বাল্টিক সাগরে সাবমেরিন কেব্‌ল ক্ষতিগ্রস্ত, চীনের সহযোগিতা চাইল সুইডেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ০১
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ২৬
বাল্টিক সাগরে চীনা জাহাজ ই পেং থ্রি। ছবি: এএফপি

বাল্টিক সাগরে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি সাবমেরিন কেব্‌লের বিষয়ে তদন্তের জন্য চীনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা চেয়েছে সুইডেন। নাশকতা হিসেবে সন্দেহভাজন ঘটনাটির সঙ্গে চীনা জাহাজের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মনে করছে দেশটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ জানা গেছে।

সুইডেনকে লিথুনিয়ার সঙ্গে এবং ফিনল্যান্ডকে জার্মানির সঙ্গে সংযুক্ত রাখা সাবমেরিন কেব্‌ল দুটি ১৭ ও ১৮ নভেম্বর সুইডেনের আঞ্চলিক জলসীমায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় সেখানে ‘ই পেং থ্রি’ নামে একটি চীনা জাহাজ অবস্থান করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে এটিকে ডেনমার্কের উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নোঙর করতেও দেখা যায়।

তবে বেইজিং নাশকতার অভিযোগ অস্বীকার করে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঠিক কী কারণে সাবমেরিন কেব্‌ল দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা অনুসন্ধানের জন্য তারা সুইডেনসহ অন্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

১৫ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের পশ্চিমে অবস্থিত উস্ট-লুগা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে চীনা জাহাজ ‘ই পেং থ্রি’। এরপর ১৭ নভেম্বর সকালে সুইডিশ দ্বীপ গটল্যান্ড ও লিথুনিয়ার মধ্যে থাকা অ্যারেলিয়ন সাবমেরিন কেব্‌ল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরের দিন অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কি ও জার্মানির রস্টকের মধ্যে থাকা সি লায়ন-১ সাবমেরিন কেব্‌লটি কাটা পড়ে।

জাহাজ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ই পেং থ্রি যখন সাবমেরিন কেব্‌ল দুটির ওপর দিয়ে যায় ঠিক তখনই এগুলো কাটা পড়ে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, তদন্তকারীদের সন্দেহ চীনা জাহাজটি ইচ্ছাকৃতভাবে সাগরের তলদেশে নোঙর ফেলে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে। যার ফলে সাবমেরিন কেব্‌ল দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই জাহাজটি ১৯ নভেম্বর থেকে কাটেগ্যাট প্রণালিতে অবস্থান করছে। এই কাটেগ্যাট প্রণালি সুইডেন ও ডেনমার্কের মধ্যে অবস্থিত একটি পথ, যা বাল্টিক সাগরকে উত্তর সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং এই অঞ্চলটি ডেনমার্কের নৌবাহিনী পর্যবেক্ষণ করে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্তের জন্য আমরা চীনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছি। যাতে জানা যায়, আসলে কী কারণে সাবমেরিন কেব্‌ল দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

ক্রিস্টারসন আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, কী ঘটেছে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা আশা করি, চীন আমাদের অনুরোধ রাখবে।’

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তদন্তের অংশ হিসেবে জাহাজটি সুইডেনের জলসীমায় ফিরিয়ে আনা উচিত। যাতে এটি তল্লাশি করা যায়। তবে তিনি এখনই চীনা জাহাজটির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করছেন না বলেও উল্লেখ করেন।

এদিকে আজ শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, ‘আমরা এই বিষয়টির সত্য উদ্‌ঘাটনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।’

মাও নিং আরও বলেন, ‘বর্তমানে চীন ও সুইডেন এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের পরে থেকে বাল্টিক সাগরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে এবং এর পর থেকে সমুদ্রের নিচের অবকাঠামো সম্পর্কিত ক্ষতির একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের একটি বিস্ফোরণের কারণে পশ্চিম ইউরোপ এবং রাশিয়ার মধ্যে থাকা নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনের দুটি অংশে গর্ত সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর ২০২৩ সালের অক্টোবরে এস্তোনিয়া এবং সুইডেনের মধ্যে একটি সাবমেরিন টেলিকম কেব্‌লেরও ক্ষতি হয় ইউক্রেন-রাশিয়ান যুদ্ধের কারণে।

তবে রাশিয়া এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত