হাত থেকে ভাতের পাতিল পড়ে যাওয়ায় ইয়াসমিন খাতুন (১১) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রীকে একটি কক্ষে চার দিন আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া গরম ভাত শিশুটির শরীরের ঢেলে দেওয়া হয়। এতে তার পিঠ ও দুই হাঁটু পুড়ে গেছে। সে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জামিয়া তালিমুননেছা হাফিজিয়া মহিলা মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসার তিন শিক্ষকের নামে নাটোর সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন শিশুটির বাবা ইমরান আলী। ওই তিন শিক্ষক হলেন সোহরাব হোসেন (২৭), সালমা বেগম (২৫) ও বাবুল হোসেনের (৬০)।

পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় দিনমজুর ইমরান হোসেনের মেয়ে ইয়াসমিন তিন বছর ধরে ওই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। মাদ্রাসার ভেতরে ওই তিন শিক্ষক বসবাস করেন। সেখানে আবাসিকভাবে কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থীও থাকে। এই শিশুদের দিয়ে তাঁরা রান্নাবান্নাসহ গৃহস্থালির সব কাজ করাতেন। গত শুক্রবার বিকেলে শিশু ইয়াসমিনকে ভাত রান্না করতে বলেন। ভাত রান্না পর ঘরে নেওয়ার সময় ইয়াসমিনের হাত থেকে ভাতের পাতিল পড়ে যায়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষক সোহরাব হোসেন ও সালমা বেগম চুল ধরে ইয়াসমিনকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তার শরীরে গরম ভাত ঢেলে দেন। এতে ইয়াসমিনের পিঠ ও দুই হাঁটু পুড়ে যায়। এরপর তাকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। তার চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পায়। পরে খবর পেয়ে ইয়াসমিনের পরিবারের সদস্যরা গত মঙ্গলবার ইয়াসমিনকে মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার করে।

জানতে চাইলে ইয়াসমিনের বাবা ইমরান বলেন, ভাত পড়ে যাওয়ায় ইয়াসমিনের শরীরে গরম ভাত ঢেলে পড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষকেরা। তাকে চার দিন আটকে রেখে নির্যাতন করেছেন। তিনি নির্যাতনকারী শিক্ষকদের গ্রেপ্তার ও কঠিন শাস্তি দাবি করেন।

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মুঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার শরীরের পুড়ে যাওয়া স্থানে ক্ষত হয়েছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার পরপরই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে ভালো হতো।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুনসুর রহমান জানান, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। থানায় অভিযোগের পরপর মাদ্রাসায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তবে তাঁদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।