ফখরুল আবেদীন মিলন
পাশের বাসার মন্টুর বাবা সৌদি আরবে থাকতেন। সেখানে কী কাজ করতেন, জানি না। তবে তাঁরা বেশ বড়লোক। আমি যখন হাতে করে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাই, তখন মন্টু কাঁধে স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে যায়। আমি ছোট মানুষ, তাই দীর্ঘশ্বাস না ছেড়ে ক্ষুদ্রশ্বাস ছাড়তাম, আর মনে মনে ভাবতাম, একদিন বড়লোক হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেব।
বাবা সরকারি চাকরি করতেন। মাস শেষে হিসাব করা বেতন দিয়ে যে আমার বড়লোক হওয়ার কোনো আশাই নেই, সেটা ওই বয়সেই বুঝে গিয়েছিলাম। তাই ঠিক করেছি ব্যবসা করব। একদিন বন্ধু আহসানের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে ধোলাইখালে গেলাম। ঠিক করলাম চুম্বকের ব্যবসা করব। ধোলাইখালের মোটর পার্টসের দোকান থেকে চুম্বক কিনে স্কুলে বিক্রি করব। তো কয়েক দিনের পকেটমানি জমিয়ে আবার দুই বন্ধু চলে গেলাম ধোলাইখালে। ৫০ পয়সা করে একেকটা চুম্বক কিনে এনে স্কুলে ২ টাকা করে বিক্রি করলাম। প্রথম লটেই বেশ লাভ হলো আমাদের। এরপর সপ্তাহে অন্তত এক দিন দুই বন্ধু চলে যেতাম চুম্বক কিনতে।
ভালোই যাচ্ছিল দিনকাল। ৫০ পয়সার বরফের আইসক্রিম বাদ দিয়ে এক টাকা দামের মালাই আইসক্রিম খাওয়া শুরু করলাম। আড়াই টাকায় একটা পেপসি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। বেশ একটা ভাব চলে এল দেহ-মনে। বড়লোক হওয়ার আনন্দ পাওয়া শুরু করলাম।
সেই সুখ বেশি দিন কপালে সইল না। একবার ১০টা চুম্বকের সঙ্গে ১০টা লোহার টুকরো গছিয়ে দিল বাটপার দোকানদার। চুম্বক আর লোহা এমনভাবে গায়ে গায়ে লেগে ছিল যে আমরা বুঝতেই পারিনি। ওই এক কনসাইনমেন্টে আমাদের বিরাট লস হয়ে গেল। আবার লেখাপড়ায় মন দিলাম, আর ২৫ পয়সার আধগলা আইসক্রিমের দুনিয়ায় ফিরে গেলাম। কিন্তু ধনী হওয়ার আশা মন থেকে গেল না।
কলেজে পড়ার সময় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল ধনী হওয়ার চিন্তা। এগিয়ে এল আমার কয়েকজন বন্ধু। তারা ইতিমধ্যে ‘৫-এ ৪০’ স্কিমে ৫ হাজার টাকা করে ইনভেস্ট করে মাত্র ২১ দিনে ৪০ হাজার টাকা করে পকেটে পুরেছে।
বিষয়টা খুবই সহজ ছিল। বন্ধুর বাসায় হতো আয়োজন। আমি ৫ হাজার টাকা, আর দুজন নতুন মেম্বার নিয়ে কোনো একটা চেইনে যুক্ত হব। পরের সপ্তাহে সেই দুজন আরও চারজনকে নিয়ে আসবে। পরের সপ্তাহে সেই চারজন আরও আটজনকে আনবে। সেই আটজনের ৪০ হাজার টাকা পাব আমি।
আজ আমার ৫ হাজার টাকা ৪০ হাজার হবে। খুব উত্তেজনা নিয়ে গেলাম বন্ধুর বাসায়। খুশিতে সবার জন্য ৩০-৪০ প্যাকেট মোরগ পোলাও নিয়ে গেলাম। সন্ধ্যার ঠিক মুখে শুনলাম ভয়াবহ খবর। পুলিশ প্রতিটি এলাকায় খুঁজে খুঁজে ‘৫-এ ৪০’ পার্টিদের গ্রেপ্তার করছে। তারা নাকি এই বাসার দিকেই আসছে। পড়িমরি করে সবাই দৌড় লাগাল। আমি আধখাওয়া মোরগ পোলাও বক্সের মধ্যে রেখেই রাস্তায় নেমে গেলাম। আমার আর ৪০ হাজার টাকা পাওয়া হলো না। মাঝখান থেকে বিরিয়ানির টাকাটাই গচ্চা গেল। রাতের অন্ধকারে খিলগাঁওয়ের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আর শর্টকাট রাস্তায় ধনী হওয়ার চেষ্টা করব না।
