স্বপ্না রেজা
কাগজে-কলমে লঞ্চটি যে মাস্টারের চালানোর কথা, তিনি চালাচ্ছিলেন না। এমন ঘটনা কানে পৌঁছাতেই মনে পড়ল ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালকের পরিবর্তে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সবই তো সম্ভব, তাই না? চারপাশে ঘন অন্ধকার। মাঝে আগুনের লেলিহান শিখা দলা পাকিয়ে দাউ দাউ উল্লাসে জ্বলছে। আগুনের নিচে অথই পানি। পানির ওপরে আগুন জ্বলতে দেখা যায় না সচরাচর। আগুন নেভাতে পানি লাগে। অথচ সেই পানির ওপরই আগুন জ্বলে। আগুন নেভে না; বরং আগুন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল, দেহ ছাই করে দিল। আবার বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগিয়ে মানুষকে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইন্ধন দিল। নাসিরুল্লাহ স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে প্রাণে বাঁচতে পানিতে ঝাঁপ দিলেন। স্ত্রীকে ফিরে পেলেন, কন্যা তাবাসসুমকে পেলেন না। আবার ইসমাইল আকন বৃদ্ধ মাকে বাঁচাতে তাঁকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিলেন স্ত্রী-কন্যাকে লঞ্চে রেখে। মা বেঁচে গেলেন, কিন্তু স্ত্রী-কন্যাকে আর ইসমাইল আকন খুঁজে পেলেন না। এভাবে প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই নদীতে ঝাঁপ দিলেন। কেউ সাঁতরে তীরে উঠল। কেউ পানির তলে হারিয়ে গেল। সবই ঘটতে লাগল বেঁচে থাকার আর্তনাদে, আর্তচিৎকারে। আহারে কী মায়া জীবনের!
বৃহস্পতিবারের মধ্যরাত কেমন ছিল ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর, প্রত্যক্ষদর্শীরা ভালো বলতে পারবেন। যাঁরা পুড়ে গেলেন, প্রিয়জন-স্বজন হারালেন, তাঁরা বলতে পারবেন। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণ, স্বজন-প্রিয়জন খুঁজে না পাওয়ার যন্ত্রণা, কেমন হয় তাঁরা বলতে পারবেন। বললেনও নদীর তীরে প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার ব্যাকুল অপেক্ষায়। হোক তা লাশ। আমরা যারা দূরে বসে দেখছি, জানছি, তারা কেবল কল্পনাই করতে পারি, পেরেছি। কিন্তু ‘শিউরে কম উঠছি না একটুও। মধ্যরাতের বিভীষিকা প্রচার করছিল স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলগুলো। প্রথম দেখায় মনে হচ্ছিল, কোনো চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ হয়তোবা প্রচার করা হচ্ছে। অন্ধকারের মধ্যে আগুন জ্বলছে। কিন্তু স্ক্রলবারে ব্রেকিং নিউজ নির্বাক করে দিল। চলচ্চিত্র নয়, এ মর্মান্তিক বাস্তব ঘটনা।
বছর প্রায় শেষ। যাওয়ার বেলায় তার এ কী আচরণ! রাতের অন্ধকার মিলে যেতে যেতে মৃতের সংখ্যা বলে দিয়ে যেতে লাগল। অগ্নিদগ্ধের সংখ্যা বলে দিতে লাগল। শেষ করল না কোনো হিসাব। অসম্পূর্ণ হিসাবে খাতা খোলা অবস্থায় রাতের অন্ধকার আবার গাঢ় হলো। এখনো অনেক যাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজন খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁর প্রিয়জনকে, বুকের ধনকে। হাসপাতাল থেকে ভেসে আসছে কান্নার রোল। অগ্নিদগ্ধের যন্ত্রণার চেয়ে এ যন্ত্রণা কঠিন!
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি মধ্যরাতে সুগন্ধা নদীতে আগুনে একা পোড়েনি, যাত্রী নিয়ে পুড়েছে। ইতিহাসে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এই প্রথম—ওই অঞ্চলের অনেকেই তা-ই বলছেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে নৌপথে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও ক্রমেই তা কমে গিয়েছিল। যদিও চলতি বছরে নৌপথে প্রায় ২০০টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় একটা বড় ফেরি যানবাহন, যাত্রী সব নিয়ে দিব্যি ডুবে গেল লোকজনের সামনে দিনদুপুরে। তার রেশ কাটতে না কাটতে বড় একটি লঞ্চ তার যাত্রীদের নিয়ে পুড়ে গেল ঘন অন্ধকারে নদীর বুকে।
তদন্ত কমিটি গঠন করতে, টিভিতে টক শো করতে, সংশ্লিষ্টদের বিবৃতি দিতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ হয় না। কিন্তু এসব কোনোই কাজে লাগেনি অগ্নিদগ্ধ, মৃত ও পানির তলে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর। কখনোই কাজে লাগে না। এসব বরাবরের মতো প্রহসন বলে কেউ কেউ মনে করেন। গতানুগতিক লোকদেখানো ভাবেন। নৌপরিবহন মালিক সমিতির একজন নেতা তো বলেই ফেললেন, লঞ্চের তিনটি তলায় একই সঙ্গে আগুন লাগার পেছনে কোনো নাশকতার কারণ আছে কি না, তা দেখতে হবে। দেখার জন্য তিনি জোর দাবি জানালেন। তাঁর কথার মানে দাঁড়ায়, লঞ্চের প্রতিটি তলায় একই সঙ্গে আগুন লাগাটা লঞ্চের ইঞ্জিনের ত্রুটি নয়; বরং এটা নাশকতা হতে পারে। প্রাথমিক তদন্তের আগে নেতার এমন অভিমত লঞ্চমালিককে ছাড় পাইয়ে দেওয়ার কৌশল হতে পারে বলে মানুষের অতীত অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। তিনি লঞ্চটিতে অবস্থান না করেই কথাটা বললেন। অথচ বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চটি শুরুতেই গরম হয়ে উঠছিল ক্ষণে ক্ষণে। সেই সঙ্গে বিকট শব্দ হচ্ছিল। যাত্রীরা লঞ্চচালক ও কর্তৃপক্ষকে সে কথা বললেও তাঁরা গুরুত্ব দেননি। লঞ্চ স্বাভাবিক গতির চেয়েও বেশি গতিতে ছুটছিল বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন। এমনকি আগুন জ্বলে ওঠার পরও তীরে না ভিড়িয়ে লঞ্চকে তাঁরা চালু রেখেছিলেন। লঞ্চে কর্মরত স্টাফ ও চালক যাত্রীদের জীবন রক্ষার কথা মোটেও ভাবেননি। ভাবলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা হয়তো ঘটত না। লঞ্চে যাঁরা কর্মরত থাকেন, তাঁরা কতটুকু যাত্রীদের জানমাল রক্ষার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন কিংবা তাঁদের নিয়োগ যোগ্যতাই-বা কী, এমন প্রশ্ন নৌপরিবহনে যাতায়াতকারীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। যদি ইতিপূর্বে তারা ভেবে না থাকে। জানা গেছে, লঞ্চে মাত্র চারটি অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র ছিল। আবার অধিকাংশ লঞ্চে কর্মরতরা এর ব্যবহার জানেন না। কীভাবে আগুন নেভাতে হয়, ডুবে যাওয়া যাত্রীকে কীভাবে উদ্ধার করতে হয়—এসবের কিছুই জানেন না তাঁরা। সাধারণত নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে মাস্টার নিয়োগের বিষয়টি জানাতে হয়। অথচ এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের চারজন মাস্টার ও চালকের মধ্যে তিনজনের নিয়োগের বিষয়টি মালিক অধিদপ্তরকে জানাননি। বুঝলাম জানাননি, তো না জানালে কী এ বিষয়টি দেখার কেউ নেই যে কেন তারা জানায়নি! দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরই অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা জানবেন, সে-ওবা কেমন কথা!
নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সংখ্যা কম নয়। সম্ভবত সেই কারণে নৌপরিবহনের প্রতি যাত্রীদের মনোযোগ বাড়াতে মালিকেরা রূপসৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বেশি লক্ষ রাখেন। থ্রি স্টার বা ফোর স্টার হোটেলের আদলে কেবিন সাজান, ব্যবস্থাও রাখেন। ডকের চেহারায় আনেন দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ। সুযোগ-সুবিধাও আধুনিক। সবকিছুই বাহ্যিক। ভেতর ভিন্ন। হয় মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন অথবা ত্রুটিজনিত কারণে যন্ত্রাংশ অকেজো। এ লেখাটি যখন লিখছি, তখন এমভি অভিযান-১০-এর তদন্ত কমিটির প্রধান বলেছেন, তাঁরা লঞ্চের ইঞ্জিনে কিছু ত্রুটি পেয়েছেন। এ ছাড়া কাগজ-কলমে লঞ্চটি যে মাস্টারের চালানোর কথা, তিনি চালাচ্ছিলেন না। এমন ঘটনা কানে পৌঁছাতেই মনে পড়ল ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালকের পরিবর্তে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সবই তো সম্ভব, তাই না? এই সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে শুধু দেখভাল ও মনিটরিংয়ের অভাবে। স্টিয়ারিং ভুল ও অদক্ষ হাতে থাকার দায় কেবল যিনি লঞ্চ বা গাড়ি চালাচ্ছেন তাঁরই নয়; বরং যিনি এ বিষয় দেখভাল করার জন্য রয়েছেন, তাঁর ওপরই বেশি বর্তানো উচিত।
সুগন্ধা নদীর বুকে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল, নিশ্চয়ই তার প্রতিটি জলকণায় সেই স্মৃতি রয়ে যাবে। যেখানে বেঁচে থাকার ব্যাকুল কান্নাও থাকবে নদীর জলে মিশে। লেখা শেষ হওয়ার মুহূর্তে ৫১ জনের খোঁজ মেলেনি। খোঁজ না মিললে হয়তো তাঁদের পরিজন, প্রিয়জন মনে রাখবেন এবং বলবেন, সুগন্ধা একটি নদীর নাম।
স্বপ্না রেজা: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
কাগজে-কলমে লঞ্চটি যে মাস্টারের চালানোর কথা, তিনি চালাচ্ছিলেন না। এমন ঘটনা কানে পৌঁছাতেই মনে পড়ল ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালকের পরিবর্তে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সবই তো সম্ভব, তাই না? চারপাশে ঘন অন্ধকার। মাঝে আগুনের লেলিহান শিখা দলা পাকিয়ে দাউ দাউ উল্লাসে জ্বলছে। আগুনের নিচে অথই পানি। পানির ওপরে আগুন জ্বলতে দেখা যায় না সচরাচর। আগুন নেভাতে পানি লাগে। অথচ সেই পানির ওপরই আগুন জ্বলে। আগুন নেভে না; বরং আগুন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল, দেহ ছাই করে দিল। আবার বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগিয়ে মানুষকে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইন্ধন দিল। নাসিরুল্লাহ স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে প্রাণে বাঁচতে পানিতে ঝাঁপ দিলেন। স্ত্রীকে ফিরে পেলেন, কন্যা তাবাসসুমকে পেলেন না। আবার ইসমাইল আকন বৃদ্ধ মাকে বাঁচাতে তাঁকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিলেন স্ত্রী-কন্যাকে লঞ্চে রেখে। মা বেঁচে গেলেন, কিন্তু স্ত্রী-কন্যাকে আর ইসমাইল আকন খুঁজে পেলেন না। এভাবে প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই নদীতে ঝাঁপ দিলেন। কেউ সাঁতরে তীরে উঠল। কেউ পানির তলে হারিয়ে গেল। সবই ঘটতে লাগল বেঁচে থাকার আর্তনাদে, আর্তচিৎকারে। আহারে কী মায়া জীবনের!
বৃহস্পতিবারের মধ্যরাত কেমন ছিল ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর, প্রত্যক্ষদর্শীরা ভালো বলতে পারবেন। যাঁরা পুড়ে গেলেন, প্রিয়জন-স্বজন হারালেন, তাঁরা বলতে পারবেন। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণ, স্বজন-প্রিয়জন খুঁজে না পাওয়ার যন্ত্রণা, কেমন হয় তাঁরা বলতে পারবেন। বললেনও নদীর তীরে প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার ব্যাকুল অপেক্ষায়। হোক তা লাশ। আমরা যারা দূরে বসে দেখছি, জানছি, তারা কেবল কল্পনাই করতে পারি, পেরেছি। কিন্তু ‘শিউরে কম উঠছি না একটুও। মধ্যরাতের বিভীষিকা প্রচার করছিল স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলগুলো। প্রথম দেখায় মনে হচ্ছিল, কোনো চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ হয়তোবা প্রচার করা হচ্ছে। অন্ধকারের মধ্যে আগুন জ্বলছে। কিন্তু স্ক্রলবারে ব্রেকিং নিউজ নির্বাক করে দিল। চলচ্চিত্র নয়, এ মর্মান্তিক বাস্তব ঘটনা।
বছর প্রায় শেষ। যাওয়ার বেলায় তার এ কী আচরণ! রাতের অন্ধকার মিলে যেতে যেতে মৃতের সংখ্যা বলে দিয়ে যেতে লাগল। অগ্নিদগ্ধের সংখ্যা বলে দিতে লাগল। শেষ করল না কোনো হিসাব। অসম্পূর্ণ হিসাবে খাতা খোলা অবস্থায় রাতের অন্ধকার আবার গাঢ় হলো। এখনো অনেক যাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজন খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁর প্রিয়জনকে, বুকের ধনকে। হাসপাতাল থেকে ভেসে আসছে কান্নার রোল। অগ্নিদগ্ধের যন্ত্রণার চেয়ে এ যন্ত্রণা কঠিন!
এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি মধ্যরাতে সুগন্ধা নদীতে আগুনে একা পোড়েনি, যাত্রী নিয়ে পুড়েছে। ইতিহাসে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এই প্রথম—ওই অঞ্চলের অনেকেই তা-ই বলছেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে নৌপথে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও ক্রমেই তা কমে গিয়েছিল। যদিও চলতি বছরে নৌপথে প্রায় ২০০টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় একটা বড় ফেরি যানবাহন, যাত্রী সব নিয়ে দিব্যি ডুবে গেল লোকজনের সামনে দিনদুপুরে। তার রেশ কাটতে না কাটতে বড় একটি লঞ্চ তার যাত্রীদের নিয়ে পুড়ে গেল ঘন অন্ধকারে নদীর বুকে।
তদন্ত কমিটি গঠন করতে, টিভিতে টক শো করতে, সংশ্লিষ্টদের বিবৃতি দিতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ হয় না। কিন্তু এসব কোনোই কাজে লাগেনি অগ্নিদগ্ধ, মৃত ও পানির তলে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর। কখনোই কাজে লাগে না। এসব বরাবরের মতো প্রহসন বলে কেউ কেউ মনে করেন। গতানুগতিক লোকদেখানো ভাবেন। নৌপরিবহন মালিক সমিতির একজন নেতা তো বলেই ফেললেন, লঞ্চের তিনটি তলায় একই সঙ্গে আগুন লাগার পেছনে কোনো নাশকতার কারণ আছে কি না, তা দেখতে হবে। দেখার জন্য তিনি জোর দাবি জানালেন। তাঁর কথার মানে দাঁড়ায়, লঞ্চের প্রতিটি তলায় একই সঙ্গে আগুন লাগাটা লঞ্চের ইঞ্জিনের ত্রুটি নয়; বরং এটা নাশকতা হতে পারে। প্রাথমিক তদন্তের আগে নেতার এমন অভিমত লঞ্চমালিককে ছাড় পাইয়ে দেওয়ার কৌশল হতে পারে বলে মানুষের অতীত অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। তিনি লঞ্চটিতে অবস্থান না করেই কথাটা বললেন। অথচ বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চটি শুরুতেই গরম হয়ে উঠছিল ক্ষণে ক্ষণে। সেই সঙ্গে বিকট শব্দ হচ্ছিল। যাত্রীরা লঞ্চচালক ও কর্তৃপক্ষকে সে কথা বললেও তাঁরা গুরুত্ব দেননি। লঞ্চ স্বাভাবিক গতির চেয়েও বেশি গতিতে ছুটছিল বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন। এমনকি আগুন জ্বলে ওঠার পরও তীরে না ভিড়িয়ে লঞ্চকে তাঁরা চালু রেখেছিলেন। লঞ্চে কর্মরত স্টাফ ও চালক যাত্রীদের জীবন রক্ষার কথা মোটেও ভাবেননি। ভাবলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা হয়তো ঘটত না। লঞ্চে যাঁরা কর্মরত থাকেন, তাঁরা কতটুকু যাত্রীদের জানমাল রক্ষার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন কিংবা তাঁদের নিয়োগ যোগ্যতাই-বা কী, এমন প্রশ্ন নৌপরিবহনে যাতায়াতকারীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। যদি ইতিপূর্বে তারা ভেবে না থাকে। জানা গেছে, লঞ্চে মাত্র চারটি অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র ছিল। আবার অধিকাংশ লঞ্চে কর্মরতরা এর ব্যবহার জানেন না। কীভাবে আগুন নেভাতে হয়, ডুবে যাওয়া যাত্রীকে কীভাবে উদ্ধার করতে হয়—এসবের কিছুই জানেন না তাঁরা। সাধারণত নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে মাস্টার নিয়োগের বিষয়টি জানাতে হয়। অথচ এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের চারজন মাস্টার ও চালকের মধ্যে তিনজনের নিয়োগের বিষয়টি মালিক অধিদপ্তরকে জানাননি। বুঝলাম জানাননি, তো না জানালে কী এ বিষয়টি দেখার কেউ নেই যে কেন তারা জানায়নি! দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরই অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা জানবেন, সে-ওবা কেমন কথা!
নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সংখ্যা কম নয়। সম্ভবত সেই কারণে নৌপরিবহনের প্রতি যাত্রীদের মনোযোগ বাড়াতে মালিকেরা রূপসৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বেশি লক্ষ রাখেন। থ্রি স্টার বা ফোর স্টার হোটেলের আদলে কেবিন সাজান, ব্যবস্থাও রাখেন। ডকের চেহারায় আনেন দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ। সুযোগ-সুবিধাও আধুনিক। সবকিছুই বাহ্যিক। ভেতর ভিন্ন। হয় মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন অথবা ত্রুটিজনিত কারণে যন্ত্রাংশ অকেজো। এ লেখাটি যখন লিখছি, তখন এমভি অভিযান-১০-এর তদন্ত কমিটির প্রধান বলেছেন, তাঁরা লঞ্চের ইঞ্জিনে কিছু ত্রুটি পেয়েছেন। এ ছাড়া কাগজ-কলমে লঞ্চটি যে মাস্টারের চালানোর কথা, তিনি চালাচ্ছিলেন না। এমন ঘটনা কানে পৌঁছাতেই মনে পড়ল ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালকের পরিবর্তে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সবই তো সম্ভব, তাই না? এই সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে শুধু দেখভাল ও মনিটরিংয়ের অভাবে। স্টিয়ারিং ভুল ও অদক্ষ হাতে থাকার দায় কেবল যিনি লঞ্চ বা গাড়ি চালাচ্ছেন তাঁরই নয়; বরং যিনি এ বিষয় দেখভাল করার জন্য রয়েছেন, তাঁর ওপরই বেশি বর্তানো উচিত।
সুগন্ধা নদীর বুকে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল, নিশ্চয়ই তার প্রতিটি জলকণায় সেই স্মৃতি রয়ে যাবে। যেখানে বেঁচে থাকার ব্যাকুল কান্নাও থাকবে নদীর জলে মিশে। লেখা শেষ হওয়ার মুহূর্তে ৫১ জনের খোঁজ মেলেনি। খোঁজ না মিললে হয়তো তাঁদের পরিজন, প্রিয়জন মনে রাখবেন এবং বলবেন, সুগন্ধা একটি নদীর নাম।
স্বপ্না রেজা: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে