দিতি আহমেদ
কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরপরই তালেবান সদস্যরা এসেছিলেন সাদাফের (ছদ্মনাম) বিউটি স্যালনে। তবে কোনো রূপচর্চার কাজে নয়, বরং তাঁর স্যালনটি ভেঙে দিতে। আর তাঁরা তা ভেঙেও দিয়েছেন। এখন সাদাফকে তাঁর উপার্জনের উপায় নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এ অবস্থা শুধু সাদাফেরই নয়, সাদাফের মতো স্যালন পেশার সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার আফগান নারীর আয়ের একমাত্র পথ এখন ঘোর অনিশ্চয়তায়।
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের দখল নেয় তালেবান। এর মধ্যে তারা সরকার গঠনও করেছে। আর সরকার গঠনের পরপরই সারা আফগানিস্তানে ইসলামি শাসন কায়েমের নামে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিউটি স্যালনগুলো। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানের সব বিউটি স্যালন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং মুখ আবৃত করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়। আইন ভঙ্গকারীকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হতো। সে সময় গান, নাচ তো দূরের কথা, এমনকি টেলিভিশন দেখাও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
২০০১ সালের পর তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শুরু হয় মার্কিন সমর্থিত সরকারের শাসন। এর পরপরই সারা দেশের সমস্ত স্যালন খুলে দেওয়া হয়, যা অনেক নারীর কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়তা করে। সে সময় জাতিসংঘের একটি সংস্থা ও আফগান সরকারের অর্থায়নে ছয় মাসের একটি বিউটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়েছিল। এই কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী উপার্জনের উৎস হিসেবে বেছে নেন বিউটি স্যালন পেশাকে, যা পরে অনেক লাভজনক একটি পেশায় পরিণত হয়।
এই পেশা থেকে একেকজন স্যালন মালিক মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ থোকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতেন, যা তাঁদের স্বাবলম্বী করে তুলেছিল এবং সংসারের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে গণ্য হয়েছিল। কিন্তু এখন এ সবই অতীত।
এবার ক্ষমতায় আসার পর তালেবান কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা তাঁদের মৌলবাদী নীতিতে আর ফিরবেন না। নারীরা ইসলামি আইন অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন। কিন্তু এর অর্থ কী, তা স্পষ্ট করেননি তাঁরা। এমনকি তালেবানের পক্ষ থেকে স্যালন ব্যবসা সম্পর্কেও কোনো বিবৃতি আসেনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন লেখার শুরুতে যে সাদাফের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর বিউটি স্যালনের উদাহরণ উপস্থাপন করেছে। এতে বলা হয়, তালেবান কাবুল দখল করার কিছুক্ষণ পরই বন্দুকধারীরা সাদাফের বিউটি সেলুন পরিদর্শন করে। স্যালনের সামনের জানালা ভাঙার আগে তারা তাঁকে মুখে গুলি করার হুমকি দেয়। সে সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘আমি সত্যিই কাঁপছিলাম এবং ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। আমি এর পর থেকে বাড়িতেই ছিলাম।’
সাদাফ জানান, ২০১৫ সালে হার্ট অ্যাটাকের কারণে তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি একজন হেয়ারড্রেসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই কারণে নিজের পাঁচ সন্তানের ভরণপোষণের কথা ভেবে তাঁকে তাঁর দেবরকে বিয়ে করতে হয়নি, যা আফগানিস্তানের মতো পুরুষতান্ত্রিক দেশের অনেক বিধবা নারীর সাধারণ ভাগ্য। তিনি কাবুল থেকে ফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘অর্থ একজন নারীর জন্য সবকিছু, এটা অনেক বড় শক্তি। এই কাজ আমাকে আমার স্বামীর পরিবারে মর্যাদা দিয়েছে। আমি আমার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে পেরেছি এবং আমার সন্তানদের সাহায্য করতে পেরেছি।’
অন্য স্যালনের মতো সাদাফের ব্যবসাও শুধু সৌন্দর্য সেবা প্রদান করেনি। বরং এটা ছিল নারীদের মিলনস্থল। আফগানিস্তানের এই বিউটি স্যালনগুলো নারীদের শ্বাস ফেলার জায়গা বলা যায়। এখানে এসে অনেকেই তাদের সমস্যা, আশা ও আশঙ্কার কথা অকপটে বলে। সাদাফ বলেন, ‘কখনো কখনো হাসি-ঠাট্টায় মুখর হয়ে উঠত আমার সেলুন। আবার অনেক গ্রাহক সেবা নিতে এসে তাঁদের দুঃখের কথা বলে কান্নাও করতেন। কাজ করার সময় আমি বলিউড ও আফগান গান বাজাতাম।’
সাদাফের মতো আরেক সেলুন ব্যবসায়ী উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই-শরীফের মদিনা (ছদ্মনাম)। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমার স্যালনে বন্ধুর অভাব ছিল না।’
কাজের সময় মদিনা গান শুনতেন। আর তাঁর কাছে সেবা নিতে আসা নারীদের তিনি আপ্যায়নও করতেন। এখন তিনি বন্ধুত্বের অভাব অনুভব করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমার একটি কফি টেবিল ছিল, যেখানে মহিলারা এক কাপ চা, কফি কিংবা ঠান্ডা পানীয় নিয়ে আড্ডা দিত। আমরা এর নাম দিয়েছিলাম গসিপ কর্নার।
মদিনা তাঁর স্যালনে ২৯ বছর বয়সী এক মায়ের ছবি এঁকে রেখেছিলেন। তালেবান সদস্যরা সেই আঁকা ছবিসহ স্যালনের সব ছবি মুছে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে মানসিকভাবে অনেক প্রভাবিত করেছে। আমি আমার গ্রাহকদের হারিয়েছি, যাদের অধিকাংশই সত্যি ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিল আমার। এখন আমি আমার ট্যাক্সি চালক স্বামীর ওপর নির্ভরশীল। পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি আগের মতো স্বাভাবিক হবে—আমি তা আশা করি না।’
শুধু যে আয়ের উপায় হারিয়েছেন এই নারীরা, তা নয়। তাঁরা এমনকি প্রাণসংশয়েও রয়েছেন। নানা শঙ্কা এখন তাঁদের ঘিরে রেখেছে। মদিনার কথাই ধরা যাক। তাঁর ভাষ্য, ‘আমার পেশার কারণে আমি এখন ঝুঁকিতে আছি। তালেবান মনে করে আমি পাপ করছি। তাঁরা মনে করে, জনসাধারণের মধ্যে মেকআপ পরা একজন নারী একজন পুরুষের কামভাব জাগিয়ে তুলতে পারে। যখন তালেবান সর্বশেষ ক্ষমতায় ছিল, তারা মাঝেমধ্যে নখে নেলপালিশ লাগানোর জন্য নারীদের আঙুল কেটে ফেলত। আর গোড়ালি বা পা উন্মুক্ত করার জন্য বেত্রাঘাত করত।’
গোপন স্যালন
ক্ষমতাধরদের জন্য অবশ্য সব নিয়মই আলাদা। গেলবার তালেবান শাসনামলে কাবুলে নানা গোপন সেলুন গড়ে উঠেছিল। প্রকাশ্যে সেলুন চালানোর ওপর তালেবান নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এসব স্যালনে কিন্তু তালেবান নেতাদের স্ত্রী-কন্যারা ঠিকই যেত। তাঁরা সেখানে সেজেগুজে আসতেন। এই সাজাটা কিন্তু স্বাভাবিকই।
কাবুলের বাসিন্দা ৬৪ বছর বয়সী শায়মা আলী বলেন, ‘আফগান নারীরা সব সময় তাদের চেহারা সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন। ১৯৯০ সালে তালেবান নেতারা বিউটি পারলার বন্ধ করে দেন। তখন কিছু বিউটিশিয়ান গোপন সেলুন স্থাপন করেন। এমনকি তালেবান নেতাদের স্ত্রীরাও তাঁদের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আসতেন এসব গোপন স্যালনে। সে সময় গোপনে চলা এ স্যালনগুলো তালেবান শাসনের কারণে শিক্ষা ও কাজ থেকে বঞ্চিত হওয়া নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করত। এখন আবার সেই পরিস্থিতি এসেছে। বিউটি স্যালনগুলো বন্ধ হওয়ায় অনেক আফগান নারীকেই এখন নির্ভর করতে হচ্ছে তাঁদের স্বামীর আয়ের ওপর।’
শায়মা আলী অতীতের প্রসঙ্গ টেনে বলছেন, আগের মতো গোপন সেলুন এখন আবার প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এরই মধ্যে এ ধরনের গোপন সেলুন যাত্রা করেছে আফগানিস্তানে। কারণ, আফগান নারীরা দ্রুত বুঝে গেছেন, মুখে তালেবান নেতারা যা-ই বলুন না কেন, নারী অধিকার প্রশ্নে তাঁরা খুব একটা নড়বেন না। একেক স্থানে তারা একেক নিয়ম জারি করছে। তালেবানের যে অংশটি উদার মনোভাব পোষণ করে, তারা কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ফলে আফগান কর্মজীবী নারীরা নিজেদের মতো করে টিকে থাকার রাস্তা খুঁজছেন। গোপনে সেলুন চালানো তেমনই একটি উপায়। এ উপায়ও বন্ধ করে দিলে তাঁরা কোথায় দাঁড়াবেন, তা তাঁরা জানেন না। সাদাফ যেমনটা বললেন—‘তারা আমাদের কাজ করতে না দিলে, আমাদের পরিবারের খাবার দিক।’
কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরপরই তালেবান সদস্যরা এসেছিলেন সাদাফের (ছদ্মনাম) বিউটি স্যালনে। তবে কোনো রূপচর্চার কাজে নয়, বরং তাঁর স্যালনটি ভেঙে দিতে। আর তাঁরা তা ভেঙেও দিয়েছেন। এখন সাদাফকে তাঁর উপার্জনের উপায় নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এ অবস্থা শুধু সাদাফেরই নয়, সাদাফের মতো স্যালন পেশার সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার আফগান নারীর আয়ের একমাত্র পথ এখন ঘোর অনিশ্চয়তায়।
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের দখল নেয় তালেবান। এর মধ্যে তারা সরকার গঠনও করেছে। আর সরকার গঠনের পরপরই সারা আফগানিস্তানে ইসলামি শাসন কায়েমের নামে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিউটি স্যালনগুলো। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানের সব বিউটি স্যালন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং মুখ আবৃত করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়। আইন ভঙ্গকারীকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হতো। সে সময় গান, নাচ তো দূরের কথা, এমনকি টেলিভিশন দেখাও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
২০০১ সালের পর তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শুরু হয় মার্কিন সমর্থিত সরকারের শাসন। এর পরপরই সারা দেশের সমস্ত স্যালন খুলে দেওয়া হয়, যা অনেক নারীর কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়তা করে। সে সময় জাতিসংঘের একটি সংস্থা ও আফগান সরকারের অর্থায়নে ছয় মাসের একটি বিউটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়েছিল। এই কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী উপার্জনের উৎস হিসেবে বেছে নেন বিউটি স্যালন পেশাকে, যা পরে অনেক লাভজনক একটি পেশায় পরিণত হয়।
এই পেশা থেকে একেকজন স্যালন মালিক মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ থোকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতেন, যা তাঁদের স্বাবলম্বী করে তুলেছিল এবং সংসারের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে গণ্য হয়েছিল। কিন্তু এখন এ সবই অতীত।
এবার ক্ষমতায় আসার পর তালেবান কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা তাঁদের মৌলবাদী নীতিতে আর ফিরবেন না। নারীরা ইসলামি আইন অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন। কিন্তু এর অর্থ কী, তা স্পষ্ট করেননি তাঁরা। এমনকি তালেবানের পক্ষ থেকে স্যালন ব্যবসা সম্পর্কেও কোনো বিবৃতি আসেনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন লেখার শুরুতে যে সাদাফের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর বিউটি স্যালনের উদাহরণ উপস্থাপন করেছে। এতে বলা হয়, তালেবান কাবুল দখল করার কিছুক্ষণ পরই বন্দুকধারীরা সাদাফের বিউটি সেলুন পরিদর্শন করে। স্যালনের সামনের জানালা ভাঙার আগে তারা তাঁকে মুখে গুলি করার হুমকি দেয়। সে সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘আমি সত্যিই কাঁপছিলাম এবং ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। আমি এর পর থেকে বাড়িতেই ছিলাম।’
সাদাফ জানান, ২০১৫ সালে হার্ট অ্যাটাকের কারণে তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি একজন হেয়ারড্রেসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই কারণে নিজের পাঁচ সন্তানের ভরণপোষণের কথা ভেবে তাঁকে তাঁর দেবরকে বিয়ে করতে হয়নি, যা আফগানিস্তানের মতো পুরুষতান্ত্রিক দেশের অনেক বিধবা নারীর সাধারণ ভাগ্য। তিনি কাবুল থেকে ফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘অর্থ একজন নারীর জন্য সবকিছু, এটা অনেক বড় শক্তি। এই কাজ আমাকে আমার স্বামীর পরিবারে মর্যাদা দিয়েছে। আমি আমার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে পেরেছি এবং আমার সন্তানদের সাহায্য করতে পেরেছি।’
অন্য স্যালনের মতো সাদাফের ব্যবসাও শুধু সৌন্দর্য সেবা প্রদান করেনি। বরং এটা ছিল নারীদের মিলনস্থল। আফগানিস্তানের এই বিউটি স্যালনগুলো নারীদের শ্বাস ফেলার জায়গা বলা যায়। এখানে এসে অনেকেই তাদের সমস্যা, আশা ও আশঙ্কার কথা অকপটে বলে। সাদাফ বলেন, ‘কখনো কখনো হাসি-ঠাট্টায় মুখর হয়ে উঠত আমার সেলুন। আবার অনেক গ্রাহক সেবা নিতে এসে তাঁদের দুঃখের কথা বলে কান্নাও করতেন। কাজ করার সময় আমি বলিউড ও আফগান গান বাজাতাম।’
সাদাফের মতো আরেক সেলুন ব্যবসায়ী উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই-শরীফের মদিনা (ছদ্মনাম)। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমার স্যালনে বন্ধুর অভাব ছিল না।’
কাজের সময় মদিনা গান শুনতেন। আর তাঁর কাছে সেবা নিতে আসা নারীদের তিনি আপ্যায়নও করতেন। এখন তিনি বন্ধুত্বের অভাব অনুভব করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমার একটি কফি টেবিল ছিল, যেখানে মহিলারা এক কাপ চা, কফি কিংবা ঠান্ডা পানীয় নিয়ে আড্ডা দিত। আমরা এর নাম দিয়েছিলাম গসিপ কর্নার।
মদিনা তাঁর স্যালনে ২৯ বছর বয়সী এক মায়ের ছবি এঁকে রেখেছিলেন। তালেবান সদস্যরা সেই আঁকা ছবিসহ স্যালনের সব ছবি মুছে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে মানসিকভাবে অনেক প্রভাবিত করেছে। আমি আমার গ্রাহকদের হারিয়েছি, যাদের অধিকাংশই সত্যি ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিল আমার। এখন আমি আমার ট্যাক্সি চালক স্বামীর ওপর নির্ভরশীল। পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি আগের মতো স্বাভাবিক হবে—আমি তা আশা করি না।’
শুধু যে আয়ের উপায় হারিয়েছেন এই নারীরা, তা নয়। তাঁরা এমনকি প্রাণসংশয়েও রয়েছেন। নানা শঙ্কা এখন তাঁদের ঘিরে রেখেছে। মদিনার কথাই ধরা যাক। তাঁর ভাষ্য, ‘আমার পেশার কারণে আমি এখন ঝুঁকিতে আছি। তালেবান মনে করে আমি পাপ করছি। তাঁরা মনে করে, জনসাধারণের মধ্যে মেকআপ পরা একজন নারী একজন পুরুষের কামভাব জাগিয়ে তুলতে পারে। যখন তালেবান সর্বশেষ ক্ষমতায় ছিল, তারা মাঝেমধ্যে নখে নেলপালিশ লাগানোর জন্য নারীদের আঙুল কেটে ফেলত। আর গোড়ালি বা পা উন্মুক্ত করার জন্য বেত্রাঘাত করত।’
গোপন স্যালন
ক্ষমতাধরদের জন্য অবশ্য সব নিয়মই আলাদা। গেলবার তালেবান শাসনামলে কাবুলে নানা গোপন সেলুন গড়ে উঠেছিল। প্রকাশ্যে সেলুন চালানোর ওপর তালেবান নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এসব স্যালনে কিন্তু তালেবান নেতাদের স্ত্রী-কন্যারা ঠিকই যেত। তাঁরা সেখানে সেজেগুজে আসতেন। এই সাজাটা কিন্তু স্বাভাবিকই।
কাবুলের বাসিন্দা ৬৪ বছর বয়সী শায়মা আলী বলেন, ‘আফগান নারীরা সব সময় তাদের চেহারা সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন। ১৯৯০ সালে তালেবান নেতারা বিউটি পারলার বন্ধ করে দেন। তখন কিছু বিউটিশিয়ান গোপন সেলুন স্থাপন করেন। এমনকি তালেবান নেতাদের স্ত্রীরাও তাঁদের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আসতেন এসব গোপন স্যালনে। সে সময় গোপনে চলা এ স্যালনগুলো তালেবান শাসনের কারণে শিক্ষা ও কাজ থেকে বঞ্চিত হওয়া নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করত। এখন আবার সেই পরিস্থিতি এসেছে। বিউটি স্যালনগুলো বন্ধ হওয়ায় অনেক আফগান নারীকেই এখন নির্ভর করতে হচ্ছে তাঁদের স্বামীর আয়ের ওপর।’
শায়মা আলী অতীতের প্রসঙ্গ টেনে বলছেন, আগের মতো গোপন সেলুন এখন আবার প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এরই মধ্যে এ ধরনের গোপন সেলুন যাত্রা করেছে আফগানিস্তানে। কারণ, আফগান নারীরা দ্রুত বুঝে গেছেন, মুখে তালেবান নেতারা যা-ই বলুন না কেন, নারী অধিকার প্রশ্নে তাঁরা খুব একটা নড়বেন না। একেক স্থানে তারা একেক নিয়ম জারি করছে। তালেবানের যে অংশটি উদার মনোভাব পোষণ করে, তারা কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ফলে আফগান কর্মজীবী নারীরা নিজেদের মতো করে টিকে থাকার রাস্তা খুঁজছেন। গোপনে সেলুন চালানো তেমনই একটি উপায়। এ উপায়ও বন্ধ করে দিলে তাঁরা কোথায় দাঁড়াবেন, তা তাঁরা জানেন না। সাদাফ যেমনটা বললেন—‘তারা আমাদের কাজ করতে না দিলে, আমাদের পরিবারের খাবার দিক।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ন্যাটোর প্রধান বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। গতকাল শুক্রবার ফ্লোরিডার পাম বিচে বৈঠক করেন ট্রাম্প ও ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এটি রুটের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম সাক্ষাৎ।
৩ ঘণ্টা আগেআরজি কর-কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের কোনো প্রভাব পড়েনি রাজ্যটির ছয় বিধানসভার উপনির্বাচনে। ছয় আসনেই ভূমিধস জয় পেয়েছে মমতার তৃণমূল।
৪ ঘণ্টা আগেমধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের কারণে ইসরায়েল, লেবানন, সিরিয়া ও ইরানের আকাশসীমা দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনায় পাইলটদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করেছে ফ্লাইট অপারেশনস গ্রুপ। সংস্থাটি বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় নিরাপদ। তবে আন্তর্জাতিক...
৪ ঘণ্টা আগেলেবাননের উদীয়মান নারী ফুটবলার সেলিন হায়দার। কয়েকদিন আগেই জাতীয় নারী ফুটবল দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। তার স্বপ্ন ছিল আসন্ন ওয়েস্ট এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপে লেবাননের জার্সি গায়ে মাঠে নামার। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন অনেক দূরে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের শিকার হয়ে এখন কোমায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন সেলিন।
৫ ঘণ্টা আগে