ফজলুল কবির
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান পদত্যাগ করেছেন। আর এই খবর পাওয়ার পর থেকেই যেন অনেক কিছু থিতিয়ে আসতে শুরু করেছে। তাঁকে নিয়ে যে তর্ক-বিতর্ক, তা যেন কিছুটা মিইয়ে পড়েছে। অনেকেই এখন প্রসঙ্গান্তরে যাচ্ছেন বা যাওয়ার ফুরসত পাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো পদধারীদের পদত্যাগই একমাত্র সাজা? সাধের পদত্যাগ করলেই কি একটা শুদ্ধিকরণ ঘটে যায়? পদত্যাগ কি নীলকণ্ঠ, যে সব অন্যায়ের বিষকে অমৃতে পরিণত করে? নাকি পুণ্যস্নান, যে সব পাপ ধুয়েমুছে সাফ করে দেয়?
মুরাদ হাসান প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ২০১৯ সালে। দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর মন্ত্রণালয় বদল হয়। বলা ভালো যে, অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁর মন্ত্রণালয় বদল করতে হয়েছিল। কারণ কী? কারণ আর কিছুই নয়। বাজে ব্যবহার এবং ঔদ্ধত্য। নিজেকে একই সঙ্গে চিকিৎসক, শিল্পীসহ বহু কিছু দাবি করা এই ব্যক্তি তারপর লম্বা সময় কাটিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। এবং কখনোই তিনি নীরব ছিলেন না। নানা আসরে, নানা সভায়, নানা আলাপে বেফাঁস নয়, ভেবেচিন্তেই একের পর এক আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে গেছেন। কেউ তাঁকে কিছু বলেনি। অন্তত প্রকাশ্যে তেমন কিছু শোনা যায়নি কখনো।
এখন শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও তাঁর হাত থেকে রেহাই পাননি। এটা এতটাই যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নাকি অলিখিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাঁকে কোনো পিএস না দেওয়ার। কারণ তিনি পিএসদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করতেন। কেউ চাইতেন না তাঁর সঙ্গে কাজ করতে। কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তো তাঁর সঙ্গে কাজ না করে কোনো উপায় নেই। তাঁরা নিরুপায় হয়েই কাজ করেছেন এবং তাঁর আচরণ দ্বারা পীড়িত হয়েছেন। এত দিন কেন তাঁরা এই তথ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে আনেননি? কারণটি অত্যন্ত সরল। তাঁরা নিজেদের দুর্দশা বাড়াতে চাননি।
দেশে বর্তমানে ক্ষমতার যে সমীকরণ দাঁড়িয়েছে, তাতে সাধারণ জনতার কোনো ভাগ থাকলেও তা নিঃসন্দেহে আণুবীক্ষণিক। ক্ষমতা কাঠামোটি একটি সুউচ্চ পিরামিডের আকার নিয়েছে। এর একেবারে তলানিতে পাথরচাপা ভার নিয়ে পড়ে আছে জনতা। এর ওপরের দিকে উঠতে থাকলে অন্য অংশীদারদের খোঁজ মিলবে। এর একেকটা ধাপে একেক শ্রেণি-পেশার লোকদের সমাবেশ। এই পিরামিডের বেশ ওপরের দিকেই রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা অনুরূপ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোও বেশ উঁচুতলায়। যত দিন যাচ্ছে, ক্ষমতার অন্যতম চর্চাকেন্দ্র হিসেবে সচিবালয় তত ওপরের দিকে উঠে আসছে।
এমন এক ক্ষমতার সমীকরণ ও পিরামিডে শক্ত অবস্থান নিয়েও মুরাদ হাসান ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা। মুখ বুজে মুরাদ হাসানের দাপটে তটস্থ থেকেছেন। কিচ্ছুটি বলেননি। তাহলে পিরামিডের নিচের স্তরগুলোর অবস্থা সহজেই অনুমেয়। ফলে কে কেন কীভাবে মুরাদ হাসানের মতো লোকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, সে উত্তর আর আলাদা করে খোঁজার দরকার পড়ে না। মুরাদ হাসান নিজেও এই সমীকরণ ভালো করে বোঝেন। আর বোঝেন বলেই নানা বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার সময় দু-একটি কুল রক্ষার চেষ্টা তিনি করেছেন। জনতা বা দায়িত্ব নয়, শিষ্টাচার বা শালীনতা নয়, তিনি সেই কুলই রক্ষার চেষ্টা করেছেন, যা তাঁর ক্ষমতাকে নিরবচ্ছিন্ন রাখবে। মুরাদ তা বেশ দারুণভাবে পেরেছেনও। আড়াই বছর ঠিকই দাপটের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে টিকে ছিলেন।
ছিলেন বলতে হচ্ছে, এখন নেই বলে। মন্ত্রণালয়ে তাঁর পদ এখনো না গেলেও যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে বলাই যায়। আজ (মঙ্গলবার) তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। শুনে ভাবার কারণ নেই যে তিনি নিজের বক্তব্য নিয়ে হওয়া জোর সমালোচনার জেরে অন্তর্দহন থেকে নিজ থেকেই এই পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন—এও সত্য। কিন্তু এই ক্ষমা চাওয়ার পেছনেও আত্মপীড়নই যে কারণ, তা অন্তত বলা যাচ্ছে না। তেমনটি হলে এ অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পরপরই তাঁর লজ্জাবোধ ও আত্মপীড়ন জেগে ওঠার কথা। কিন্তু ওঠেনি। উঠেছে তখনই, যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তাঁর পদত্যাগের নির্দেশ এসেছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মারফত জানা গেল। অর্থাৎ এই মনোবেদনা, এই আত্মোপলব্ধি, এই লজ্জাবোধ পদ হারানোর সঙ্গে যুক্ত।
কী ঘটনার জেরে মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে হলো? সাদাচোখে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য, এক সুপরিচিত চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি এবং তাঁর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জড়িয়ে নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য, ছাত্রলীগের নেত্রীসহ সামগ্রিকভাবে নারীদের নিয়ে অশালীন ও কুরুচিকর মন্তব্যের জেরেই তাঁকে পদ হারাতে হচ্ছে। কিন্তু ঘটনা কি এটুকুই? প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক—এই অডিও রেকর্ড যদি ফাঁস না হতো বা মোক্ষম সময়ে যে বা যাঁরা অডিও-ভিডিও ইত্যাদি রেকর্ড ফাঁস করতে হাত মকশো করেছেন বেশ, তাঁরা যদি মুরাদের দিকে নজর না দিতেন, তবে কী হতো? কিছুই হয়তো নয়। মুরাদ হয়তো আরও কিছুদিন একে খুঁচিয়ে, তাকে গুঁতিয়ে, এর-ওর পিণ্ডি চটকে বহালতবিয়তে মন্ত্রণালয়েই থেকে যেতে পারতেন। তার মানে কী দাঁড়াল, মুরাদকে সরাতে হবে বলেই অডিও ফাঁস, নাকি অডিও ফাঁস হওয়ায় মুরাদের পতন? কোনটা? এ তো ডিম আগে, না মুরগি আগের মতো ধাঁধা হয়ে গেল।
সে যাক, মূল আলোচনায় ফিরে আসা যাক। মুরাদ হাসান পদত্যাগ করেছেন। দেশের সংবাদমাধ্যমে এ নিয়েই এখন জোর আলোচনা। এই ঘটনাকে এমনভাবে সামনে আনা হচ্ছে, যেন এটাই বিজয়। অথচ কেউ প্রশ্ন তুলছে না যে, এই যে এত দিন ধরে এত এত কথা বললেন মুরাদ, যার সঙ্গে তিনি জড়িয়ে নিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নানা সংস্থাকেও, সে বিষয়ে তদন্ত কীভাবে কত দিনে হবে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে খবর আসছে ঠিক, কিন্তু তিনি নারীদের নিয়ে যে উক্তি করেছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থেকে, তার জন্য রাষ্ট্র লজ্জিত হয়নি। এমনকি তাঁকে সম্মানজনকভাবে সরে দাঁড়ানোর পথটিও করে দেওয়া হয়েছে।
এটা শুধু এবারের ঘটনায় নয়। এর আগেও এমনটা দেখা গেছে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে, অন্য সংগঠনের শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে, হামলা করে, ভাঙচুর করে কিংবা জাতীয় পর্যায়ে কারও চরিত্রহনন করে, পিটিয়ে, মেরে, দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যখন কেউ সমালোচিত হয়, তখন একপর্যায়ে তাঁর অপসারণের দাবি ওঠে। বিষয়টি আর চাপা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে ওই সংগঠন যে জনগুরুত্বপূর্ণ ও বৈপ্লবিক পদক্ষেপটি নেয়, তা হলো ওই সমালোচিত ব্যক্তিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার। যেন এই একটি পদক্ষেপ নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মুরাদের ক্ষেত্রেও তেমন দাবিই উঠেছিল। নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্যের জেরে ছাত্রলীগ নেত্রী, বিএনপিসহ বিভিন্ন ফোরাম থেকে তাঁর অপসারণের দাবি ওঠে। জোর গলায় তাঁর বিচারের দাবি নয়। ফলে পদত্যাগের মধ্য দিয়েই বিষয়টির সমাধান খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে।
দিনের পর দিন এই চর্চার মাধ্যমে এই দেশের মানুষও তাদের দাবিকে ‘সীমিত পরিসরে’ উত্থাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তারা এখন আর নিজের ক্ষুধার কথাটা পূর্ণ বাক্যেও বলতে পারে না। ফলে মুরাদের মতো প্রতিমন্ত্রীর শুধু পদত্যাগ চাইতে পারে সে, যা করে তিনি গোটা দেশকে আবার কৃতার্থ করে দিতে পারেন। আর এর মাধ্যমে তিনি তাঁর অনুসারী ও সহকর্মীদের এবং ভাবি দিনের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীনির্বিশেষে নেতাদের জন্য একটি বার্তাই রেখে যান—যা খুশি করো বাপু, পদত্যাগই তোমার একমাত্র শাস্তি।
ফজলুল কবির
সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান পদত্যাগ করেছেন। আর এই খবর পাওয়ার পর থেকেই যেন অনেক কিছু থিতিয়ে আসতে শুরু করেছে। তাঁকে নিয়ে যে তর্ক-বিতর্ক, তা যেন কিছুটা মিইয়ে পড়েছে। অনেকেই এখন প্রসঙ্গান্তরে যাচ্ছেন বা যাওয়ার ফুরসত পাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো পদধারীদের পদত্যাগই একমাত্র সাজা? সাধের পদত্যাগ করলেই কি একটা শুদ্ধিকরণ ঘটে যায়? পদত্যাগ কি নীলকণ্ঠ, যে সব অন্যায়ের বিষকে অমৃতে পরিণত করে? নাকি পুণ্যস্নান, যে সব পাপ ধুয়েমুছে সাফ করে দেয়?
মুরাদ হাসান প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ২০১৯ সালে। দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর মন্ত্রণালয় বদল হয়। বলা ভালো যে, অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁর মন্ত্রণালয় বদল করতে হয়েছিল। কারণ কী? কারণ আর কিছুই নয়। বাজে ব্যবহার এবং ঔদ্ধত্য। নিজেকে একই সঙ্গে চিকিৎসক, শিল্পীসহ বহু কিছু দাবি করা এই ব্যক্তি তারপর লম্বা সময় কাটিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। এবং কখনোই তিনি নীরব ছিলেন না। নানা আসরে, নানা সভায়, নানা আলাপে বেফাঁস নয়, ভেবেচিন্তেই একের পর এক আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে গেছেন। কেউ তাঁকে কিছু বলেনি। অন্তত প্রকাশ্যে তেমন কিছু শোনা যায়নি কখনো।
এখন শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও তাঁর হাত থেকে রেহাই পাননি। এটা এতটাই যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নাকি অলিখিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাঁকে কোনো পিএস না দেওয়ার। কারণ তিনি পিএসদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করতেন। কেউ চাইতেন না তাঁর সঙ্গে কাজ করতে। কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তো তাঁর সঙ্গে কাজ না করে কোনো উপায় নেই। তাঁরা নিরুপায় হয়েই কাজ করেছেন এবং তাঁর আচরণ দ্বারা পীড়িত হয়েছেন। এত দিন কেন তাঁরা এই তথ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে আনেননি? কারণটি অত্যন্ত সরল। তাঁরা নিজেদের দুর্দশা বাড়াতে চাননি।
দেশে বর্তমানে ক্ষমতার যে সমীকরণ দাঁড়িয়েছে, তাতে সাধারণ জনতার কোনো ভাগ থাকলেও তা নিঃসন্দেহে আণুবীক্ষণিক। ক্ষমতা কাঠামোটি একটি সুউচ্চ পিরামিডের আকার নিয়েছে। এর একেবারে তলানিতে পাথরচাপা ভার নিয়ে পড়ে আছে জনতা। এর ওপরের দিকে উঠতে থাকলে অন্য অংশীদারদের খোঁজ মিলবে। এর একেকটা ধাপে একেক শ্রেণি-পেশার লোকদের সমাবেশ। এই পিরামিডের বেশ ওপরের দিকেই রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা অনুরূপ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোও বেশ উঁচুতলায়। যত দিন যাচ্ছে, ক্ষমতার অন্যতম চর্চাকেন্দ্র হিসেবে সচিবালয় তত ওপরের দিকে উঠে আসছে।
এমন এক ক্ষমতার সমীকরণ ও পিরামিডে শক্ত অবস্থান নিয়েও মুরাদ হাসান ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা। মুখ বুজে মুরাদ হাসানের দাপটে তটস্থ থেকেছেন। কিচ্ছুটি বলেননি। তাহলে পিরামিডের নিচের স্তরগুলোর অবস্থা সহজেই অনুমেয়। ফলে কে কেন কীভাবে মুরাদ হাসানের মতো লোকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, সে উত্তর আর আলাদা করে খোঁজার দরকার পড়ে না। মুরাদ হাসান নিজেও এই সমীকরণ ভালো করে বোঝেন। আর বোঝেন বলেই নানা বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার সময় দু-একটি কুল রক্ষার চেষ্টা তিনি করেছেন। জনতা বা দায়িত্ব নয়, শিষ্টাচার বা শালীনতা নয়, তিনি সেই কুলই রক্ষার চেষ্টা করেছেন, যা তাঁর ক্ষমতাকে নিরবচ্ছিন্ন রাখবে। মুরাদ তা বেশ দারুণভাবে পেরেছেনও। আড়াই বছর ঠিকই দাপটের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে টিকে ছিলেন।
ছিলেন বলতে হচ্ছে, এখন নেই বলে। মন্ত্রণালয়ে তাঁর পদ এখনো না গেলেও যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে বলাই যায়। আজ (মঙ্গলবার) তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। শুনে ভাবার কারণ নেই যে তিনি নিজের বক্তব্য নিয়ে হওয়া জোর সমালোচনার জেরে অন্তর্দহন থেকে নিজ থেকেই এই পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন—এও সত্য। কিন্তু এই ক্ষমা চাওয়ার পেছনেও আত্মপীড়নই যে কারণ, তা অন্তত বলা যাচ্ছে না। তেমনটি হলে এ অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পরপরই তাঁর লজ্জাবোধ ও আত্মপীড়ন জেগে ওঠার কথা। কিন্তু ওঠেনি। উঠেছে তখনই, যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তাঁর পদত্যাগের নির্দেশ এসেছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মারফত জানা গেল। অর্থাৎ এই মনোবেদনা, এই আত্মোপলব্ধি, এই লজ্জাবোধ পদ হারানোর সঙ্গে যুক্ত।
কী ঘটনার জেরে মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে হলো? সাদাচোখে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য, এক সুপরিচিত চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি এবং তাঁর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জড়িয়ে নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য, ছাত্রলীগের নেত্রীসহ সামগ্রিকভাবে নারীদের নিয়ে অশালীন ও কুরুচিকর মন্তব্যের জেরেই তাঁকে পদ হারাতে হচ্ছে। কিন্তু ঘটনা কি এটুকুই? প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক—এই অডিও রেকর্ড যদি ফাঁস না হতো বা মোক্ষম সময়ে যে বা যাঁরা অডিও-ভিডিও ইত্যাদি রেকর্ড ফাঁস করতে হাত মকশো করেছেন বেশ, তাঁরা যদি মুরাদের দিকে নজর না দিতেন, তবে কী হতো? কিছুই হয়তো নয়। মুরাদ হয়তো আরও কিছুদিন একে খুঁচিয়ে, তাকে গুঁতিয়ে, এর-ওর পিণ্ডি চটকে বহালতবিয়তে মন্ত্রণালয়েই থেকে যেতে পারতেন। তার মানে কী দাঁড়াল, মুরাদকে সরাতে হবে বলেই অডিও ফাঁস, নাকি অডিও ফাঁস হওয়ায় মুরাদের পতন? কোনটা? এ তো ডিম আগে, না মুরগি আগের মতো ধাঁধা হয়ে গেল।
সে যাক, মূল আলোচনায় ফিরে আসা যাক। মুরাদ হাসান পদত্যাগ করেছেন। দেশের সংবাদমাধ্যমে এ নিয়েই এখন জোর আলোচনা। এই ঘটনাকে এমনভাবে সামনে আনা হচ্ছে, যেন এটাই বিজয়। অথচ কেউ প্রশ্ন তুলছে না যে, এই যে এত দিন ধরে এত এত কথা বললেন মুরাদ, যার সঙ্গে তিনি জড়িয়ে নিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নানা সংস্থাকেও, সে বিষয়ে তদন্ত কীভাবে কত দিনে হবে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে খবর আসছে ঠিক, কিন্তু তিনি নারীদের নিয়ে যে উক্তি করেছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থেকে, তার জন্য রাষ্ট্র লজ্জিত হয়নি। এমনকি তাঁকে সম্মানজনকভাবে সরে দাঁড়ানোর পথটিও করে দেওয়া হয়েছে।
এটা শুধু এবারের ঘটনায় নয়। এর আগেও এমনটা দেখা গেছে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে, অন্য সংগঠনের শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে, হামলা করে, ভাঙচুর করে কিংবা জাতীয় পর্যায়ে কারও চরিত্রহনন করে, পিটিয়ে, মেরে, দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যখন কেউ সমালোচিত হয়, তখন একপর্যায়ে তাঁর অপসারণের দাবি ওঠে। বিষয়টি আর চাপা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে ওই সংগঠন যে জনগুরুত্বপূর্ণ ও বৈপ্লবিক পদক্ষেপটি নেয়, তা হলো ওই সমালোচিত ব্যক্তিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার। যেন এই একটি পদক্ষেপ নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মুরাদের ক্ষেত্রেও তেমন দাবিই উঠেছিল। নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্যের জেরে ছাত্রলীগ নেত্রী, বিএনপিসহ বিভিন্ন ফোরাম থেকে তাঁর অপসারণের দাবি ওঠে। জোর গলায় তাঁর বিচারের দাবি নয়। ফলে পদত্যাগের মধ্য দিয়েই বিষয়টির সমাধান খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে।
দিনের পর দিন এই চর্চার মাধ্যমে এই দেশের মানুষও তাদের দাবিকে ‘সীমিত পরিসরে’ উত্থাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তারা এখন আর নিজের ক্ষুধার কথাটা পূর্ণ বাক্যেও বলতে পারে না। ফলে মুরাদের মতো প্রতিমন্ত্রীর শুধু পদত্যাগ চাইতে পারে সে, যা করে তিনি গোটা দেশকে আবার কৃতার্থ করে দিতে পারেন। আর এর মাধ্যমে তিনি তাঁর অনুসারী ও সহকর্মীদের এবং ভাবি দিনের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীনির্বিশেষে নেতাদের জন্য একটি বার্তাই রেখে যান—যা খুশি করো বাপু, পদত্যাগই তোমার একমাত্র শাস্তি।
ফজলুল কবির
সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা পালাতে পারেননি তাঁদের জনাকয়েক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসনকালে বিএনপিসহ অন্য নেতাদের যেভাবে হেলমেট পরিয়ে জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করা হতো, এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের একই কায়দায়
১৫ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিন যত যাচ্ছে, ততই নতুন নতুন কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। প্রশ্নগুলো যে গভীরতর রাজনৈতিক বিষয়সংশ্লিষ্ট, তা বলাই বাহুল্য। অনেক সময়ই প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে সংবাদ সম্মেলন বা সংবাদ ব্রিফিং করে বিষয়গুলো খোলাসার চেষ্টা করা হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ও জনমনে আস্থার সংকটের প্রেক্ষাপটে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১৫ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে অটোরিকশা বন্ধের প্রস্তাবে চালকদের রাস্তায় নেমে আসা এবং শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবরোধে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
১ দিন আগে