ইটভাটা গিলছে ফসলি জমি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৩৩
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৪৭

গাইবান্ধায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে জমির মালিকেরা সাময়িকভাবে আর্থিক লাভবান হলেও পড়ছেন দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে। কমছে জমির উর্বরতা, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।

গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রাতদিন কাটা হচ্ছে উপরিভাগের মাটি। ১০/১৫টি ট্রাক্টর দিয়ে সেই মাটি নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। কয়েক দিন আগে রাস্তায় বাঁশ পুতে এলাকাবাসী ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ভাটা মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় বন্ধ করা যায়নি ট্রাক্টর চলাচল।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ইটভাটা পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, লাইসেন্স, পরিবেশবান্ধব চিমনি, কয়লা পোড়ানো এবং আয়কর পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া ট্যাক্স, ভ্যাট পরিশোধের সনদপত্র, আপত্তি নেই মর্মে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সনদপত্র, ভূমি কর পরিশোধের রশিদ ও জমির মালিকানা অথবা ভাড়ার চুক্তিপত্র জেলা প্রশাসক অফিসে দাখিল করার নিয়ম রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জেলা প্রশাসকের কাছে ইট প্রস্তুতকরণের জন্য (ইটভাটা স্থাপনের) লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করতে হয়। অনুসন্ধান কমিটি অনুসন্ধান পূর্বক জেলা প্রশাসকের কাছে লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে সুপারিশ করবে।

প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিজে যাচাই করবেন। তারপর নির্ধারিত ফি নিয়ে লাইসেন্স প্রদান করবেন। আইনে পরিষ্কার বলা আছে, ভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য ভাটা মালিকেরা আবেদনে মাটির উৎস উল্লেখ করবেন। কিন্তু গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার বেশির ভাগ ইটভাটা স্থাপনে মানা হয়নি সরকারি এসব নির্দেশনা। ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে প্রস্তুত হচ্ছে ইট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, আবাদি জমির উৎপাদন শক্তি থাকে মাটির প্রথম দুই ফুটের মধ্যে। এই অংশেই ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে, এই অংশ থেকেই প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে। ওপরের সেই মাটি কেটে নিলে জমি হারায় তার উর্বরতা। ফলে কয়েক বছর পর্যন্ত জমিতে কাঙ্ক্ষিত ফসল ফলে না। এতে কৃষকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে। আর খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।

গাইবান্ধা নাগরিক ঐক্য মঞ্চের সদস্যসচিব ও জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘সারা দেশেই কৃষি জমির মাটি কাটার মহাযজ্ঞ চলছে। গণমাধ্যমে সংবাদও প্রচার হচ্ছে। অনেক ইট ভাটার মালিক শুধু নিজের আখের গোছাতে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি করছেন। পরিবেশ সুরক্ষাও মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে। দিন দিন কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।’

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি আমি অবগত নই। জেলার সব কটি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেব।’ অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান এই কর্মকর্তা।

 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত