চার বছর ধরে বেতন-ভাতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ১২ সদস্য। সম্প্রতি তাঁরা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহেদ আহমেদ শওকতের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে ইউএনও বলেন, প্রতিবেদন পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শাহেদ আহমেদ শওকত নির্বাচিত হন। এক বছর ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে ইউপি সদস্যদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। এরপর ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নানা অজুহাতে তাঁদের বেতন-ভাতা দিতেন না। গত নির্বাচনে তিনিসহ ১১ জন ইউপি সদস্য পরাজিত হন। এরপরই ১২ জন ইউপি সদস্যের বেতন-ভাতা বাবদ পাওনা ২৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

জানা গেছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সরকারি খাত ও ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে পৃথক বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। প্রতি সদস্য সরকারি খাত থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা পাওয়ার নিয়ম রয়েছে।

ভুক্তভোগী জুনিয়াদ ইউপি সদস্যরা জানান, প্রথম বছর তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদ খাতের সম্মানী ভাতা পেয়েছেন। কিন্তু শেষ চার বছরে দেওয়া হয়নি। তবে সরকার প্রদত্ত সম্মানী ভাতা নিয়মিত পেয়েছেন। সদস্যপ্রতি ২ লাখ ১১ হাজার ২০০ টাকা করে ১২ সদস্যের চার বছরে বকেয়া রয়েছে ২৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকা। দ্রুত এসব বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

অভিযোগকারী ইউপি সদস্যের একজন তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘৪ বছরের ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে বকেয়া বেতন-ভাতা পাইনি। তখনকার চেয়ারম্যান শওকতকে একাধিকবার বেতন-ভাতা পরিশোধের তাগিদ দিলেও তিনি বিভিন্ন টালবাহানা ও গড়িমসি করেন। নির্বাচনের আগে টাকা পরিশোধ করবেন বলে আশ্বস্ত করলেও পরে আর দেননি। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমরা অভিযোগ দিয়েছি।’

তরিকুল আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের গত ৫ বছরে হাট ইজারা, হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, ভূমি অফিসের এক শতাংশ টাকা, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট বাবদ রাজস্ব আয়সহ বিভিন্ন খাত থেকে আয় হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান আমাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেননি।’

এ বিষয়ে জুনিয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহেদ আহমেদ শওকত বলেন, ‘করোনা ও বন্যার কারণে রাজস্ব আদায় করতে পারিনি। তহবিল শূন্য ছিল। এ কারণে পরিষদের খাত থেকে ইউপি সদস্যদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।’

বর্তমান চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, ‘আমার কাছে সদস্যরা ভাতার টাকা চাচ্ছেন। পরিষদে টাকা নেই। এরপর বর্তমান সদস্যের বেতন-ভাতা রয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান পরিষদ থেকে টাকা উঠিয়েছেন অথচ সদস্যদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেননি। তাঁর ঋণ আমি কেন দেব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীনেশ সরকার বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য আইসিটি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার আলমগীর হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। কর্তৃপক্ষ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’

উল্লেখ, শাহেদ আহমেদ শওকত গত নির্বাচন আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তিনি দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী হাসানুজ্জামান হাসানের কাছে পরাজিত হন।