মারুফ কিবরিয়া, সাখাওয়াত ফাহাদ, আল-আমীন রাজু ও মান্দি ডি কস্তা, ঢাকা
ফাস্ট ফুডের দোকান চালান মো. হাসান। এটাই তাঁর আয়ের উৎস। তিনি বাংলাদেশ বেকার সমাজ নামের একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছেন নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।
ইসিতে আবেদন করা আরেকটি দলের নাম নাকফুল বাংলাদেশ। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই নারী। জেলা ও উপজেলা কমিটির সভাপতি কোনো পুরুষ হতে পারবেন না বলা হলেও দলটির চেয়ারম্যান একজন পুরুষ।
ইসির কাছে নিবন্ধন চেয়ে যে ৯৩টি দল আবেদন করেছে, সেগুলোর তত্ত্ব-তালাশ করতে গিয়ে এমন সব অদ্ভুত বিষয় বেরিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন চেয়ে আবেদনকারীদের তালিকায় আছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী, জমিজমা বেচাকেনার পরামর্শদাতা, আইনজীবী, শিক্ষক, স্থপতি, সাংবাদিকসহ সমাজের সর্বস্তরের ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, ঠিকাদারি, আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেন গণ রাজনৈতিক জোট, ইনসানিয়াত বিপ্লব, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টিসহ সাতটি দলের নেতা। বাড়িভাড়ার টাকায় চলেন জাতীয় বঙ্গলীগের সভাপতি শওকত হোসেন মিঞা। শুভাকাঙ্ক্ষীদের চাঁদায় ন্যাপ (ভাসানী) চালান মোসতাক আহমেদ ভাসানী। আর তিনি চলেন ছেলে এবং বিদেশে থাকা ভাইয়ের টাকায়।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া ৯৩টি দলের তালিকা ধরে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকেরা অনুসন্ধানে গেছেন ঢাকায় ৪৫টি ঠিকানায়। এগুলোর মধ্যে ৪১টির খোঁজ মিলেছে, বাকি ৪টির হদিস মেলেনি। ওই সব ঠিকানায় যাঁদের পাওয়া গেছে, তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়েছে। আর যাঁদের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি, তাঁদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকেরা। এ রকম ৩৬টি সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী
একসময় স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন এ এফ এম সোলাইমান চৌধুরী। বর্তমানে আবুল খায়ের গ্রুপের অন্যতম নির্বাহী পরিচালক। তাঁর দল এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি) সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের চাঁদায় চলে বলে তাঁর দাবি।
নৈতিক সমাজ নামের দলের নিবন্ধন চেয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমসাআ আমিন। অবসর ভাতা আয়ের উৎস স্বপন রেজার। ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। চেয়েছেন নাকফুল বাংলাদেশ নামের দলের নিবন্ধন।
জমি বেচাকেনার পরামর্শ
পেশাজীবনে কিছু না করার অভিযোগ আছে স্ত্রীর। তিনি ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। পেশা কী জানতে চাইলে বললেন, পারিবারিক সম্পদ দেখাশোনা করা। দলটির মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম জমিজমাসংক্রান্ত বিষয়ে মানুষকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। স্ত্রীর অভিযোগ যেমনই হোক, আনোয়ার হোসেন নিজেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিক মনে করেন। তাই তাঁর দলকে সময় দেওয়া উচিত বলে ঠিক করেছেন।
জমি কেনাবেচা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন এস এম আশিক বিল্লাহ। শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়েও পরামর্শ দিতেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়া এখন বন্ধ। আহ্বায়ক হিসেবে তিনি চেয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নিবন্ধন।
শিক্ষক, স্থপতি, আইনজীবী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয় দেওয়া নিবন্ধনপ্রত্যাশীর একজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) আবদুর রহমান। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জানতে চাইলে বললেন, তিনি খুব অসুস্থ। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। শিক্ষক হিসেবে পরিচিত অপর এক ব্যক্তি চেয়েছেন সাধারণ জনতা পার্টির নিবন্ধন। স্থপতি হিসেবে পরিচয় দিলেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী। আইনজীবী শাহরিয়ার ইফতেখার চেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় লীগের নিবন্ধন।
সাংবাদিক, গবেষকও
সাংবাদিক পরিচয়ধারী কিছু লোকও কয়েকটি দলের নিবন্ধন চেয়েছেন। দলগুলোর মধ্যে আছে পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনডিএম), গণ আজাদী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি।
গবেষক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির প্রধান আইসিডিডিআরবির সাবেক চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার হোসেন।
ঠিকানা আছে, অফিস নেই
নির্বাচন কমিশনের তালিকা ধরে অনুসন্ধানে গিয়ে অন্তত ৩ ভাগের ১ ভাগ ঠিকানায় দলগুলোর অফিস মেলেনি। ছোট-বড় যেমনই হোক, অর্ধেকের বেশি ঠিকানায় অফিস পাওয়া গেছে। আর কিছু কিছু দলের অফিস আছে নামমাত্র।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান এলাকার একটি ঠিকানা ধরে কড়া নাড়া হলো জাতীয় ইসলামী মহাজোটের অফিসে। বেরিয়ে এলেন এক তরুণী। জানালেন দলের চেয়ারম্যান তাঁর মামা হন। একটু পর এলেন চেয়ারম্যানের স্ত্রী। দলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, দলটির নাম কী? নাম শুনে বললেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
পরে পাওয়া গেল চেয়ারম্যান আবাসন ব্যবসায়ী মাওলানা আলতাফ হোসাইনকে। তাঁর দাবি, বাসার গ্যারেজেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। নির্মাণের কারণে বন্ধ আছে। শিগগির চালু করবেন।
বাংলাদেশ জনতা পার্টির ঠিকানা ধরে কমলাপুরে ইস্টার্ন কমপ্লেক্স নামের বহুতল ভবনে গিয়ে দলটির অফিসের কোনো অস্তিত্ব মেলেনি। কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক রফিক জানালেন, দলের নামে অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছিল ছয় মাস আগে। চাকরি দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ ছিল এই ভাড়াটের বিরুদ্ধে। ভাড়া বাকি রেখে তিন মাস আগে চলে গেছেন তাঁরা।
প্রতারণার শিকার অনেক মানুষ এখনো আসে তাঁদের খোঁজে। নিবন্ধন পাওয়ার আবেদনে দুটি মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।
কাগজপত্রে আম জনতা পার্টির ঠিকানা ২০৫, বিজয়নগর, ঢাকা। পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় ওষুধের দোকান, আর একটি চায়ের দোকান। পুরো ভবন ঘুরেও দেখা মেলেনি দলের কার্যালয়। দুই দোকানি জানালেন, কোনো দলের অফিস নেই ওই ভবনে। ভবনের তৃতীয় তলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শাহ আলমের চেম্বার। তিনি বললেন, চার-পাঁচ বছর ধরে আছেন এই ঠিকানায়। কোনো দলের নামে অফিস কিংবা কাজকর্মের কথা তিনি শোনেননি। দলের সভাপতি হাসিবুর রহমান তালুকদারের মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের ঠিকানা শাহবাগের চাঁদ মসজিদ কমপ্লেক্সে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাড়া চালাতে না পারায় অফিস ছেড়ে দিয়েছেন দলের প্রধান স্বরূপ হাসান শাহীন। তিনি বলেন, এখন পাশেই ডিসিসি মার্কেটের একটি কক্ষে শুধু শুক্রবার মিলিত হন তাঁরা। নির্দিষ্ট ঠিকানায় অফিস মেলেনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, এনভায়রনমেন্ট গ্রিন পার্টি এবং সাধারণ জনতা পার্টির।
প্রতিবেশীরা জানে না দলের অফিস
ঢাকার কমলাপুরে কবি জসীমউদ্দীন রোডে ঠিকানা ধরে জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির খোঁজ করলে স্থানীয় বাসিন্দা মো. হায়দার মিয়া বলেন, সেখানে কোনো দল আছে, এমন কথা তিনি জানেন না। ফোনে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু বলেন, ঠিকানাটি তাঁর বাসার। স্ত্রী-সন্তানসহ থাকেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এখানেই হয়। অবশ্য পল্টনে আরেকটি অফিস আছে।
যাদের পাওয়া গেল
ঠিকানা ধরে অফিস মিলেছে, এমন দলগুলোর মধ্যে আছে নাগরিক ঐক্য, নৈতিক সমাজ, ন্যাপ (ভাসানী), এবি পার্টি, বাংলাদেশ এলডিপি, নতুন ধারা বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় বঙ্গলীগ, গণ রাজনৈতিক জোট, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গণ আজাদী লীগসহ কয়েকটি দলের। আর ভাগাভাগি করে অফিস আছে সৎ সংগ্রামী ভোটার পার্টি ও সোনার বাংলা পার্টির।
রাজধানীর বাইরের ঠিকানায়
রাজধানীর বাইরে থেকে দলের নিবন্ধন চেয়েছে অন্তত নয়টি দল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের ঠিকানায় রিপাবলিকান পার্টি, তৃণমূল জনতা পার্টি ও বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ, টাঙ্গাইলের ঠিকানায় বৈরাবরী পার্টি, সাতক্ষীরার ঠিকানায় যুব স্বেচ্ছাসেবক লীগ, নওগাঁর স্বদেশ কল্যাণ কর্মসূচি, ঝিনাইদহের ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, জয়পুরহাটের মুসকিল লীগ ও ময়মনসিংহের বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ। ইত্যাদি পার্টি নামের সংগঠনটির ঠিকানা মেলেনি নির্বাচন কমিশনের কাগজে।
নাকফুল বাংলাদেশ
ব্যতিক্রমী নামের জন্য আলোচনায় আছে নাকফুল বাংলাদেশ। দলের চেয়ারম্যান স্বপন রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশকে প্রতীকী অর্থে মায়ের মাধ্যমে বোঝানো হয়। আর মায়েরা সাধারণত নাকফুল পরেন। এখানে মায়ের বিশ্বাস, আবেগ, অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে নাকফুলকে দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই দল নারীকেন্দ্রিক একটি দল। বর্তমানে এই দলের ৩৩ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের সবাই নারী। এ ছাড়া ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই নারী। এই দলে জেলা, উপজেলার সভাপতিরা হবেন নারী। পুরুষেরা এই দলে কমিটিগুলোর সভাপতি হতে পারবেন না। তবে পুরুষেরা সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক হতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনে সংগঠনগুলোর নিবন্ধনের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সর্বশেষ তারিখ ছিল ৩০ অক্টোবর। এখন দেখার—কতগুলো সংগঠনকে নিবন্ধন দেয় কমিশন।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চক্রবর্ত্তী মনে করেন, নির্বাচন এলে সংগঠনের নিবন্ধনের সুযোগ অনেকেই নিয়ে থাকেন। তবে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে দলের কর্মকাণ্ড ও গণভিত্তি বিবেচনায় নিয়েই নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ফাস্ট ফুডের দোকান চালান মো. হাসান। এটাই তাঁর আয়ের উৎস। তিনি বাংলাদেশ বেকার সমাজ নামের একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছেন নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।
ইসিতে আবেদন করা আরেকটি দলের নাম নাকফুল বাংলাদেশ। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই নারী। জেলা ও উপজেলা কমিটির সভাপতি কোনো পুরুষ হতে পারবেন না বলা হলেও দলটির চেয়ারম্যান একজন পুরুষ।
ইসির কাছে নিবন্ধন চেয়ে যে ৯৩টি দল আবেদন করেছে, সেগুলোর তত্ত্ব-তালাশ করতে গিয়ে এমন সব অদ্ভুত বিষয় বেরিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন চেয়ে আবেদনকারীদের তালিকায় আছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী, জমিজমা বেচাকেনার পরামর্শদাতা, আইনজীবী, শিক্ষক, স্থপতি, সাংবাদিকসহ সমাজের সর্বস্তরের ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, ঠিকাদারি, আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেন গণ রাজনৈতিক জোট, ইনসানিয়াত বিপ্লব, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টিসহ সাতটি দলের নেতা। বাড়িভাড়ার টাকায় চলেন জাতীয় বঙ্গলীগের সভাপতি শওকত হোসেন মিঞা। শুভাকাঙ্ক্ষীদের চাঁদায় ন্যাপ (ভাসানী) চালান মোসতাক আহমেদ ভাসানী। আর তিনি চলেন ছেলে এবং বিদেশে থাকা ভাইয়ের টাকায়।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া ৯৩টি দলের তালিকা ধরে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকেরা অনুসন্ধানে গেছেন ঢাকায় ৪৫টি ঠিকানায়। এগুলোর মধ্যে ৪১টির খোঁজ মিলেছে, বাকি ৪টির হদিস মেলেনি। ওই সব ঠিকানায় যাঁদের পাওয়া গেছে, তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়েছে। আর যাঁদের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি, তাঁদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকেরা। এ রকম ৩৬টি সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী
একসময় স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন এ এফ এম সোলাইমান চৌধুরী। বর্তমানে আবুল খায়ের গ্রুপের অন্যতম নির্বাহী পরিচালক। তাঁর দল এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি) সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের চাঁদায় চলে বলে তাঁর দাবি।
নৈতিক সমাজ নামের দলের নিবন্ধন চেয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমসাআ আমিন। অবসর ভাতা আয়ের উৎস স্বপন রেজার। ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। চেয়েছেন নাকফুল বাংলাদেশ নামের দলের নিবন্ধন।
জমি বেচাকেনার পরামর্শ
পেশাজীবনে কিছু না করার অভিযোগ আছে স্ত্রীর। তিনি ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। পেশা কী জানতে চাইলে বললেন, পারিবারিক সম্পদ দেখাশোনা করা। দলটির মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম জমিজমাসংক্রান্ত বিষয়ে মানুষকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। স্ত্রীর অভিযোগ যেমনই হোক, আনোয়ার হোসেন নিজেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিক মনে করেন। তাই তাঁর দলকে সময় দেওয়া উচিত বলে ঠিক করেছেন।
জমি কেনাবেচা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন এস এম আশিক বিল্লাহ। শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়েও পরামর্শ দিতেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়া এখন বন্ধ। আহ্বায়ক হিসেবে তিনি চেয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নিবন্ধন।
শিক্ষক, স্থপতি, আইনজীবী
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয় দেওয়া নিবন্ধনপ্রত্যাশীর একজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) আবদুর রহমান। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জানতে চাইলে বললেন, তিনি খুব অসুস্থ। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। শিক্ষক হিসেবে পরিচিত অপর এক ব্যক্তি চেয়েছেন সাধারণ জনতা পার্টির নিবন্ধন। স্থপতি হিসেবে পরিচয় দিলেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী। আইনজীবী শাহরিয়ার ইফতেখার চেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় লীগের নিবন্ধন।
সাংবাদিক, গবেষকও
সাংবাদিক পরিচয়ধারী কিছু লোকও কয়েকটি দলের নিবন্ধন চেয়েছেন। দলগুলোর মধ্যে আছে পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনডিএম), গণ আজাদী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি।
গবেষক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির প্রধান আইসিডিডিআরবির সাবেক চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার হোসেন।
ঠিকানা আছে, অফিস নেই
নির্বাচন কমিশনের তালিকা ধরে অনুসন্ধানে গিয়ে অন্তত ৩ ভাগের ১ ভাগ ঠিকানায় দলগুলোর অফিস মেলেনি। ছোট-বড় যেমনই হোক, অর্ধেকের বেশি ঠিকানায় অফিস পাওয়া গেছে। আর কিছু কিছু দলের অফিস আছে নামমাত্র।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান এলাকার একটি ঠিকানা ধরে কড়া নাড়া হলো জাতীয় ইসলামী মহাজোটের অফিসে। বেরিয়ে এলেন এক তরুণী। জানালেন দলের চেয়ারম্যান তাঁর মামা হন। একটু পর এলেন চেয়ারম্যানের স্ত্রী। দলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, দলটির নাম কী? নাম শুনে বললেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
পরে পাওয়া গেল চেয়ারম্যান আবাসন ব্যবসায়ী মাওলানা আলতাফ হোসাইনকে। তাঁর দাবি, বাসার গ্যারেজেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। নির্মাণের কারণে বন্ধ আছে। শিগগির চালু করবেন।
বাংলাদেশ জনতা পার্টির ঠিকানা ধরে কমলাপুরে ইস্টার্ন কমপ্লেক্স নামের বহুতল ভবনে গিয়ে দলটির অফিসের কোনো অস্তিত্ব মেলেনি। কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক রফিক জানালেন, দলের নামে অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছিল ছয় মাস আগে। চাকরি দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ ছিল এই ভাড়াটের বিরুদ্ধে। ভাড়া বাকি রেখে তিন মাস আগে চলে গেছেন তাঁরা।
প্রতারণার শিকার অনেক মানুষ এখনো আসে তাঁদের খোঁজে। নিবন্ধন পাওয়ার আবেদনে দুটি মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।
কাগজপত্রে আম জনতা পার্টির ঠিকানা ২০৫, বিজয়নগর, ঢাকা। পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় ওষুধের দোকান, আর একটি চায়ের দোকান। পুরো ভবন ঘুরেও দেখা মেলেনি দলের কার্যালয়। দুই দোকানি জানালেন, কোনো দলের অফিস নেই ওই ভবনে। ভবনের তৃতীয় তলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শাহ আলমের চেম্বার। তিনি বললেন, চার-পাঁচ বছর ধরে আছেন এই ঠিকানায়। কোনো দলের নামে অফিস কিংবা কাজকর্মের কথা তিনি শোনেননি। দলের সভাপতি হাসিবুর রহমান তালুকদারের মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের ঠিকানা শাহবাগের চাঁদ মসজিদ কমপ্লেক্সে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাড়া চালাতে না পারায় অফিস ছেড়ে দিয়েছেন দলের প্রধান স্বরূপ হাসান শাহীন। তিনি বলেন, এখন পাশেই ডিসিসি মার্কেটের একটি কক্ষে শুধু শুক্রবার মিলিত হন তাঁরা। নির্দিষ্ট ঠিকানায় অফিস মেলেনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, এনভায়রনমেন্ট গ্রিন পার্টি এবং সাধারণ জনতা পার্টির।
প্রতিবেশীরা জানে না দলের অফিস
ঢাকার কমলাপুরে কবি জসীমউদ্দীন রোডে ঠিকানা ধরে জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির খোঁজ করলে স্থানীয় বাসিন্দা মো. হায়দার মিয়া বলেন, সেখানে কোনো দল আছে, এমন কথা তিনি জানেন না। ফোনে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু বলেন, ঠিকানাটি তাঁর বাসার। স্ত্রী-সন্তানসহ থাকেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এখানেই হয়। অবশ্য পল্টনে আরেকটি অফিস আছে।
যাদের পাওয়া গেল
ঠিকানা ধরে অফিস মিলেছে, এমন দলগুলোর মধ্যে আছে নাগরিক ঐক্য, নৈতিক সমাজ, ন্যাপ (ভাসানী), এবি পার্টি, বাংলাদেশ এলডিপি, নতুন ধারা বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় বঙ্গলীগ, গণ রাজনৈতিক জোট, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গণ আজাদী লীগসহ কয়েকটি দলের। আর ভাগাভাগি করে অফিস আছে সৎ সংগ্রামী ভোটার পার্টি ও সোনার বাংলা পার্টির।
রাজধানীর বাইরের ঠিকানায়
রাজধানীর বাইরে থেকে দলের নিবন্ধন চেয়েছে অন্তত নয়টি দল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের ঠিকানায় রিপাবলিকান পার্টি, তৃণমূল জনতা পার্টি ও বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ, টাঙ্গাইলের ঠিকানায় বৈরাবরী পার্টি, সাতক্ষীরার ঠিকানায় যুব স্বেচ্ছাসেবক লীগ, নওগাঁর স্বদেশ কল্যাণ কর্মসূচি, ঝিনাইদহের ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, জয়পুরহাটের মুসকিল লীগ ও ময়মনসিংহের বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ। ইত্যাদি পার্টি নামের সংগঠনটির ঠিকানা মেলেনি নির্বাচন কমিশনের কাগজে।
নাকফুল বাংলাদেশ
ব্যতিক্রমী নামের জন্য আলোচনায় আছে নাকফুল বাংলাদেশ। দলের চেয়ারম্যান স্বপন রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশকে প্রতীকী অর্থে মায়ের মাধ্যমে বোঝানো হয়। আর মায়েরা সাধারণত নাকফুল পরেন। এখানে মায়ের বিশ্বাস, আবেগ, অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে নাকফুলকে দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই দল নারীকেন্দ্রিক একটি দল। বর্তমানে এই দলের ৩৩ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের সবাই নারী। এ ছাড়া ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই নারী। এই দলে জেলা, উপজেলার সভাপতিরা হবেন নারী। পুরুষেরা এই দলে কমিটিগুলোর সভাপতি হতে পারবেন না। তবে পুরুষেরা সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক হতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনে সংগঠনগুলোর নিবন্ধনের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সর্বশেষ তারিখ ছিল ৩০ অক্টোবর। এখন দেখার—কতগুলো সংগঠনকে নিবন্ধন দেয় কমিশন।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চক্রবর্ত্তী মনে করেন, নির্বাচন এলে সংগঠনের নিবন্ধনের সুযোগ অনেকেই নিয়ে থাকেন। তবে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে দলের কর্মকাণ্ড ও গণভিত্তি বিবেচনায় নিয়েই নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে