নেত্রকোনা শহরের নাগড়া এলাকায় একটি ভবনে শোয়ার ঘর থেকে বাবা ও তাঁর শিশুসন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ওই এলাকার বেবি আইসক্রিমের গলির জোড়া কবরস্থানসংলগ্ন ভবনটির চারতলার ডি-২ ইউনিটের একটি কক্ষ থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া লাশ দুটি নেত্রকোনায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক মো. কাইয়ুম সরদার (৩২) ও তাঁর শিশুসন্তান আহনাব শাকিলের (২)। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাইয়ুম সরদারের স্ত্রী ও শিশুটির মা সালমা আক্তারকে (২১) আটক করেছে পুলিশ।

পাঁচতলা ওই ভবনের মালিক রুহুল আমিন। তাঁর বাড়ি বরিশালে। থাকেন ঢাকায়। আর কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পরমালী ইউনিয়নের গোপালের খামার গ্রামের বাসিন্দা কাইয়ুম ওই ভবনের ভাড়াটে ছিলেন।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঁচতলা ওই ভবনের চারতলায় ডি-২ ইউনিটের দুই রুমের একটি কক্ষে বাবা ও ছেলের মরদেহ পাশাপাশি পড়ে আছে। নিহত

কাইয়ুম সরদারের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা না গেলেও শিশুসন্তান আহনাব শাকিলের বুকের মাঝখানে চোপ চোপ কালো দাগ ছিল।

পাশের রুমে পুলিশ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন কাইয়ুম সরদারের স্ত্রী সালমা আক্তার। এ সময় তিনি জানান, গত বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কাইয়ুম সরদার অফিস থেকে বাসায় ফেরেন। পরে ছেলেকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে শহরে ঘুরতে বের হন। রাত ১০টার দিকে ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফেরেন। পরে প্রতিদিনের মতো খাওয়া শেষে একই বিছানায় শুয়ে পড়েন তাঁরা। ভোর পাঁচটার দিকে বিছানায় ছেলে ও স্বামীকে দেখতে না পেয়ে পাশের রুমে যান। সেখানে একই রশিতে ফ্যানের মধ্যে বাবা ও ছেলেকে ঝুলতে দেখেন। পরে তিনি রশিটি ঘরে থাকা কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এরপর তিনি দরজা খুলে পাশের ফ্ল্যাটের সদস্যদের ডাক দেন।

এ সময় ভবনটির তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে সিসি ক্যামেরার মনিটর তদন্ত করছেন নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় খন্দকার শাকের আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সিসি ক্যামেরার মনিটর দেখেছি। বাইরে থেকে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেখিনি। তবে ডি-২ ইউনিটের কক্ষ থেকে ঠিক ৫টা ৩ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে একজন নারীকে (নিহত কাইয়ুমের স্ত্রী সালমা) বের হয়ে আসতে দেখা গেছে। পরে আশপাশের ইউনিটের কিছু লোক ভেতরে ঢোকেন।’

শাকের আহমেদ আরও বলেন, ‘বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। আমরা তদন্ত করে দেখছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাইয়ুমের স্ত্রী সালমাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।’

ভবনটির কেয়ারটেকার শফিকুল ইসলাম ও অন্যান্য ইউনিটের বাসিন্দারা বলেন, প্রায় এক বছর ধরে রুহুল আমিন তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে এই ভবনে থাকেন। তাঁদের বাসায় তেমন কেউ আসত না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো ধরনের কলহ হতো বলেও তাঁরা শোনেননি।