১৯৯৬ সাল। সবে চাকরিতে যোগ দিয়েছি। সহকর্মী আলফাজের হাতে এক লাখ টাকার সিটিসেলের ভোম্বা মোবাইল ফোন দেখে মনে হলো, এই ফোন না পেলে বাঁচব না। কিন্তু কেনার ক্ষমতা নেই। আলফাজ বুদ্ধি দিল শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করার। আম্মার হাতে-পায়ে ধরে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নেমে গেলাম শেয়ার ব্যবসায়।
দিন ফিরতে বেশি সময় লাগল না। ৫০ হাজার টাকা বেড়ে লাখ হলো কয় দিনেই। তারপর দুই লাখ, তিন লাখ। বাস ছেড়ে বেবিট্যাক্সিতে যাওয়া-আসা শুরু করলাম। আহ্, শান্তি। রমনা ভবনের সানমুন টেইলার্সে গিয়ে বান্ধবীর পছন্দে নেভি ব্লু রঙের ব্লেজার বানালাম অনেকগুলো টাকা খরচ করে। হোক টাকা খরচ, বান্ধবীর পছন্দ বলে কথা। এক বন্ধু পরামর্শ দিল দেড় লাখ টাকায় একটা স্টেশন ওয়াগন গাড়ি কেনার। খুব বিরক্ত হয়েছিলাম সেদিন। যেখানে আমি পাজেরো জিপ কেনার কথা ভাবছি, সেখানে সে কীভাবে সস্তা গাড়ি কেনার বুদ্ধি দেয়!
কিছুদিন পরই নেমে এল দুঃস্বপ্নের রাত। ভয়াবহ ধসে প্রায় রাস্তার ফকির হয়ে গেলাম। বাস তো দূরে থাক, হাঁটার পয়সাও পকেটে থাকত না। হাঁটতাম আর মনকে সান্ত্বনা দিতাম, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আব্দুর রব নামে আমার এক মামা আছেন, তিনি চাঁদপুরে থাকেন। স্কুলশিক্ষক। বাসায় ছেলেমেয়েদের ইংরেজি শেখান। বাড়ির দরজায় ছোট্ট সাইনবোর্ড ‘আব্দুর রব, ইংরেজি শিক্ষক’। তিনি তাঁর জীবনের সব সঞ্চয় ডেসটিনির বৃক্ষ প্রকল্পে লগ্নি করলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই গাছের গল্প করতেন। ৫ হাজার টাকার গাছ ১০ বছরে কীভাবে বড় হয়ে ৫০ হাজার টাকার গাছ হবে, সেই গল্প করতেন। একদিন দেখলাম, তাঁর বাসার দরজার নেমপ্লেট বদলে লিখেছেন—‘বৃক্ষপ্রেমী আব্দুর রব, ইংরেজি শিক্ষক’। ডেসটিনির প্রতারণার ধাক্কা তিনি সামলাতে পারেননি। মারা যান তার কিছুদিন পর।
মূলত ১৯৯৬ সালের শেয়ারবাজারে ধাক্কা খাওয়ার পর আমি শর্টকাটে ধনী হওয়ার চিন্তা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছি। এরপরও বিজনাস, ইউটুপে, যুবক, ডেসটিনি—বহু কিছু এসেছে, কিন্তু কোনো কিছুতেই আমি আর নিজেকে জড়াইনি।
এবার আরেকজনের গল্প শোনাই। ভদ্রলোক আমার ব্যাংকের গ্রাহক ছিলেন। আমি যেই ব্রাঞ্চের ম্যানেজার ছিলাম, তিনি সেই ব্রাঞ্চের ডিপোজিটর ছিলেন। একবার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে সব টাকা তুলে নিয়ে রাখলেন একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। একটাই কারণ, সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেট অনেক বেশি। তিনি আমার সামনে বসে ক্যালকুলেটর টিপে তৃপ্তির হাসি হেসেছিলেন।
দুই বছর পর বদলে গেল দৃশ্যপট। তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার করে আমার ব্রাঞ্চে আসতেন। সামনে রাখা সোফায় গা ছেড়ে দিয়ে বসে শুধু একটা কথাই বলতেন, ‘ভাই, আমার সব শেষ হয়ে গেল!’ আমি এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দিয়ে বলতাম, ‘ভাই, ধৈর্য ধরেন।’
আসলে আমাদের এই ধৈর্যটাই নেই। আমাদের সবকিছুতেই তাড়া। আজকে আমের আঁটি মাটিতে পুঁতে দিয়ে চাইব, সামনের বছর গাছভর্তি আম আসুক। হাতে থাকা অর্থ এমন জায়গায় বিনিয়োগ করতে চাই, যাতে এক বছরে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
আসলে এভাবে হয় না। সবকিছুকেই সময় দিতে হয় বড় হতে। আপনার সঞ্চয় করা অর্থ তো আর ফার্মের মুরগি না যে, স্টেরয়েড বা হরমোন দিয়ে দুই মাসেই বড় করে ফেলা যাবে; অথবা ভিয়েতনামি হাইব্রিড নারকেলগাছ না যে, ৩ ফুট উঁচু হতেই নারকেল ধরা শুরু করবে।
আজকের দিনে জমা করা অর্থে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেয় সরকার, বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে; যেমন সঞ্চয়পত্র, ওয়েজ আর্নার বন্ড, ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ইত্যাদিতে। এরপর আছে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক। দেশ চালাতে যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, সরকার তার কিছু অংশ এই সঞ্চয় প্রকল্প থেকে সংগ্রহ করে। বাকিরা আপনার, আমার ডিপোজিট ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে দেয়। সেখান থেকে যে মুনাফা হয়, তার বড় একটা অংশ আমাদের লভ্যাংশ হিসেবে দেয়। নামের শেষে ব্যাংক লেখা দেখলেই ভাববেন না যে এটা ব্যাংক। অনেক সমবায় সমিতিও নামের শেষে ব্যাংক লাগিয়ে রাখে।
সুতরাং কোথাও অর্থ জমানোর সময় খোঁজখবর করে নেওয়া ভালো যে, ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সূচকের কী অবস্থা। একইভাবে শেয়ারবাজারে টাকা খাটাতে চাইলে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুন। গুজবে ভর করে কোনো শেয়ার কিনবেন না। এতে আপনি রিটার্ন কম পেতে পারেন হয়তো, কিন্তু আপনার অর্থ হারিয়ে যাবে না। মনে রাখবেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ মানেই বেশি মুনাফা।
লেখক: রম্য লেখক ও ঊর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তা
পাশের বাসার মন্টুর বাবা সৌদি আরবে থাকতেন। সেখানে কী কাজ করতেন, জানি না। তবে তাঁরা বেশ বড়লোক। আমি যখন হাতে করে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাই, তখন মন্টু কাঁধে স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে যায়। আমি ছোট মানুষ, তাই দীর্ঘশ্বাস না ছেড়ে ক্ষুদ্রশ্বাস ছাড়তাম, আর মনে মনে ভাবতাম, একদিন বড়লোক হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেব।
বাবা সরকারি চাকরি করতেন। মাস শেষে হিসাব করা বেতন দিয়ে যে আমার বড়লোক হওয়ার কোনো আশাই নেই, সেটা ওই বয়সেই বুঝে গিয়েছিলাম। তাই ঠিক করেছি ব্যবসা করব। একদিন বন্ধু আহসানের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে ধোলাইখালে গেলাম। ঠিক করলাম চুম্বকের ব্যবসা করব। ধোলাইখালের মোটর পার্টসের দোকান থেকে চুম্বক কিনে স্কুলে বিক্রি করব। তো কয়েক দিনের পকেটমানি জমিয়ে আবার দুই বন্ধু চলে গেলাম ধোলাইখালে। ৫০ পয়সা করে একেকটা চুম্বক কিনে এনে স্কুলে ২ টাকা করে বিক্রি করলাম। প্রথম লটেই বেশ লাভ হলো আমাদের। এরপর সপ্তাহে অন্তত এক দিন দুই বন্ধু চলে যেতাম চুম্বক কিনতে।
ভালোই যাচ্ছিল দিনকাল। ৫০ পয়সার বরফের আইসক্রিম বাদ দিয়ে এক টাকা দামের মালাই আইসক্রিম খাওয়া শুরু করলাম। আড়াই টাকায় একটা পেপসি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। বেশ একটা ভাব চলে এল দেহ-মনে। বড়লোক হওয়ার আনন্দ পাওয়া শুরু করলাম।
সেই সুখ বেশি দিন কপালে সইল না। একবার ১০টা চুম্বকের সঙ্গে ১০টা লোহার টুকরো গছিয়ে দিল বাটপার দোকানদার। চুম্বক আর লোহা এমনভাবে গায়ে গায়ে লেগে ছিল যে আমরা বুঝতেই পারিনি। ওই এক কনসাইনমেন্টে আমাদের বিরাট লস হয়ে গেল। আবার লেখাপড়ায় মন দিলাম, আর ২৫ পয়সার আধগলা আইসক্রিমের দুনিয়ায় ফিরে গেলাম। কিন্তু ধনী হওয়ার আশা মন থেকে গেল না।
কলেজে পড়ার সময় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল ধনী হওয়ার চিন্তা। এগিয়ে এল আমার কয়েকজন বন্ধু। তারা ইতিমধ্যে ‘৫-এ ৪০’ স্কিমে ৫ হাজার টাকা করে ইনভেস্ট করে মাত্র ২১ দিনে ৪০ হাজার টাকা করে পকেটে পুরেছে।
বিষয়টা খুবই সহজ ছিল। বন্ধুর বাসায় হতো আয়োজন। আমি ৫ হাজার টাকা, আর দুজন নতুন মেম্বার নিয়ে কোনো একটা চেইনে যুক্ত হব। পরের সপ্তাহে সেই দুজন আরও চারজনকে নিয়ে আসবে। পরের সপ্তাহে সেই চারজন আরও আটজনকে আনবে। সেই আটজনের ৪০ হাজার টাকা পাব আমি।
আজ আমার ৫ হাজার টাকা ৪০ হাজার হবে। খুব উত্তেজনা নিয়ে গেলাম বন্ধুর বাসায়। খুশিতে সবার জন্য ৩০-৪০ প্যাকেট মোরগ পোলাও নিয়ে গেলাম। সন্ধ্যার ঠিক মুখে শুনলাম ভয়াবহ খবর। পুলিশ প্রতিটি এলাকায় খুঁজে খুঁজে ‘৫-এ ৪০’ পার্টিদের গ্রেপ্তার করছে। তারা নাকি এই বাসার দিকেই আসছে। পড়িমরি করে সবাই দৌড় লাগাল। আমি আধখাওয়া মোরগ পোলাও বক্সের মধ্যে রেখেই রাস্তায় নেমে গেলাম। আমার আর ৪০ হাজার টাকা পাওয়া হলো না। মাঝখান থেকে বিরিয়ানির টাকাটাই গচ্চা গেল। রাতের অন্ধকারে খিলগাঁওয়ের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আর শর্টকাট রাস্তায় ধনী হওয়ার চেষ্টা করব না।
১৯৯৬ সাল। সবে চাকরিতে যোগ দিয়েছি। সহকর্মী আলফাজের হাতে এক লাখ টাকার সিটিসেলের ভোম্বা মোবাইল ফোন দেখে মনে হলো, এই ফোন না পেলে বাঁচব না। কিন্তু কেনার ক্ষমতা নেই। আলফাজ বুদ্ধি দিল শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করার। আম্মার হাতে-পায়ে ধরে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নেমে গেলাম শেয়ার ব্যবসায়।
দিন ফিরতে বেশি সময় লাগল না। ৫০ হাজার টাকা বেড়ে লাখ হলো কয় দিনেই। তারপর দুই লাখ, তিন লাখ। বাস ছেড়ে বেবিট্যাক্সিতে যাওয়া-আসা শুরু করলাম। আহ্, শান্তি। রমনা ভবনের সানমুন টেইলার্সে গিয়ে বান্ধবীর পছন্দে নেভি ব্লু রঙের ব্লেজার বানালাম অনেকগুলো টাকা খরচ করে। হোক টাকা খরচ, বান্ধবীর পছন্দ বলে কথা। এক বন্ধু পরামর্শ দিল দেড় লাখ টাকায় একটা স্টেশন ওয়াগন গাড়ি কেনার। খুব বিরক্ত হয়েছিলাম সেদিন। যেখানে আমি পাজেরো জিপ কেনার কথা ভাবছি, সেখানে সে কীভাবে সস্তা গাড়ি কেনার বুদ্ধি দেয়!
কিছুদিন পরই নেমে এল দুঃস্বপ্নের রাত। ভয়াবহ ধসে প্রায় রাস্তার ফকির হয়ে গেলাম। বাস তো দূরে থাক, হাঁটার পয়সাও পকেটে থাকত না। হাঁটতাম আর মনকে সান্ত্বনা দিতাম, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আব্দুর রব নামে আমার এক মামা আছেন, তিনি চাঁদপুরে থাকেন। স্কুলশিক্ষক। বাসায় ছেলেমেয়েদের ইংরেজি শেখান। বাড়ির দরজায় ছোট্ট সাইনবোর্ড ‘আব্দুর রব, ইংরেজি শিক্ষক’। তিনি তাঁর জীবনের সব সঞ্চয় ডেসটিনির বৃক্ষ প্রকল্পে লগ্নি করলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই গাছের গল্প করতেন। ৫ হাজার টাকার গাছ ১০ বছরে কীভাবে বড় হয়ে ৫০ হাজার টাকার গাছ হবে, সেই গল্প করতেন। একদিন দেখলাম, তাঁর বাসার দরজার নেমপ্লেট বদলে লিখেছেন—‘বৃক্ষপ্রেমী আব্দুর রব, ইংরেজি শিক্ষক’। ডেসটিনির প্রতারণার ধাক্কা তিনি সামলাতে পারেননি। মারা যান তার কিছুদিন পর।
মূলত ১৯৯৬ সালের শেয়ারবাজারে ধাক্কা খাওয়ার পর আমি শর্টকাটে ধনী হওয়ার চিন্তা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছি। এরপরও বিজনাস, ইউটুপে, যুবক, ডেসটিনি—বহু কিছু এসেছে, কিন্তু কোনো কিছুতেই আমি আর নিজেকে জড়াইনি।
এবার আরেকজনের গল্প শোনাই। ভদ্রলোক আমার ব্যাংকের গ্রাহক ছিলেন। আমি যেই ব্রাঞ্চের ম্যানেজার ছিলাম, তিনি সেই ব্রাঞ্চের ডিপোজিটর ছিলেন। একবার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে সব টাকা তুলে নিয়ে রাখলেন একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। একটাই কারণ, সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেট অনেক বেশি। তিনি আমার সামনে বসে ক্যালকুলেটর টিপে তৃপ্তির হাসি হেসেছিলেন।
দুই বছর পর বদলে গেল দৃশ্যপট। তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার করে আমার ব্রাঞ্চে আসতেন। সামনে রাখা সোফায় গা ছেড়ে দিয়ে বসে শুধু একটা কথাই বলতেন, ‘ভাই, আমার সব শেষ হয়ে গেল!’ আমি এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দিয়ে বলতাম, ‘ভাই, ধৈর্য ধরেন।’
আসলে আমাদের এই ধৈর্যটাই নেই। আমাদের সবকিছুতেই তাড়া। আজকে আমের আঁটি মাটিতে পুঁতে দিয়ে চাইব, সামনের বছর গাছভর্তি আম আসুক। হাতে থাকা অর্থ এমন জায়গায় বিনিয়োগ করতে চাই, যাতে এক বছরে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
আসলে এভাবে হয় না। সবকিছুকেই সময় দিতে হয় বড় হতে। আপনার সঞ্চয় করা অর্থ তো আর ফার্মের মুরগি না যে, স্টেরয়েড বা হরমোন দিয়ে দুই মাসেই বড় করে ফেলা যাবে; অথবা ভিয়েতনামি হাইব্রিড নারকেলগাছ না যে, ৩ ফুট উঁচু হতেই নারকেল ধরা শুরু করবে।
আজকের দিনে জমা করা অর্থে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেয় সরকার, বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে; যেমন সঞ্চয়পত্র, ওয়েজ আর্নার বন্ড, ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ইত্যাদিতে। এরপর আছে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক। দেশ চালাতে যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, সরকার তার কিছু অংশ এই সঞ্চয় প্রকল্প থেকে সংগ্রহ করে। বাকিরা আপনার, আমার ডিপোজিট ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে দেয়। সেখান থেকে যে মুনাফা হয়, তার বড় একটা অংশ আমাদের লভ্যাংশ হিসেবে দেয়। নামের শেষে ব্যাংক লেখা দেখলেই ভাববেন না যে এটা ব্যাংক। অনেক সমবায় সমিতিও নামের শেষে ব্যাংক লাগিয়ে রাখে।
সুতরাং কোথাও অর্থ জমানোর সময় খোঁজখবর করে নেওয়া ভালো যে, ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সূচকের কী অবস্থা। একইভাবে শেয়ারবাজারে টাকা খাটাতে চাইলে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুন। গুজবে ভর করে কোনো শেয়ার কিনবেন না। এতে আপনি রিটার্ন কম পেতে পারেন হয়তো, কিন্তু আপনার অর্থ হারিয়ে যাবে না। মনে রাখবেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ মানেই বেশি মুনাফা।
লেখক: রম্য লেখক ও ঊর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে