চলমান নানা ইস্যুতে দেশব্যাপী বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে গতকাল বুধবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষণ ও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। আরও আহত হয়েছেন থানা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ফারুক আহমেদসহ বেশ কিছু নেতা কর্মী। মূলত অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশেই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল, কারণ তিনি বিএনপির সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতা। এমন অভিযোগ তুলে পুলিশি হামলার নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। 

এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, নোয়াখালীর সেনবাগ, খুলনার দৌলতপুর, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, নেত্রকোনার কলমাকান্দাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশের হামলা এবং নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেতা কর্মী গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের এখন টিকে থাকার একমাত্র উপায় হলো বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা ও তাদেরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে দেশবাসীসহ বিএনপি ও বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের মনে ভয়ভীতি সঞ্চার করে ভয়াবহ অপশাসন জারি রেখেছে। গোটা দেশ এখন নরকপুরীতে পরিণত হয়েছে। বিএনপি নেতা কর্মীদের ওপর সরকারদলীয় ক্যাডার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে হামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন নিপীড়ন চালানোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে বিএনপি-কে ধ্বংস করে আওয়ামী দুঃশাসন টিকিয়ে রাখা। কিন্তু এসব অপকর্মের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার ক্ষমতা প্রলম্বিত করার বাসনা বাস্তবায়িত করতে পারবে না। কারণ জনগণ এখন সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। 

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে সমাবেশ চলাকালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। হামলায় বিএনপি নেতা মকবুল, আমিরুল, যুবদল নেতা মাসুদ, কাইয়ুম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহেল, আল মামুন, ছাত্রদল নেতা সাদ্দাম, নাসিম হোসেন, ডানো, শ্রমিক দল নেতা উজ্জ্বল, শফিকুলসহ ৫০ জনের অধিক নেতা কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। হামলাকারীরা নেতা কর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এই নেতার অভিযোগ। 

তিনি বলেন, গোবিন্দগঞ্জ থানা বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষণ ও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। আরও আহত হয়েছেন থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক মো. ফারুক আহমেদ, ছাত্রদল নেতা শাওন প্রধান, আহসান হাবিব, আকাশ প্রধান, শাফিন আহম্মেদ, মিরাজ, বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা হেলাল, কৃষক দল নেতা শাহ জামাল হেলাল, যুবদল নেতা রানা, ইব্রাহিম মুন্নাসহ অসংখ্য নেতা কর্মী। অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বিএনপি’র একজন সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতা বলেই তাকে হত্যার উদ্দেশে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে। 

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের আহ্বায়ক সুলতান সালাউদ্দিন লিটনকে গ্রেপ্তার, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে আজ বৃহস্পতিবার কর্মসূচি পালনকালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে কৃষক দল নেতা মফিজ সরদার, ফরিদ জমাদ্দার, কাশেম ও জামাল হোসেনকে গুরুতর আহত করেছে। খাগড়াছড়ি লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় কর্মসূচি পালনকালে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে ছাত্রদল নেতা রবিউল, এসকেন্দার, যুবদল নেতা বাহাদুর করিম ও কবিরসহ ৭ জনের অধিক নেতা কর্মীকে মারাত্মকভাবে আহত করে। খুলনার দৌলতপুরে ছাত্রলীগের নেতারা বিএনপি কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং নেতা কর্মীদের আহত করে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।  

এসব ঘটনাকে ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে গ্রেপ্তার নেতা কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও আহত নেতা কর্মীদের দ্রুত সুস্থতাও কামনা করেছেন তিনি। 

এ ছাড়া টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, চট্টগ্রামের সন্দীপ উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশ করার সময় হামলা, গ্রেপ্তার ও কার্যালয়, বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাকে ভয়াবহ কর্মকাণ্ড এবং গণধিক্কৃত সরকারের চলমান দুঃশাসনেরই ধারাবাহিকতা উল্লেখ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।