রিক্তা রিচি
ঢাকা: কথায় বলে ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’। এই বচনে শাক বাড়তি উপদ্রব বোঝাতে ব্যবহৃত। কিন্তু রেহানা বেগমের ক্ষেত্রে শাকই বোঝা বইবার উপায়। শাক এখানে সহায়। জীবন ও সংসার নামের বোঝাটি বইবার জন্য শাকই রেহানার সহায়। রোজ সকালে রাজধানীর রামপুরা বনশ্রীর সি ব্লকের ২ নম্বর সড়কে ঢুকলেই চোখে পড়ে রেহানা বেগমকে। পুঁই, পাট, কলমি, কচু কিংবা লাল শাক নিয়ে বসে থাকেন তিনি। মাঝেমধ্যে অন্য শাকও থাকে রেহানার পসরায়। এই শাকই রেহানার সংসার চালানোর রসদটি জোগান দেয়।
প্রতি দিন যাত্রাবাড়ী থেকে শাক কিনে এনে বনশ্রীতে বিক্রি করেন রেহানা বেগম। রোজ সন্ধ্যায় একাই যান শাক আনতে। পরদিন সকালে সেই শাকের পসরা নিয়েই বসেন তিনি। পুঁজি ৬০০-৭০০ টাকা। দিন শেষে সব সবজি বিক্রির পর লাভ থাকে ২০০-৩০০ টাকার মতো। এই ৩০০ টাকা দিয়েই চলতে হয় তাঁকে, চালাতে হয় সংসার।
রেহানার বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বারে। ঢাকায় এসেছেন কয়েক মাস আগে। শুরুর দিকে ইট ভাঙা, ঢালাই ইত্যাদির কাজ করতেন। কিন্তু সে কাজে মেহনত বেশি। রেহানা বেগমের লিকলিকে শরীর কষ্টের সে কাজের ভার বহন করতে পারে না। কিছুটা স্বস্তি পেতে শুরু করেছেন শাকের ব্যবসায় এসে। তিন–চার মাস ধরে তিনি শাক বিক্রি করছেন। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শাক বেচেন তিনি। তারপরের সময়টায় ঘরের অন্যান্য কাজ করেন, বিশ্রাম নেন।
উপার্জনের এত শত উপায় থাকতে রেহানা শাকই বেচেন কেন? তিনি তো গার্মেন্টসে কাজ করতে পারতেন, কিংবা বাসা–বাড়িতে কাজ করতে পারতেন। প্রশ্নটা তুলতেই রেহানার স্বাধীনচেতা স্বভাবের সঙ্গে পরিচয় হলো। বললেন—গার্মেন্টসে কাজ করতে হলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। নিজের স্বাধীনতা থাকে না। বাসা–বাড়িতে কাজ করলেও প্রতিদিন কাজে যেতে হয়। অসুস্থ থাকলেও ছুটি পাওয়া যায় না। এমনকি ঈদের দিনেও কাজ করতে যেতে হয়।
মোদ্দা কথা অন্যের অধীন হয়ে থাকতে হয়। নিজের ইচ্ছা–অনিচ্ছা, ভালো বা মন্দ লাগাই তাঁর কাছে মূল্যবান। এ জন্যই অন্যের অধীনে কাজের চেয়ে স্বাধীন ব্যবসাকেই বেছে নিয়েছেন রেহানা। তাঁর মতে, নিজের কাজে স্বাধীনতা থাকে। কখন কাজ করবেন বা করবেন না, তা তাঁর ইচ্ছার অধীন। এটি তাঁর জন্য আনন্দের। শারীরিক পরিশ্রমও তুলনায় কম।
ঢাকায় আসার আগে কুমিল্লায় অন্যের বাড়িতে ধান ও অন্যান্য ফসল তোলার কাজ করতেন রেহানা। সেই কাজে অনেক কষ্ট। মাথার ওপর চোখ রাঙায় কড়া রোদ। এই কড়া রোদ কিংবা ঘন বর্ষার মধ্যেই ধান তোলার কাজ করতেন। কিন্তু তা থেকে যা আয় হতো, তা দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে টানাটানি লেগে যেত। কাজও সব সময় থাকত না। হন্যে হয়ে কাজ খুঁজলেও মোটামুটি চলার মতো কিছু পাননি। জীবিকার তাগিদে তাই ঢাকায় আসেন।
কিন্তু কেন এই সংগ্রাম? রেহানা বেগম কি একা? জীবন সংসারে কি তাঁর কেউ নেই?
আছে। রেহানা বেগমের স্বামী আছে। কিন্তু তাঁর নেই কোনো আয়। বছরখানেক আগে তাঁর কিডনিতে পাথর হয়েছিল। দেড় লাখ টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সেই টাকা জোগাড় করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলতে হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর থেকে ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না রেহানা বেগমের স্বামী। আগে মাটি কাটা ও অন্যান্য কাজ করলেও এখন সেই শক্তি ও সামর্থ্য নেই তাঁর।
রেহানা বেগমের দুই ছেলেও আছে। নাম রিমন ও ইমন। রিমন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। মায়ের স্বপ্ন তাকে কোরআনে হাফেজ বানাবেন। ইমন পড়ে নবম শ্রেণিতে। রেহানা বেগম চান তাঁর দুই ছেলে পড়াশোনা করে তাঁর দুঃখ লাঘব করুক। রিমন ও ইমন থাকে কুমিল্লায়। তাদের সঙ্গে থাকেন তাদের বাবাও। জমিজমা বলতে তেমন কিছুই নেই। শুধু আছে মাথা গোঁজার ঠাঁই।
রেহানা বেগম ঢাকার সিপাহিবাগের ভূঁইয়াপাড়ায় থাকেন। সেখানে তাঁর ভাই স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন। ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী দুজনেই মাটি কাটার কাজ করেন। তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা এতই দুর্বল যে, চাইলেও তাঁরা রেহানা বেগমকে সাহায্য করতে পারেন না। রেহানা বেগম একাই লড়ে চলেছেন কঠিন এক বাস্তবতার সঙ্গে। এক জীবনের বহু রং দেখেছেন তিনি। নিয়মিত দেখছেন মুখ ও মুখোশের পসরা। পাড়ি দিচ্ছেন কঠিন পথ।
দুই ছেলের পড়ার খরচ কীভাবে চলে—এই প্রশ্নের উত্তরে রেহানা জানালেন, মাদ্রাসায় যে ছেলেটা পড়ে, তার খরচ লাগে না। যে ছেলেটা নবম শ্রেণিতে পড়ে, সে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে টিউশনি করে। কিছু টাকা আয় করে। নিজের খরচ নিজে চালায়।
অল্প বয়সে বিয়ে, তারপর সংসার, অভাব-অনটনকে সঙ্গে নিয়েই চলছে রেহানা বেগমের জীবন। স্বপ্ন—আরেকটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা তাঁকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করছে। তবুও অটল থাকেন নিজ কাজে। লিকলিকে শরীর নিয়ে শাক বিক্রি করেন। আরেকটু স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন।
ঢাকা: কথায় বলে ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’। এই বচনে শাক বাড়তি উপদ্রব বোঝাতে ব্যবহৃত। কিন্তু রেহানা বেগমের ক্ষেত্রে শাকই বোঝা বইবার উপায়। শাক এখানে সহায়। জীবন ও সংসার নামের বোঝাটি বইবার জন্য শাকই রেহানার সহায়। রোজ সকালে রাজধানীর রামপুরা বনশ্রীর সি ব্লকের ২ নম্বর সড়কে ঢুকলেই চোখে পড়ে রেহানা বেগমকে। পুঁই, পাট, কলমি, কচু কিংবা লাল শাক নিয়ে বসে থাকেন তিনি। মাঝেমধ্যে অন্য শাকও থাকে রেহানার পসরায়। এই শাকই রেহানার সংসার চালানোর রসদটি জোগান দেয়।
প্রতি দিন যাত্রাবাড়ী থেকে শাক কিনে এনে বনশ্রীতে বিক্রি করেন রেহানা বেগম। রোজ সন্ধ্যায় একাই যান শাক আনতে। পরদিন সকালে সেই শাকের পসরা নিয়েই বসেন তিনি। পুঁজি ৬০০-৭০০ টাকা। দিন শেষে সব সবজি বিক্রির পর লাভ থাকে ২০০-৩০০ টাকার মতো। এই ৩০০ টাকা দিয়েই চলতে হয় তাঁকে, চালাতে হয় সংসার।
রেহানার বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বারে। ঢাকায় এসেছেন কয়েক মাস আগে। শুরুর দিকে ইট ভাঙা, ঢালাই ইত্যাদির কাজ করতেন। কিন্তু সে কাজে মেহনত বেশি। রেহানা বেগমের লিকলিকে শরীর কষ্টের সে কাজের ভার বহন করতে পারে না। কিছুটা স্বস্তি পেতে শুরু করেছেন শাকের ব্যবসায় এসে। তিন–চার মাস ধরে তিনি শাক বিক্রি করছেন। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শাক বেচেন তিনি। তারপরের সময়টায় ঘরের অন্যান্য কাজ করেন, বিশ্রাম নেন।
উপার্জনের এত শত উপায় থাকতে রেহানা শাকই বেচেন কেন? তিনি তো গার্মেন্টসে কাজ করতে পারতেন, কিংবা বাসা–বাড়িতে কাজ করতে পারতেন। প্রশ্নটা তুলতেই রেহানার স্বাধীনচেতা স্বভাবের সঙ্গে পরিচয় হলো। বললেন—গার্মেন্টসে কাজ করতে হলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। নিজের স্বাধীনতা থাকে না। বাসা–বাড়িতে কাজ করলেও প্রতিদিন কাজে যেতে হয়। অসুস্থ থাকলেও ছুটি পাওয়া যায় না। এমনকি ঈদের দিনেও কাজ করতে যেতে হয়।
মোদ্দা কথা অন্যের অধীন হয়ে থাকতে হয়। নিজের ইচ্ছা–অনিচ্ছা, ভালো বা মন্দ লাগাই তাঁর কাছে মূল্যবান। এ জন্যই অন্যের অধীনে কাজের চেয়ে স্বাধীন ব্যবসাকেই বেছে নিয়েছেন রেহানা। তাঁর মতে, নিজের কাজে স্বাধীনতা থাকে। কখন কাজ করবেন বা করবেন না, তা তাঁর ইচ্ছার অধীন। এটি তাঁর জন্য আনন্দের। শারীরিক পরিশ্রমও তুলনায় কম।
ঢাকায় আসার আগে কুমিল্লায় অন্যের বাড়িতে ধান ও অন্যান্য ফসল তোলার কাজ করতেন রেহানা। সেই কাজে অনেক কষ্ট। মাথার ওপর চোখ রাঙায় কড়া রোদ। এই কড়া রোদ কিংবা ঘন বর্ষার মধ্যেই ধান তোলার কাজ করতেন। কিন্তু তা থেকে যা আয় হতো, তা দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে টানাটানি লেগে যেত। কাজও সব সময় থাকত না। হন্যে হয়ে কাজ খুঁজলেও মোটামুটি চলার মতো কিছু পাননি। জীবিকার তাগিদে তাই ঢাকায় আসেন।
কিন্তু কেন এই সংগ্রাম? রেহানা বেগম কি একা? জীবন সংসারে কি তাঁর কেউ নেই?
আছে। রেহানা বেগমের স্বামী আছে। কিন্তু তাঁর নেই কোনো আয়। বছরখানেক আগে তাঁর কিডনিতে পাথর হয়েছিল। দেড় লাখ টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সেই টাকা জোগাড় করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলতে হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর থেকে ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না রেহানা বেগমের স্বামী। আগে মাটি কাটা ও অন্যান্য কাজ করলেও এখন সেই শক্তি ও সামর্থ্য নেই তাঁর।
রেহানা বেগমের দুই ছেলেও আছে। নাম রিমন ও ইমন। রিমন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। মায়ের স্বপ্ন তাকে কোরআনে হাফেজ বানাবেন। ইমন পড়ে নবম শ্রেণিতে। রেহানা বেগম চান তাঁর দুই ছেলে পড়াশোনা করে তাঁর দুঃখ লাঘব করুক। রিমন ও ইমন থাকে কুমিল্লায়। তাদের সঙ্গে থাকেন তাদের বাবাও। জমিজমা বলতে তেমন কিছুই নেই। শুধু আছে মাথা গোঁজার ঠাঁই।
রেহানা বেগম ঢাকার সিপাহিবাগের ভূঁইয়াপাড়ায় থাকেন। সেখানে তাঁর ভাই স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন। ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী দুজনেই মাটি কাটার কাজ করেন। তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা এতই দুর্বল যে, চাইলেও তাঁরা রেহানা বেগমকে সাহায্য করতে পারেন না। রেহানা বেগম একাই লড়ে চলেছেন কঠিন এক বাস্তবতার সঙ্গে। এক জীবনের বহু রং দেখেছেন তিনি। নিয়মিত দেখছেন মুখ ও মুখোশের পসরা। পাড়ি দিচ্ছেন কঠিন পথ।
দুই ছেলের পড়ার খরচ কীভাবে চলে—এই প্রশ্নের উত্তরে রেহানা জানালেন, মাদ্রাসায় যে ছেলেটা পড়ে, তার খরচ লাগে না। যে ছেলেটা নবম শ্রেণিতে পড়ে, সে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে টিউশনি করে। কিছু টাকা আয় করে। নিজের খরচ নিজে চালায়।
অল্প বয়সে বিয়ে, তারপর সংসার, অভাব-অনটনকে সঙ্গে নিয়েই চলছে রেহানা বেগমের জীবন। স্বপ্ন—আরেকটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা তাঁকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করছে। তবুও অটল থাকেন নিজ কাজে। লিকলিকে শরীর নিয়ে শাক বিক্রি করেন। আরেকটু স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন।
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