রাজশাহীতে এক চিকিৎসককে আয়কর ফাঁকির মামলার ভয় দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রতারক চক্র আয়কর বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বিষয়টি টের পেয়ে ওই চিকিৎসক থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ দুই প্রতারককে গ্রেপ্তারও করেছে। তাঁরা হলেন নগরের রাজপাড়া থানার লক্ষ্মীপুর মিঠুর মোড় এলাকার বাসিন্দা তাসফিন আহমেদ (৩৩) ও তাঁর বড় ভাই ফয়সাল আহমেদ (৩৮)। গত সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজপাড়া থানা-পুলিশ তাঁদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।

ভুক্তভোগী চিকিৎসকের নাম আজিজুল হক আবদুল্লাহ। এই চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর এখন শহরের দুটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন। তিনি রাজপাড়া থানার ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা। গ্রেপ্তার দুজনেই ডা. আজিজুল হকের স্ত্রীর বড় বোনের ছেলে। প্রতারক চক্রে রুবেল সরকার ওরফে রাসেল সরকার (৩৩) নামের আরেকজন আছেন। তিনি আসামি ফয়সালের ভায়রা ভাই।

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, আত্মীয়তার সূত্র ধরে তাসফিন ও ফয়সাল তাঁদের খালু ডা. আজিজুল হকের বাড়িতে যাওয়া আসা করতেন। রোগী দেখে প্রচুর টাকা কামাই করতে দেখে তাঁরা তাঁদের খালুর সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সঙ্গে নেন রুবেল সরকারকে।

একদিন এঁরা তিনজন ডা. আজিজুল হকের কাছে গিয়ে কিছু কাগজপত্র দেখান। এতে দেখা যায়, আয়কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেছে। রুবেল সরকার নিজেকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওয়ারেন্ট অফিসার পরিচয় দিয়ে কয়েক দফা ডা. আজিজুল হকের কাছে যান। এই মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে গত ১৫ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। তাসফিন ও ফয়সালও বোঝাতে থাকেন ওয়ারেন্ট অফিসারকে টাকা দিলে মামলায় কিছুই হবে না। কোর্টেও যাওয়া লাগবে না।

প্রতারক চক্রের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে টাকাগুলো নেওয়ার সময় ডা. আজিজুল হককে জানান, দুর্নীতি দমন ব্যুরো, আয়কর বিভাগ এবং হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে কাগজ বের হতে সময় লাগবে। এ বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতেও বলেন তাঁরা। অন্য কেউ জানলে তাঁর ও তাঁর পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলেও ভয় দেখানো হয়। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ফয়সালের কাছে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। ডা. আজিজুল হক রোববার রাতে থানায় মামলা করেন। সোমবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে রাজপাড়া থানা-পুলিশ।

ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার দুই আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণা করে ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলার অন্য আসামি রুবেল সরকারকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।