করোনা মহামারিতে বিদেশে কাজ হারিয়ে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছেন প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী। এর মধ্যে দুই লাখ প্রবাসীকে এককালীন ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া এবং তাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্যভান্ডার তৈরি এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ৪২৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের জন্য প্রকল্প অনুমোদনের সময় ফেরত আসা প্রবাসীদের পরিসংখ্যান একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয় বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান বলেন, ‘বিদেশ থেকে যখন প্রবাসীরা ফেরত আসেন, তখন বিমানবন্দরে তাদের তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে এখন পর্যন্ত অন্তত চার লাখ ৮০ হাজার প্রবাসী ফেরত এসেছেন। এর ভিত্তিতেই পাঁচ লাখ প্রবাসী ফেরত আসার তথ্য দেওয়া হয়েছে।’

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম জানান, প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃ একত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্পের আওতায়---প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃ একত্রীকরণের লক্ষ্যে ওরিয়েন্টেশন ও কাউন্সেলিং প্রদানপূর্বক এককালীন নগদ অর্থ প্রদান, দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা সনদ প্রদান, আর্থিক, কারিগরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও সহযোগিতা প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কার্যক্রম ও ছোট ব্যবসায়ের উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ, পুনরায় বিদেশ গমনে সহায়তা প্রদান, পূর্ণাঙ্গ তথ্যভান্ডার তৈরি এবং তাদের জন্য কল্যাণমূলক সেবা বাড়ানো হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ফেরত আসাদের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রাথমিকভাবে ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ ৩২টি জেলায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। পর্যায়ক্রমে ফেরত আসা সবাইকে বিভিন্ন সুবিধার আওতায় আনা হবে।

এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এতদিন তাঁরা (প্রবাসীরা) দিয়েছেন, এখন আমাদেরকে তাঁদের দিতে হবে।’

বুধবারের একনেক সভায় বিদেশফেরতদের জন্য নগদ সহায়তার প্রকল্পটিসহ মোট দুই হাজার ৫৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এসব প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন দুই হাজার ১৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৪২৫ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়া একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে অনুমোদন হওয়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো---৫৬৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে তিনটি আন্ডারপাস এবং পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে ইউলুপ নির্মাণ; ১১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প; ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ প্রকল্প; ১৭৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইনস্টিটিউট অব টিস্যু ব্যাংকিং অ্যান্ড বায়োমেটেরিয়াল রিসার্চের সেবা ও গবেষণা সুবিধাদি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প; ৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প; ৭২ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন প্রকল্প; ৪৯৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ প্রকল্প; ৪৪৬ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প; এবং ৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী স্থাপন।