জাহাঙ্গীর আলম শোভন
এবারের বাজেটের ওপর অনলাইন ব্যবসায়ীদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল। একদিকে দীর্ঘদিন ধরে অনেকগুলো দাবি–দাওয়া উপস্থাপন করা হয়েছে, অন্যদিকে সরকার ডিজিটাল কমার্সের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলো রাজস্ব বা বাজেট সংক্রান্ত না হলেও এ বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে।
বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিজিটাল কমার্স সেল গঠন করে ই-কমার্সের ওপর নজরদারি, ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা–২০২১ জারি করে এই খাতে আর্থিক অনিয়ম দূর করা, টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে গ্রাহকের প্রায় ৩৭৮ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া, ডিবিআইডি রেজিস্ট্রেশন চালু করে অনলাইন উদ্যোক্তাদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা এবং কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনার সংক্রান্ত জাতীয় পোর্টাল অবমুক্ত করা।
এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে, অন্যদিকে এসক্রো, লজিস্টিক ট্রেকিং সিস্টেম এবং ডিজিটাল কমার্স আইন ও ক্রসবর্ডার ই-কমার্স পলিসিসহ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছে সরকার। এতে করে এই খাতের উদ্যোক্তারা এবারের বাজেটে তাঁদের জন্য কোনো সুখবর আশা করেছিলেন।
কিন্তু পাওয়ার মধ্যে পেয়েছেন এই খাত সম্পর্কে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু কথা, আর অনলাইন শপ এবং মার্কেটপ্লেসকে আলাদা ই-কমার্স মডেল হিসেবে স্বীকৃতি। ন্যূনতম করের প্রস্তাব, উৎসে কর থেকে অব্যাহতি, লজিস্টিক সেবায় কর হ্রাসসহ যেসব দাবি এই খাত থেকে উত্থাপন করা হয়েছিল সেগুলোর কোনো প্রতিফলন এখানে আসেনি।
এসআরও নং-১৮৬-আইন/ ২০১৯ / ৪৩-মূসক অনুসারে, ‘অনলাইনে পণ্য বিক্রয়’–এর অর্থ— ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সেসব পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয়কে বোঝাবে, যা এর আগে কোনো উৎপাদনকারী বা সেবা প্রদানকারীর কাছ হতে মূসক পরিশোধপূর্বক গৃহীত হয়েছে এবং যাদের নিজস্ব কোনো বিক্রয়কেন্দ্র নেই।
এই সংজ্ঞাটি একটি অসম্পূর্ণ সংজ্ঞা বলা যায়। এর মধ্য দিয়ে ই-কমার্সের স্বীকৃতি এসেছে। কিন্তু একটিমাত্র অসম্পূর্ণ সংজ্ঞাতে বিষয়টি যথার্থ আকারে প্রতিফলিত হয়নি।
২০২১ সালের ৪ জুলাই প্রকাশিত ডিজিটাল কমার্স পরিচালনায় নির্দেশিকায় সর্বপ্রথম ‘মার্কেটপ্লেস’– এর সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়। এখানে বলা হয়েছে—‘মার্কেটপ্লেস অর্থ, ইন্টারনেটে এক ধরনের ডিজিটাল কমার্স সাইট বা পোর্টাল যাতে এক বা একাধিক তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক পণ্য সেবা সম্পর্কিত তথ্যাদি সন্নিবেশ করা থাকে এবং লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।’
এই সংজ্ঞাটি খুব পরিপক্ব না হলেও এতে মোটামুটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসের ধারণাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু অনলাইন শপকে সংজ্ঞা দিয়ে একে ঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়ে ওঠেনি।
