নাটোরের বাগাতিপাড়ার ঐতিহ্যবাহী শাঁখাশিল্পের কারিগরেরা এখন শাঁখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিবছর দুর্গাপূজায় শাঁখার চাহিদা বাড়ে। গত বছর দুর্গাপূজায় করোনার সংক্রমণ ছিল বেশি। সে তুলনায় এ বছর করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো থাকায় শাঁখার বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন কারিগরেরা।

শাঁখা কারিগরেরা বলেন, উপজেলার জামনগর ইউনিয়নে অবস্থিত শাঁখাপল্লি। তাঁরা বণিক সম্প্রদায়ের। এই পল্লির শতাধিক পরিবার পৈতৃক ব্যবসা শাঁখাশিল্পের সঙ্গে জড়িত। শাঁখা তৈরির মূল উপকরণ শঙ্খ, যা এক প্রকার শামুক প্রজাতি। সাধারণত ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে এ শাঁখা তৈরির উপকরণ শঙ্খ বাংলাদেশে আমদানি করা হয়।

পুরুষ কারিগরেরা আমদানি করা এ শঙ্খ মেশিনে কেটে বালা ও আংটিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন। পরে নারী শিল্পীরা নিপুণ হাতে এগুলোর ওপর কারুকার্য করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শঙ্খ বা শাঁখাসামগ্রী বেশি ব্যবহার করে থাকেন।

আবার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শঙ্খের মাধ্যমে সুমধুর সুর সৃষ্টি করে পূজা-পার্বণের কার্যক্রম শুরু করেন। এ ছাড়া কসমেটিকস তৈরিতে শাঁখার গুঁড়ো ব্যবহার হয়।

কারিগর স্মৃতি রানী সেন বলেন, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই বংশানুক্রমে শাঁখাশিল্পের সঙ্গে জড়িত। শাঁখাসামগ্রী তৈরি ও কারুকার্য করেই তাঁরা সংসার চালান। প্রতিদিন গড়ে ৫০ জোড়া বালার ওপর সুনিপুণ কারুকার্য করেন। প্রতি জোড়া বালার কারুকার্যে ১০ টাকা মজুরি পান। এতে তাঁদের প্রতিদিন আয় হয় ৫০০ টাকা, যা দিয়ে ভালোভাবেই চলে তাঁদের সংসার।

শাঁখা ব্যবসায়ী পরিমল চন্দ্র ধর বলেন, জামনগর শাঁখাপল্লির শাঁখা প্রায় সারা দেশেই বিক্রি হয়। এই পল্লির শাঁখাপণ্য ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পাইকারিভাবে বিক্রি করা হয়। আর দুর্গাপূজা সামনে রেখে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার শাঁখাপণ্য বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল বলেন, জামনগর শাঁখাপল্লি ঘিরে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবসময় তাঁদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।