জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো ধরনের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য চোয়াল শক্ত করে তারা এগিয়ে চলল। নিকষ কালো অন্ধকার দূর হয়ে গেল অস্ত্রের ঝলকানিতে। আকাশে ছুড়ে দেওয়া বিচ্ছুরিত আলোয় পথরেখা তৈরি করে একটানা গুলিবর্ষণ চলল। সে রাত ছিল দানবীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসতার উৎসব। সে রাত ছিল যুক্তিহীন নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বাস্তব দলিল।
এটাই অপারেশন সার্চলাইট। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার এই নির্মম পরিকল্পনার মাধ্যমেই পাকিস্তান সরকারের নৃশংসতার শুরু। এই দিনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, দুই ডানার পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব কার্যত বিলীন হয়ে গেছে। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর ঘটনা ঘটে চলে তার নিজস্ব পথে। জেনোসাইডের মাধ্যমে পোড়া মাটি নীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে দুরভিসন্ধি ছিল ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো গংদের, সেটা পরবর্তীকালে আর পূর্ণতা পায়নি। সে ইতিহাস ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমরা স্থিত হব ২৫ মার্চের দিনটিতে।
২২ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর মধ্যে বৈঠক হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন বরফ গলছে। একটা সমাধানের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশ। ২৪ মার্চ ভুট্টো-ইয়াহিয়া দীর্ঘ আলোচনা হয়। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণ দেবেন, এ রকম ঘোষণা হয়েছিল।
রাজনীতিসচেতন মানুষ ভেবেছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। এদিন ভুট্টো বলেছিলেন, আমাদের আলোচনায় কিছু অগ্রগতি আছে। কিন্তু পাশাপাশি আরেকটি ঘটনাও ঘটল। সংকট নিরসনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের যে নেতারা ঢাকায় এসেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ করেই ঢাকা ত্যাগ করতে লাগলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন খান আবদুল ওয়ালী খান, খান আবদুল কাইয়ুম খান, সর্দার শওকত হায়াত খান, মিয়া মমতাজ দৌলতানা, মওলানা মুফতি মাহমুদ প্রমুখ।
২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকা ছিল মিছিলের শহর। বঙ্গবন্ধু ওই দিন ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেন। সেদিনও ভুট্টো-ইয়াহিয়ার বৈঠক হয়। অপারেশন সার্চলাইটের সিদ্ধান্ত ততক্ষণে হয়ে গেছে, কিন্তু ভুট্টো-ইয়াহিয়া তাঁদের ছদ্ম রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবের চার দফার ব্যাপারে তাঁর দলের নীতিগত আপত্তি নেই।
ইয়াহিয়া খান কাউকে না জানিয়ে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন ২৫ মার্চ সন্ধ্যায়। গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল নাটক সাজিয়ে। ইয়াহিয়ার খালি গাড়ি এয়ারপোর্ট থেকে যখন ফিরেছিল, তখনো তাতে পতাকা উড়ছিল, শুধু প্রেসিডেন্টের জায়গায় অন্য এক সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে ফিরেছিল গাড়িটি। সেনা হামলা হতে পারে—শেখ মুজিবের কাছে এই তথ্য নানা মাধ্যমে এসেছিল। কিন্তু কবে, কখন এই আক্রমণ শুরু হবে, সেটা জানা ছিল না তাঁর।
ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিক করে রেখেছিল, জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলাকে নির্মূল করার জন্য ২৫ মার্চকে বেছে নেওয়া হবে। পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর যখন আসবে রাত ১টা, তখন হবে আক্রমণ। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পৌঁছে যাবেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। এবং হত্যাকাণ্ড যখন ঘটতে থাকবে, তখন শেখ মুজিবকে দায়ী করে দেবেন বেতার ভাষণ।
