ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. শহিদুল্লাহ। তিনি অসুস্থ। নির্বাচন করতে পারবেন না। এখন তাঁর নৌকা ‘ছিনতাই’ করে প্রচারে নেমেছেন যুবলীগের এক নেতা। দল থেকে নৌকা দেওয়ার কথা জানানো না হলেও তিনি মনোনয়ন পাওয়ার কথা জানিয়ে এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন।

যুবলীগের এই নেতার নাম মনিরুল ইসলাম। তিনি উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নৌকা ও মনিরুল ইসলামের ছবিসহ পোস্টার পোস্ট করছেন। এঁদের মধ্যে রতন চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে পোস্টার পোস্ট করে লিখেছেন, ‘চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে নৌকার মাঝি মনিরুল ইসলাম মুনির ভাই। ১১ তারিখ সারা দিন নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’

আরও অনেকের ফেসবুক পোস্টে পোস্টারে মনিরুল ইসলামকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে আগামী ১১ নভেম্বর নৌকা প্রতীকে ভোট চাওয়া হচ্ছে। পোস্টারের নিচে লেখা রয়েছে, ‘মুদ্রণে: মাসুদ অফসেট প্রেস, গোদাগাড়ী। তারিখ- ২৮.১১.২০২১। সংখ্যা ১০,০০০। প্রচারে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নবাসী।’

গতকাল যোগাযোগ করা হলে মাসুদ অফসেট প্রেসের মালিক মাসুদ আলম বলেন, ‘মনিরুল ইসলাম নৌকা প্রতীকের পোস্টার বানানোর জন্য অর্ডার করেছেন। ডিজাইনও প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে প্রিন্ট করা হয়নি। পোস্টারের ডিজাইন করা সফট কপিটাই নিয়ে গিয়ে ফেসবুকে তাহলে দেওয়া হচ্ছে।’

নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রচার এবং পোস্টারের ডিজাইন প্রস্তুত হলেও মনিরুল ইসলাম যে মনোনয়ন পেয়েছেন তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। খোদ মনিরুল ইসলামও তা নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি ভোট করতে পারবেন না। তাই আমার কথা সুপারিশ করা হয়েছে। আমি কেন্দ্রে যোগাযোগ রাখছি।’

মনোনয়ন দেওয়ার কথা কেন্দ্র থেকে কেউ নিশ্চিত করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো করেনি।’ তিনি কোনো কাগজপত্র পাননি বলেও জানিয়েছেন। তাহলে এখনই নৌকা নিয়ে প্রচার কেন, প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকেন যুবলীগের এই নেতা।

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে নৌকা পাওয়া মো. শহিদুল্লাহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। গতবার নৌকা চেয়েও তিনি পাননি। এবার না চেয়েও পেয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন আগে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। নির্বাচন করার মতো শারীরিক সক্ষমতা তাঁর নেই। তাঁর সম্মতি নিয়ে বিষয়টি কেন্দ্রে জানিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ বলেন, ‘শহিদুল্লাহ নির্বাচন করতে পারবেন না। তাই অন্য যোগ্য কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আমরা কেন্দ্রকে বলেছি। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নতুন করে কোনো তালিকাও পাঠানো হয়নি। আগে যে তালিকা ছিল সেখান থেকেই প্রার্থী বেছে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

আবদুর রশিদ আরও বলেন, আগের তালিকায় যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলামের নাম আছে। কিন্তু তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন কি না তা তাঁর জানা নেই।

প্রার্থী বদলের খবর নেই জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলুর কাছেও। তাঁরা দুজনই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দল মনোনয়ন না দিলেও নৌকা নিয়ে মনিরুলের প্রচারের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফেসবুকে পোস্টার দেখছি, কিন্তু মনিরুল এখনো মনোনয়ন পাননি সেটা তো জানি না। ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না! ভালো খবর না পেয়েই আলহামদুলিল্লাহ পড়ব কেন?’