অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। চলতি বছর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘কাজের মাধ্যমে আশা জাগানো’। আমরা সবাই, অর্থাৎ পরিবারের সদস্য, বন্ধু, সহকর্মী, সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় নেতা, স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সরকার মিলে আত্মহত্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে পারি।
প্রতিদিন আত্মঘাতী মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর আত্মহত্যা করছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। বিশ্বের মাত্র পাঁচটি দেশে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। দেশে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা। গত বছর বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মঘাতী প্রবণতার কারণ
বিষণ্নতা: বিষণ্নতা আত্মহত্যা করার অন্যতম কারণ। আমরা অনেকেই ব্যাপারটি উড়িয়ে দিলেও বিষণ্নতা খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটি মানসিক রোগ। মানুষ হতাশ হলে ঠুনকো কারণে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তখন নিজেকে একা মনে করে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মহত্যার ঝুঁকি ২০ গুণ বেশি। আপাতদৃষ্টিতে, অন্যদের কাছে মৃত্যুর কারণ তুচ্ছ মনে হলেও, সেই মুহূর্তে বিষণ্নতা অনেক বড় হয়ে দেখা দেয় বলেই ব্যক্তিটি আত্মহত্যা করে।
নিঃসঙ্গতা: এটি নগরজীবনে আত্মহত্যার অন্যতম কারণ। একাকিত্ব শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত প্রবীণদের মধ্যে বেশি। একাকিত্বের কারণে একদিকে আত্মহত্যার প্রবণতা যেমন আছে, অন্যদিকে মৃত্যুর সময়ও তাঁরা পরিবারের লোকজনকে পাশে পান না।
বৈষম্য: আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য মানুষকে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। এ হতাশা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের চিত্র।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ: ২৪ শতাংশ মানুষ সম্পর্কের টানাপোড়েনে এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে ৩৫ শতাংশ নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছে। অজানা কারণে আরও ৩২ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেছে। আর্থিক ও লেখাপড়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে যথাক্রমে ৪ ও ১ শতাংশ মানুষ।
নিজের সম্পর্কে হতাশা: নিজেকে যখন কেউ অপ্রয়োজনীয় মনে করে, জীবনে অর্থহীন মনে করে আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
বিচ্ছিন্নতা: করোনায় মানুষের বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে, জীবন নিয়ে সংশয় বেড়েছে। বেড়েছে দারিদ্র্য, হতাশা, শূন্যতা। এসব দূর করার কার্যকর ব্যবস্থা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র নেয়নি। ফলে আত্মহত্যা বেড়ে গেছে।আত্মহত্যা প্রবণতায় বেশি ঝুঁকিতে আছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েরা। বয়ঃসন্ধিক্ষণে আত্মহত্যার প্রবণতা
কমিয়ে আনতে শিশুকাল থেকে মা-বাবার আন্তরিক সাহচর্য থাকার বিকল্প নেই। কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েরা বেশি স্পর্শকাতর থাকে। এ সময় অভিভাবক, স্কুলশিক্ষক বা বন্ধুদের কোনো আচরণ তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করছে কি না, তাদের আচার-আচরণে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল কি না, তা বুঝতে হবে মা-বাবাকেই। অনেক সময় আত্মহত্যা করতে যাওয়ার আগে মানুষ একটা শেষ সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে। হয়তো একবার কারও সঙ্গে কথা বলার কথা ভাবে। সে কারণেই সামাজিক পর্যায়ে সাহায্যের রাস্তাগুলো আরও সহজ এবং সচল করা উচিত।
আত্মহত্যা একটি সামাজিক ট্যাবু
দীর্ঘদিন আত্মহত্যা একটি সামাজিক ট্যাবু হয়েছিল। ধীরে ধীরে সেই ট্যাবু ভাঙছে। কিন্তু সমাজের সব স্তরে সেই ট্যাবু ভাঙেনি। আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বিফল হওয়া কোনো ব্যক্তি যখন হাসপাতালে ভর্তি হন, চোখ খুলেই তিনি প্রথম দেখেন চিকিৎসক এবং নার্সকে। অনেক সময়ই দেখা যায়, তাঁরা কিছু না জেনে-বুঝে ওই ব্যক্তিকে জ্ঞান দিতে শুরু করেন। একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তির কাছে ওই জ্ঞান ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর,সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনারফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার
১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। চলতি বছর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘কাজের মাধ্যমে আশা জাগানো’। আমরা সবাই, অর্থাৎ পরিবারের সদস্য, বন্ধু, সহকর্মী, সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় নেতা, স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সরকার মিলে আত্মহত্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে পারি।
প্রতিদিন আত্মঘাতী মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর আত্মহত্যা করছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। বিশ্বের মাত্র পাঁচটি দেশে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। দেশে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা। গত বছর বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মঘাতী প্রবণতার কারণ
বিষণ্নতা: বিষণ্নতা আত্মহত্যা করার অন্যতম কারণ। আমরা অনেকেই ব্যাপারটি উড়িয়ে দিলেও বিষণ্নতা খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটি মানসিক রোগ। মানুষ হতাশ হলে ঠুনকো কারণে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তখন নিজেকে একা মনে করে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মহত্যার ঝুঁকি ২০ গুণ বেশি। আপাতদৃষ্টিতে, অন্যদের কাছে মৃত্যুর কারণ তুচ্ছ মনে হলেও, সেই মুহূর্তে বিষণ্নতা অনেক বড় হয়ে দেখা দেয় বলেই ব্যক্তিটি আত্মহত্যা করে।
নিঃসঙ্গতা: এটি নগরজীবনে আত্মহত্যার অন্যতম কারণ। একাকিত্ব শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত প্রবীণদের মধ্যে বেশি। একাকিত্বের কারণে একদিকে আত্মহত্যার প্রবণতা যেমন আছে, অন্যদিকে মৃত্যুর সময়ও তাঁরা পরিবারের লোকজনকে পাশে পান না।
বৈষম্য: আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য মানুষকে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। এ হতাশা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের চিত্র।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ: ২৪ শতাংশ মানুষ সম্পর্কের টানাপোড়েনে এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে ৩৫ শতাংশ নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছে। অজানা কারণে আরও ৩২ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেছে। আর্থিক ও লেখাপড়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে যথাক্রমে ৪ ও ১ শতাংশ মানুষ।
নিজের সম্পর্কে হতাশা: নিজেকে যখন কেউ অপ্রয়োজনীয় মনে করে, জীবনে অর্থহীন মনে করে আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
বিচ্ছিন্নতা: করোনায় মানুষের বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে, জীবন নিয়ে সংশয় বেড়েছে। বেড়েছে দারিদ্র্য, হতাশা, শূন্যতা। এসব দূর করার কার্যকর ব্যবস্থা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র নেয়নি। ফলে আত্মহত্যা বেড়ে গেছে।আত্মহত্যা প্রবণতায় বেশি ঝুঁকিতে আছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েরা। বয়ঃসন্ধিক্ষণে আত্মহত্যার প্রবণতা
কমিয়ে আনতে শিশুকাল থেকে মা-বাবার আন্তরিক সাহচর্য থাকার বিকল্প নেই। কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েরা বেশি স্পর্শকাতর থাকে। এ সময় অভিভাবক, স্কুলশিক্ষক বা বন্ধুদের কোনো আচরণ তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করছে কি না, তাদের আচার-আচরণে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল কি না, তা বুঝতে হবে মা-বাবাকেই। অনেক সময় আত্মহত্যা করতে যাওয়ার আগে মানুষ একটা শেষ সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে। হয়তো একবার কারও সঙ্গে কথা বলার কথা ভাবে। সে কারণেই সামাজিক পর্যায়ে সাহায্যের রাস্তাগুলো আরও সহজ এবং সচল করা উচিত।
আত্মহত্যা একটি সামাজিক ট্যাবু
দীর্ঘদিন আত্মহত্যা একটি সামাজিক ট্যাবু হয়েছিল। ধীরে ধীরে সেই ট্যাবু ভাঙছে। কিন্তু সমাজের সব স্তরে সেই ট্যাবু ভাঙেনি। আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বিফল হওয়া কোনো ব্যক্তি যখন হাসপাতালে ভর্তি হন, চোখ খুলেই তিনি প্রথম দেখেন চিকিৎসক এবং নার্সকে। অনেক সময়ই দেখা যায়, তাঁরা কিছু না জেনে-বুঝে ওই ব্যক্তিকে জ্ঞান দিতে শুরু করেন। একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তির কাছে ওই জ্ঞান ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর,সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনারফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার
দেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় ও ডাক্তারের ওপর আস্থা না থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর দেশের মানুষ ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। স্বাস্থ্যেসেবার উন্নয়ন না হলে এর পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে।
৫ মিনিট আগেআমাদের দেশে শীত উপভোগ্য মৌসুম। কিন্তু অনেকের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা যাদের আছে, তাদের এই মৌসুমে কষ্ট বেড়ে যায়।
১২ ঘণ্টা আগেত্বক অভ্যন্তরীণ অঙ্গের সংক্রমণ এবং যেকোনো ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই এর যত্নে বিশেষ মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও টানটান হলে দুশ্চিন্তা করবেন না। চুলকানি হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক তেল কমিয়ে দেয়।
১৩ ঘণ্টা আগেঅবস্থা এমন হয়েছে যে শিশুর যেকোনো জ্বর দেখা দিলেই অভিভাবকেরা ডেঙ্গু জ্বর কি না, তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। সব শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা এক রকম নয় এবং সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন নেই।
১৩ ঘণ্টা আগে