বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক চিকিৎসক (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী ও স্থানীয় ক্রিকেট সংগঠক) আনিস আহমেদের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের দেখা হলো অ্যাডিলেড বিমানবন্দরের লাগেজ বেল্টের সামনেই। আনিস সাকিবকে জিজ্ঞেস করলেন, অ্যাডিলেডের ঠান্ডা কেমন অনুভব হচ্ছে।

‘একটু…’—বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের ভালো পরিচয় আছে অ্যাডিলেডের, সেটি তাঁর কথাতেই পরিষ্কার।

গতকাল অ্যাডিলেডে বাংলাদেশিদের যিনিই প্রথমবারের মতো এসেছেন, অবধারিতভাবে তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, ‘কী ঠান্ডা!’ সিডনি আর ব্রিসবেনে গরম আবহাওয়ার পর আবারও শীতল পরিবেশ। তার ওপর বৃষ্টির ঝাপটা। অবশ্য সাকিবের কাছে অ্যাডিলেড ভালোই চেনা, এখানে তাঁর আগেও পা পড়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেড ওভালে বাংলাদেশ গড়েছিল ইতিহাস, ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পেয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার চাবি। সাত বছরের ব্যবধানে ওই ম্যাচের তিন পারফরমার মাহমুদউল্লাহ (১০৩), মুশফিকুর রহিম (৮৯), রুবেল হোসেন (৪/৫৩)—কেউই নেই বর্তমান দলে। সেই ম্যাচ খেলা শুধু সাকিব, তাসকিন আহমেদ আর সৌম্য সরকার আছেন এবারের দলে।

পয়া ভেন্যুতে পা দেওয়ার আগে গতকাল সন্ধ্যায় অ্যাডিলেড বিমানবন্দরে হাসিখুশি বাংলাদেশকেই দেখা গেল। হিসাবের মধ্যে থাকা দুটি জয় ধরা দিয়েছে। নেদারল্যান্ডস-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় আর সাধারণ জয় হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এই দুটি জয় বাংলাদেশকে সুযোগ দিয়েছে স্বস্তির নিশ্বাস নেওয়ার। তাতে একটু হলেও জেগেছে সেমিফাইনালের আশা।

অবশ্য এখনই শেষ চারে ওঠা নিয়ে ঘুম হারাম করছে না বাংলাদেশ। ম্যাচ ধরে ধরে এগোনোর পরিকল্পনায় অ্যাডিলেডে বাংলাদেশ আগামীকাল মুখোমুখি হবে ভারতের। গতকাল বাংলাদেশ পৌঁছানোর আধা ঘণ্টা আগে অ্যাডিলেডে এসেছেন রোহিত-কোহলিরা।

টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত শুরুর পর পার্থে গত পরশু দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে ভারত খুব একটা স্বস্তিতে নেই। সেমিফাইনালের পথ পরিষ্কার রাখতে বাংলাদেশকে হারাতে চায় তারা।

টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট ভারত কঠিন প্রতিপক্ষ হলেও একই মাঠে ৬ নভেম্বর পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই তো সমান সমান হতেই পারে। টুর্নামেন্টে যেহেতু পাকিস্তান খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। এই প্রশ্নে গত পরশু জিম্বাবুয়ে ম্যাচের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন একমত হতে পারলেন না। তাঁর যুক্তি, শুধু পাকিস্তান কেন, ভারতের বিপক্ষেও দারুণ কিছু করতে পারে বাংলাদেশ।

এক শহরে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের লড়াই সামনে রেখে অ্যাডিলেডে অন্য রকম এক আমেজ বিরাজ করছে উপমহাদেশের প্রবাসীদের মধ্যে। বিমানবন্দর থেকে আসার পথে কথা হচ্ছিল ভারতীয় প্রবাসী উবার চালক বিনয়ের সঙ্গে। আগামীকালের ম্যাচ নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ, ‘ভারতের লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলিও যদি দ্রুত বিদায় নেয়, এক সূর্যকুমার যাদবই ম্যাচ বদলে দিতে যথেষ্ট। আর বাংলাদেশ দলটা বড্ড সাকিবনির্ভর। মোস্তাফিজ ছন্দে ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু জিততে হলে তাদের পুরো দল হিসেবেই খেলতে হবে।’

মাঠের লড়াইয়ের আগে অ্যাডিলেডের আকাশের দিকেও তাকাতে হচ্ছে। গতকালের মতো আজও বৃষ্টির পূর্ভাবাস থাকলেও বাংলাদেশের দুটি ম্যাচে বৃষ্টিবাগড়া থাকার আশঙ্কা খুব একটা নেই। ব্রিসবেনে জিম্বাবুয়ের ম্যাচের আগের দিনের মতো আজও বাংলাদেশ দল থাকছে বিশ্রামে। ঐচ্ছিক অনুশীলনে কে কে আসবেন, গতকাল সন্ধ্যায় তা বলার উপায় ছিল না।