ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা আরও দুটি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জে গত রোববার রাতে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন একজন। সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে নির্বাচনী সহিংসতায় আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত রোববার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত হামলা, সংঘর্ষসহ নানা ঘটনায় আহত হয়েছেন আড়াই শতাধিক।

দেশে ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ৮৩৬ ইউপিতে ভোট হয়েছে গত রোববার। সর্বশেষ নিহত দুজনসহ এই ধাপে এ পর্যন্ত নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় চারজনের প্রাণ ঝরল।

দুজন নিহত, আতঙ্কে একজনের মৃত্যু

সিলেটের গোলাপগঞ্জের স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র বলেছে, রোববার রাত ৮টার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নে দুটি ভোটকেন্দ্রের উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে বৈটিকর এলাকায় পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশসহ প্রায় ১০ জন আহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আবদুস সালাম (৪০) নামের এক সাইকেল মেকানিক।

এ ব্যাপারে বারবার চেষ্টা করেও গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে সিরাজগঞ্জের চৌহালীর খাষ কাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রোববার দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত জাকির হোসেন মোল্লা (৫০) গতকাল দুপুরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় আবদুল হাকিম নামের এক সদস্যপ্রার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত জাকিরের ভাই আবদুল হাকিমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চৌহালী থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে রোববার সংঘর্ষ হয়। এতে জাকির গুরুতর আহত হন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় আবদুল হাকিমকে আটক করা হয়েছে।

মাদারীপুরের রাজৈরের পাইকপাড়া ও ইশিবপুরে নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় আতঙ্কে নূর ইসলাম নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদিক বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে আতঙ্কে একজনের মৃত্যুর খবর নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

বিভিন্ন স্থানে হামলা-সংঘর্ষ, আহত ২৫০

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ১ নম্বর উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নে গতকাল সকালে পরাজিত সদস্যপ্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা বিজয়ী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।

বানিয়াচং থানার ওসি মো. এমরান হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ডোয়াইল ইউনিয়ন, পোগলদিঘা ইউনিয়ন ও কামরাবাদ ইউনিয়নে বিজয়ী ও পরাজিত সদস্যপ্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, হামলা ও সংঘর্ষ এবং সড়ক অবরোধের ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ডোয়াইল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত সদস্যপ্রার্থী আশিকুর রহমান লাল মিয়ার সমর্থকেরা অগ্নিসংযোগ ও কাঠের গুঁড়ি ফেলে দোলভিটি এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন।

এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার ওসি মীর রকিবুল হক বলেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৃথক তিনটি স্থানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে গতকাল দুই পরাজিত সদস্যপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ছয়জনকে সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জগন্নাথপুর থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, শরীয়তপুরের নড়িয়া, ঝিনাইদহ সদর, রাঙামাটির নানিয়ারচর, নোয়াখালী সদর ও যশোরের কেশবপুরে হামলা, সংঘর্ষসহ নানা ঘটনায় প্রায় ৭০ জন আহত হয়েছেন।

নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে ডৌহাখলা ইউনিয়নের বিজয়ী চেয়ারম্যানপ্রার্থীকে রোববার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উপজেলা নির্বাচন অফিস ও পুলিশ সূত্র বলেছে, রোববার ভোটগ্রহণ শেষে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সজল চন্দ্র সরকার ভোটকেন্দ্রের তথ্য সংগ্রহ করে ফলাফল ঘোষণা করছিলেন। এ সময় ডৌহাখলা ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ কাইয়ুম ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর কাছে একটি কেন্দ্রের ফলাফলের কপি চান। নির্বাচন কর্মকর্তা তাঁদের জানান, ওই কেন্দ্রের ফলাফলের কপি তখনো আসেনি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করেন কাইয়ুম ও তাঁর সহযোগীরা। এর পরপরই কাইয়ুমকে আটক করে পুলিশ। রাত ১১টায় ডৌহাখলা ইউনিয়নের ভোট গণনা শেষে এম এ কাইয়ুমকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সকালে কাইয়ুমের বিরুদ্ধে গৌরীপুর থানায় মামলা করেন নির্বাচন কর্মকর্তা।

গৌরীপুর থানার ওসি খান আবদুল হালিম সিদ্দিকী বলেন, এম এ কাইয়ুমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।