হাসান মামুন
দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সক্ষমতা যেহেতু গড়ে ওঠেনি বা গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি, তাই বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে প্রতিবারই একটা সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের। মাঝে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা হয়েছিল এ কারণেই। সেটা করা হয় দুইভাবে। সাংবিধানিকভাবেও এটা করা হয়েছিল এবং তার অধীনে তিনটি কমবেশি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন হয়। এই ব্যবস্থাকে কীভাবে আবার বিতর্কিত করা হয়েছিল এবং পরে তা একেবারে বাতিলই করে দেওয়া হয়, সেসবও আমাদের জানা।
সমস্যা হলো, ব্যবস্থাটি বাতিলের পর দুটি নির্বাচন হয়ে গেলেও তার একটিও দেশে কিংবা বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়নি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখাটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সেটি পালনে তাকে সহায়তা করার কথা সরকারের। কিন্তু কোনো দলীয় সরকারের আমলেই এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হয়নি। নির্বাচন কমিশন ও সরকার দুটোই ব্যর্থ হয়েছে একত্রে।
দলনিরপেক্ষ সরকারের ভূমিকা নিয়েও যে প্রশ্ন ওঠেনি, তা নয়। তারপরও ওই সব নির্বাচন মেনে নেয় পরাজিত দল এবং তারা সংসদে গিয়ে বসে। মানসম্মত না হলেও একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও গণতন্ত্রের একধরনের অনুশীলন আমরা দেখতে পাই ওই সব নির্বাচনের ভেতর দিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের পর হয়ে যাওয়া দুটি নির্বাচনের পর সেই অবস্থার ক্রমাবনতিই আমরা দেখেছি। সংসদে মিলছে লোকদেখানো বিরোধী দল আর মাঠে প্রকৃত বিরোধী দল এবং তাকে থাকতে হচ্ছে সরকারের অব্যাহত চাপের মুখে।
এ অবস্থায় আরেকটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে একতরফাভাবে। কেননা বিরোধী দল বিএনপি আগের দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে মোটেও রাজি নয়। অতীতে আওয়ামী লীগ যে দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল–এখন তার প্রতিপক্ষ বিএনপিকে একই দাবি আদায়ে প্রায় একই ধরনের আন্দোলনে নামতে হয়েছে রাজপথে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারাতেই তারা ছিল অবশ্য। সম্প্রতি একটি মহাসমাবেশ ঘিরে গোলযোগের সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি চলে গেছে সংঘাতের দিকে।
এটা কাম্য ছিল না; তবে এমন আশঙ্কাও অনেকে করছিলেন। ‘রাজনীতির একটি পক্ষ’ সংঘাত চাইছিল বলেও ধারণা করা হয়। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে তারাই জয়ী হয়েছে বললে ভুল হবে না। এমন সংঘাত দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে বলেই ধারণা।জনগণের মধ্যে বাড়বে অস্থিরতা ও আতঙ্ক। সবচেয়ে বড় কথা, এর মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচন হয়ে গেলেও তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। রাজনৈতিক সংকটেরও হবে না অবসান।
জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনটি হতে হবে। সেদিক থেকে দেখলে, তফসিল ঘোষণা না হলেও নির্বাচনের সময় কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন মানে তো কেবল ভোট গ্রহণের দিনের ঘটনাবলি নয়। এর আগের সময়টাও নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এ সময়ে আমরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখছি দেশে। কেবল সরকারের সঙ্গে নয়; নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও প্রধান বিরোধী দল ও তার মিত্রদের সম্পর্ক বিষিয়ে উঠেছে।
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে সৃষ্ট ঘটনাবলির পর সরকারও অবস্থান নিয়েছে যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করে ফেলার পক্ষে। আগে অবস্থান ছিল, বিএনপি নির্বাচনে এলে আসুক। এখনকার অবস্থান হলো, তাদের বাদ দিয়েই নির্বাচন। এ জন্য আগামী নির্বাচনকে অনেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছে।
২০১৪-এর নির্বাচন বিএনপি ও তার মিত্ররা প্রতিহত করতে পারেনি–যদিও সে লক্ষ্য অর্জনে তারা বড় ধরনের শক্তি প্রয়োগ করেছিল। আমাদের রাজনীতিতে যেকোনো দাবি আদায়ে শক্তি প্রয়োগ যেন প্রায় অনিবার্য। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে কি কম শক্তি প্রয়োগ করেছিল? আদর্শগত দিক দিয়ে ভিন্ন ধরনের দলগুলোও তখন একত্রে গড়ে তুলেছিল তীব্র আন্দোলন। এরশাদের জাতীয় পার্টিও তাতে শামিল হয়, যদিও তাদের সরিয়েই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে একটা রূপরেখাও প্রণয়ন করেছিল তারা। সেই অনুযায়ী দেশ অবশ্য পরিচালিত হয়নি; কোনো পক্ষই এর পরোয়া করেনি। সেটা অনুসৃত হলেও সুশাসন ও নির্বাচন নিয়ে এখনকার পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছাতে হতো না। কথা ছিল, দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত হবে; তার অধীনে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর হবে। একটা সহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশও গড়ে উঠবে ক্রমে।এর কিছুই অর্জিত হয়নি। উপরন্তু প্রধান সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সংকট।
সংকটটা ওখানে যে, অতীতের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোয় যারা কমবেশি এক-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়েছে, সেই দলটির অংশগ্রহণ ছাড়াই হতে যাচ্ছে আরেকটি নির্বাচন। তারাও কার্যত নেমে গেছে নির্বাচন প্রতিহত করতে। সরকারও গেছে আন্দোলন দমনের পথে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাকে ইতিমধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে কারাগারে। এ অবস্থায় দলের আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা আরও বেশি বেপরোয়া আচরণ করতে পারে বলেই শঙ্কা। সরকারও বলছে, কীভাবে এ ধরনের আন্দোলন দমন করতে হয়–তারা জানে।
ধরা যাক, আন্দোলন বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না এবং এর মধ্য দিয়েই নির্বাচন করে ফেলতে সক্ষম হলো সরকার। এ ধরনের নির্বাচন কেমন হবে, তা অবশ্য সহজেই অনুমেয়। ‘জনগণের অংশগ্রহণের’ যুক্তিতে নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ করার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও ঘটবে বলে মনে হয় না। এতে নির্বাচন বৈধতা পেলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না, এটাই প্রধান সমস্যা। দেশের ভেতর থেকে প্রতিরোধ মিলিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে আপত্তি বা চাপ আসবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সত্যি বলতে, এর ক্ষেত্রও প্রস্তুত।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমাদের কঠোর অবস্থান ও অব্যাহত সক্রিয়তার কথা সবারই জানা। নতুন এই উপাদান সরাসরি গেছে বিরোধী দলগুলোর পক্ষে। কোনোভাবেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে তাদের কঠোর অবস্থানের পেছনেও রয়েছে পশ্চিমা সক্রিয়তা। এটা তাদের সৌভাগ্যও বলতে হবে, কেননা পশ্চিমা অবস্থানের কারণে সরকার আছে চাপের মুখে। তবে ২৮ অক্টোবরের পর কোনো চাপকেই চাপ মনে করছে না সরকার।
নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ভীতিও ঝেড়ে ফেলে তারা নির্বাচনটা করে ফেলতে চাইছে। এমন মনোভাবও স্পষ্ট, নির্বাচন করে ফেলতে পারলেই আর তেমন সমস্যা নেই। সেটা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। কেননা পশ্চিমারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত দিন যে ভূমিকা রাখল, এর একটা ফল তারা স্বভাবতই দেখতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে তাদের যে ‘নিজস্ব স্বার্থ’ রয়েছে, সেটাও কারও বুঝতে বাকি নেই।এটি অর্জনে তারা নির্বাচনের আগেও সক্রিয়তা দেখাতে পারে বলে মত রয়েছে। নির্বাচনের পরেও সক্রিয়তা দেখালে তার রূপ কী হবে, সেটা অবশ্য অস্পষ্ট।
রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু সমস্যা তীব্র হয়ে ওঠায় এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে যে অর্থনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা এলে সেটা মোকাবিলা করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। নির্বাচন ঘিরে কঠোর অবস্থান নেওয়া এসব রাষ্ট্রের সঙ্গেই প্রধানত আমাদের রপ্তানি, ঋণসহায়তা ও বিনিয়োগের সম্পর্ক। ওদের কাছ থেকে হালে রেমিট্যান্সও আসছে সবচেয়ে বেশি। তাদের পেশ করা মডেলেই আমরা এত দিন অর্থনীতি পরিচালনা করে সাফল্যও কম অর্জন করিনি। সে দিক থেকে তাদের পদক্ষেপের চাপ উপেক্ষা করা একরকম অসম্ভব।
এখন সরকার যদি পারে কোনোভাবে এ চাপ এড়িয়ে আবার ক্ষমতায় বসে যেতে, তাহলে শাসক দলের জন্য বেশ হয়! বিগত ১৫ বছরে দেশের ভেতরটা তারা যেভাবে ভেঙেচুরে সাজিয়ে তুলেছে, তাতে আরেকটা মেয়াদ পার করে দিতে তেমন সমস্যা হবে না–বাইরের চাপ যে পর্যন্ত আছে, সেটুকুতেও পশ্চিমারা আটকে থাকলে। বিএনপি ও তার মিত্রদের দাবি যত যুক্তিসংগতই হোক, রাজপথে তাদের চাপ সৃষ্টির ক্ষমতা কিন্তু আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কম। ঘটনা এ ধারায় অগ্রসর হলে তাদের সামনে সমূহ বিপদ।
আর ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হলে সরকার হবে বিপদগ্রস্ত। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানিতে যে ধারা সূচিত হয়েছে এবং নানা ‘অপঘটনা’ ঘটছে একযোগে; তার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের পরিস্থিতি এখন নজিরবিহীন বলতে হবে। এ অবস্থায় গবেষণালব্ধ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সেটা দেশের জন্যও। সরকার গঠনের একটি নির্বাচনের চেয়ে দেশ বিপদগ্রস্ত হওয়া-না হওয়াটা নিশ্চয়ই অনেক বড় বিষয়।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সক্ষমতা যেহেতু গড়ে ওঠেনি বা গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি, তাই বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে প্রতিবারই একটা সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের। মাঝে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা হয়েছিল এ কারণেই। সেটা করা হয় দুইভাবে। সাংবিধানিকভাবেও এটা করা হয়েছিল এবং তার অধীনে তিনটি কমবেশি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন হয়। এই ব্যবস্থাকে কীভাবে আবার বিতর্কিত করা হয়েছিল এবং পরে তা একেবারে বাতিলই করে দেওয়া হয়, সেসবও আমাদের জানা।
সমস্যা হলো, ব্যবস্থাটি বাতিলের পর দুটি নির্বাচন হয়ে গেলেও তার একটিও দেশে কিংবা বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়নি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখাটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সেটি পালনে তাকে সহায়তা করার কথা সরকারের। কিন্তু কোনো দলীয় সরকারের আমলেই এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হয়নি। নির্বাচন কমিশন ও সরকার দুটোই ব্যর্থ হয়েছে একত্রে।
দলনিরপেক্ষ সরকারের ভূমিকা নিয়েও যে প্রশ্ন ওঠেনি, তা নয়। তারপরও ওই সব নির্বাচন মেনে নেয় পরাজিত দল এবং তারা সংসদে গিয়ে বসে। মানসম্মত না হলেও একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও গণতন্ত্রের একধরনের অনুশীলন আমরা দেখতে পাই ওই সব নির্বাচনের ভেতর দিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের পর হয়ে যাওয়া দুটি নির্বাচনের পর সেই অবস্থার ক্রমাবনতিই আমরা দেখেছি। সংসদে মিলছে লোকদেখানো বিরোধী দল আর মাঠে প্রকৃত বিরোধী দল এবং তাকে থাকতে হচ্ছে সরকারের অব্যাহত চাপের মুখে।
এ অবস্থায় আরেকটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে একতরফাভাবে। কেননা বিরোধী দল বিএনপি আগের দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে মোটেও রাজি নয়। অতীতে আওয়ামী লীগ যে দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল–এখন তার প্রতিপক্ষ বিএনপিকে একই দাবি আদায়ে প্রায় একই ধরনের আন্দোলনে নামতে হয়েছে রাজপথে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারাতেই তারা ছিল অবশ্য। সম্প্রতি একটি মহাসমাবেশ ঘিরে গোলযোগের সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি চলে গেছে সংঘাতের দিকে।
এটা কাম্য ছিল না; তবে এমন আশঙ্কাও অনেকে করছিলেন। ‘রাজনীতির একটি পক্ষ’ সংঘাত চাইছিল বলেও ধারণা করা হয়। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে তারাই জয়ী হয়েছে বললে ভুল হবে না। এমন সংঘাত দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে বলেই ধারণা।জনগণের মধ্যে বাড়বে অস্থিরতা ও আতঙ্ক। সবচেয়ে বড় কথা, এর মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচন হয়ে গেলেও তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। রাজনৈতিক সংকটেরও হবে না অবসান।
জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনটি হতে হবে। সেদিক থেকে দেখলে, তফসিল ঘোষণা না হলেও নির্বাচনের সময় কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন মানে তো কেবল ভোট গ্রহণের দিনের ঘটনাবলি নয়। এর আগের সময়টাও নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এ সময়ে আমরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখছি দেশে। কেবল সরকারের সঙ্গে নয়; নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও প্রধান বিরোধী দল ও তার মিত্রদের সম্পর্ক বিষিয়ে উঠেছে।
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে সৃষ্ট ঘটনাবলির পর সরকারও অবস্থান নিয়েছে যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করে ফেলার পক্ষে। আগে অবস্থান ছিল, বিএনপি নির্বাচনে এলে আসুক। এখনকার অবস্থান হলো, তাদের বাদ দিয়েই নির্বাচন। এ জন্য আগামী নির্বাচনকে অনেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছে।
২০১৪-এর নির্বাচন বিএনপি ও তার মিত্ররা প্রতিহত করতে পারেনি–যদিও সে লক্ষ্য অর্জনে তারা বড় ধরনের শক্তি প্রয়োগ করেছিল। আমাদের রাজনীতিতে যেকোনো দাবি আদায়ে শক্তি প্রয়োগ যেন প্রায় অনিবার্য। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে কি কম শক্তি প্রয়োগ করেছিল? আদর্শগত দিক দিয়ে ভিন্ন ধরনের দলগুলোও তখন একত্রে গড়ে তুলেছিল তীব্র আন্দোলন। এরশাদের জাতীয় পার্টিও তাতে শামিল হয়, যদিও তাদের সরিয়েই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে একটা রূপরেখাও প্রণয়ন করেছিল তারা। সেই অনুযায়ী দেশ অবশ্য পরিচালিত হয়নি; কোনো পক্ষই এর পরোয়া করেনি। সেটা অনুসৃত হলেও সুশাসন ও নির্বাচন নিয়ে এখনকার পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছাতে হতো না। কথা ছিল, দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত হবে; তার অধীনে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর হবে। একটা সহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশও গড়ে উঠবে ক্রমে।এর কিছুই অর্জিত হয়নি। উপরন্তু প্রধান সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সংকট।
সংকটটা ওখানে যে, অতীতের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোয় যারা কমবেশি এক-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়েছে, সেই দলটির অংশগ্রহণ ছাড়াই হতে যাচ্ছে আরেকটি নির্বাচন। তারাও কার্যত নেমে গেছে নির্বাচন প্রতিহত করতে। সরকারও গেছে আন্দোলন দমনের পথে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাকে ইতিমধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে কারাগারে। এ অবস্থায় দলের আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা আরও বেশি বেপরোয়া আচরণ করতে পারে বলেই শঙ্কা। সরকারও বলছে, কীভাবে এ ধরনের আন্দোলন দমন করতে হয়–তারা জানে।
ধরা যাক, আন্দোলন বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না এবং এর মধ্য দিয়েই নির্বাচন করে ফেলতে সক্ষম হলো সরকার। এ ধরনের নির্বাচন কেমন হবে, তা অবশ্য সহজেই অনুমেয়। ‘জনগণের অংশগ্রহণের’ যুক্তিতে নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ করার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও ঘটবে বলে মনে হয় না। এতে নির্বাচন বৈধতা পেলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না, এটাই প্রধান সমস্যা। দেশের ভেতর থেকে প্রতিরোধ মিলিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে আপত্তি বা চাপ আসবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সত্যি বলতে, এর ক্ষেত্রও প্রস্তুত।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমাদের কঠোর অবস্থান ও অব্যাহত সক্রিয়তার কথা সবারই জানা। নতুন এই উপাদান সরাসরি গেছে বিরোধী দলগুলোর পক্ষে। কোনোভাবেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে তাদের কঠোর অবস্থানের পেছনেও রয়েছে পশ্চিমা সক্রিয়তা। এটা তাদের সৌভাগ্যও বলতে হবে, কেননা পশ্চিমা অবস্থানের কারণে সরকার আছে চাপের মুখে। তবে ২৮ অক্টোবরের পর কোনো চাপকেই চাপ মনে করছে না সরকার।
নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ভীতিও ঝেড়ে ফেলে তারা নির্বাচনটা করে ফেলতে চাইছে। এমন মনোভাবও স্পষ্ট, নির্বাচন করে ফেলতে পারলেই আর তেমন সমস্যা নেই। সেটা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। কেননা পশ্চিমারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত দিন যে ভূমিকা রাখল, এর একটা ফল তারা স্বভাবতই দেখতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে তাদের যে ‘নিজস্ব স্বার্থ’ রয়েছে, সেটাও কারও বুঝতে বাকি নেই।এটি অর্জনে তারা নির্বাচনের আগেও সক্রিয়তা দেখাতে পারে বলে মত রয়েছে। নির্বাচনের পরেও সক্রিয়তা দেখালে তার রূপ কী হবে, সেটা অবশ্য অস্পষ্ট।
রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু সমস্যা তীব্র হয়ে ওঠায় এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে যে অর্থনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা এলে সেটা মোকাবিলা করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। নির্বাচন ঘিরে কঠোর অবস্থান নেওয়া এসব রাষ্ট্রের সঙ্গেই প্রধানত আমাদের রপ্তানি, ঋণসহায়তা ও বিনিয়োগের সম্পর্ক। ওদের কাছ থেকে হালে রেমিট্যান্সও আসছে সবচেয়ে বেশি। তাদের পেশ করা মডেলেই আমরা এত দিন অর্থনীতি পরিচালনা করে সাফল্যও কম অর্জন করিনি। সে দিক থেকে তাদের পদক্ষেপের চাপ উপেক্ষা করা একরকম অসম্ভব।
এখন সরকার যদি পারে কোনোভাবে এ চাপ এড়িয়ে আবার ক্ষমতায় বসে যেতে, তাহলে শাসক দলের জন্য বেশ হয়! বিগত ১৫ বছরে দেশের ভেতরটা তারা যেভাবে ভেঙেচুরে সাজিয়ে তুলেছে, তাতে আরেকটা মেয়াদ পার করে দিতে তেমন সমস্যা হবে না–বাইরের চাপ যে পর্যন্ত আছে, সেটুকুতেও পশ্চিমারা আটকে থাকলে। বিএনপি ও তার মিত্রদের দাবি যত যুক্তিসংগতই হোক, রাজপথে তাদের চাপ সৃষ্টির ক্ষমতা কিন্তু আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কম। ঘটনা এ ধারায় অগ্রসর হলে তাদের সামনে সমূহ বিপদ।
আর ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হলে সরকার হবে বিপদগ্রস্ত। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানিতে যে ধারা সূচিত হয়েছে এবং নানা ‘অপঘটনা’ ঘটছে একযোগে; তার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের পরিস্থিতি এখন নজিরবিহীন বলতে হবে। এ অবস্থায় গবেষণালব্ধ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সেটা দেশের জন্যও। সরকার গঠনের একটি নির্বাচনের চেয়ে দেশ বিপদগ্রস্ত হওয়া-না হওয়াটা নিশ্চয়ই অনেক বড় বিষয়।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে