বড় ওষুধ কোম্পানির প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার খবরও রয়েছে। সব মিলিয়ে এটা সম্ভাবনাময় খাত। আমাদের ওষুধের মান নিয়েও সন্তুষ্টির অবকাশ রয়েছে। এর দামও তুলনামূলকভাবে কম বা সহনীয় বলে বর্ণনা করা হয়। এ অবস্থায় ওষুধের দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ার ঘটনা স্বভাবতই খবর হবে। আর এটা বড় খবর হয়ে উঠবে তখন, জীবনযাত্রার ব্যয় যখন বেড়ে চলেছে এবং সিংহভাগ মানুষকে কৃচ্ছ্রসাধন করে চলতে হচ্ছে।
সম্প্রতি আজকের পত্রিকায় ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হয়েছে প্রধান প্রতিবেদন। সেখানে বিভিন্ন গ্রুপের ওষুধের দাম কত থেকে কত হয়েছে, তার একটা চিত্র সবার নজর কাড়বে। তবে একই গ্রুপের ওষুধ উৎপাদনকারী সব কোম্পানি তাদের পণ্যের দাম বাড়ায়নি। আমাদের চার সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের সবাই ডাক্তার দেখিয়ে, টেস্ট করিয়ে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে থাকি। এই সুবাদে ওষুধ কেনাকাটার সূত্রে ব্যক্তিগতভাবেও জানি, একটা বৃদ্ধির ধারায় রয়েছে এর দাম। ফেসবুকেও এ নিয়ে সময়ে-সময়ে পোস্ট দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখা মানুষজন তাতে মন্তব্য করেন। তবে বেশি মানুষকে এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে কথাবার্তা বলতে দেখিনি, যেটা কিছুটা অবাক করে। ওষুধ তো এমন পণ্য নয় যে ব্যয়সংকোচনের জন্য কেনা বাদ বা কমিয়ে দিলাম। তবে এটাও নাকি শুরু করেছে অনেকে। খুচরা ওষুধ বিক্রয়কারী দোকানে খোঁজ নিয়ে এটা জানতে পেরেছি। মিডিয়ায়ও এমন খবর পেয়েছিলাম বলে মনে পড়ছে। একই গ্রুপের অপেক্ষাকৃত কম দামি ওষুধও কিন্তু বাজারে রয়েছে। এর কোম্পানি ও দরদাম দেখার সুযোগ রয়েছে ইন্টারনেটে। তবে খুব কম লোকই জানে বা এর চর্চা করে। রোগীরা সাধারণত ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধই কিনে থাকে। এ অবস্থায় অনেকেরই দাবি—কোম্পানি প্রদত্ত নামের বদলে জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখার নিয়ম চালু হোক। হাইকোর্টের এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাও রয়েছে বোধ হয়, যা প্রতিপালিত হচ্ছে না।
ওষুধের দাম অবশ্য বাড়তে পারে। এ নিয়ে নিছক অভিযোগ করা সাজে না। এর দাম যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, সে আশঙ্কা কিন্তু ব্যক্ত করেছিলেন খাতসংশ্লিষ্টরা। যে কারণে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ছে, প্রায় একই কারণে ওষুধেরও দাম বাড়তে পারে। ওষুধ কোম্পানিগুলো তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবে না। ওষুধের কাঁচামালের ৮৫ শতাংশই নাকি আসে বিদেশি উৎস থেকে। সেখানে দাম না বাড়লেও এক বছরে ডলারের দামে যে বৃদ্ধি ঘটেছে, সে জন্যই বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়। এর পরিণতিতে দাম। ওষুধ কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাস-বিদ্যুতের দামও তো বাড়ানো হচ্ছে। বর্ধিত পরিবহন ব্যয়ও আছে। এতে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি ঘটতেই পারে। তবে বৃদ্ধির অনুমতি দেওয়ার সময় নিবিড়ভাবে এর কারণগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠবে। কোন কোম্পানি কোন উৎস থেকে কাঁচামাল আনছে, তার দাম একবার বাড়ার পর আবার কমল কি না, এসব দেখার রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কিন্তু এখন নিম্নগামী। জাহাজ ভাড়াও। এ অবস্থায় কোম্পানির চাহিদামাফিক ওষুধের মতো জরুরি পণ্যের দাম বাড়ানোর মধ্যে না গিয়ে এ খাতে নীতিগত সহায়তা জুগিয়ে ক্রেতাদের রেহাই দেওয়া যায় কি না, সেটা বরং দেখা দরকার।
