বিকেল পৌনে পাঁচটা। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম। চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন। যে যেমনি পারছেন ট্রেনে উঠছেন। সিটের পাশে দাঁড়িয়ে, বসে মানুষজন গন্তব্যে ছুটছেন। এদের অনেকেরই টিকিট ছিল না। তাঁদের দাবি, কাউন্টারে স্ট্যান্ডিং টিকিট পাননি। বাস না চলায় বাধ্য হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন।

এদিকে টিকিটবিহীন যাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযানও জোরদার করেছে রেলওয়ে প্রশাসন। শনিবার ও রোববার দুই দিনে টিকিট না কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় প্রায় ৩০০ যাত্রীকে ৩ লাখ ২৬ হাজার ১৪০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

চাঁদপুরের ব্যবসায়ী মো. হাবিব উল্লাহ। তাঁর কাঁধে দুই ব্যাগ। হাতেও একটি ট্রলি। ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তে পুরোনো স্টেশনের এক পাশ দিয়ে মূল স্টেশনে ঢুকে পড়েন। কারণ নতুন স্টেশনে টিকিট চেকারদের কড়াকড়ি।

মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যখানের একটি বগিতে জানালার পাশে কোনো রকমে জায়গা পান। সেখানেই বসে পড়েন। ব্যবসায়ী হাবিব উল্লাহর মতো দিনমজুর রহিম মাঝিও পুরোনো স্টেশন দিয়ে ঢোকেন। চট্টগ্রামে জরুরি কাজ শেষ করে নিজ বাড়ি শাহরাস্তিতে যাচ্ছেন।

হাবিব উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাপড়ের ব্যবসা করি। অঘোষিত বাস ধর্মঘট চলার আগে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে আসি। শনিবার ফেরার কথা থাকলেও ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় যেতে পারিনি।’ রোববার জরুরি কাজ থাকায় টিকিট না পাওয়া সত্ত্বেও ট্রেনে ওঠেন।

রহিম মাঝি জানান, জরিমানা করলেও জরিমানা দিতে রাজি আছেন। তবু তার গন্তব্যে পৌঁছা চাই।

গতকাল রোববার সোয়া ৫টায় মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার আগেই বিকেল ৫টায় ঢাকাগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যায়। এই ট্রেনেও যাত্রীর উপচেপড়া ভিড় ছিল। বিশেষ করে ননএসি বগিগুলোতে দাঁড়িয়ে, বসে যে যেভাবে পেরেছেন চট্টগ্রাম ছেড়েছেন। সূত্র জানায়, মেঘনা এক্সপ্রেসে ৯২৯টি আসন ও সোনার বাংলা ট্রেনে ৫৮৪টি আসনের বিপরীতে দ্বিগুণ যাত্রী ছিল।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, সকাল ৭টায় ছেড়ে যাওয়া সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন, ৭টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন, সিলেটের উদ্দেশে সকাল ৯টায় ছাড়া পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, বেলা ৩টায় ছেড়ে যাওয়া মহানগর গোধূলী ট্রেনেও যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আনসার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাস বন্ধ না থাকায় ট্রেনে যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। টিকিট ছাড়া ট্রেন ভ্রমণ করায় আজও (রোববার) জরিমানাসহ প্রায় দেড় লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম শহরের অভ্যন্তরে বাস চলাচল শুরু হলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস বন্ধ ছিল। নগরের গরিবউল্লাহ শাহ মাজারের পাশে বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কোনো বাসই ছাড়েনি। তবে শর্ত দিয়ে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বাসমালিকেরা কিন্তু কোনো ধর্মঘট আহ্বান করিনি। সরকার ডিজেলের দাম বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটার প্রতিবাদে কিছু বাসমালিক লোকসানের মুখে পড়ায় গাড়ি চালাচ্ছেন না। একটা সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অনেক বাসমালিক গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সিটি এলাকায় অনেকেই রাস্তায় বাস নামিয়েছেন। কিন্তু দূরপাল্লার বাসগুলো বন্ধ রয়েছে।’

এদিকে গতকাল রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দূরপাল্লার বাস ভাড়া প্রায় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে বুধবার থেকে শুরু হওয়া অঘোষিত গণপরিবহন ধর্মঘট রাতে উঠে যাচ্ছে মনে করা হচ্ছে।