বিভিন্ন কারণে বিধিবদ্ধ সংজ্ঞা দিয়ে ই-কমার্সকে প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। প্রথমত, এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন শপ এবং মার্কেটপ্লেসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিধান প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুধু ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স বা অনলাইন বিজনেস বলে বিষয়টাকে এক কথায় উপস্থাপনযোগ্য হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, একটি ক্ষতিকর পণ্য বিক্রি করার জন্য মার্কেটপ্লেস এবং অনলাইন শপকে একই মাত্রায় দায়ী করা বা শাস্তি দেওয়া সমীচীন নয়। কারণ মার্কেটপ্লেস নিজে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে না। মার্কেটপ্লেস একটি কমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে, সেখানে অন্য এবং বহু সংখ্যক বিক্রেতা তাদের পণ্য সেবা বা বিক্রির উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করে। কিন্তু অনলাইন শপের ক্ষেত্রে সেটি পাইকারী (বিটুবি) কিংবা খুচরা (বিটুসি) যাই হোক, পণ্য এক বা একাধিক হোক, উৎপাদক এক বা একাধিক হোক, সেখানে একজন বিক্রেতা পণ্য সংগ্রহ, প্রদর্শন ও বিক্রি করে থাকে। তখন সে বিক্রেতাই তাঁর পণ্যের বিষয়ে বাহ্যিকভাবে হলেও দায়বদ্ধ থাকতে পারেন।
২০২৩ সালের ২১ মে এনবিআর প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে (এসআরও নং ১৪৩ /আইন ২০২৩ / ২২০ মূসক) দু’টি ভিন্ন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে— (১) অনলাইনে খুচরা বিক্রয় অর্থ: ইলেকট্রনিকস নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সেসব পণ্য ও সেবার ক্রয়–বিক্রয় যা এর আগে কোনো উৎপাদনকারী বা পণ্য সরবরাহকারী বা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মূসক পরিশোধপূর্বক কেনা করা হয়েছে এবং অনলাইনে খুচরা বিক্রেতা কর্তৃক ওই ক্রয়কৃত পণ্য মূসক প্রদানপূর্বক সরবরাহ করা হবে। যে ক্ষেত্রে ওই অনলাইন খুচরা বিক্রেতার নিজস্ব কোনো (ভৌত) বিক্রয়কেন্দ্র নেই।
এখানে খুব রহস্যজনকভাবে সংজ্ঞার ভেতরে মূসকের বিধান দেওয়া হয়েছে এবং পণ্য কেনার আগে একবার মূসকের কথা বলা হয়েছে এবং বিক্রি করার সময় আরেকবার মূসকের কথা বলা হয়েছে। এই সংজ্ঞা খুচরা বিক্রেতা বা ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের দ্বৈত করের আশঙ্কা তৈরি করছে। মানে পণ্যটির ওপর দুইবার ভ্যাট ধার্য করার সুযোগ রয়েছে। এতে করে এটির দাম বেড়ে যাবে এবং মার্কেটপ্লেস ও প্রচলিত দোকানিদের সঙ্গে তারা একটা অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে। সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূসক তথ্য সংযুক্ত করার এই কাঠামো কেন ব্যবহার করা হয়েছে যা বোধগম্য নয়।
বিশেষ করে ঠিক করেই যখন মার্কেটপ্লেসের সংজ্ঞায় এই মূসক সংক্রান্ত কোনো ইঙ্গিত নেই। অনুচ্ছেদ (২)–এ বলা হয়েছে, ‘মার্কেটপ্লেস অর্থ: ডিজিটাল মার্কেট প্ল্যাটফর্ম যাতে এক বা একাধিক বিক্রেতা কর্তৃক তাদের পণ্য ও সেবা সংক্রান্ত তথ্যাদি সন্নিবেশ করা হয়ে থাকে এবং ওই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়ে থাকে অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেস পরিচালনাকারী ব্যক্তি (ও প্রতিষ্ঠান) কর্তৃক কোনো পণ্য ক্রয় বা বিক্রয় করা হবে না এবং তাদের কোনো বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে না।’ (যদিও এটা হওয়া উচিত ‘‘অনলাইন মার্কেটপ্লেস’’ বা ‘‘ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস’’, কারণ মার্কেটপ্লেস বলতে ফিজিক্যাল মার্কেটপ্লেসও হতে পারে)।
দেখুন এখানে মূসক সংক্রান্ত বক্তব্য নেই। এর অর্থ যদি এটা হয় যে, মার্কেটপ্লেসকে মূসক দিতে হবে না কিন্তু একক বিক্রেতাকে মূসক দিতে হবে। তাহলে তা বৈষম্যমূলক ও প্রতিযোগিতা পরিপন্থী হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা চাপে পড়বে বৈকি!
সাধারণত মার্কেটপ্লেস হয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের আর একক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের। তাহলে বৃহৎ এবং ক্ষুদ্রদের মধ্যে যদি কোনো বৈষম্য তৈরি হয় তা ইতিবাচক হবে না। বরং নেতিবাচক হবে। সবচেয়ে ভয়ংকর হবে। এই সংজ্ঞার সূত্র ধরে যদি কর আদায়কারী কর্মকর্তা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে দুইবার মূসক চায় তখন ব্যাপারটা খুব ভালো দেখাবে না। এখানে একই সুবিধা উভয় পক্ষের জন্য থাকা উচিত বা উভয় ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি থাকা উচিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে রাজস্ব বোর্ড ই-কমার্স খাতে মূসক আদায়ের ক্ষেত্রে একটি নিয়ম প্রয়োগ করে আসছে তাতে সবার ক্ষেত্রে একই মূসক প্রযোজ্য ছিল। আর তা হলো, কোনো অনলাইন বিক্রেতাকে অনলাইনে পণ্যসেবা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে হয়তো তাঁর সরবরাহকারী বা উৎপাদক বা আমদানিকারক মূসক প্রদান করেছেন এমন নথি দেবেন। তাহলে তিনি শুধু বাড়তি মূল্যের ওপর মূসক পরিশোধ করবেন। মানে তাঁর পণ্যের ক্রয়মূল্য যদি হয় ১০০ টাকা এবং তিনি এটা ১২০ টাকায় বিক্রি করেন এবং ৩০ টাকা ডেলিভারি চার্জ নিয়ে ১৫০ টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে নেন, তাহলে তিনি শুধু বাড়তি ২০ + ৩০ = ৫০ টাকার ওপর ৫ শতাংশ হারে মূসক দেবেন। কিন্তু কোনো কারণে তিনি যদি আগের মূসক চালান দেখাতে না পারেন সে ক্ষেত্রে তাঁর ওপর পুরো মূল্য মানে ১৫০ টাকার ৫ শতাংশ হারে মূসক প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু এটিতেও উদ্যোক্তারা আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন, তাঁদের কথা ছিল— তাঁরা অবশ্যই বাড়তি মূল্যের ওপর মূসক দিতে রাজি আছেন। কিন্তু আগের বিক্রেতা যদি মূসক না দেন তাঁর দায়ভার তাঁরা নিতে চান না। কেননা অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে সব সময় ৫ শতাংশ লাভও হয় না। তাই তাঁরা এই নিয়মটি রহিত করার প্রস্তাব করে আসছেন। সরকারকে সহযোগিতার স্বার্থে তাঁরা বিক্রেতার সব তথ্য এনবিআরকে দিতে সম্মত আছেন।
এখন আগের দাবি দাওয়ার কোনো অগ্রগতি না হয়েও শুধু একটি সংজ্ঞা এবং তাতে দ্বৈত মূসকের আশঙ্কা তৈরি করা এই খাতের জন্য ইতিবাচক নয়। তাই এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব)
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন
এবারের বাজেটের ওপর অনলাইন ব্যবসায়ীদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল। একদিকে দীর্ঘদিন ধরে অনেকগুলো দাবি–দাওয়া উপস্থাপন করা হয়েছে, অন্যদিকে সরকার ডিজিটাল কমার্সের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলো রাজস্ব বা বাজেট সংক্রান্ত না হলেও এ বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে।
বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিজিটাল কমার্স সেল গঠন করে ই-কমার্সের ওপর নজরদারি, ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা–২০২১ জারি করে এই খাতে আর্থিক অনিয়ম দূর করা, টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে গ্রাহকের প্রায় ৩৭৮ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া, ডিবিআইডি রেজিস্ট্রেশন চালু করে অনলাইন উদ্যোক্তাদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা এবং কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনার সংক্রান্ত জাতীয় পোর্টাল অবমুক্ত করা।
এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে, অন্যদিকে এসক্রো, লজিস্টিক ট্রেকিং সিস্টেম এবং ডিজিটাল কমার্স আইন ও ক্রসবর্ডার ই-কমার্স পলিসিসহ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছে সরকার। এতে করে এই খাতের উদ্যোক্তারা এবারের বাজেটে তাঁদের জন্য কোনো সুখবর আশা করেছিলেন।
কিন্তু পাওয়ার মধ্যে পেয়েছেন এই খাত সম্পর্কে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু কথা, আর অনলাইন শপ এবং মার্কেটপ্লেসকে আলাদা ই-কমার্স মডেল হিসেবে স্বীকৃতি। ন্যূনতম করের প্রস্তাব, উৎসে কর থেকে অব্যাহতি, লজিস্টিক সেবায় কর হ্রাসসহ যেসব দাবি এই খাত থেকে উত্থাপন করা হয়েছিল সেগুলোর কোনো প্রতিফলন এখানে আসেনি।
এসআরও নং-১৮৬-আইন/ ২০১৯ / ৪৩-মূসক অনুসারে, ‘অনলাইনে পণ্য বিক্রয়’–এর অর্থ— ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সেসব পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয়কে বোঝাবে, যা এর আগে কোনো উৎপাদনকারী বা সেবা প্রদানকারীর কাছ হতে মূসক পরিশোধপূর্বক গৃহীত হয়েছে এবং যাদের নিজস্ব কোনো বিক্রয়কেন্দ্র নেই।
এই সংজ্ঞাটি একটি অসম্পূর্ণ সংজ্ঞা বলা যায়। এর মধ্য দিয়ে ই-কমার্সের স্বীকৃতি এসেছে। কিন্তু একটিমাত্র অসম্পূর্ণ সংজ্ঞাতে বিষয়টি যথার্থ আকারে প্রতিফলিত হয়নি।
২০২১ সালের ৪ জুলাই প্রকাশিত ডিজিটাল কমার্স পরিচালনায় নির্দেশিকায় সর্বপ্রথম ‘মার্কেটপ্লেস’– এর সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়। এখানে বলা হয়েছে—‘মার্কেটপ্লেস অর্থ, ইন্টারনেটে এক ধরনের ডিজিটাল কমার্স সাইট বা পোর্টাল যাতে এক বা একাধিক তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক পণ্য সেবা সম্পর্কিত তথ্যাদি সন্নিবেশ করা থাকে এবং লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।’
এই সংজ্ঞাটি খুব পরিপক্ব না হলেও এতে মোটামুটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসের ধারণাটি পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু অনলাইন শপকে সংজ্ঞা দিয়ে একে ঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়ে ওঠেনি।
বিভিন্ন কারণে বিধিবদ্ধ সংজ্ঞা দিয়ে ই-কমার্সকে প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। প্রথমত, এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন শপ এবং মার্কেটপ্লেসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিধান প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুধু ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স বা অনলাইন বিজনেস বলে বিষয়টাকে এক কথায় উপস্থাপনযোগ্য হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, একটি ক্ষতিকর পণ্য বিক্রি করার জন্য মার্কেটপ্লেস এবং অনলাইন শপকে একই মাত্রায় দায়ী করা বা শাস্তি দেওয়া সমীচীন নয়। কারণ মার্কেটপ্লেস নিজে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে না। মার্কেটপ্লেস একটি কমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে, সেখানে অন্য এবং বহু সংখ্যক বিক্রেতা তাদের পণ্য সেবা বা বিক্রির উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করে। কিন্তু অনলাইন শপের ক্ষেত্রে সেটি পাইকারী (বিটুবি) কিংবা খুচরা (বিটুসি) যাই হোক, পণ্য এক বা একাধিক হোক, উৎপাদক এক বা একাধিক হোক, সেখানে একজন বিক্রেতা পণ্য সংগ্রহ, প্রদর্শন ও বিক্রি করে থাকে। তখন সে বিক্রেতাই তাঁর পণ্যের বিষয়ে বাহ্যিকভাবে হলেও দায়বদ্ধ থাকতে পারেন।
২০২৩ সালের ২১ মে এনবিআর প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে (এসআরও নং ১৪৩ /আইন ২০২৩ / ২২০ মূসক) দু’টি ভিন্ন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে— (১) অনলাইনে খুচরা বিক্রয় অর্থ: ইলেকট্রনিকস নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সেসব পণ্য ও সেবার ক্রয়–বিক্রয় যা এর আগে কোনো উৎপাদনকারী বা পণ্য সরবরাহকারী বা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মূসক পরিশোধপূর্বক কেনা করা হয়েছে এবং অনলাইনে খুচরা বিক্রেতা কর্তৃক ওই ক্রয়কৃত পণ্য মূসক প্রদানপূর্বক সরবরাহ করা হবে। যে ক্ষেত্রে ওই অনলাইন খুচরা বিক্রেতার নিজস্ব কোনো (ভৌত) বিক্রয়কেন্দ্র নেই।
এখানে খুব রহস্যজনকভাবে সংজ্ঞার ভেতরে মূসকের বিধান দেওয়া হয়েছে এবং পণ্য কেনার আগে একবার মূসকের কথা বলা হয়েছে এবং বিক্রি করার সময় আরেকবার মূসকের কথা বলা হয়েছে। এই সংজ্ঞা খুচরা বিক্রেতা বা ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের দ্বৈত করের আশঙ্কা তৈরি করছে। মানে পণ্যটির ওপর দুইবার ভ্যাট ধার্য করার সুযোগ রয়েছে। এতে করে এটির দাম বেড়ে যাবে এবং মার্কেটপ্লেস ও প্রচলিত দোকানিদের সঙ্গে তারা একটা অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে। সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূসক তথ্য সংযুক্ত করার এই কাঠামো কেন ব্যবহার করা হয়েছে যা বোধগম্য নয়।
বিশেষ করে ঠিক করেই যখন মার্কেটপ্লেসের সংজ্ঞায় এই মূসক সংক্রান্ত কোনো ইঙ্গিত নেই। অনুচ্ছেদ (২)–এ বলা হয়েছে, ‘মার্কেটপ্লেস অর্থ: ডিজিটাল মার্কেট প্ল্যাটফর্ম যাতে এক বা একাধিক বিক্রেতা কর্তৃক তাদের পণ্য ও সেবা সংক্রান্ত তথ্যাদি সন্নিবেশ করা হয়ে থাকে এবং ওই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়ে থাকে অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেস পরিচালনাকারী ব্যক্তি (ও প্রতিষ্ঠান) কর্তৃক কোনো পণ্য ক্রয় বা বিক্রয় করা হবে না এবং তাদের কোনো বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে না।’ (যদিও এটা হওয়া উচিত ‘‘অনলাইন মার্কেটপ্লেস’’ বা ‘‘ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস’’, কারণ মার্কেটপ্লেস বলতে ফিজিক্যাল মার্কেটপ্লেসও হতে পারে)।
দেখুন এখানে মূসক সংক্রান্ত বক্তব্য নেই। এর অর্থ যদি এটা হয় যে, মার্কেটপ্লেসকে মূসক দিতে হবে না কিন্তু একক বিক্রেতাকে মূসক দিতে হবে। তাহলে তা বৈষম্যমূলক ও প্রতিযোগিতা পরিপন্থী হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা চাপে পড়বে বৈকি!
সাধারণত মার্কেটপ্লেস হয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের আর একক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের। তাহলে বৃহৎ এবং ক্ষুদ্রদের মধ্যে যদি কোনো বৈষম্য তৈরি হয় তা ইতিবাচক হবে না। বরং নেতিবাচক হবে। সবচেয়ে ভয়ংকর হবে। এই সংজ্ঞার সূত্র ধরে যদি কর আদায়কারী কর্মকর্তা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে দুইবার মূসক চায় তখন ব্যাপারটা খুব ভালো দেখাবে না। এখানে একই সুবিধা উভয় পক্ষের জন্য থাকা উচিত বা উভয় ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি থাকা উচিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে রাজস্ব বোর্ড ই-কমার্স খাতে মূসক আদায়ের ক্ষেত্রে একটি নিয়ম প্রয়োগ করে আসছে তাতে সবার ক্ষেত্রে একই মূসক প্রযোজ্য ছিল। আর তা হলো, কোনো অনলাইন বিক্রেতাকে অনলাইনে পণ্যসেবা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে হয়তো তাঁর সরবরাহকারী বা উৎপাদক বা আমদানিকারক মূসক প্রদান করেছেন এমন নথি দেবেন। তাহলে তিনি শুধু বাড়তি মূল্যের ওপর মূসক পরিশোধ করবেন। মানে তাঁর পণ্যের ক্রয়মূল্য যদি হয় ১০০ টাকা এবং তিনি এটা ১২০ টাকায় বিক্রি করেন এবং ৩০ টাকা ডেলিভারি চার্জ নিয়ে ১৫০ টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে নেন, তাহলে তিনি শুধু বাড়তি ২০ + ৩০ = ৫০ টাকার ওপর ৫ শতাংশ হারে মূসক দেবেন। কিন্তু কোনো কারণে তিনি যদি আগের মূসক চালান দেখাতে না পারেন সে ক্ষেত্রে তাঁর ওপর পুরো মূল্য মানে ১৫০ টাকার ৫ শতাংশ হারে মূসক প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু এটিতেও উদ্যোক্তারা আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন, তাঁদের কথা ছিল— তাঁরা অবশ্যই বাড়তি মূল্যের ওপর মূসক দিতে রাজি আছেন। কিন্তু আগের বিক্রেতা যদি মূসক না দেন তাঁর দায়ভার তাঁরা নিতে চান না। কেননা অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে সব সময় ৫ শতাংশ লাভও হয় না। তাই তাঁরা এই নিয়মটি রহিত করার প্রস্তাব করে আসছেন। সরকারকে সহযোগিতার স্বার্থে তাঁরা বিক্রেতার সব তথ্য এনবিআরকে দিতে সম্মত আছেন।
এখন আগের দাবি দাওয়ার কোনো অগ্রগতি না হয়েও শুধু একটি সংজ্ঞা এবং তাতে দ্বৈত মূসকের আশঙ্কা তৈরি করা এই খাতের জন্য ইতিবাচক নয়। তাই এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব)
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা পালাতে পারেননি তাঁদের জনাকয়েক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসনকালে বিএনপিসহ অন্য নেতাদের যেভাবে হেলমেট পরিয়ে জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করা হতো, এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের একই কায়দায়
৬ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিন যত যাচ্ছে, ততই নতুন নতুন কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। প্রশ্নগুলো যে গভীরতর রাজনৈতিক বিষয়সংশ্লিষ্ট, তা বলাই বাহুল্য। অনেক সময়ই প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে সংবাদ সম্মেলন বা সংবাদ ব্রিফিং করে বিষয়গুলো খোলাসার চেষ্টা করা হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ও জনমনে আস্থার সংকটের প্রেক্ষাপটে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
৬ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে অটোরিকশা বন্ধের প্রস্তাবে চালকদের রাস্তায় নেমে আসা এবং শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবরোধে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
১ দিন আগে