এবার আসা যাক, সেই অপারেশন সার্চলাইটের কাছে। আক্রমণটা ছিল অতর্কিত, কিন্তু তার পেছনে ভাবনাটা ছিল বহুদিনের এবং সুদূরপ্রসারী। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করা হবে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য দল আনা হতে থাকবে আর তলে তলে আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে ২৫ মার্চ সংশোধিত সময় রাত সাড়ে ১১টায় যখন সেনানিবাস থেকে বের হয়ে এল সশস্ত্র সামরিক যানগুলো, তখন তারা ওপরের মহলের অনুমতি ছাড়াই হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করল। আসলে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের প্রত্যেকেই জানতেন, বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হিংস্রতা নিয়েই শুরু হয়েছে অভিযান। জানতেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোও।
এ অভিযান মোটেই শুধু ভয় দেখানোর জন্য পরিচালিত হয়নি। এ অভিযান সুনির্দিষ্টভাবে ছিল জেনোসাইড। হ্যাঁ, এটা নিছক গণহত্যা ছিল না। একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছিল সে অভিযান।
অপারেশন সার্চলাইটের দিকে দৃষ্টি রাখলেই দেখা যাবে, অতর্কিতে আক্রমণ করা হলেও তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, হিন্দু জনগোষ্ঠী, এমনকি বস্তিবাসী দরিদ্রজন। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি অন্তত তিনটি পত্রিকা অফিস, যাদের তারা আওয়ামী লীগের পক্ষের পত্রিকা বলে মনে করত। এগুলো হলো দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ ও ইংরেজি দৈনিক পিপল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যে আক্রমণ চালিয়েছিল, তার নির্দেশনামা পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, ফলে এখন সে ব্যাপারে কিছুটা আঁচ করা যায়। আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় পাকিস্তানেরই দুই নাগরিকের কাছ থেকে। সিদ্দিক সালিকের ‘এ উইটনেস টু সারেন্ডার’ এবং জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজার ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’ নামের দুটি বইয়ে। আমরা সব সূত্র থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছি।
সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে শহরগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেট। তবে মূলত ঢাকা শহরে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেদিন মূল লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীকে নিরস্ত্র করে ফেলার নির্দেশ ছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে রাজারবাগ পুলিশ লাইন কিংবা পিলখানাকে রাখা হলেও কেন অন্য সব লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা সাধারণভাবে বোধগম্য হয় না। কিন্তু জেনোসাইড ঘটানোর প্রক্রিয়া হিসেবে বিষয়টিকে বিচার করলেই নয়াবাজার, লক্ষ্মীবাজার, পলাশীসহ নিরীহ মানুষের আবাসস্থল আক্রমণের কারণ বোঝা যায়।
হামলার বেশ কিছুদিন আগেই অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের যেকোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা হবে—এ রকমটাই ছিল নির্দেশ। শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী নয়, যাঁরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক, তাঁদেরও শত্রু বলে ধরে নিতে হবে। লক্ষণীয়, একাত্তরের মার্চ মাসে যে অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছিল, তা ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। শেখ মুজিবুর রহমান নিয়মতান্ত্রিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন এবং আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছিলেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহের অভিযোগও আনেনি।
কেন ২৫ মার্চ রাতে চালানো অপারেশন সার্চলাইটকে আমরা জেনোসাইড বলছি, তা বুঝতে হলে মাথায় রাখতে হবে, একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তার অনুসারী সবাইকে শত্রুপক্ষ ঘোষণা করে হত্যা করার মধ্যে রয়েছে জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তা করার অনুমোদন।
এই পরিকল্পনার একটা দিক ছিল স্বয়ং প্রেসিডেন্টের চলাচলের ওপর পর্যবেক্ষণ। বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যেন আলাপ চালিয়ে যাওয়ার ভণিতা করতে থাকেন। ভুট্টো রাজি না থাকলেও প্রেসিডেন্ট যেন ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন, এ রকম চালাকি করে রাখা হয়েছিল।
কীভাবে এই অপারেশন চালানো হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে এভাবে, সর্বোচ্চসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে, ছাত্র ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পুরান ঢাকার হিন্দুবাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করা হয়েছিল দুটো কমান্ডে বিভক্ত হয়ে। ঢাকা শহরের অপারেশনের মূল দায়িত্ব ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ওপর। তাঁর অধীনে ছিল ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাবের ৫৭ পদাতিক ব্রিগেড। খাদিম হুসেইন রাজার ওপর দায়িত্ব ছিল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া।
২৫ মার্চ সকাল ৮টায় অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এরপর ১৪ ডিভিশনের সদর দপ্তর থেকে ঢাকার বাইরের সব গ্যারিসনকে টেলিফোনে গোপন সংকেতের মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করার সময় জানিয়ে দেওয়া হয়। ২৪ ও ২৫ মার্চ অপারেশনের কপি গোপনীয়তার মধ্যে বিভিন্ন সেনানিবাস ও গ্যারিসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২৪ মার্চ হেলিকপ্টারে করে রাও ফরমান আলী গেছেন যশোর ক্যান্টনমেন্টে ব্রিগেডিয়ার দুরদানির কাছে, খাদিম হাসান রাজা গেছেন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি ও কর্নেল ফাতেমির কাছে।
পিলখানায় ছিল আড়াই হাজার বাঙালি ইপিআর সদস্য, পুলিশলাইনে ছিল এক হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্য। তাঁদের নিরস্ত্র করার দায়িত্বে ছিল ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। ১৮ পাঞ্জাব, ২২ বেলুচ, ৩২ পাঞ্জাবের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলকে তারা দোজখে পরিণত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ৩৬ জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিসি দেব, আতাউর রহমান খান খাদিম, এ এন এম মুনিরুজ্জামান, ফজলুর রহমান খান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মুহম্মদ আবদুল মুক্তাদির, শরাফত আলী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ ১১ জন শিক্ষক এই আক্রমণে নিহত হন। ২৬ মার্চ বিকেল থেকে পুরান ঢাকায় শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, বাবুবাজার, নয়াবাজার, গোয়ালনগর, ইংলিশ রোড এলাকায় চলে জেনোসাইড।
৫৭ ব্রিগেডের জাহানজেব আরবাবের নেতৃত্বে ঢাকা শহরের আক্রমণগুলো পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য সেনাবাহিনীর কমান্ডো অফিসারদের নিয়ে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল। কমান্ডো অফিসার জেড এ খান ছিলেন নেতৃত্বে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তারা প্রতিরোধ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকার বাইরে আক্রমণে নেতৃত্ব দেন খাদেম হুসেইন রাজা। রংপুরে আসে সৈয়দপুর থেকে ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট। কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের পথে ভোর তিনটায় বের হয়ে যায় ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্বে ৫৩ ব্রিগেড। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ সহজ ছিল না। তারা দিনাজপুরের ইপিআরের সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে সমুচিত জবাব পায়। তিন দিন ধরে এ এলাকায় সংঘর্ষ চলে। চট্টগ্রামেও আক্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের কুমিরায় যে প্রতিরোধযুদ্ধ হয়, তা ছিল প্রতিরোধযুদ্ধের এক মাইলফলক।
জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলার মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল ২৫ মার্চ, তা পৃথিবীর বুকে ঘটা বর্বরোচিত জেনোসাইডের বড় একটি উদাহরণ। ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার সূচনা হয়েছিল এই দিনটিতে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এই হত্যার সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা কে জানে?
হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো ধরনের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য চোয়াল শক্ত করে তারা এগিয়ে চলল। নিকষ কালো অন্ধকার দূর হয়ে গেল অস্ত্রের ঝলকানিতে। আকাশে ছুড়ে দেওয়া বিচ্ছুরিত আলোয় পথরেখা তৈরি করে একটানা গুলিবর্ষণ চলল। সে রাত ছিল দানবীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসতার উৎসব। সে রাত ছিল যুক্তিহীন নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বাস্তব দলিল।
এটাই অপারেশন সার্চলাইট। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার এই নির্মম পরিকল্পনার মাধ্যমেই পাকিস্তান সরকারের নৃশংসতার শুরু। এই দিনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, দুই ডানার পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব কার্যত বিলীন হয়ে গেছে। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর ঘটনা ঘটে চলে তার নিজস্ব পথে। জেনোসাইডের মাধ্যমে পোড়া মাটি নীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে দুরভিসন্ধি ছিল ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো গংদের, সেটা পরবর্তীকালে আর পূর্ণতা পায়নি। সে ইতিহাস ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমরা স্থিত হব ২৫ মার্চের দিনটিতে।
২২ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর মধ্যে বৈঠক হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন বরফ গলছে। একটা সমাধানের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশ। ২৪ মার্চ ভুট্টো-ইয়াহিয়া দীর্ঘ আলোচনা হয়। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণ দেবেন, এ রকম ঘোষণা হয়েছিল।
রাজনীতিসচেতন মানুষ ভেবেছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। এদিন ভুট্টো বলেছিলেন, আমাদের আলোচনায় কিছু অগ্রগতি আছে। কিন্তু পাশাপাশি আরেকটি ঘটনাও ঘটল। সংকট নিরসনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের যে নেতারা ঢাকায় এসেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ করেই ঢাকা ত্যাগ করতে লাগলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন খান আবদুল ওয়ালী খান, খান আবদুল কাইয়ুম খান, সর্দার শওকত হায়াত খান, মিয়া মমতাজ দৌলতানা, মওলানা মুফতি মাহমুদ প্রমুখ।
২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকা ছিল মিছিলের শহর। বঙ্গবন্ধু ওই দিন ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেন। সেদিনও ভুট্টো-ইয়াহিয়ার বৈঠক হয়। অপারেশন সার্চলাইটের সিদ্ধান্ত ততক্ষণে হয়ে গেছে, কিন্তু ভুট্টো-ইয়াহিয়া তাঁদের ছদ্ম রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবের চার দফার ব্যাপারে তাঁর দলের নীতিগত আপত্তি নেই।
ইয়াহিয়া খান কাউকে না জানিয়ে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন ২৫ মার্চ সন্ধ্যায়। গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল নাটক সাজিয়ে। ইয়াহিয়ার খালি গাড়ি এয়ারপোর্ট থেকে যখন ফিরেছিল, তখনো তাতে পতাকা উড়ছিল, শুধু প্রেসিডেন্টের জায়গায় অন্য এক সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে ফিরেছিল গাড়িটি। সেনা হামলা হতে পারে—শেখ মুজিবের কাছে এই তথ্য নানা মাধ্যমে এসেছিল। কিন্তু কবে, কখন এই আক্রমণ শুরু হবে, সেটা জানা ছিল না তাঁর।
ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিক করে রেখেছিল, জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলাকে নির্মূল করার জন্য ২৫ মার্চকে বেছে নেওয়া হবে। পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর যখন আসবে রাত ১টা, তখন হবে আক্রমণ। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পৌঁছে যাবেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। এবং হত্যাকাণ্ড যখন ঘটতে থাকবে, তখন শেখ মুজিবকে দায়ী করে দেবেন বেতার ভাষণ।
এবার আসা যাক, সেই অপারেশন সার্চলাইটের কাছে। আক্রমণটা ছিল অতর্কিত, কিন্তু তার পেছনে ভাবনাটা ছিল বহুদিনের এবং সুদূরপ্রসারী। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করা হবে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য দল আনা হতে থাকবে আর তলে তলে আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে ২৫ মার্চ সংশোধিত সময় রাত সাড়ে ১১টায় যখন সেনানিবাস থেকে বের হয়ে এল সশস্ত্র সামরিক যানগুলো, তখন তারা ওপরের মহলের অনুমতি ছাড়াই হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করল। আসলে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের প্রত্যেকেই জানতেন, বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হিংস্রতা নিয়েই শুরু হয়েছে অভিযান। জানতেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোও।
এ অভিযান মোটেই শুধু ভয় দেখানোর জন্য পরিচালিত হয়নি। এ অভিযান সুনির্দিষ্টভাবে ছিল জেনোসাইড। হ্যাঁ, এটা নিছক গণহত্যা ছিল না। একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছিল সে অভিযান।
অপারেশন সার্চলাইটের দিকে দৃষ্টি রাখলেই দেখা যাবে, অতর্কিতে আক্রমণ করা হলেও তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, হিন্দু জনগোষ্ঠী, এমনকি বস্তিবাসী দরিদ্রজন। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি অন্তত তিনটি পত্রিকা অফিস, যাদের তারা আওয়ামী লীগের পক্ষের পত্রিকা বলে মনে করত। এগুলো হলো দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ ও ইংরেজি দৈনিক পিপল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যে আক্রমণ চালিয়েছিল, তার নির্দেশনামা পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, ফলে এখন সে ব্যাপারে কিছুটা আঁচ করা যায়। আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় পাকিস্তানেরই দুই নাগরিকের কাছ থেকে। সিদ্দিক সালিকের ‘এ উইটনেস টু সারেন্ডার’ এবং জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজার ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’ নামের দুটি বইয়ে। আমরা সব সূত্র থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছি।
সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে শহরগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেট। তবে মূলত ঢাকা শহরে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেদিন মূল লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীকে নিরস্ত্র করে ফেলার নির্দেশ ছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে রাজারবাগ পুলিশ লাইন কিংবা পিলখানাকে রাখা হলেও কেন অন্য সব লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা সাধারণভাবে বোধগম্য হয় না। কিন্তু জেনোসাইড ঘটানোর প্রক্রিয়া হিসেবে বিষয়টিকে বিচার করলেই নয়াবাজার, লক্ষ্মীবাজার, পলাশীসহ নিরীহ মানুষের আবাসস্থল আক্রমণের কারণ বোঝা যায়।
হামলার বেশ কিছুদিন আগেই অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের যেকোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা হবে—এ রকমটাই ছিল নির্দেশ। শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী নয়, যাঁরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক, তাঁদেরও শত্রু বলে ধরে নিতে হবে। লক্ষণীয়, একাত্তরের মার্চ মাসে যে অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছিল, তা ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। শেখ মুজিবুর রহমান নিয়মতান্ত্রিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন এবং আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছিলেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহের অভিযোগও আনেনি।
কেন ২৫ মার্চ রাতে চালানো অপারেশন সার্চলাইটকে আমরা জেনোসাইড বলছি, তা বুঝতে হলে মাথায় রাখতে হবে, একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তার অনুসারী সবাইকে শত্রুপক্ষ ঘোষণা করে হত্যা করার মধ্যে রয়েছে জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তা করার অনুমোদন।
এই পরিকল্পনার একটা দিক ছিল স্বয়ং প্রেসিডেন্টের চলাচলের ওপর পর্যবেক্ষণ। বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যেন আলাপ চালিয়ে যাওয়ার ভণিতা করতে থাকেন। ভুট্টো রাজি না থাকলেও প্রেসিডেন্ট যেন ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন, এ রকম চালাকি করে রাখা হয়েছিল।
কীভাবে এই অপারেশন চালানো হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে এভাবে, সর্বোচ্চসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে, ছাত্র ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পুরান ঢাকার হিন্দুবাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করা হয়েছিল দুটো কমান্ডে বিভক্ত হয়ে। ঢাকা শহরের অপারেশনের মূল দায়িত্ব ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ওপর। তাঁর অধীনে ছিল ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাবের ৫৭ পদাতিক ব্রিগেড। খাদিম হুসেইন রাজার ওপর দায়িত্ব ছিল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া।
২৫ মার্চ সকাল ৮টায় অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এরপর ১৪ ডিভিশনের সদর দপ্তর থেকে ঢাকার বাইরের সব গ্যারিসনকে টেলিফোনে গোপন সংকেতের মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করার সময় জানিয়ে দেওয়া হয়। ২৪ ও ২৫ মার্চ অপারেশনের কপি গোপনীয়তার মধ্যে বিভিন্ন সেনানিবাস ও গ্যারিসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২৪ মার্চ হেলিকপ্টারে করে রাও ফরমান আলী গেছেন যশোর ক্যান্টনমেন্টে ব্রিগেডিয়ার দুরদানির কাছে, খাদিম হাসান রাজা গেছেন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি ও কর্নেল ফাতেমির কাছে।
পিলখানায় ছিল আড়াই হাজার বাঙালি ইপিআর সদস্য, পুলিশলাইনে ছিল এক হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্য। তাঁদের নিরস্ত্র করার দায়িত্বে ছিল ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। ১৮ পাঞ্জাব, ২২ বেলুচ, ৩২ পাঞ্জাবের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলকে তারা দোজখে পরিণত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ৩৬ জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিসি দেব, আতাউর রহমান খান খাদিম, এ এন এম মুনিরুজ্জামান, ফজলুর রহমান খান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মুহম্মদ আবদুল মুক্তাদির, শরাফত আলী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ ১১ জন শিক্ষক এই আক্রমণে নিহত হন। ২৬ মার্চ বিকেল থেকে পুরান ঢাকায় শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, বাবুবাজার, নয়াবাজার, গোয়ালনগর, ইংলিশ রোড এলাকায় চলে জেনোসাইড।
৫৭ ব্রিগেডের জাহানজেব আরবাবের নেতৃত্বে ঢাকা শহরের আক্রমণগুলো পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য সেনাবাহিনীর কমান্ডো অফিসারদের নিয়ে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল। কমান্ডো অফিসার জেড এ খান ছিলেন নেতৃত্বে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তারা প্রতিরোধ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকার বাইরে আক্রমণে নেতৃত্ব দেন খাদেম হুসেইন রাজা। রংপুরে আসে সৈয়দপুর থেকে ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট। কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের পথে ভোর তিনটায় বের হয়ে যায় ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্বে ৫৩ ব্রিগেড। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ সহজ ছিল না। তারা দিনাজপুরের ইপিআরের সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে সমুচিত জবাব পায়। তিন দিন ধরে এ এলাকায় সংঘর্ষ চলে। চট্টগ্রামেও আক্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের কুমিরায় যে প্রতিরোধযুদ্ধ হয়, তা ছিল প্রতিরোধযুদ্ধের এক মাইলফলক।
জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলার মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল ২৫ মার্চ, তা পৃথিবীর বুকে ঘটা বর্বরোচিত জেনোসাইডের বড় একটি উদাহরণ। ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার সূচনা হয়েছিল এই দিনটিতে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এই হত্যার সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা কে জানে?
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন (জেআরসি) বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। ২৩ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ জনগণসহ বিচারক, আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্ট সহায়ক কর্মচারীদের কাছে মতামত চেয়েছে কমি
১ ঘণ্টা আগেফৌজদারি মামলায় কোনো আসামি আদালত থেকে অব্যাহতি পেলেও তিনি পুরোপুরি বিপদমুক্ত হন না। তার বিপদ কিছুটা থেকেই যায়। তবে ফৌজদারি মামলায় চার্জ গঠনের পর খালাস পেলে আসামি বিপদমুক্ত হন। একটি ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা আদালত।
৩ ঘণ্টা আগেঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক রাজনীতি ও মানবাধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে।
৩ ঘণ্টা আগেনবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের করা মামলাগুলো যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। নিরীহ কারও নামে মামলা হলেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪ ঘণ্টা আগে