ওষুধ উৎপাদন ব্যয়ের অন্তত ১০ শতাংশ নাকি এর ‘অনৈতিক বিপণন ব্যয়’। চিকিৎসকেরা যাতে তাঁদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন, সে জন্য তারা তাঁদের পেছনে কিছু ব্যয় করে থাকে, যা অনেকের জানা। এটা অর্ধেক কমিয়ে আনা গেলেও ওষুধের দাম বাড়াতে হয় না বলে কথা চালু আছে। এর প্রতিবিধান হিসেবে জেনেরিক নামে ওষুধ প্রেসক্রাইব করাটা চালু করা গেলে আবার এর দোকানগুলোয় কোম্পানির ব্যয় স্থানান্তর হবে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। এটা ঘিরে নাকি আছে আরও বেশি অরাজকতার শঙ্কা। আপাতত আমরা উদ্বিগ্ন ক্রমে বাড়তে থাকা ওষুধের দাম নিয়ে। বাজারে কিছু ওষুধের দাম কিন্তু এমনিতেই চড়া। একই গ্রুপের ওষুধের দামের অস্বাভাবিক তফাত নিয়েও ওয়াকিবহালদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। সম্প্রতি একটি বিজনেস টিভির প্রতিবেদনে একজন নামকরা চিকিৎসক বলছিলেন, রোগীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় কম দামি ওষুধ প্রেসক্রাইব করে রোগ নিরাময়ে তিনি উল্লেখযোগ্য কোনো তফাত দেখতে পাননি। ওষুধের কার্যকারিতা অবশ্য রোগীর খাদ্যাভ্যাসসহ নানান কিছুর ওপর নির্ভর করে। আর বিশেষজ্ঞরা চাইলেই বিভিন্ন দামের ওষুধের ভালো-মন্দ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। সেটি নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে কি?
আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব ওষুধের দামে। মূল্যস্ফীতির এ সময়টায় এর মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি থাকলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে জোগাতে হবে ভর্তুকি। সরকারের অন্যান্য ব্যয় কাটছাঁট করে হলেও এটা নিশ্চিত করতে হবে। দেশেই মানসম্মত কাঁচামালের উৎপাদন বাড়িয়ে কীভাবে ওষুধের দাম কমিয়ে রাখা যায়, সেটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। এ মুহূর্তেই যা করার করতে হবে। ওষুধের দামের সঙ্গে আছে ডাক্তারের ফি ও টেস্টের খরচ। এসবও তো বেড়েছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের আমদানিও উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে বলে মাঝে খবর মিলেছিল। জানি না এখন অবস্থা কী। যা হোক, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাওয়ার কারণেও ওষুধ সেবন এবং এর চাহিদা কিন্তু বেড়েছে। এ অবস্থায় উদ্যোগী হয়ে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে জনস্বাস্থ্য আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে।
হাসান মামুন, সাংবাদিক, বিশ্লেষক
নিত্যপণ্যের দাম একযোগে বেড়ে যাওয়ার সময়টায় যদি ওষুধের দামও বাড়ে, তাহলে বিপদের শেষ থাকে না। দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে ওষুধ সেবন করে সুস্থ থাকতে হয়। অনেকে আছেন নিয়মিত ওষুধ সেবনকারী ও জটিল রোগী। দরিদ্র ও অসচেতন জনগোষ্ঠীতে অবশ্য চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা নেই। তবে তারাও সময়ে-সময়ে রোগাক্রান্ত হয়ে কারও না কারও পরামর্শে ওষুধ সেবন করে থাকে। ওষুধের দাম বেড়ে গেলে তাদেরও সংকটে পড়তে হয়। বেশ কয়েক মাস আগে প্যারাসিটামলসহ কিছু জেনেরিক বা গ্রুপের ওষুধের দাম একযোগে বাড়ানো হয়েছিল। এগুলো তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এগুলোর দাম নির্ধারণ করে থাকে। দীর্ঘদিন বাড়ানো হয়নি, এমন সব ওষুধের দামই নাকি তখন বাড়ানো হয়। তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিল বেশি। তা খবরও হয়েছিল। এসব ওষুধ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিতেও তৈরি হয়। তার উৎপাদন ক্ষমতা অবশ্য সামান্য। বেসরকারি কোম্পানিগুলোই প্রধানত এসব তৈরি করে। তারা বলছিল, অনেক আগে নির্ধারিত দামে ওই সব ওষুধ সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই ছিল ওই মূল্যবৃদ্ধি।
এর বাইরেও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত, যেগুলোর দাম বেসরকারি কোম্পানি নির্ধারণ করে। তাদের অবশ্য এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ঔষধ প্রশাসনের সম্মতি নিতে হয়। ধরে নেওয়া যায়, ইতিমধ্যে যেসব ওষুধের দাম বেড়েছে, তাতে সংস্থাটির সম্মতি রয়েছে। সম্মতি প্রদানের প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না, তা কিন্তু নয়। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। সাধারণভাবে এটুকু বলা যায়, নীরবে বেশ কিছু ওষুধের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার বেশি। সুখের কথা, আমাদের প্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৮ শতাংশই নিজেরা উৎপাদন করি। ইউরোপসহ বেশ কিছু দেশে ওষুধ রপ্তানিও হয়। বিদেশে বড় ওষুধ কোম্পানির প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার খবরও রয়েছে। সব মিলিয়ে এটা সম্ভাবনাময় খাত। আমাদের ওষুধের মান নিয়েও সন্তুষ্টির অবকাশ রয়েছে। এর দামও তুলনামূলকভাবে কম বা সহনীয় বলে বর্ণনা করা হয়। এ অবস্থায় ওষুধের দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ার ঘটনা স্বভাবতই খবর হবে। আর এটা বড় খবর হয়ে উঠবে তখন, জীবনযাত্রার ব্যয় যখন বেড়ে চলেছে এবং সিংহভাগ মানুষকে কৃচ্ছ্রসাধন করে চলতে হচ্ছে।
সম্প্রতি আজকের পত্রিকায় ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হয়েছে প্রধান প্রতিবেদন। সেখানে বিভিন্ন গ্রুপের ওষুধের দাম কত থেকে কত হয়েছে, তার একটা চিত্র সবার নজর কাড়বে। তবে একই গ্রুপের ওষুধ উৎপাদনকারী সব কোম্পানি তাদের পণ্যের দাম বাড়ায়নি। আমাদের চার সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের সবাই ডাক্তার দেখিয়ে, টেস্ট করিয়ে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে থাকি। এই সুবাদে ওষুধ কেনাকাটার সূত্রে ব্যক্তিগতভাবেও জানি, একটা বৃদ্ধির ধারায় রয়েছে এর দাম। ফেসবুকেও এ নিয়ে সময়ে-সময়ে পোস্ট দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখা মানুষজন তাতে মন্তব্য করেন। তবে বেশি মানুষকে এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে কথাবার্তা বলতে দেখিনি, যেটা কিছুটা অবাক করে। ওষুধ তো এমন পণ্য নয় যে ব্যয়সংকোচনের জন্য কেনা বাদ বা কমিয়ে দিলাম। তবে এটাও নাকি শুরু করেছে অনেকে। খুচরা ওষুধ বিক্রয়কারী দোকানে খোঁজ নিয়ে এটা জানতে পেরেছি। মিডিয়ায়ও এমন খবর পেয়েছিলাম বলে মনে পড়ছে। একই গ্রুপের অপেক্ষাকৃত কম দামি ওষুধও কিন্তু বাজারে রয়েছে। এর কোম্পানি ও দরদাম দেখার সুযোগ রয়েছে ইন্টারনেটে। তবে খুব কম লোকই জানে বা এর চর্চা করে। রোগীরা সাধারণত ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধই কিনে থাকে। এ অবস্থায় অনেকেরই দাবি—কোম্পানি প্রদত্ত নামের বদলে জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখার নিয়ম চালু হোক। হাইকোর্টের এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাও রয়েছে বোধ হয়, যা প্রতিপালিত হচ্ছে না।
ওষুধের দাম অবশ্য বাড়তে পারে। এ নিয়ে নিছক অভিযোগ করা সাজে না। এর দাম যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, সে আশঙ্কা কিন্তু ব্যক্ত করেছিলেন খাতসংশ্লিষ্টরা। যে কারণে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ছে, প্রায় একই কারণে ওষুধেরও দাম বাড়তে পারে। ওষুধ কোম্পানিগুলো তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবে না। ওষুধের কাঁচামালের ৮৫ শতাংশই নাকি আসে বিদেশি উৎস থেকে। সেখানে দাম না বাড়লেও এক বছরে ডলারের দামে যে বৃদ্ধি ঘটেছে, সে জন্যই বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়। এর পরিণতিতে দাম। ওষুধ কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাস-বিদ্যুতের দামও তো বাড়ানো হচ্ছে। বর্ধিত পরিবহন ব্যয়ও আছে। এতে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি ঘটতেই পারে। তবে বৃদ্ধির অনুমতি দেওয়ার সময় নিবিড়ভাবে এর কারণগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠবে। কোন কোম্পানি কোন উৎস থেকে কাঁচামাল আনছে, তার দাম একবার বাড়ার পর আবার কমল কি না, এসব দেখার রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কিন্তু এখন নিম্নগামী। জাহাজ ভাড়াও। এ অবস্থায় কোম্পানির চাহিদামাফিক ওষুধের মতো জরুরি পণ্যের দাম বাড়ানোর মধ্যে না গিয়ে এ খাতে নীতিগত সহায়তা জুগিয়ে ক্রেতাদের রেহাই দেওয়া যায় কি না, সেটা বরং দেখা দরকার।
ওষুধ উৎপাদন ব্যয়ের অন্তত ১০ শতাংশ নাকি এর ‘অনৈতিক বিপণন ব্যয়’। চিকিৎসকেরা যাতে তাঁদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন, সে জন্য তারা তাঁদের পেছনে কিছু ব্যয় করে থাকে, যা অনেকের জানা। এটা অর্ধেক কমিয়ে আনা গেলেও ওষুধের দাম বাড়াতে হয় না বলে কথা চালু আছে। এর প্রতিবিধান হিসেবে জেনেরিক নামে ওষুধ প্রেসক্রাইব করাটা চালু করা গেলে আবার এর দোকানগুলোয় কোম্পানির ব্যয় স্থানান্তর হবে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। এটা ঘিরে নাকি আছে আরও বেশি অরাজকতার শঙ্কা। আপাতত আমরা উদ্বিগ্ন ক্রমে বাড়তে থাকা ওষুধের দাম নিয়ে। বাজারে কিছু ওষুধের দাম কিন্তু এমনিতেই চড়া। একই গ্রুপের ওষুধের দামের অস্বাভাবিক তফাত নিয়েও ওয়াকিবহালদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। সম্প্রতি একটি বিজনেস টিভির প্রতিবেদনে একজন নামকরা চিকিৎসক বলছিলেন, রোগীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় কম দামি ওষুধ প্রেসক্রাইব করে রোগ নিরাময়ে তিনি উল্লেখযোগ্য কোনো তফাত দেখতে পাননি। ওষুধের কার্যকারিতা অবশ্য রোগীর খাদ্যাভ্যাসসহ নানান কিছুর ওপর নির্ভর করে। আর বিশেষজ্ঞরা চাইলেই বিভিন্ন দামের ওষুধের ভালো-মন্দ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। সেটি নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে কি?
আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব ওষুধের দামে। মূল্যস্ফীতির এ সময়টায় এর মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি থাকলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে জোগাতে হবে ভর্তুকি। সরকারের অন্যান্য ব্যয় কাটছাঁট করে হলেও এটা নিশ্চিত করতে হবে। দেশেই মানসম্মত কাঁচামালের উৎপাদন বাড়িয়ে কীভাবে ওষুধের দাম কমিয়ে রাখা যায়, সেটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। এ মুহূর্তেই যা করার করতে হবে। ওষুধের দামের সঙ্গে আছে ডাক্তারের ফি ও টেস্টের খরচ। এসবও তো বেড়েছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের আমদানিও উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে বলে মাঝে খবর মিলেছিল। জানি না এখন অবস্থা কী। যা হোক, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাওয়ার কারণেও ওষুধ সেবন এবং এর চাহিদা কিন্তু বেড়েছে। এ অবস্থায় উদ্যোগী হয়ে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে জনস্বাস্থ্য আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে।
হাসান মামুন, সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে