কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান মণ্ডল নিহতের ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অঘটন এড়াতে উপজেলার চাঁদগ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিকে, গতকাল শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া মামলাও হয়নি।

গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার চাঁদগ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন সিদ্দিকুর। তিনি ওই গ্রামের ওমর আলী মণ্ডলের ছেলে এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। হামলায় তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। হামলায় নিহত সিদ্দিকুরের ভাই বাদশা মণ্ডলের পায়ের রগ কেটে যাওয়ায় তাঁকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন গোষ্ঠীগত দাঙ্গা সংঘটিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। বিগত ৬০ বছরে গোষ্ঠীগত দাঙ্গায় অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ওই এলাকায় মূলত মণ্ডল ও মালিথা নামে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে রেষারেষি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। এ রেষারেষি এখনো বিদ্যমান। মালিথা গোষ্ঠীর বাবলু নামে একজনকে হত্যার ৫ বছর পর মণ্ডল গোষ্ঠীর সিদ্দিকুর হত্যার ঘটনা ঘটল।

জানা গেছে, মালিথা গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেন আমির মালিথা ও নজরুল ইসলাম মালিথা। অন্যদিকে মণ্ডল গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেন এনামুল ও ইউনুস মণ্ডল। এ দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে আরও ছোট ছোট কয়েকটি গোষ্ঠী ভাগ হয়ে মিশে রয়েছে। এর আগে খুন হয়েছেন কানিচ মণ্ডল, জাফের প্রামাণিক, হাসেম মণ্ডল, সাধু মোল্লা, তোয়াব, সাহাদৎ মোল্লা, নুর আলী, মুনছের, বাবলু ও সিদ্দিকুর রহমান মণ্ডল।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ ঘটনার পর থেকেই এলাকায় নীরবতা বিরাজ করছে। মানুষজনকে বাইরে থেকে ওই গ্রামে প্রবেশ বা বের হতে খুব একটা দেখা যায়নি। অনেকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। অতীতে এ গ্রামে যতগুলো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেখান বাড়িঘর অগ্নিকাণ্ড, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও শক্ত অবস্থানে পুলিশ দায়িত্ব পালন করায় এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের অঘটন ঘটেনি।

ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জড়িতদের ধরতে অভিযান চালছে। অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে মামলা নেওয়া হবে।’

ঘটনা যেভাবে সূত্রপাত: স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম মালিথা জাসদের রাজনীতির সঙ্গে আর এনামুল ইসলাম মণ্ডল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। কয়েক দিন আগে ইউপি সদস্য এনামুল মণ্ডলের সমর্থকেরা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া জিকে খালে মাছ ধরতে যান। তখন নজরুল মালিথার লোকজন তাঁদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেন। ঘটনার আগের দিন নজরুল মালিথাসহ কয়েকজনকে মারধর করে হাত ভেঙে দেওয়া হয়। এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে গত শুক্রবার সকালে এনামুল ও নজরুল সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

নিহতের ভাই এনামুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘আগে গোষ্ঠীগত মারামারি হয়েছে। এবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাসদ নেতা তপন চেয়ারম্যান পরিকল্পিতভাবেই উপস্থিত থেকে আমার ভাই ও লোকজনের ওপর হামলা করেছেন।’

চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, ‘চেয়ারম্যান হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন, এমনটা তাঁরা দাবি করছেন। মোড়ে ও চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে সিসিটিভি লাগানো আছে। ফুটেজ দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। একটি পক্ষ গোষ্ঠীগত দাঙ্গাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বুলবুল কবীরের অভিযোগ, জাসদ অনুসারী নজরুল মালিথার লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এনামুলের লোকজনের ওপর গুলি করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জাসদের সভাপতি আব্দুল হাফিজ তপন বলেন, ‘এ এলাকায় মণ্ডল এবং মালিথা গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব প্রায় ৬০ বছরের। মাঝে মধ্যেই তাঁদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে। একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।’