ইমরান খান
বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার শাহবাগ মোড় জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
কেমন আছেন? পয়লা বৈশাখে পতাকা দিছেন?
সালামত: এই আছি ভাই। হয়, সকালে দিছি শাহবাগে। চারুকলায় যাই নাই। হেরা কইছে প্রোগ্রাম হইবো না।
প্রোগ্রাম তো হইছে, ভেতরে ২০-২৫ জন লোক নিয়ে
সালামত: ভিতরে? বাইরে আসে নাই? ভিতরে থাকলে হইব? ভিতরে হইলে তো আমার কিছু করার নাই। মঙ্গল শোভাযাত্রা হইলে না আমি যাইতাম।
এইটুক বলে তিনি কেটে পড়তে চাইলেন। বললেন—ঠিক আছে, থাহেন। নিউজ হুনতাছি। আমি পুলিশের লগে আছি। কিন্তু, আমি তো কথা চালিয়ে যেতে চাই। তাঁর সঙ্গেই এগিয়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্নও চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তো তেমন আন্দোলন নেই, আপনার পতাকা দেওয়ার কী অবস্থা?
সালামত: পতাকা আমি একলা উড়াইলেও সারে। কিন্তু, তাগো লগে উড়াইলে ভালো হয় জিনিসটা। সব সময়ই পতাকা দিতে হয়। শাহবাগের মোড়ে তো সব সময় পতাকা ওড়ে। ওই পতাকা অইহানে আমিই উডাইছি (মেট্রোরেলের প্রাচীরের ওপর উড়ন্ত পতাকা দেখিয়ে)।
কত বছর ধরে পতাকা দেন? আসল কাহিনিটা কী?
সালামত: সাত–আট বছর ধইরা। সকাল বেলা শুরু কইরা রাইত সাড়ে ১২টায় শেষ করতে হয়। কাহিনি হইল, অনেকের মাথায় দেখপেন (দেখবেন) জট হয়। অই লোকটা জট ফালাইতে পারে না। আর যদি ফালাইতে যায়, তাইলে মারা যায়। নাইলে কোনো একটা অসুখ–বিসুখ হয়, ধ্বংস হইয়া যায়। পতাকাও ওই রকমই।
বিষয়ডা হইল সোনার বাংলাদেশ। এহন হইল ডিজিটাল বাংলাদেশ। পতাকা মানেই বাংলাদেশ, পতাকা মানেই আমি। এইডা অর্থনীতি রাজনীতিকের পতাকা।
আমাকে এই বলেই শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান সালামত। শরীরের পুরো শক্তি কণ্ঠে এনে চিৎকার করেন–‘এবারেএএএএএর সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, জয় বাংলা জঅঅঅঅঅয় বঙ্গবন্ধু, স্বাস্থ্যবিধিইইইইই মেনে চলুন।’ এ সময় বাম হাতে পতাকা উঁচিয়ে ধরে ডান হাতের তর্জনি বঙ্গবন্ধুর অনুকরণে তুলে ধরেন সালামত। আমিও চট করে এই মুহূর্তের কিছু ছবি তুলে ফেলি।
স্লোগান শেষ করে আবার গল্পে ফেরেন সালামত। বলেন—এই যে চিল্লানিডি দিছি। মাথায় রক্ত উইঠা যায়। এইভাবে ধইরা রাখছি আরকি, অর্থনীতি, বুঝছেন? আপনে এইগুলা ছাইড়া দিয়েন নেটে। আমারে বিদেশি মিডিয়া কাভার করে। পত্রিকায় আহে। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে এইটা আহে।
এতদিন তো কেউ পতাকা দেয়নি, আপনি একা কেন দেন?
সালামত: ভাই, অইডা যার ওপর পড়ে, সে বুঝে। মজিব এমনে হইয়া গ্যাছেগা? এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের সংগ্রামী জীবন, এই রাজপথে থেকেই মনে করেন যে, সংগ্রাম করছেন। শিক্ষামন্ত্রী কন, অই মহিলা এই রাজপথে থাইকা সংগ্রাম করছে। পুলিশের অত্যাচারের শরিলেত্তে কাপড় ছাইড়া দিছে। এডি এইভাবেই হয়। পরে মানুষ দেখব যে—এএএই রাস্তায় পতাকা উড়াইছে।
বাংলাদেশ কেমন চলছে ভাই?
সালামত: করোনার লইগা সব শেষ হইয়া গেছে। সংগ্রামে চলমান রাখছি এই আরকি।
দেশের রাজনীতি, অর্থনীতির কী অবস্থা?
সালামত: ভাই, এইগুলা করতে করতে আমি পাগল হইয়া গেছিগা। রাইত–দিন কোনো ঘুম নাই, খাওয়া নাই, দাওয়া নাই। আমি এই জায়গায় আইছি মনে করেন যে, মাথার মধ্যে অনেক শাপ লইয়া। এই জায়গায় দাঁড়ানোডারে আপনি কী বুঝতাছেন? সকালবেলা প্রশাসনের উপর যুদ্ধ কইরা পতাকা উড়ান লাগছে। সিপাই আইছে। কইলাম, ধুর মিয়া সরেন। অফিসার আইছেনি? তদন্তরে ডাহেন।
এই পতাকার উপরে দেশটা চলতাছে। আপনারা কেডা কী বোঝেন, কইতারি না। একটা পোলা পতাকা লইয়া দাঁড়াইয়া আছি। আপনেরা দেখতাছেন। দেইখাও বোঝেন না। আমি খুব হিমশিম খাইতাছি। এইডা ধরতে গেলে পিথিবি (পৃথিবী), এইডা মানেই পিথিবি। এইডা মানচিত্র একটা। এই জিনিসটা লইয়া লাড়তাছি, পিথিবীডা লাড়তাছি। পিথিবিডা আমার মাথার উপরে চাপ পইড়া রইছে।
আর কতদিন পতাকা দিতে চান?
সালামত: সংগ্রাম চলছে, চলবে। আমাদের মুক্তি পাইতে হইব, আমারে মুক্তি দিতে হইব। তাইলে আমি পতাকা ছাড়া হাঁটতে পারমু। আর মনে হয় ৩-৪ বছর আছে।
বাংলাদেশকে কি মুক্ত মনে হয় না?
সালামত: আমি তো মুক্তি পাই নাইকা। বাংলাদেশ মুক্ত হয় নাইকা। বৈষম্য আছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যর বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম। এইগুলা শেষ হইলে ওইদিন মুক্তি পামু। মুক্তি যেদিন পামু, ওইদিন আমি আসল স্বাধীন হমু। সবাই নিজেরে মুক্ত মনে করে, আসলে মুক্ত না। মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইব। বঙ্গবন্ধু ভিক্ষুকের রাষ্ট্ররে সোনার বাংলা কইরা দিয়া গেছে। আবার সোনার বাংলারে ভিক্ষুকের রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াইছি ২০২১-৪১ চ্যালেঞ্জ নিয়া। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আপনি খুশি না? কীভাবে মুক্তি মিলবে?
সালামত: দেশের মানুষ খুশি থাকলেই হইছে। আমার ভাই সময় আয় আর যায়। কোন সময় এডি কইরা মারা যাই। মুক্তি দেওয়ার মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রর কার্যক্রম আর আমি যদি জায়গামতো থাকতে পারি, তাইলে মুক্তি মিলবে।
আপনার কি রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে?
সালামত: আমি তো জাতীয় নেতা। পতাকা মানেই আমি জাতীয় নেতা। আমারে নেতাই কয়, এই দ্যাশে পুলিশ–টুলিশ যারা আছে, আমারে নেতা কয়। এবং পতাকামুন্ত্রী (মন্ত্রী) কয়। এইডা আমার প্রচার হয় গণমাধ্যমে।
আমার কোনো চাওয়া–পাওয়ার ইচ্ছা নাই। আমি মন্ত্রিত্ব পাওনের লইগা রাজনীতি করি না। এই দেশের শান্তির লইগা, মানুষের লইগা রাজনীতি করি। এই সরকার একদিন আমারে বাড়ি দিব, গাড়ি দিব—অই চিন্তা আমি করি না।
আমার বাবার ৪০ লাখ টাকার সম্পত্তি ছিল। অইসব বাদ দিয়া এইখানে আইছি। এই পর্যন্ত এই সরকার কোনো অনুদান দেয় নাই। বাবারডা বাদেও নিজস্ব অর্থায়নে আমি শিল্পপতি।
বললেন, ‘এডি কইরা কোনো সময় মইরা যাই’, আপনার লাইফ রিস্ক আছে?
সালামত: আমি কোন সময় মারা যাই বুঝতাছেন? আমি যে এইডা করি, এইডার কোন নিরাপত্তা নাই। আমারে পরশু দিনও থানার ভিতরে পুলিশ মারছে। কারণ, আমি ছাত্রলীগের লগে থাকি, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের লগে থাকি, বামেগো কোনো সমস্যা হইলে তাগো লগে থাকি, যত ইন্টারন্যাশনাল আন্দোলন–সংগ্রাম, সবগুলায় থাকি। এই পতাকা লইয়া আমি সংগ্রাম করি। পুলিশে বাধা দেয়, তাগো কতা মানি না।
আপনি সবার আন্দোলনে থাকেন কেন?
সালামত: সবার সাথে থাকি কারণ, আমার পতাকার ভিতরে তার অধিকার। ভাই, এই পতাকার ভিতরে সবকিছু। কতা বোঝেন? এক কথা। এইহানেই থাকেন। এই পতাকার মাঝেই সবকিছু। অর্থনীতি, রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি। পররাষ্ট্রনীতি কে? জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ভাইস চেয়ারম্যান আমি। আপনি দেখতাছেন, একটা পাগল পতাকা উড়াইতাছে। আর জাতিসংঘে আমার পদ–পদবি আছে, বিশাল।
জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট কে?
সালামত: নেতানুকোচ (আন্তোনিও গুতেরেস)। ওদিক যাওন যাইব না। জাতিসংঘের যে আমি সদস্য, আমার পতাকা (তার) প্রমাণ। আমার আরও পদ–পদবি আছে; খেয়াল নাইকা। টাইটেল দেওয়া বোঝেন? এ আপনেরা জানেন, জাইনাও জিগান।
সালামতের সঙ্গে গল্প জমে উঠেছে। বললেন, ‘চলেন, চেম্বারে যাই।’ এই বলে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে শাহবাগ মোড় থেকে শাহবাগ থানার গেটের পাশে তাঁর ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘এইটা আমার চেম্বার।’ চোখ বোলালাম ‘চেম্বারে’। ঘরটি দুই চাকার চটপটি বিক্রির দোকানের মতো। রাজনৈতিক কর্মসূচির বিলবোর্ড ঝুলিয়ে বানানো হয়েছে দরজা। ঘরে জিনিসপত্র বলতে—মাথার কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি। বাম পাশে একটি মিনি ম্যারাথনে দুই হাজার টাকা জেতার কার্ড। ডান পাশে একটি শার্ট, একটি প্যান্ট, দুটি গেঞ্জি ও একটি মাস্ক ঝুলতে দেখা যায়। দুটি কম্বল, দুটি কাঁথা, একটি চাদর ও একটি বালিশ নিয়েই তাঁর বিছানা।
আপনি দৌড়ান?
সালামত: হ, এই দৌড়ে আমি সেকেন্ড হইছিলাম, ক্যামেরার সেকেন্ড। পরে হেরা লিস্ট ঘুরাইয়া দিছে। (আসলে ফল কী হয়েছিল জানা নেই)।
আচ্ছা, কোটা আন্দোলনে পুলিশের মুখোমুখি আপনার একা দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি অনেক খবরে এসেছে। অই কাজটা কীভাবে করলেন?
সালামত: ওইদিন ক্যালা পুলিশ পিডাইয়া হোয়াইয়া দিছি, একলা। সব গ্যাছেগা। দেহি, গুলি আর থামে না। আমি মারা যামু। ওই সময় ঢিলাইতে ঢিলাইতে এইহানে (থানার গেট) আইয়া পড়ছি। পুলিশের ব্যারিকেটের (ব্যারিকেড) সামনে। আইয়া পরে পুলিশ সব কাইত–মাইত হইয়া গ্যাছেগা। বিল্ডিং পড়ে না কাইত হইয়া? অমনভাবে পড়তাছে। পরে মিডিয়া আমারে কাভার করল। পরদিন দেহি নিউজে সব।
আপনার ভয় লাগেনাই?
সালামত: আমি তো তাগো অধিকারের লইগা আন্দোলন করতাছি। আমি তো জানতাছি আমি মারা যামু, তাগো ছাইড়া দিয়া লাভ কী? আমি তো দেখতাছি মারা যামু। গুলি, গ্যাসে-ম্যাসে, ডাইরেক (সরাসরি) গুলিও ছাড়তাছে (ছুড়ছে); কার্টুজ ছাড়তাছে। এমনে তো মারা যামুই, যুদ্ধ কইরা মরমু। একটা ইতিহাস হইয়া যাইব। তখন আমি ওইডার বিজয় পাইছি। অইদিনকালই দেশ স্বাধীন হইছে, আবার ঘোষণা হইছে। অইডা ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
থানার সামনে থাকেন, পুলিশদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
সালামত: কিছু স্যার আছে, আমারে অনেক আদর করে। আমারে জিগায়, খাইছোনি কিছু? টাকা দেয়, খাওয়ায়। তাদেরও কিছু কথা আমি শুনি। তারা যা পারে, আমার জন্য করে।
কথা শেষ না করতেই সালামত বললেন, ‘দাঁড়ান আপনেরে দেখাই’ বলে বালিশের নিচের ২টি তক্তা সরিয়ে একটি চকচকে ব্যাগ বের করেন। বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামে থাকি, আমি কিন্তু আপনেগো ভাই।’ ব্যাগ থেকে বের করেন একটি সাময়িকী ও অন্তত ৩০টি পত্রিকা। সাময়িকীটির পেছনের কভারে শুধু তাঁর একটি ছবিই শোভা পেয়েছে (৮ মার্চ ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের ছবিটি)। প্রতিটি পত্রিকা খুলে দেখান বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি। প্রত্যেকটি পত্রিকা খুলে নানা কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি দেখালেন। ছবিগুলো বের করতে খুব বেশি খুঁজতেও হয়নি। পত্রিকার অই ছবিগুলোর ছবি আমার মোবাইলেও তুলতে বললেন। আমিও সবগুলো তুললাম।
এবার বললেন, ‘এই যে ছবি তুললেন। আমি মইরা গেলে এইগুলা ইতিহাস হইব।’
আপনার ছবি, কথা নিউজে দিলে সমস্যা আছে?
সালামত: না না না, আপনে মিডিয়া হইয়া গ্যাছেনগা। আপনের যা খুশি, স্ট্যাটাস দিয়া দিয়েন। আরবারে (আবরার) স্ট্যাটাস দিছে, আরবারররে (আবরার) যে মারছে, ভুল করছে সম্পূর্ণ। তাঁরে যে মারছে, ছাত্রলীগের পোলাপাইনে, ভুল করছে। স্ট্যাটাস দিছে, কী অইছে? যদি সে অপরাধ করত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। কিন্তু তারা হাত দিয়া মারল ক্যা?
ভয় পাইয়া গ্যাছেগা অহনে। অহনে ভয় পাইয়া গেছে সব। দেখছেন? কাজটা কী করছে। যারা মারছে, তারা কিন্তু ছাড় পাইব না। ছাত্র তো। সাধারণ মানুষ হইতো। আমারেও তো কেউ মাইরা শান্তি পাইব না। অর গুষ্ঠিশুদ্ধা ধ্বংস।
ছাত্ররে তো মারা ঠিক না। সে দেশের প্রদীপ। একদিন এই আরবার (আবরার) বড় কিছু হইতে পারত। তার জন্য দেশের অনেক উন্নত হইত। এমপি হইত বা নেতা হইত, একটা বড় কিছুই হইত। তারে মাইরা দেশের ক্ষতি করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করল।
গল্প যেভাবে মেতে উঠেছে, কখন শেষ হবে ইয়ত্তা নেই। এদিকে আমাকেও ফিরতে হবে। তাই সালামতের সঙ্গে গল্প শেষ করতে হলো। বিদায়ের সময় আবার দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি হয়েছে।
ফেরার পথে হাঁটছি আর ভাবছি—সালামতকে যে লোকে ‘পাগল’ বলে তা কি সত্যি?
বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার শাহবাগ মোড় জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
কেমন আছেন? পয়লা বৈশাখে পতাকা দিছেন?
সালামত: এই আছি ভাই। হয়, সকালে দিছি শাহবাগে। চারুকলায় যাই নাই। হেরা কইছে প্রোগ্রাম হইবো না।
প্রোগ্রাম তো হইছে, ভেতরে ২০-২৫ জন লোক নিয়ে
সালামত: ভিতরে? বাইরে আসে নাই? ভিতরে থাকলে হইব? ভিতরে হইলে তো আমার কিছু করার নাই। মঙ্গল শোভাযাত্রা হইলে না আমি যাইতাম।
এইটুক বলে তিনি কেটে পড়তে চাইলেন। বললেন—ঠিক আছে, থাহেন। নিউজ হুনতাছি। আমি পুলিশের লগে আছি। কিন্তু, আমি তো কথা চালিয়ে যেতে চাই। তাঁর সঙ্গেই এগিয়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্নও চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তো তেমন আন্দোলন নেই, আপনার পতাকা দেওয়ার কী অবস্থা?
সালামত: পতাকা আমি একলা উড়াইলেও সারে। কিন্তু, তাগো লগে উড়াইলে ভালো হয় জিনিসটা। সব সময়ই পতাকা দিতে হয়। শাহবাগের মোড়ে তো সব সময় পতাকা ওড়ে। ওই পতাকা অইহানে আমিই উডাইছি (মেট্রোরেলের প্রাচীরের ওপর উড়ন্ত পতাকা দেখিয়ে)।
কত বছর ধরে পতাকা দেন? আসল কাহিনিটা কী?
সালামত: সাত–আট বছর ধইরা। সকাল বেলা শুরু কইরা রাইত সাড়ে ১২টায় শেষ করতে হয়। কাহিনি হইল, অনেকের মাথায় দেখপেন (দেখবেন) জট হয়। অই লোকটা জট ফালাইতে পারে না। আর যদি ফালাইতে যায়, তাইলে মারা যায়। নাইলে কোনো একটা অসুখ–বিসুখ হয়, ধ্বংস হইয়া যায়। পতাকাও ওই রকমই।
বিষয়ডা হইল সোনার বাংলাদেশ। এহন হইল ডিজিটাল বাংলাদেশ। পতাকা মানেই বাংলাদেশ, পতাকা মানেই আমি। এইডা অর্থনীতি রাজনীতিকের পতাকা।
আমাকে এই বলেই শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান সালামত। শরীরের পুরো শক্তি কণ্ঠে এনে চিৎকার করেন–‘এবারেএএএএএর সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, জয় বাংলা জঅঅঅঅঅয় বঙ্গবন্ধু, স্বাস্থ্যবিধিইইইইই মেনে চলুন।’ এ সময় বাম হাতে পতাকা উঁচিয়ে ধরে ডান হাতের তর্জনি বঙ্গবন্ধুর অনুকরণে তুলে ধরেন সালামত। আমিও চট করে এই মুহূর্তের কিছু ছবি তুলে ফেলি।
স্লোগান শেষ করে আবার গল্পে ফেরেন সালামত। বলেন—এই যে চিল্লানিডি দিছি। মাথায় রক্ত উইঠা যায়। এইভাবে ধইরা রাখছি আরকি, অর্থনীতি, বুঝছেন? আপনে এইগুলা ছাইড়া দিয়েন নেটে। আমারে বিদেশি মিডিয়া কাভার করে। পত্রিকায় আহে। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে এইটা আহে।
এতদিন তো কেউ পতাকা দেয়নি, আপনি একা কেন দেন?
সালামত: ভাই, অইডা যার ওপর পড়ে, সে বুঝে। মজিব এমনে হইয়া গ্যাছেগা? এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের সংগ্রামী জীবন, এই রাজপথে থেকেই মনে করেন যে, সংগ্রাম করছেন। শিক্ষামন্ত্রী কন, অই মহিলা এই রাজপথে থাইকা সংগ্রাম করছে। পুলিশের অত্যাচারের শরিলেত্তে কাপড় ছাইড়া দিছে। এডি এইভাবেই হয়। পরে মানুষ দেখব যে—এএএই রাস্তায় পতাকা উড়াইছে।
বাংলাদেশ কেমন চলছে ভাই?
সালামত: করোনার লইগা সব শেষ হইয়া গেছে। সংগ্রামে চলমান রাখছি এই আরকি।
দেশের রাজনীতি, অর্থনীতির কী অবস্থা?
সালামত: ভাই, এইগুলা করতে করতে আমি পাগল হইয়া গেছিগা। রাইত–দিন কোনো ঘুম নাই, খাওয়া নাই, দাওয়া নাই। আমি এই জায়গায় আইছি মনে করেন যে, মাথার মধ্যে অনেক শাপ লইয়া। এই জায়গায় দাঁড়ানোডারে আপনি কী বুঝতাছেন? সকালবেলা প্রশাসনের উপর যুদ্ধ কইরা পতাকা উড়ান লাগছে। সিপাই আইছে। কইলাম, ধুর মিয়া সরেন। অফিসার আইছেনি? তদন্তরে ডাহেন।
এই পতাকার উপরে দেশটা চলতাছে। আপনারা কেডা কী বোঝেন, কইতারি না। একটা পোলা পতাকা লইয়া দাঁড়াইয়া আছি। আপনেরা দেখতাছেন। দেইখাও বোঝেন না। আমি খুব হিমশিম খাইতাছি। এইডা ধরতে গেলে পিথিবি (পৃথিবী), এইডা মানেই পিথিবি। এইডা মানচিত্র একটা। এই জিনিসটা লইয়া লাড়তাছি, পিথিবীডা লাড়তাছি। পিথিবিডা আমার মাথার উপরে চাপ পইড়া রইছে।
আর কতদিন পতাকা দিতে চান?
সালামত: সংগ্রাম চলছে, চলবে। আমাদের মুক্তি পাইতে হইব, আমারে মুক্তি দিতে হইব। তাইলে আমি পতাকা ছাড়া হাঁটতে পারমু। আর মনে হয় ৩-৪ বছর আছে।
বাংলাদেশকে কি মুক্ত মনে হয় না?
সালামত: আমি তো মুক্তি পাই নাইকা। বাংলাদেশ মুক্ত হয় নাইকা। বৈষম্য আছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যর বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম। এইগুলা শেষ হইলে ওইদিন মুক্তি পামু। মুক্তি যেদিন পামু, ওইদিন আমি আসল স্বাধীন হমু। সবাই নিজেরে মুক্ত মনে করে, আসলে মুক্ত না। মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইব। বঙ্গবন্ধু ভিক্ষুকের রাষ্ট্ররে সোনার বাংলা কইরা দিয়া গেছে। আবার সোনার বাংলারে ভিক্ষুকের রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াইছি ২০২১-৪১ চ্যালেঞ্জ নিয়া। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আপনি খুশি না? কীভাবে মুক্তি মিলবে?
সালামত: দেশের মানুষ খুশি থাকলেই হইছে। আমার ভাই সময় আয় আর যায়। কোন সময় এডি কইরা মারা যাই। মুক্তি দেওয়ার মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রর কার্যক্রম আর আমি যদি জায়গামতো থাকতে পারি, তাইলে মুক্তি মিলবে।
আপনার কি রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে?
সালামত: আমি তো জাতীয় নেতা। পতাকা মানেই আমি জাতীয় নেতা। আমারে নেতাই কয়, এই দ্যাশে পুলিশ–টুলিশ যারা আছে, আমারে নেতা কয়। এবং পতাকামুন্ত্রী (মন্ত্রী) কয়। এইডা আমার প্রচার হয় গণমাধ্যমে।
আমার কোনো চাওয়া–পাওয়ার ইচ্ছা নাই। আমি মন্ত্রিত্ব পাওনের লইগা রাজনীতি করি না। এই দেশের শান্তির লইগা, মানুষের লইগা রাজনীতি করি। এই সরকার একদিন আমারে বাড়ি দিব, গাড়ি দিব—অই চিন্তা আমি করি না।
আমার বাবার ৪০ লাখ টাকার সম্পত্তি ছিল। অইসব বাদ দিয়া এইখানে আইছি। এই পর্যন্ত এই সরকার কোনো অনুদান দেয় নাই। বাবারডা বাদেও নিজস্ব অর্থায়নে আমি শিল্পপতি।
বললেন, ‘এডি কইরা কোনো সময় মইরা যাই’, আপনার লাইফ রিস্ক আছে?
সালামত: আমি কোন সময় মারা যাই বুঝতাছেন? আমি যে এইডা করি, এইডার কোন নিরাপত্তা নাই। আমারে পরশু দিনও থানার ভিতরে পুলিশ মারছে। কারণ, আমি ছাত্রলীগের লগে থাকি, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের লগে থাকি, বামেগো কোনো সমস্যা হইলে তাগো লগে থাকি, যত ইন্টারন্যাশনাল আন্দোলন–সংগ্রাম, সবগুলায় থাকি। এই পতাকা লইয়া আমি সংগ্রাম করি। পুলিশে বাধা দেয়, তাগো কতা মানি না।
আপনি সবার আন্দোলনে থাকেন কেন?
সালামত: সবার সাথে থাকি কারণ, আমার পতাকার ভিতরে তার অধিকার। ভাই, এই পতাকার ভিতরে সবকিছু। কতা বোঝেন? এক কথা। এইহানেই থাকেন। এই পতাকার মাঝেই সবকিছু। অর্থনীতি, রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি। পররাষ্ট্রনীতি কে? জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ভাইস চেয়ারম্যান আমি। আপনি দেখতাছেন, একটা পাগল পতাকা উড়াইতাছে। আর জাতিসংঘে আমার পদ–পদবি আছে, বিশাল।
জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট কে?
সালামত: নেতানুকোচ (আন্তোনিও গুতেরেস)। ওদিক যাওন যাইব না। জাতিসংঘের যে আমি সদস্য, আমার পতাকা (তার) প্রমাণ। আমার আরও পদ–পদবি আছে; খেয়াল নাইকা। টাইটেল দেওয়া বোঝেন? এ আপনেরা জানেন, জাইনাও জিগান।
সালামতের সঙ্গে গল্প জমে উঠেছে। বললেন, ‘চলেন, চেম্বারে যাই।’ এই বলে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে শাহবাগ মোড় থেকে শাহবাগ থানার গেটের পাশে তাঁর ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘এইটা আমার চেম্বার।’ চোখ বোলালাম ‘চেম্বারে’। ঘরটি দুই চাকার চটপটি বিক্রির দোকানের মতো। রাজনৈতিক কর্মসূচির বিলবোর্ড ঝুলিয়ে বানানো হয়েছে দরজা। ঘরে জিনিসপত্র বলতে—মাথার কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি। বাম পাশে একটি মিনি ম্যারাথনে দুই হাজার টাকা জেতার কার্ড। ডান পাশে একটি শার্ট, একটি প্যান্ট, দুটি গেঞ্জি ও একটি মাস্ক ঝুলতে দেখা যায়। দুটি কম্বল, দুটি কাঁথা, একটি চাদর ও একটি বালিশ নিয়েই তাঁর বিছানা।
আপনি দৌড়ান?
সালামত: হ, এই দৌড়ে আমি সেকেন্ড হইছিলাম, ক্যামেরার সেকেন্ড। পরে হেরা লিস্ট ঘুরাইয়া দিছে। (আসলে ফল কী হয়েছিল জানা নেই)।
আচ্ছা, কোটা আন্দোলনে পুলিশের মুখোমুখি আপনার একা দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি অনেক খবরে এসেছে। অই কাজটা কীভাবে করলেন?
সালামত: ওইদিন ক্যালা পুলিশ পিডাইয়া হোয়াইয়া দিছি, একলা। সব গ্যাছেগা। দেহি, গুলি আর থামে না। আমি মারা যামু। ওই সময় ঢিলাইতে ঢিলাইতে এইহানে (থানার গেট) আইয়া পড়ছি। পুলিশের ব্যারিকেটের (ব্যারিকেড) সামনে। আইয়া পরে পুলিশ সব কাইত–মাইত হইয়া গ্যাছেগা। বিল্ডিং পড়ে না কাইত হইয়া? অমনভাবে পড়তাছে। পরে মিডিয়া আমারে কাভার করল। পরদিন দেহি নিউজে সব।
আপনার ভয় লাগেনাই?
সালামত: আমি তো তাগো অধিকারের লইগা আন্দোলন করতাছি। আমি তো জানতাছি আমি মারা যামু, তাগো ছাইড়া দিয়া লাভ কী? আমি তো দেখতাছি মারা যামু। গুলি, গ্যাসে-ম্যাসে, ডাইরেক (সরাসরি) গুলিও ছাড়তাছে (ছুড়ছে); কার্টুজ ছাড়তাছে। এমনে তো মারা যামুই, যুদ্ধ কইরা মরমু। একটা ইতিহাস হইয়া যাইব। তখন আমি ওইডার বিজয় পাইছি। অইদিনকালই দেশ স্বাধীন হইছে, আবার ঘোষণা হইছে। অইডা ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
থানার সামনে থাকেন, পুলিশদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
সালামত: কিছু স্যার আছে, আমারে অনেক আদর করে। আমারে জিগায়, খাইছোনি কিছু? টাকা দেয়, খাওয়ায়। তাদেরও কিছু কথা আমি শুনি। তারা যা পারে, আমার জন্য করে।
কথা শেষ না করতেই সালামত বললেন, ‘দাঁড়ান আপনেরে দেখাই’ বলে বালিশের নিচের ২টি তক্তা সরিয়ে একটি চকচকে ব্যাগ বের করেন। বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামে থাকি, আমি কিন্তু আপনেগো ভাই।’ ব্যাগ থেকে বের করেন একটি সাময়িকী ও অন্তত ৩০টি পত্রিকা। সাময়িকীটির পেছনের কভারে শুধু তাঁর একটি ছবিই শোভা পেয়েছে (৮ মার্চ ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের ছবিটি)। প্রতিটি পত্রিকা খুলে দেখান বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি। প্রত্যেকটি পত্রিকা খুলে নানা কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি দেখালেন। ছবিগুলো বের করতে খুব বেশি খুঁজতেও হয়নি। পত্রিকার অই ছবিগুলোর ছবি আমার মোবাইলেও তুলতে বললেন। আমিও সবগুলো তুললাম।
এবার বললেন, ‘এই যে ছবি তুললেন। আমি মইরা গেলে এইগুলা ইতিহাস হইব।’
আপনার ছবি, কথা নিউজে দিলে সমস্যা আছে?
সালামত: না না না, আপনে মিডিয়া হইয়া গ্যাছেনগা। আপনের যা খুশি, স্ট্যাটাস দিয়া দিয়েন। আরবারে (আবরার) স্ট্যাটাস দিছে, আরবারররে (আবরার) যে মারছে, ভুল করছে সম্পূর্ণ। তাঁরে যে মারছে, ছাত্রলীগের পোলাপাইনে, ভুল করছে। স্ট্যাটাস দিছে, কী অইছে? যদি সে অপরাধ করত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। কিন্তু তারা হাত দিয়া মারল ক্যা?
ভয় পাইয়া গ্যাছেগা অহনে। অহনে ভয় পাইয়া গেছে সব। দেখছেন? কাজটা কী করছে। যারা মারছে, তারা কিন্তু ছাড় পাইব না। ছাত্র তো। সাধারণ মানুষ হইতো। আমারেও তো কেউ মাইরা শান্তি পাইব না। অর গুষ্ঠিশুদ্ধা ধ্বংস।
ছাত্ররে তো মারা ঠিক না। সে দেশের প্রদীপ। একদিন এই আরবার (আবরার) বড় কিছু হইতে পারত। তার জন্য দেশের অনেক উন্নত হইত। এমপি হইত বা নেতা হইত, একটা বড় কিছুই হইত। তারে মাইরা দেশের ক্ষতি করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করল।
গল্প যেভাবে মেতে উঠেছে, কখন শেষ হবে ইয়ত্তা নেই। এদিকে আমাকেও ফিরতে হবে। তাই সালামতের সঙ্গে গল্প শেষ করতে হলো। বিদায়ের সময় আবার দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি হয়েছে।
ফেরার পথে হাঁটছি আর ভাবছি—সালামতকে যে লোকে ‘পাগল’ বলে তা কি সত্যি?
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