চিররঞ্জন সরকার
না, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ ভালো করেনি। সেই ২০০৭ সাল থেকে টানা চারটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তিনের বৃত্তে ঘুরপাক খেয়েছে। চারটি বিশ্বকাপেই ছিল তিনটি করে জয়। সেই বৃত্ত ছিঁড়ে বেরোনোর মিশন ছিল এবার। কিন্তু তাতে সফলতা আসেনি; বরং অবনমন হয়েছে। তিনের বদলে এবার জয় দুটি! বাংলাদেশ জিতেছে কেবল আফগানিস্তান আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। বাকি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ একতরফাভাবে হেরেছে।
সবচেয়ে আলোচিত হার ছিল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। এই পরাজয় একটা অন্তঃসারশূন্য দলের ছবিই তুলে ধরেছে। ২৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ডাচদের বিপক্ষে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। গ্লানিমাখা এই হারের পর বাংলাদেশের সমর্থকদের উদ্দেশে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে। হার্শা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনুসরণ করে আসছেন। বাংলাদেশ ভালো করলে অনেকবারই তাঁর মুখে প্রশংসা শোনা গেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়মিত অনুসরণের অভিজ্ঞতা থেকেই হার্শা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে সমর্থকদের উদ্দেশে একটা প্রশ্ন রেখেছেন, ‘বাংলাদেশকে কিছু কঠিন প্রশ্ন নিজেদের করতে হবে। বাংলাদেশি সমর্থকেরা আপনাদের মতে সাকিব, মুশফিক ও তামিমদের ব্যাচের পর আর সত্যিকার অর্থে কোনো বিশ্বমানের
খেলোয়াড় কি এসেছে?’
হঠাৎ হার্শার এই প্রশ্ন করার কারণ কী? হতে পারে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেনদের এখনো বিশ্বমানের মনে করেন না এই ক্রিকেট বিশ্লেষক। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় লিটনের। দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরও ধারাবাহিক হতে পারেননি লিটন। এবারের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের বড় ভরসার জায়গা ছিলেন তিনি। তবে নিজের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করতে পারেননি। দুই ম্যাচে অর্ধশতক করে আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ওই দুটি ইনিংসকেই বড় শতকে রূপান্তর করতে পারেননি।
জাতীয় দলে নাজমুলের অভিষেক ২০১৭ সালে। অনেক দিন ধরেই একাদশে নিয়মিত নাজমুল। তবে তিনি এবারের বিশ্বকাপে ‘চূড়ান্তভাবে’ ব্যর্থ। আফগানিস্তান ম্যাচে ফিফটি করা নাজমুল পরের ম্যাচগুলোতে ভালো করতে পারেননি; যা পুরো দলকে ভুগিয়েছে।সাত বছর ধরে বাংলাদেশ দলে নিয়মিত খেলা মেহেদী হাসান মিরাজও এই বিশ্বকাপে তেমন কিছু করতে পারেননি। তৌহিদ হৃদয়, তাসকিন, মোস্তাফিজ প্রমুখ ক্রিকেটারের ওপরই ভরসা রেখে বিশ্বকাপে দারুণ কিছুর প্রত্যাশায় ছিলেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা। কিন্তু তাঁরা সবাই ব্যর্থ।
পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরামও বাংলাদেশ দলের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে। গড়পড়তা পারফরম্যান্সও বাংলাদেশ করতে পারেনি। বিশ্বকাপে আসার আগে অনেক সমস্যার কথা শুনেছি, জানি না এর পেছনে রাজনীতি কী, কারণটা কী? দেশকে রাখতে হবে সবার আগে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ আর নিজেদের মধ্যে দূরত্ব থাকবে পরে।’
আকরাম আরও যোগ করেন, ‘বলছি না তাদের বিশ্বকাপ জেতা উচিত। তবে অন্তত বড় দলগুলোর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করা উচিত। নতুন ব্যাটার খুঁজতে হবে। সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, কীভাবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হবে, কোন উইকেটে হবে।’
সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হওয়া ছাড়া ক্রিকেটে আমাদের আপাতত অন্য কোনো উপহার নেই। একের পর এক ব্যর্থতার চোরাবালিতে ডুবে যেতে থাকার পরও এ দেশের ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট কারও পক্ষে কি এই সমালোচনাগুলো থেকে ‘প্রকৃত শিক্ষা’ নেওয়া সম্ভব হবে? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় ক্রিকেট দলের কাছ থেকে একরাশ হতাশা ছাড়া আর কিছুই মিলবে না।
ক্রিকেটে আমরা এগোচ্ছি না বা এগোতে পারছি না। এটা একটা হতাশার দিক। তবে সবার আগে এ কথা মনে রাখা দরকার, ক্রিকেট দিয়ে দেশ এগোয় না। বড়জোর দেশের নাম ফাটে। দেশ এগোয় শিক্ষায়, গবেষণায়, উদ্ভাবনে। আমাদের জন্য সবচেয়ে গ্লানির দিক হচ্ছে—শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবনেও আমরা এগোচ্ছি না; বরং দিন দিন যেন পিছিয়ে পড়ছি।
গবেষণা ছাড়া শিক্ষাকে আর শিক্ষা ছাড়া দেশকে এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব। পৃথিবীর সব দেশেই গবেষণাকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা সবচেয়ে কম মূল্য দিই গবেষণাকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও গবেষণা প্রধান বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয় না।
উচ্চশিক্ষায় ইউজিসি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটে ১৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ২৪ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে গবেষণা খাতে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছিল।
দেশের সবচেয়ে সেরা বিদ্যাপীঠের বাজেটের দিকে তাকালেও বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেটে গবেষণা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর সিংহভাগ খরচ হবে (৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ) শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়।
এই হচ্ছে আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় গবেষণা খাতে ব্যয় বরাদ্দের চিত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো তবু কিছু টাকা ধরা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে গবেষণায় কোনো টাকাই বরাদ্দ থাকে না! উচ্চশিক্ষায় গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দ না রাখার ঘটনা সম্ভবত বাংলাদেশেই প্রথম। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে নতুন জ্ঞান ও তথ্যের অনুসন্ধান।
অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দ না রাখায় নতুন জ্ঞান কীভাবে তৈরি করবে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মৌলিক কাজই হচ্ছে গবেষণা করা। গবেষণাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (প্রাথমিক-মাধ্যমিক-কলেজ) পার্থক্য। অথচ বিশ্বের মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণাকে প্রাধান্য দিলেও আমাদের এখানে এ চিত্র উল্টো।
যদিও পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ ক্রিকেট খেলে না, তবু ক্রিকেট খেলিয়ে বিশ্বের প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম আছে। কিন্তু অঙ্ক, বিজ্ঞান গবেষণায় কি আছে? নম্বর থিওরি, ফিজিকস, অপটিকস, মেটামরফিক রক কিংবা ভূমিকম্প গবেষণায় কি আছে? আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্রিকেট ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই আমাদের কোনো অবস্থান ও কৃতিত্ব নেই। এমনকি বিনোদনের জগতেও নেই।
বিনোদন কিংবা ক্রীড়াজগতে আমাদের অবস্থান যেমনই হোক, তা নিয়ে বড় বেশি খেদ নেই। কেননা তাতে জাতি হিসেবে আমরা খুব বেশি উন্নতি বা অবনতির সীমায় পৌঁছাতে পারব না! আমাদের আফসোস একাডেমিশিয়ানদের নিয়ে, যাঁরা উচ্চশিক্ষার জগতে যুক্ত, বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটগুলোতে পড়ানো এবং গবেষণার কাজে ব্যাপৃত। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাগ কাটার সুযোগ তাঁদেরই রয়েছে।
একাডেমিক প্রতিটি বিষয়কে ৮-১০টা করে প্রধান ভাগে ভাগ করা যাক। যেমন ফিজিকস। এর ভাগগুলো হতে পারে অপটিকস, সাউন্ড, স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি ইত্যাদি ইত্যাদি। অঙ্কের ভাগগুলো হতে পারে টপোলজি, অ্যালজেবরা, নম্বর থিওরি—এসব। উল্লিখিত বিষয়ে বাংলাদেশের গবেষকদের স্থান ঠিক কোথায়?
আমাদের উচ্চশিক্ষিত ছাত্রদের উজ্জ্বলতর অংশই পাড়ি দেন বিদেশে। সামান্য অংশ উচ্চতর শিক্ষার জন্য, আর বেশির ভাগই আরও ভালো, সমৃদ্ধ জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষায়। উচ্চশিক্ষায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আমরা মূলত আমেরিকা এবং সঙ্গে অন্য কিছু দেশকে বছরের পর বছর উপহার দিয়ে চলেছি কিছু ফিনিশড প্রোডাক্ট, যা তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতিতে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে।
আর কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে আমরা আমাদের জন্য তৈরি করে চলেছি মূলত মধ্যমানের কিছু গবেষক, যাঁরা জ্ঞানকে ‘ফলদায়ক’ করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। গবেষণা খাতে যতটুকু যা ব্যয় হচ্ছে তার অনেকাংশই অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের দেশে গবেষণায় যেমন বরাদ্দ নেই, আবার কে কী বিষয়ে গবেষণা করবে, সে বিষয়ে কোনো সুষ্ঠু নিয়মনীতি ও দিকনির্দেশনাও নেই।
অথচ দেশের কল্যাণের জন্য আমাদের শিক্ষা-গবেষণায় অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। প্রয়োজন বিদেশে পাড়ি দিতে চাওয়া ছাত্রদের উজ্জ্বলতর অংশকে ধরে রাখা বা সময়মতো দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা; অন্তত তাঁদের মধ্যে যাঁরা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জগতে থাকতে চান তাঁদের। যাঁরা বিদেশে পাড়ি দেন তাঁদের সবাই যে ভীষণ ভালো, তা হয়তো নয়। কিন্তু যাঁরা প্রকৃতই ভীষণ ভালো, তাঁদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। এই ভীষণ ভালোরা যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দাগ কাটতে পারবেন, প্রয়োজনে তাঁদের বেশি মাইনে ও সুবিধা দিতে হবে, তাঁরা বিদেশে থাকলে যা পেতেন দিতে হবে তা-ই।
মনে রাখতে হবে, শিক্ষার সঙ্গে গবেষণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গবেষণাহীন শিক্ষা কোনো দিন কাঙ্ক্ষিত ফল উপহার দিতে পারে না।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
না, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ ভালো করেনি। সেই ২০০৭ সাল থেকে টানা চারটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তিনের বৃত্তে ঘুরপাক খেয়েছে। চারটি বিশ্বকাপেই ছিল তিনটি করে জয়। সেই বৃত্ত ছিঁড়ে বেরোনোর মিশন ছিল এবার। কিন্তু তাতে সফলতা আসেনি; বরং অবনমন হয়েছে। তিনের বদলে এবার জয় দুটি! বাংলাদেশ জিতেছে কেবল আফগানিস্তান আর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। বাকি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ একতরফাভাবে হেরেছে।
সবচেয়ে আলোচিত হার ছিল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। এই পরাজয় একটা অন্তঃসারশূন্য দলের ছবিই তুলে ধরেছে। ২৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ডাচদের বিপক্ষে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। গ্লানিমাখা এই হারের পর বাংলাদেশের সমর্থকদের উদ্দেশে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে। হার্শা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনুসরণ করে আসছেন। বাংলাদেশ ভালো করলে অনেকবারই তাঁর মুখে প্রশংসা শোনা গেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়মিত অনুসরণের অভিজ্ঞতা থেকেই হার্শা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে সমর্থকদের উদ্দেশে একটা প্রশ্ন রেখেছেন, ‘বাংলাদেশকে কিছু কঠিন প্রশ্ন নিজেদের করতে হবে। বাংলাদেশি সমর্থকেরা আপনাদের মতে সাকিব, মুশফিক ও তামিমদের ব্যাচের পর আর সত্যিকার অর্থে কোনো বিশ্বমানের
খেলোয়াড় কি এসেছে?’
হঠাৎ হার্শার এই প্রশ্ন করার কারণ কী? হতে পারে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেনদের এখনো বিশ্বমানের মনে করেন না এই ক্রিকেট বিশ্লেষক। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় লিটনের। দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরও ধারাবাহিক হতে পারেননি লিটন। এবারের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের বড় ভরসার জায়গা ছিলেন তিনি। তবে নিজের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করতে পারেননি। দুই ম্যাচে অর্ধশতক করে আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ওই দুটি ইনিংসকেই বড় শতকে রূপান্তর করতে পারেননি।
জাতীয় দলে নাজমুলের অভিষেক ২০১৭ সালে। অনেক দিন ধরেই একাদশে নিয়মিত নাজমুল। তবে তিনি এবারের বিশ্বকাপে ‘চূড়ান্তভাবে’ ব্যর্থ। আফগানিস্তান ম্যাচে ফিফটি করা নাজমুল পরের ম্যাচগুলোতে ভালো করতে পারেননি; যা পুরো দলকে ভুগিয়েছে।সাত বছর ধরে বাংলাদেশ দলে নিয়মিত খেলা মেহেদী হাসান মিরাজও এই বিশ্বকাপে তেমন কিছু করতে পারেননি। তৌহিদ হৃদয়, তাসকিন, মোস্তাফিজ প্রমুখ ক্রিকেটারের ওপরই ভরসা রেখে বিশ্বকাপে দারুণ কিছুর প্রত্যাশায় ছিলেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা। কিন্তু তাঁরা সবাই ব্যর্থ।
পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরামও বাংলাদেশ দলের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে। গড়পড়তা পারফরম্যান্সও বাংলাদেশ করতে পারেনি। বিশ্বকাপে আসার আগে অনেক সমস্যার কথা শুনেছি, জানি না এর পেছনে রাজনীতি কী, কারণটা কী? দেশকে রাখতে হবে সবার আগে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ আর নিজেদের মধ্যে দূরত্ব থাকবে পরে।’
আকরাম আরও যোগ করেন, ‘বলছি না তাদের বিশ্বকাপ জেতা উচিত। তবে অন্তত বড় দলগুলোর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করা উচিত। নতুন ব্যাটার খুঁজতে হবে। সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, কীভাবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হবে, কোন উইকেটে হবে।’
সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হওয়া ছাড়া ক্রিকেটে আমাদের আপাতত অন্য কোনো উপহার নেই। একের পর এক ব্যর্থতার চোরাবালিতে ডুবে যেতে থাকার পরও এ দেশের ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট কারও পক্ষে কি এই সমালোচনাগুলো থেকে ‘প্রকৃত শিক্ষা’ নেওয়া সম্ভব হবে? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় ক্রিকেট দলের কাছ থেকে একরাশ হতাশা ছাড়া আর কিছুই মিলবে না।
ক্রিকেটে আমরা এগোচ্ছি না বা এগোতে পারছি না। এটা একটা হতাশার দিক। তবে সবার আগে এ কথা মনে রাখা দরকার, ক্রিকেট দিয়ে দেশ এগোয় না। বড়জোর দেশের নাম ফাটে। দেশ এগোয় শিক্ষায়, গবেষণায়, উদ্ভাবনে। আমাদের জন্য সবচেয়ে গ্লানির দিক হচ্ছে—শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবনেও আমরা এগোচ্ছি না; বরং দিন দিন যেন পিছিয়ে পড়ছি।
গবেষণা ছাড়া শিক্ষাকে আর শিক্ষা ছাড়া দেশকে এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব। পৃথিবীর সব দেশেই গবেষণাকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা সবচেয়ে কম মূল্য দিই গবেষণাকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও গবেষণা প্রধান বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয় না।
উচ্চশিক্ষায় ইউজিসি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটে ১৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ২৪ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে গবেষণা খাতে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছিল।
দেশের সবচেয়ে সেরা বিদ্যাপীঠের বাজেটের দিকে তাকালেও বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেটে গবেষণা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর সিংহভাগ খরচ হবে (৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ) শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়।
এই হচ্ছে আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় গবেষণা খাতে ব্যয় বরাদ্দের চিত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো তবু কিছু টাকা ধরা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে গবেষণায় কোনো টাকাই বরাদ্দ থাকে না! উচ্চশিক্ষায় গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দ না রাখার ঘটনা সম্ভবত বাংলাদেশেই প্রথম। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে নতুন জ্ঞান ও তথ্যের অনুসন্ধান।
অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দ না রাখায় নতুন জ্ঞান কীভাবে তৈরি করবে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মৌলিক কাজই হচ্ছে গবেষণা করা। গবেষণাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (প্রাথমিক-মাধ্যমিক-কলেজ) পার্থক্য। অথচ বিশ্বের মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণাকে প্রাধান্য দিলেও আমাদের এখানে এ চিত্র উল্টো।
যদিও পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ ক্রিকেট খেলে না, তবু ক্রিকেট খেলিয়ে বিশ্বের প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম আছে। কিন্তু অঙ্ক, বিজ্ঞান গবেষণায় কি আছে? নম্বর থিওরি, ফিজিকস, অপটিকস, মেটামরফিক রক কিংবা ভূমিকম্প গবেষণায় কি আছে? আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্রিকেট ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই আমাদের কোনো অবস্থান ও কৃতিত্ব নেই। এমনকি বিনোদনের জগতেও নেই।
বিনোদন কিংবা ক্রীড়াজগতে আমাদের অবস্থান যেমনই হোক, তা নিয়ে বড় বেশি খেদ নেই। কেননা তাতে জাতি হিসেবে আমরা খুব বেশি উন্নতি বা অবনতির সীমায় পৌঁছাতে পারব না! আমাদের আফসোস একাডেমিশিয়ানদের নিয়ে, যাঁরা উচ্চশিক্ষার জগতে যুক্ত, বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটগুলোতে পড়ানো এবং গবেষণার কাজে ব্যাপৃত। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাগ কাটার সুযোগ তাঁদেরই রয়েছে।
একাডেমিক প্রতিটি বিষয়কে ৮-১০টা করে প্রধান ভাগে ভাগ করা যাক। যেমন ফিজিকস। এর ভাগগুলো হতে পারে অপটিকস, সাউন্ড, স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি ইত্যাদি ইত্যাদি। অঙ্কের ভাগগুলো হতে পারে টপোলজি, অ্যালজেবরা, নম্বর থিওরি—এসব। উল্লিখিত বিষয়ে বাংলাদেশের গবেষকদের স্থান ঠিক কোথায়?
আমাদের উচ্চশিক্ষিত ছাত্রদের উজ্জ্বলতর অংশই পাড়ি দেন বিদেশে। সামান্য অংশ উচ্চতর শিক্ষার জন্য, আর বেশির ভাগই আরও ভালো, সমৃদ্ধ জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষায়। উচ্চশিক্ষায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আমরা মূলত আমেরিকা এবং সঙ্গে অন্য কিছু দেশকে বছরের পর বছর উপহার দিয়ে চলেছি কিছু ফিনিশড প্রোডাক্ট, যা তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতিতে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে।
আর কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে আমরা আমাদের জন্য তৈরি করে চলেছি মূলত মধ্যমানের কিছু গবেষক, যাঁরা জ্ঞানকে ‘ফলদায়ক’ করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। গবেষণা খাতে যতটুকু যা ব্যয় হচ্ছে তার অনেকাংশই অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের দেশে গবেষণায় যেমন বরাদ্দ নেই, আবার কে কী বিষয়ে গবেষণা করবে, সে বিষয়ে কোনো সুষ্ঠু নিয়মনীতি ও দিকনির্দেশনাও নেই।
অথচ দেশের কল্যাণের জন্য আমাদের শিক্ষা-গবেষণায় অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। প্রয়োজন বিদেশে পাড়ি দিতে চাওয়া ছাত্রদের উজ্জ্বলতর অংশকে ধরে রাখা বা সময়মতো দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা; অন্তত তাঁদের মধ্যে যাঁরা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জগতে থাকতে চান তাঁদের। যাঁরা বিদেশে পাড়ি দেন তাঁদের সবাই যে ভীষণ ভালো, তা হয়তো নয়। কিন্তু যাঁরা প্রকৃতই ভীষণ ভালো, তাঁদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। এই ভীষণ ভালোরা যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দাগ কাটতে পারবেন, প্রয়োজনে তাঁদের বেশি মাইনে ও সুবিধা দিতে হবে, তাঁরা বিদেশে থাকলে যা পেতেন দিতে হবে তা-ই।
মনে রাখতে হবে, শিক্ষার সঙ্গে গবেষণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গবেষণাহীন শিক্ষা কোনো দিন কাঙ্ক্ষিত ফল উপহার দিতে পারে না।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে