পশু হাসপাতালে ৭০ শতাংশ রোগীই শখের বিড়াল 

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ১০: ০০
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ১০: ৩৫

পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল। চিকিৎসকের কক্ষের সামনে বসে আছেন বেশ কয়েকজন। প্রত্যেকের কোলে পোষা প্রাণী। তবে বেশির ভাগই বিড়াল। তাঁদের মধ্যে একজন রাজধানীর রামপুরার উলন এলাকার শাহরিয়ার। জানালেন, জলাতঙ্কের টিকা দিতে বিড়াল নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন।

শুধু শাহরিয়ারই নন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে গিয়ে পশু চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে কুকুর, বিড়াল ও খরগোশ কোলে বেশ কয়েকজনকে অপেক্ষা করতে দেখা গেল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫০টির বেশি প্রাণীকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। এর মধ্যে ৭০ ভাগের বেশি থাকে পোষা বিড়াল। বাকি প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে কুকুর, ছাগল, খরগোশসহ অন্যান্য গৃহপালিত পশুপাখি।

শাহরিয়ারের পর কথা হয় স্বাধীন নামের আরেক তরুণের সঙ্গে। জুরাইনের এই বাসিন্দাও জানালেন, জলাতঙ্কের টিকা দিতে পোষা বিড়াল নিয়ে এসেছেন। একই কারণে রায়েরবাগের জহিরও পোষা বিড়াল নিয়ে এসেছেন। তিন তরুণের বিড়ালের নামে যথেষ্ট মিল–‘মিনি’, ‘মিনু’ ও ‘রিনি’। এই তিন তরুণসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের বেশির ভাগই পোষা বিড়াল নিয়ে এসেছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই হাসপাতালে প্রাণীর চিকিৎসায় অনেক আধুনিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে। অস্ত্রোপচারকক্ষও রয়েছে। রয়েছে প্রাণীদের আলট্রাসনোগ্রাম ও এন্ডোস্কোপি করার ব্যবস্থাও। হাসপাতালে দুই শিফটে অসুস্থ প্রাণীদের দেখা হয়। প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা। দ্বিতীয় শিফট বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা। চিকিৎসাসেবার জন্য কোনো ফি দিতে হয় না।

হাসপাতালের একটি কক্ষে বিড়ালের জ্বর পরীক্ষা করছিলেন ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. মো. রেজাউল করিম। তিনি জানালেন, গরমে ডায়রিয়া, জ্বর-বমি, চর্মরোগ নিয়ে অনেক বিড়াল আসে। কোনো কোনো বিড়ালের পা ভাঙা এবং গায়ে ক্ষত থাকে। তিনি বলেন, করোনার আগে হাসপাতালে আসা প্রাণীদের মধ্যে ১০ শতাংশ ছিল বিড়াল। তবে মহামারির মধ্যে মানুষের বিড়াল পোষার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রাণীর বড় অংশই বিড়াল।

রেজাউল করিমের তথ্যমতে, ঢাকায় ১০ লাখের মতো পোষা বিড়াল রয়েছে। বিড়ালসহ অন্যান্য প্রাণীর চিকিৎসায় রাজধানীতে ১৪০টির বেশি বেসরকারি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক বাণিজ্যিক গ্রুপও তৈরি হয়েছে।

ঢাকায় ‘প ফাউন্ডেশন’-এর তিনটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকে কুকুর, বিড়ালসহ প্রাণীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফারজানা আলম শম্পা বলেন, কুকুর-বিড়াল পোষার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিড়ালের সংখ্যাই বেশি।

প ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, ইদানীং প্রাণীরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়। সে অনুপাতে চিকিৎসাসেবা পায় না। সরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাপত্র দেয়। ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। এসব ওষুধ সহজলভ্য নয়, দামও বেশি। তবে প্রাণী চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মানুষের ওষুধ দিয়েই বিড়ালের চিকিৎসা করা হয়। কিছু কোম্পানি অবশ্য বিড়ালের ওষুধ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পোষা প্রাণীদের বেশির ভাগ টিকা আমদানি করতে হয় বলে দাম বেশি।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পোষা প্রাণীর মধ্যে ৭০ ভাগই বিড়াল। তবে অন্যান্য পশুপাখির চিকিৎসারও সুব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসাসুবিধা বাড়াতে তাঁরা কাজ করছেন। ওষুধ-টিকা সহজলভ্য করার কথাও ভাবছেন। এমনকি ভবিষ্যতে অসুস্থ পোষা প্রাণী হাসপাতালে ভর্তি রাখতে শয্যা ব্যবস্থার কথাও ভাবছেন তাঁরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত