সুন্দরবনের পাশে মাছ চাষ

শামিমুজ্জামান, খুলনা
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৭
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ০৮

সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান হচ্ছে। শ্বাসমূলীয় গাছকেন্দ্রিক (ম্যানগ্রোভভিত্তিক) মাছ চাষে ঝুঁকছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে তাঁদের মাছ চাষে আগ্রহী করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

এর ফলে সুন্দরবনের ওপর জেলেদের চাপ কমবে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি মাছের উৎপাদনও বাড়বে। ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে ৩৫টি নদীসহ জালের মতো বিস্তৃত অসংখ্য খাল রয়েছে। এখানে ৬ লাখের বেশি জেলে মাছ ও রেণু সংগ্রহ করেন।

তাঁদের কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়, যা বনের জন্য হুমকিস্বরূপ। জেলেদের সুন্দরবনের ওপর এ নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ম্যানগ্রোভভিত্তিক মাছ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বেডস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জার্মান সরকারের আর্থিক সহায়তায় এ লক্ষ্যে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে সুন্দরবন কোল ঘেঁষে খুলনার দাকোপ, বাগেরহাটের মোংলা রামপাল এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মৎস্যজীবীদের ম্যানগ্রোভভিত্তিক মাছ চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল সব মৎস্যজীবীকে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে ১ হাজার ২৫০ জন মৎস্যজীবীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। খুলনার দাকোপের বাণীশান্তা ইউনিয়নের পশ্চিম ঢাংমারী গ্রামে ২০টি খামারে মাঠপর্যায়ে কাজও শুরু করেছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফলতা পেলে তাঁরা সুন্দরবনে যাবেন না।

এ ব্যাপারে মনি শঙ্কর নামে এক জেলে জানান, তিনি সুন্দরবনে মাছ ধরতেন। সম্প্রতি ম্যানগ্রোভ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। এখানে মাছের উৎপাদন ভালো হলে তিনি আর সুন্দরবনে যাবেন না। ম্যানগ্রোভ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন একই এলাকার হরিপদ মণ্ডল। তিনি জানান, না গিয়ে যদি বনের মাছ পাওয়া যায়, তা হলে আর বনে যাবেন না।

এ পদ্ধতি নিয়ে বেডসের প্রধান নির্বাহী মাকসুদুর রহমান বলেন, সুন্দরবন রক্ষা করতে গেলে এর ওপর নির্ভরশীল মানুষকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁদের বাদ দিয়ে সুন্দরবনের সুরক্ষা সম্ভব নয়। বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের। তাঁদের কথা বিবেচনা করেই ম্যানগ্রোভভিত্তিক মাছ চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে বেডস।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, এ কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। তাই সুন্দরবনের ওপর তাঁদের নির্ভরশীলতা কমবে।

অপর দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. সরদার সফিকুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে প্রকৃতিগতভাবে মাছ জন্ম নেয়। গাছের পাতা কিংবা প্রকৃতিগতভাবে খাবার সংগ্রহ করে মাছ। সুন্দরবনে যে পরিবেশে মাছ বেড়ে ওঠে, সেই একইভাবে ম্যানগ্রোভভিত্তিক মাছ চাষ হয়।

সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বনের গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়। আছে জমিও। সেই জমির গাছ নষ্ট না করেই এর চারপাশ ঘিরে মাছ চাষ করা হচ্ছে। আবার ঘেরের চারপাশ দিয়ে রোপণ করা হচ্ছে বনজ গাছ। যাতে মাছের খাবারের সংকট না হয়। সম্পূর্ণ অর্গানিকভাবে চাষ হওয়া এ মাছের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়বে। অপর দিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ম্যানগ্রোভভিত্তিক চাষে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলেরা বিকল্প কর্মসংস্থান পেয়ে বনে যাওয়া কমিয়ে দেবেন। এতে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, সরকার চায় সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের। প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে ম্যানগ্রোভভিত্তিক মাছ চাষে জেলেরা লাভবান হবে। পক্ষান্তরে উপকার হবে সুন্দরবনের।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত