স্বপ্না রেজা
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনের নিরাপত্তার প্রয়োজন হবে—এমন সত্য অনেকেই প্রবলভাবে অনুভব করছে। যদিও ফুলপরী বলছে, সে ভীত নয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ সে করেই যাবে। তবে অনেকেই তার নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তিত। অনেকের মতো আমিও একজন। অতীত অভিজ্ঞতাই এমন দুশ্চিন্তার উৎস। ফলে ফুলপরীর নিরাপত্তার প্রয়োজন অনুভব করাটা স্বাভাবিক এবং যথেষ্ট যুক্তিসংগত।
সাহসিকতার সঙ্গে ফুলপরী যেভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, তা সচরাচর দেখা যায় না। সেই রকম এবং সেইভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ দায়িত্বে থেকে অনেকেই যেমন করে না, তেমনি দায়িত্বে না থেকে সচেতন হয়েও করে না। এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিটাই বহুদিন ধরে চলমান এবং দৃশ্যমান। এর পেছনেও কারণ কিংবা যুক্তি রয়েছে। কেউ কেউ এড়িয়ে যাওয়াকে বলে মূলত ভয়ের পরিণতি। সত্যিই তাই, সচেতন হলেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকেই ভীত থাকে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য সাহসের দরকার হয়, যে সাহস নিজের মনোবল থেকে ব্যক্তি যেমন পেয়ে থাকে, তেমনি পেয়ে থাকে তার পরিবেশ থেকে। তবে পরিবেশ তথা প্রচলিত সমাজব্যবস্থা থেকে ফুলপরী অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস পেয়েছে, তা কিন্তু নয়। এই সাহস সম্পূর্ণই তার ভেতর থেকে জাগ্রত।
কিছুদিন আগে দেখা গেল, জনাকীর্ণ সড়কে এক তরুণী এক পুরুষ মোবাইল ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধরে পেটাচ্ছে। এ রকম দৃশ্য দেখা যায় না সাধারণত। বরং যত্রতত্র নারীকেই পুরুষের সহিংসতার শিকার হতে দেখা যায়। এ ঘটনা বলে দিয়েছিল, নারীরা সাহসী হয়ে উঠছে। এমন ঘটনারই পুনরাবৃত্তি যেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতিত শিক্ষার্থী ফুলপরীর প্রতিবাদ। তবে ফুলপরী যেন আরও বেশি সাহসী, প্রতিবাদী। ফুলপরী যাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে, তারা অতি ক্ষমতাধর, প্রভাবশালী। অন্যায় করেও এরা পার পেয়ে যায়, ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের বেপরোয়া আচরণ, যেমন ক্ষমতা, প্রভাব, নির্যাতন, অনৈতিক কাজ সম্পর্কে কমবেশি সবাই অবগত আছে। অতীতের মতো বর্তমানেও একই ধারণা পোষণ করে সবাই। ফুলপরী অভিযোগ করেছে, ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী তাকে নির্যাতন করা হয় এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও করা হয়। ফুলপরীর অভিযোগ, জঘন্য কাজটি করেছে ছাত্রলীগের এক নেত্রীসহ আরও পাঁচজন। এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ছাত্রলীগ যতটা না স্বস্তির নাম, তারও অধিক আতঙ্কের নাম। সোজা কথা, ছাত্রলীগের কোনো কোনো নেতা-কর্মীর দলটির রাজনৈতিক আদর্শবহির্ভূত বেপরোয়া কার্যকলাপ, সন্ত্রাসী আচরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের ওপর খবরদারির ঘটনার কথাও শোনা যায়। ছাত্রলীগের নেতা মানেই অর্থ, বিত্ত ও ক্ষমতার প্রতিচ্ছবি—এমন ধারণাই সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীর। যাই হোক, এমন একটি দাপুটে সংগঠনের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বুকের পাটা লাগে! কেবল অভিযোগই এই যুদ্ধের শেষ নয়, বরং শুরু। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর হওয়ায় অভিযোগকারীকে লম্বা সময় ধরে সাহসিকতার সঙ্গে লড়ে যেতে হয়। বিপর্যস্ত হতে হয়। জয় কিংবা পরাজয়—সেটা অনেক পরের কথা। তবে এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, অভিযোগকারী অন্তরালে চলে গেছে।
হলের প্রভোস্ট বা প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কতটা অভিভাবকত্ব পালন করে থাকেন—প্রশ্নটা বড় দাগের। আবার পুরোনো কথায় ফিরতে হয়, হয়তো তারাও ভীত ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে। তাই কি? কিন্তু যত দূর জানা আছে তা হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ তো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই হয়ে থাকে। দলীয় রাজনৈতিক সমমনা ছাড়া কি কখনো কোনো দিন কোথাও কেউ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে? সম্ভবত তা হয় না। উপরন্তু, এ বিষয়ে নির্দলীয় যোগ্য অনেকের অভিযোগ থাকে। যাই হোক, শিক্ষকতার দায়িত্বটাও যেনতেনভাবে চলছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ছে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাবের উত্তম মহড়ার স্থান। আর এ কারণে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে ভবিষ্যতের সুস্থ ও যোগ্য নাগরিক তৈরির কারখানা—এই চিন্তাচেতনার যেন অপমৃত্যু ঘটছে।
যখন লেখাটা লিখছি, তখন মহামান্য আদালত ফুলপরীকে নির্যাতনের অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত এবং তাদের শিক্ষাজীবন স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরসহ অন্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আরও বলা হয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তার পছন্দমতো হলে তিন দিনের মধ্যে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে। হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি এই মুহূর্তে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত নন, সেটা পরিষ্কার ও প্রতীয়মান। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন নির্দেশ কতটা রাজনীতিতে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের অন্যায় আচরণ থেকে বিরত রাখতে সহায়ক হবে, সেই প্রশ্ন কিন্তু রয়ে যায়।
অতীতে ‘রাজনৈতিক ছাড়’ অনেকের শাস্তিকে শিথিল করেছে বলে অভিযোগও রয়েছে। তাই অনেকে আরও শক্ত রায় প্রত্যাশা করে, যেন এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বরখাস্ত করার পর পরবর্তী ধাপটা কী, সেটা কিন্তু ভাবতে হবে। অনেকেই সেটা ভেবে শিউরে উঠছে। কারণ, রাজনীতিতে তো প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতা দেখা যায়। ঘটনার পরে আরও বহু ঘটনার জন্ম হয়, জন্ম নেয়। সেই ঘটনায় ফুলপরীর পাশে কে থাকছে, সেটা ভেবে অনেকেই শঙ্কিত। রাজনৈতিক লেবাসে কতিপয় শিক্ষার্থীর অপরাধ করার বিষয়টি শক্ত হাতে নিবৃত্ত করা না গেলে অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটবেই। বিচার এমন হওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের আচরণ করার সাহস না পায়। গতানুগতিক বিচারব্যবস্থা এ-জাতীয় অপরাধ নির্মূলের জন্য যথেষ্ট নয় বলে অনেকেই মনে করছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ কী করে, তাদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টিও গভীরভাবে দেখা দরকার। তারা যদি সাধারণ ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে তো তাদের মতো উচ্চশিক্ষিত, মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিকে শিক্ষার্থীদের পাহারাদার হিসেবে না রেখে সমাজে বিদ্যমান কোনো সিকিউরিটি কোম্পানি থেকে পোশাকধারী অল্পশিক্ষিত ও বিশ্বস্ত নিরাপত্তাকর্মী রাখা যায়, তাই না? শিক্ষার গুরুত্ব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার নৈতিক বোধ যারা বহন করতে ব্যর্থ কিংবা দায়ভার কাঁধে নিতে অপারগ, তাদের জন্য এর চেয়ে উন্নত ভাবনা আর কী হতে পারে? প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপদহীন পরিবেশ অত্যন্ত দুঃখজনক, হতাশার এবং ব্যবস্থাপনার খামখেয়ালিপনার নামান্তর।
মনে পড়ে, কিছুদিন আগে সাফ ফুটবল গেমসে জয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশ ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড় সানজিদা আখতার ছাদখোলা বাসে চড়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। এই সানজিদা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এবং সে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। বাংলাদেশ সরকার তার সেই ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছিল, তাকে সংবর্ধিত করেছিল। আর আরেকজন সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত থেকে একজন শিক্ষার্থীকে জঘন্যভাবে নির্যাতনের অভিযোগে আজ ধিক্কৃত এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত। অন্তরাসহ পাঁচজন অভিযুক্তকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সাহসী ও প্রতিবাদী শিক্ষার্থী ফুলপরীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সাহস দিয়ে এগিয়ে নেওয়াটাই এখন ছাত্রলীগের দায়িত্ব। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নজরদারি বাড়াতে হবে তাদের অঙ্গসংগঠনের ওপর। কোনো ব্যক্তির ত্রুটি যেন দেশ ও দশের ক্ষতির কারণ না হয় এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে। প্রত্যাশা—ফুলপরীর মতো আর কেউ নির্যাতিত না হোক।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনের নিরাপত্তার প্রয়োজন হবে—এমন সত্য অনেকেই প্রবলভাবে অনুভব করছে। যদিও ফুলপরী বলছে, সে ভীত নয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ সে করেই যাবে। তবে অনেকেই তার নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তিত। অনেকের মতো আমিও একজন। অতীত অভিজ্ঞতাই এমন দুশ্চিন্তার উৎস। ফলে ফুলপরীর নিরাপত্তার প্রয়োজন অনুভব করাটা স্বাভাবিক এবং যথেষ্ট যুক্তিসংগত।
সাহসিকতার সঙ্গে ফুলপরী যেভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, তা সচরাচর দেখা যায় না। সেই রকম এবং সেইভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ দায়িত্বে থেকে অনেকেই যেমন করে না, তেমনি দায়িত্বে না থেকে সচেতন হয়েও করে না। এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিটাই বহুদিন ধরে চলমান এবং দৃশ্যমান। এর পেছনেও কারণ কিংবা যুক্তি রয়েছে। কেউ কেউ এড়িয়ে যাওয়াকে বলে মূলত ভয়ের পরিণতি। সত্যিই তাই, সচেতন হলেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকেই ভীত থাকে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য সাহসের দরকার হয়, যে সাহস নিজের মনোবল থেকে ব্যক্তি যেমন পেয়ে থাকে, তেমনি পেয়ে থাকে তার পরিবেশ থেকে। তবে পরিবেশ তথা প্রচলিত সমাজব্যবস্থা থেকে ফুলপরী অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস পেয়েছে, তা কিন্তু নয়। এই সাহস সম্পূর্ণই তার ভেতর থেকে জাগ্রত।
কিছুদিন আগে দেখা গেল, জনাকীর্ণ সড়কে এক তরুণী এক পুরুষ মোবাইল ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধরে পেটাচ্ছে। এ রকম দৃশ্য দেখা যায় না সাধারণত। বরং যত্রতত্র নারীকেই পুরুষের সহিংসতার শিকার হতে দেখা যায়। এ ঘটনা বলে দিয়েছিল, নারীরা সাহসী হয়ে উঠছে। এমন ঘটনারই পুনরাবৃত্তি যেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতিত শিক্ষার্থী ফুলপরীর প্রতিবাদ। তবে ফুলপরী যেন আরও বেশি সাহসী, প্রতিবাদী। ফুলপরী যাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে, তারা অতি ক্ষমতাধর, প্রভাবশালী। অন্যায় করেও এরা পার পেয়ে যায়, ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের বেপরোয়া আচরণ, যেমন ক্ষমতা, প্রভাব, নির্যাতন, অনৈতিক কাজ সম্পর্কে কমবেশি সবাই অবগত আছে। অতীতের মতো বর্তমানেও একই ধারণা পোষণ করে সবাই। ফুলপরী অভিযোগ করেছে, ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী তাকে নির্যাতন করা হয় এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও করা হয়। ফুলপরীর অভিযোগ, জঘন্য কাজটি করেছে ছাত্রলীগের এক নেত্রীসহ আরও পাঁচজন। এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ছাত্রলীগ যতটা না স্বস্তির নাম, তারও অধিক আতঙ্কের নাম। সোজা কথা, ছাত্রলীগের কোনো কোনো নেতা-কর্মীর দলটির রাজনৈতিক আদর্শবহির্ভূত বেপরোয়া কার্যকলাপ, সন্ত্রাসী আচরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের ওপর খবরদারির ঘটনার কথাও শোনা যায়। ছাত্রলীগের নেতা মানেই অর্থ, বিত্ত ও ক্ষমতার প্রতিচ্ছবি—এমন ধারণাই সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীর। যাই হোক, এমন একটি দাপুটে সংগঠনের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বুকের পাটা লাগে! কেবল অভিযোগই এই যুদ্ধের শেষ নয়, বরং শুরু। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর হওয়ায় অভিযোগকারীকে লম্বা সময় ধরে সাহসিকতার সঙ্গে লড়ে যেতে হয়। বিপর্যস্ত হতে হয়। জয় কিংবা পরাজয়—সেটা অনেক পরের কথা। তবে এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, অভিযোগকারী অন্তরালে চলে গেছে।
হলের প্রভোস্ট বা প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কতটা অভিভাবকত্ব পালন করে থাকেন—প্রশ্নটা বড় দাগের। আবার পুরোনো কথায় ফিরতে হয়, হয়তো তারাও ভীত ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে। তাই কি? কিন্তু যত দূর জানা আছে তা হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ তো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই হয়ে থাকে। দলীয় রাজনৈতিক সমমনা ছাড়া কি কখনো কোনো দিন কোথাও কেউ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে? সম্ভবত তা হয় না। উপরন্তু, এ বিষয়ে নির্দলীয় যোগ্য অনেকের অভিযোগ থাকে। যাই হোক, শিক্ষকতার দায়িত্বটাও যেনতেনভাবে চলছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ছে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাবের উত্তম মহড়ার স্থান। আর এ কারণে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে ভবিষ্যতের সুস্থ ও যোগ্য নাগরিক তৈরির কারখানা—এই চিন্তাচেতনার যেন অপমৃত্যু ঘটছে।
যখন লেখাটা লিখছি, তখন মহামান্য আদালত ফুলপরীকে নির্যাতনের অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত এবং তাদের শিক্ষাজীবন স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরসহ অন্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আরও বলা হয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তার পছন্দমতো হলে তিন দিনের মধ্যে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে। হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি এই মুহূর্তে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত নন, সেটা পরিষ্কার ও প্রতীয়মান। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন নির্দেশ কতটা রাজনীতিতে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের অন্যায় আচরণ থেকে বিরত রাখতে সহায়ক হবে, সেই প্রশ্ন কিন্তু রয়ে যায়।
অতীতে ‘রাজনৈতিক ছাড়’ অনেকের শাস্তিকে শিথিল করেছে বলে অভিযোগও রয়েছে। তাই অনেকে আরও শক্ত রায় প্রত্যাশা করে, যেন এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বরখাস্ত করার পর পরবর্তী ধাপটা কী, সেটা কিন্তু ভাবতে হবে। অনেকেই সেটা ভেবে শিউরে উঠছে। কারণ, রাজনীতিতে তো প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতা দেখা যায়। ঘটনার পরে আরও বহু ঘটনার জন্ম হয়, জন্ম নেয়। সেই ঘটনায় ফুলপরীর পাশে কে থাকছে, সেটা ভেবে অনেকেই শঙ্কিত। রাজনৈতিক লেবাসে কতিপয় শিক্ষার্থীর অপরাধ করার বিষয়টি শক্ত হাতে নিবৃত্ত করা না গেলে অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটবেই। বিচার এমন হওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের আচরণ করার সাহস না পায়। গতানুগতিক বিচারব্যবস্থা এ-জাতীয় অপরাধ নির্মূলের জন্য যথেষ্ট নয় বলে অনেকেই মনে করছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ কী করে, তাদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টিও গভীরভাবে দেখা দরকার। তারা যদি সাধারণ ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে তো তাদের মতো উচ্চশিক্ষিত, মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিকে শিক্ষার্থীদের পাহারাদার হিসেবে না রেখে সমাজে বিদ্যমান কোনো সিকিউরিটি কোম্পানি থেকে পোশাকধারী অল্পশিক্ষিত ও বিশ্বস্ত নিরাপত্তাকর্মী রাখা যায়, তাই না? শিক্ষার গুরুত্ব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার নৈতিক বোধ যারা বহন করতে ব্যর্থ কিংবা দায়ভার কাঁধে নিতে অপারগ, তাদের জন্য এর চেয়ে উন্নত ভাবনা আর কী হতে পারে? প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপদহীন পরিবেশ অত্যন্ত দুঃখজনক, হতাশার এবং ব্যবস্থাপনার খামখেয়ালিপনার নামান্তর।
মনে পড়ে, কিছুদিন আগে সাফ ফুটবল গেমসে জয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশ ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড় সানজিদা আখতার ছাদখোলা বাসে চড়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। এই সানজিদা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এবং সে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। বাংলাদেশ সরকার তার সেই ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছিল, তাকে সংবর্ধিত করেছিল। আর আরেকজন সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত থেকে একজন শিক্ষার্থীকে জঘন্যভাবে নির্যাতনের অভিযোগে আজ ধিক্কৃত এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত। অন্তরাসহ পাঁচজন অভিযুক্তকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সাহসী ও প্রতিবাদী শিক্ষার্থী ফুলপরীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সাহস দিয়ে এগিয়ে নেওয়াটাই এখন ছাত্রলীগের দায়িত্ব। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নজরদারি বাড়াতে হবে তাদের অঙ্গসংগঠনের ওপর। কোনো ব্যক্তির ত্রুটি যেন দেশ ও দশের ক্ষতির কারণ না হয় এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে। প্রত্যাশা—ফুলপরীর মতো আর কেউ নির্যাতিত না হোক।
স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে