নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পর বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার প্রস্তুতি ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেন ম্যাচ অফিশিয়ালরা। সাকিব আল হাসানদের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে বৃষ্টিরই জয় হলো। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের দুটি অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচও শেষ। প্রস্তুতি পর্বের বাকি আছে কেবল দুটি দলীয় অনুশীলন সেশন।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ ২৪ অক্টোবর বিশ্বকাপের মূল পর্বে প্রথম ম্যাচে খেলবে বাংলাদেশ। প্রথম রাউন্ড উতরে আসা একটি দল হবে সাকিব-লিটনদের প্রতিপক্ষ।

মূল পর্বে লড়ার আগে প্রস্তুতির দিকেও একটু চোখ ফেরানো যাক। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিরিজ এবং গা গরমের ম্যাচ—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি কেমন হলো? সাধারণ ক্রিকেট সমর্থক হলে সরল বাক্যে উত্তর এমনও হতে পারে, ‘খুবই হতাশাজনক’। ক্রিকেট ব্যাকরণ যিনি বোঝেন, বিশ্লেষণধর্মী উত্তর দিলেও শেষ বাক্যটা আমজনতার উত্তরের মতোই হতে পারে।

নামিবিয়া, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডরা দারুণই খেলে চলছে। নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ড তো ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্রথম পর্বে অঘটনও ঘটিয়েছে। এই দলগুলো হয়তো নিজেদের কাছাকাছি কন্ডিশনে খেলছে; কিন্তু আফগানিস্তান...! প্রস্তুতি ম্যাচে এই দলের কাছে ৬২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আফগান ক্রিকেটের ইতিহাস ও প্রস্তুতি নেওয়ার পরিবেশ কী, তা সবারই জানা। ১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৭ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত টেনেটুনে সংগ্রহ ৯৮ রান!

অধিনায়ক সাকিব ২ উইকেট নিলেও ৪ ওভারে দেন ৪৬ রান। মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। ব্যাট হাতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত সর্বোচ্চ ৩৩ বলে ২৯ রান করেন। ওপেন করা মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ১৬ রান। নুরুল হাসান সোহান ১৩ রান এবং ১২ রান এসেছে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে। সৌম্য সরকার, সাকিব ও আফিফ হোসেন দুই অঙ্কের ঘরেও পৌঁছাতে পারেননি।

বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের চূড়ান্ত প্রস্তুতির মঞ্চ ছিল পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ। কাগজে-কলমে প্রস্তুতির মঞ্চ হলেও টিম ম্যানেজমেন্টের বক্তব্যে সিরিজটি বেশ গুরুত্ব পায়নি! দল নাস্তানাবুদ হওয়ার পর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছেন, ‘দল খুব একটা খারাপ খেলেনি। এখনো আসল প্রস্তুতি বাকি আছে। আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে।’

ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ২১ রান ও ৭ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে আরেকটু শোচনীয়—৪৮ রান ও ৮ উইকেটের পরাজয়।

সিরিজে বোলারদের সেরা ১০-এ ছিলেন শুধু হাসান মাহমুদ। ৩ ম্যাচে ১২ ওভারে ৭.৯১ ইকোনমি রেটে ৪ উইকেট শিকার এই পেসারের। তাসকিন আহমেদ ১২ ওভারে ৭.৫৮ ইকোনমি রেটে নেন ২ উইকেট। ১১.৫ ওভারে ৯.২৯ ইকোনমি রেটে শরিফুল ইসলামের শিকার ২ উইকেট। বাদ পড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৭.৫ ওভারে ১১.৪৮ ইকোনমি রেটে নেন ৩ উইকেট। এক ম্যাচে ৪ ওভারে ১০ ইকোনমি রেটে ২ উইকেট নেন এবাদত হোসেন। স্পিনাররা চোখেই পড়েননি। 

তবে প্রস্তুতি ম্যাচ ও ত্রিদেশীয় সিরিজে হাসান-তাসকিন কিছুটা আশা দেখিয়েছেন। ব্যাটিংয়ে সাকিব-লিটন ছাড়া বাকিদের প্রস্তুতি ছিল রঙ্গরসিকতা। সাকিব ৫১.৩৩ গড়ে করেছেন ১৫৪ রান। লিটন করেছেন ১৪২ রান। এ ছাড়া ৪ ইনিংসে আফিফ ৬৪ ও ইয়াসির আলী ৫৬, শান্ত ৩ ইনিংসে ৫৬ এবং ২ ইনিংসে সৌম্য করেছেন ২৭ রান।

এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের ‘মেক শিফট ওপেনার’ নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তা-ও ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বকাপে অবশ্য সাকিবদের সেই পথে না হাঁটার সম্ভাবনাই বেশি।