মাসুদ উর রহমান
চলতি শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ৫ জুন। তাতে পাস করেছে সর্বসাকল্যে ১০ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষা যেহেতু একটি বাছাই-প্রক্রিয়া, সে ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী যদি মেধা-ক্রমানুসারে বাছাইয়ে বাদ পড়তেন, তাহলেও একটি কথা ছিল; কিন্তু এই ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী তো বাছাই-প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তই হতে পারেননি।
তাঁরা একটি নির্দিষ্ট নম্বর পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, অর্থাৎ যে নম্বরটি পেলে ন্যূনতম শিখনফল অর্জিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেত বা উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য যেটুকু শিখনদক্ষতা অপরিহার্য ছিল, তাঁরা সেটি অর্জন করতে পারেননি। আর পারেননি বলেই ভর্তির জন্য বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগটি পর্যন্ত পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সরাসরি তাঁদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কেন এমনটি হবে? খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই এসএসসি, এইচএসসির রেজাল্ট খুব ভালো, অর্থাৎ তথাকথিত এ প্লাস! এমন এ প্লাস লইয়া তবে আমরা কী করিব কিংবা এমন এ প্লাস কেন আমরা তৈরি করছি! শিক্ষায় আমাদের যে নীতিনির্ধারকেরা আছেন, বিষয়টি কি তাঁদের ভাবিত করে? প্রচলিত শিক্ষা ও পরীক্ষাপদ্ধতি যে আমাদের যুগোপযোগী নয়, তার বাস্তব উদাহরণ চাঁদপুরের
ছেলে নাফিস। এইচএসসি পাসের আগেই এমআইটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সে। তার মানে হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের এইচএসসি পাস করা না-করা ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে
না। তাদের মূল্যায়ন অন্য কিছুতে। সেই অন্য কিছু আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কিছুটা কঠিন হলেও হাঁটতে হবে সেই পথেই।
প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার পর আমরা শিক্ষকেরা উত্তরপত্র আনতে গেলে বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যে অনুকম্পাটুকু দেখিয়ে যেতে বলেন, তা কতটা সঠিক বা যৌক্তিক? আমি যদি বলি বোর্ডে বোর্ডে পাসের হার বাড়ানোর এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা তাহলে কি ভুল বলা হবে? আসলে আমাদের সবকিছুতেই ঊর্ধ্বতনকে খুশি করার একটি অপপ্রয়াস লক্ষ করা যায়। বিপরীতে স্নিগ্ধ-শীতল কক্ষে বসে আমাদের অধিকর্তারা যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তার অনেকটাই বাস্তবতার নিরিখে হয় না। আর হয় না বলেই কাঙ্ক্ষিত ফল লাভে আমরা ব্যর্থ হই। বদলাতে হয় কিছুদিন পর পর শিক্ষাক্রম বা শিক্ষানীতি।
আবার তাঁরা যে পরিকল্পনা করেন তার বাস্তবায়ন মাঠপর্যায়ে কতটুকু হচ্ছে, কেমন হচ্ছে, কোথায় সমস্যা তার সঠিক মূল্যায়ন কি হয়? যা হওয়ার কথা তা কি হয় বা যা হচ্ছে স্বীকার করে ঊর্ধ্বতন মহলে তৎসংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়, সেটি কি সঠিক? আসলে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাবে যথেষ্ট ফারাক। এই যেমন করোনার সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়ার্কসিট বিতরণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল।
সেটি কতটা ফলপ্রসূ হওয়ার মতো বা হয়েছে? তবে স্কুল-কলেজে যে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল, সেটি একটি কার্যকর এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ ছিল এবং ফলপ্রসূ হতো যদি শহর-গ্রামনির্বিশেষে প্রয়োজনীয় ডিভাইসসহ প্রযুক্তিগত সহায়তা সব শিক্ষার্থীর মাঝে সরবরাহ করা যেত। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে? শহুরে সচেতন পরিবারের কিছু শিক্ষার্থী ছাড়া বাকি সবাই বঞ্চিত হয়েছে বা সুযোগ লাভে ব্যর্থ হয়েছে।
শহরের ভালো কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদ দিলে বাকিরা ছিল নিষ্প্রভ-নিরুপায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোনো সাড়া পাওয়া যেত না। সরকারি অনুদানবঞ্চিত তথা ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিতে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষা-কার্যক্রম থেকে সরে গিয়েছিল। ফলে একটা লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল পুরো শিক্ষাঙ্গনে। তা ছাড়া কর্মসংস্থান হারিয়ে অধিকাংশ পরিবার কেবল দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন থেকেছে। প্রয়োজনীয় ডিভাইসের অভাবে ডেটা কিনে অনলাইন ক্লাস করার সামর্থ্য ছিল না গ্রামাঞ্চলের সিংহভাগ শিক্ষার্থীর। ফলে সেই ক্লাসের ভিত্তিতে তৈরি করা অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া সম্ভবপর ছিল না ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর।
কর্তৃপক্ষের চাপে একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে অনেকটা বাধ্য করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে হলরুমে গাদাগাদি বসিয়ে শিক্ষার্থীদের বা তাদের পক্ষে অন্য কাউকে দিয়ে সেই অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করে সেই তথ্য-উপাত্ত দ্রুত ঊর্ধ্বতনকে পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। ওই যে বললাম না, ঊর্ধ্বতনকে খুশি করার চেষ্টাটাই শেষমেশ মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়! এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
অ্যাসাইনমেন্টে কী লেখা ছিল, বিপরীতে শিক্ষার্থীরা কী লিখেছে তা কয়জন শিক্ষার্থী জেনেছে? অথচ এ তথ্য পেয়ে আমাদের শিক্ষা অধিকর্তারা খুশিতে গদগদ হয়েছেন। কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জিত হতে দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন।
শুধু যে অ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে তা কিন্তু নয়; সবকিছুতেই এমনটি হয়ে থাকে, এখনো হচ্ছে। এই যেমন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল বিষয়টি এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনাশ্রমে পূর্ণ নম্বর পাওয়ার একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। পূর্ণ নম্বর শুধু পেতেই হবে না, দিতেই হবে—এই হচ্ছে মানসিকতা। এই যে আমরা বাধ্যতামূলকভাবে ঘটা করে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করছি, সেখানেও আছে ঊর্ধ্বতনকে খুশি করার ধারাবাহিকতা। কোনো রকমে একটা আয়োজন করে সেই তথ্যচিত্র ধারণ করে পাঠিয়ে দিতে পারলেই যেন জাত বাঁচে বা চাকরি রক্ষে! সেখানে আবেগের চেয়ে আনুষ্ঠানিকতাই অধিক থাকে বলে এই অনুষ্ঠানসর্বস্ব আয়োজন আমাদের চেতনাকে ততটা নাড়া দিতে পারছে না, যতটা আমরা প্রত্যাশা করি।
যেখানটায় শুরু করেছিলাম, যথাযথভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করলে পাসের হার যদি অনেক কমেও যায়, তাতেই কী এমন ক্ষতি? আর যেটুকু ক্ষতি হয় সেটি সাময়িক এবং দীর্ঘমেয়াদি বিবেচনায় নিশ্চয়ই উপেক্ষণীয়। নাকি শিক্ষকেরা ক্লাসে পড়ান না বলে বদনাম হতো? বদনাম তো আছেই। আমি যে বছর (১৯৯১) এসএসসি পাস করেছি, সেই বছর পাসের হার ছিল ৩১ দশমিক ৭৩ শতাংশ! কই, তখন তো শিক্ষকদের এই বদনাম ছিল না। আর এখন প্রায় শতভাগ পাস করার পরও যত বদনাম শিক্ষকদের। আমি বলি কি পাসের হার এখন আর ক্লাসে পড়ানো না পড়ানোর ওপর ততটা নির্ভর করছে না। যতটা নির্ভর করছে আরও অনেক বিষয়ের ওপর। সেই সব কি আমরা জানি না? আসলে জেনেও না জানার ভান করি। আর এই ভান-ভণ্ডামিই আমাদের শিক্ষার এই দুরবস্থার কারণ।
আর ওই যে ক্ষতির কথা বললাম—হ্যাঁ, ক্ষতি একটা আছে। তা রাজনৈতিক। শিক্ষাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে নিতে না পারার ব্যর্থতাও সেই অন্য বিষয়ের একটি। হ্যাঁ, বিরুদ্ধবাদীরা বলবে, এই সরকার শিক্ষাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি তো মনে করি, বিরুদ্ধবাদীদের এ কথা যদি অংশতও সত্যি হয়েও থাকে, তবেও তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি মনে পড়ছে ‘মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে।’ হ্যাঁ, এই অপ্রিয় সত্যটিকে মেনে নিয়ে সঠিক কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করেই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প নেই। তা না করে এই গড্ডলিকাপ্রবাহে ভাসতে থাকলে পাবলিক পরীক্ষার প্রায় শতভাগ পাস যদি একদিন ভর্তি পরীক্ষায় শতভাগ ফেলে পর্যবসিত হয়, তখন হয়তো অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বোধোদয় হোক সংশ্লিষ্ট সবার।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
চলতি শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ৫ জুন। তাতে পাস করেছে সর্বসাকল্যে ১০ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষা যেহেতু একটি বাছাই-প্রক্রিয়া, সে ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী যদি মেধা-ক্রমানুসারে বাছাইয়ে বাদ পড়তেন, তাহলেও একটি কথা ছিল; কিন্তু এই ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী তো বাছাই-প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তই হতে পারেননি।
তাঁরা একটি নির্দিষ্ট নম্বর পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, অর্থাৎ যে নম্বরটি পেলে ন্যূনতম শিখনফল অর্জিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেত বা উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য যেটুকু শিখনদক্ষতা অপরিহার্য ছিল, তাঁরা সেটি অর্জন করতে পারেননি। আর পারেননি বলেই ভর্তির জন্য বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগটি পর্যন্ত পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সরাসরি তাঁদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কেন এমনটি হবে? খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই এসএসসি, এইচএসসির রেজাল্ট খুব ভালো, অর্থাৎ তথাকথিত এ প্লাস! এমন এ প্লাস লইয়া তবে আমরা কী করিব কিংবা এমন এ প্লাস কেন আমরা তৈরি করছি! শিক্ষায় আমাদের যে নীতিনির্ধারকেরা আছেন, বিষয়টি কি তাঁদের ভাবিত করে? প্রচলিত শিক্ষা ও পরীক্ষাপদ্ধতি যে আমাদের যুগোপযোগী নয়, তার বাস্তব উদাহরণ চাঁদপুরের
ছেলে নাফিস। এইচএসসি পাসের আগেই এমআইটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সে। তার মানে হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের এইচএসসি পাস করা না-করা ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে
না। তাদের মূল্যায়ন অন্য কিছুতে। সেই অন্য কিছু আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কিছুটা কঠিন হলেও হাঁটতে হবে সেই পথেই।
প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার পর আমরা শিক্ষকেরা উত্তরপত্র আনতে গেলে বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যে অনুকম্পাটুকু দেখিয়ে যেতে বলেন, তা কতটা সঠিক বা যৌক্তিক? আমি যদি বলি বোর্ডে বোর্ডে পাসের হার বাড়ানোর এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা তাহলে কি ভুল বলা হবে? আসলে আমাদের সবকিছুতেই ঊর্ধ্বতনকে খুশি করার একটি অপপ্রয়াস লক্ষ করা যায়। বিপরীতে স্নিগ্ধ-শীতল কক্ষে বসে আমাদের অধিকর্তারা যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তার অনেকটাই বাস্তবতার নিরিখে হয় না। আর হয় না বলেই কাঙ্ক্ষিত ফল লাভে আমরা ব্যর্থ হই। বদলাতে হয় কিছুদিন পর পর শিক্ষাক্রম বা শিক্ষানীতি।
আবার তাঁরা যে পরিকল্পনা করেন তার বাস্তবায়ন মাঠপর্যায়ে কতটুকু হচ্ছে, কেমন হচ্ছে, কোথায় সমস্যা তার সঠিক মূল্যায়ন কি হয়? যা হওয়ার কথা তা কি হয় বা যা হচ্ছে স্বীকার করে ঊর্ধ্বতন মহলে তৎসংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়, সেটি কি সঠিক? আসলে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাবে যথেষ্ট ফারাক। এই যেমন করোনার সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়ার্কসিট বিতরণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল।
সেটি কতটা ফলপ্রসূ হওয়ার মতো বা হয়েছে? তবে স্কুল-কলেজে যে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল, সেটি একটি কার্যকর এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ ছিল এবং ফলপ্রসূ হতো যদি শহর-গ্রামনির্বিশেষে প্রয়োজনীয় ডিভাইসসহ প্রযুক্তিগত সহায়তা সব শিক্ষার্থীর মাঝে সরবরাহ করা যেত। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে? শহুরে সচেতন পরিবারের কিছু শিক্ষার্থী ছাড়া বাকি সবাই বঞ্চিত হয়েছে বা সুযোগ লাভে ব্যর্থ হয়েছে।
শহরের ভালো কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদ দিলে বাকিরা ছিল নিষ্প্রভ-নিরুপায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোনো সাড়া পাওয়া যেত না। সরকারি অনুদানবঞ্চিত তথা ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিতে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষা-কার্যক্রম থেকে সরে গিয়েছিল। ফলে একটা লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল পুরো শিক্ষাঙ্গনে। তা ছাড়া কর্মসংস্থান হারিয়ে অধিকাংশ পরিবার কেবল দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন থেকেছে। প্রয়োজনীয় ডিভাইসের অভাবে ডেটা কিনে অনলাইন ক্লাস করার সামর্থ্য ছিল না গ্রামাঞ্চলের সিংহভাগ শিক্ষার্থীর। ফলে সেই ক্লাসের ভিত্তিতে তৈরি করা অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া সম্ভবপর ছিল না ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর।
কর্তৃপক্ষের চাপে একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে অনেকটা বাধ্য করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে হলরুমে গাদাগাদি বসিয়ে শিক্ষার্থীদের বা তাদের পক্ষে অন্য কাউকে দিয়ে সেই অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করে সেই তথ্য-উপাত্ত দ্রুত ঊর্ধ্বতনকে পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। ওই যে বললাম না, ঊর্ধ্বতনকে খুশি করার চেষ্টাটাই শেষমেশ মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়! এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
অ্যাসাইনমেন্টে কী লেখা ছিল, বিপরীতে শিক্ষার্থীরা কী লিখেছে তা কয়জন শিক্ষার্থী জেনেছে? অথচ এ তথ্য পেয়ে আমাদের শিক্ষা অধিকর্তারা খুশিতে গদগদ হয়েছেন। কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জিত হতে দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন।
শুধু যে অ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে তা কিন্তু নয়; সবকিছুতেই এমনটি হয়ে থাকে, এখনো হচ্ছে। এই যেমন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল বিষয়টি এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনাশ্রমে পূর্ণ নম্বর পাওয়ার একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। পূর্ণ নম্বর শুধু পেতেই হবে না, দিতেই হবে—এই হচ্ছে মানসিকতা। এই যে আমরা বাধ্যতামূলকভাবে ঘটা করে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করছি, সেখানেও আছে ঊর্ধ্বতনকে খুশি করার ধারাবাহিকতা। কোনো রকমে একটা আয়োজন করে সেই তথ্যচিত্র ধারণ করে পাঠিয়ে দিতে পারলেই যেন জাত বাঁচে বা চাকরি রক্ষে! সেখানে আবেগের চেয়ে আনুষ্ঠানিকতাই অধিক থাকে বলে এই অনুষ্ঠানসর্বস্ব আয়োজন আমাদের চেতনাকে ততটা নাড়া দিতে পারছে না, যতটা আমরা প্রত্যাশা করি।
যেখানটায় শুরু করেছিলাম, যথাযথভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করলে পাসের হার যদি অনেক কমেও যায়, তাতেই কী এমন ক্ষতি? আর যেটুকু ক্ষতি হয় সেটি সাময়িক এবং দীর্ঘমেয়াদি বিবেচনায় নিশ্চয়ই উপেক্ষণীয়। নাকি শিক্ষকেরা ক্লাসে পড়ান না বলে বদনাম হতো? বদনাম তো আছেই। আমি যে বছর (১৯৯১) এসএসসি পাস করেছি, সেই বছর পাসের হার ছিল ৩১ দশমিক ৭৩ শতাংশ! কই, তখন তো শিক্ষকদের এই বদনাম ছিল না। আর এখন প্রায় শতভাগ পাস করার পরও যত বদনাম শিক্ষকদের। আমি বলি কি পাসের হার এখন আর ক্লাসে পড়ানো না পড়ানোর ওপর ততটা নির্ভর করছে না। যতটা নির্ভর করছে আরও অনেক বিষয়ের ওপর। সেই সব কি আমরা জানি না? আসলে জেনেও না জানার ভান করি। আর এই ভান-ভণ্ডামিই আমাদের শিক্ষার এই দুরবস্থার কারণ।
আর ওই যে ক্ষতির কথা বললাম—হ্যাঁ, ক্ষতি একটা আছে। তা রাজনৈতিক। শিক্ষাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে নিতে না পারার ব্যর্থতাও সেই অন্য বিষয়ের একটি। হ্যাঁ, বিরুদ্ধবাদীরা বলবে, এই সরকার শিক্ষাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি তো মনে করি, বিরুদ্ধবাদীদের এ কথা যদি অংশতও সত্যি হয়েও থাকে, তবেও তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি মনে পড়ছে ‘মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে।’ হ্যাঁ, এই অপ্রিয় সত্যটিকে মেনে নিয়ে সঠিক কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করেই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প নেই। তা না করে এই গড্ডলিকাপ্রবাহে ভাসতে থাকলে পাবলিক পরীক্ষার প্রায় শতভাগ পাস যদি একদিন ভর্তি পরীক্ষায় শতভাগ ফেলে পর্যবসিত হয়, তখন হয়তো অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বোধোদয় হোক সংশ্লিষ্ট সবার।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে