আজ মালালা দিবস

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ০৮: ২৩
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৩, ০৯: ৪৭

চলছে রসায়নের জটিল ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ক্লাস। পাঠদানের মাঝপথে ছন্দপতন ঘটালেন অন্য একজন শিক্ষক। তিনি শিক্ষার্থীদের এমন একটি তথ্য দিলেন, যা রসায়নের গাম্ভীর্য ভেদ করে করতালিতে মুখরিত করে তুলল পুরো শ্রেণিকক্ষ। সেখানে সেদিন আনন্দ আর গর্বের ঢেউ উঠেছিল ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীর অনন্য এক অর্জনের খবরে। খবরটা কী, তা বলার আগে বলি, এর ঠিক তিন বছর আগে মেয়েটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া এক ভয়ংকর দুর্ঘটনার কথা।

মাথায় গুলির আঘাত নিয়ে মেয়েটি ভর্তি হয়েছিল হাসপাতালে। বেঁচে থাকলে হাঁটতে, পড়তে কিংবা কথা বলতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সংশয় ছিল চিকিৎসকদের। সেখান থেকে বেঁচে ফিরে সেই কিশোরীর ঝুলিতে উঠে এসেছিল নোবেল পুরস্কার! শান্তিতে নোবেল পাওয়ার খবর মেয়েটি এভাবেই এক রসায়ন ক্লাস চলাকালে জানতে পেয়েছিল। বলছি সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের কথা।

শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালার গল্প বলতে হলে চলে আসে পাকিস্তানি তালেবানের কথা। তাদের নিপীড়ন ও অত্যাচারের এক ভয়াবহ থাবা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল মালালার জীবন। সেখান থেকে বেঁচে ফিরে লড়ে চলেছেন নারী শিক্ষার জন্য। মালালা ইউসুফজাই ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মিনগোরায় জন্মান জিয়াউদ্দিন ও তুর পেকাই ইউসুফজাইয়ের ঘরে।

চিরকাল শিক্ষার দিক থেকে পাকিস্তানের বাকি অংশের তুলনায় এগিয়ে ছিল দেশটির পশতু জাতি-অধ্যুষিত সোয়াত উপত্যকা। ২০০৭ সালে পাকিস্তানি তালেবানের একটি শাখা দেশটির উত্তর-পশ্চিমের সোয়াত উপত্যকা দখল করে মাওলানা ফজলুল্লাহর নেতৃত্বে। তাঁরা সেখানে টেলিভিশন দেখা, গান-বাজনা ইত্যাদি বন্ধ ঘোষণা করেন। ২০০৮ সালে নিষিদ্ধ করেন মেয়েদের লেখাপড়া। বোমা মেরে একই সঙ্গে ধ্বংস করে দেওয়া হয় প্রায় ১৫০টি স্কুল। এমন পরিস্থিতি সেখানকার মেয়েদের শিক্ষার ওপরে কী প্রভাব ফেলছে, তা জানাতে উদ্যোগ নেয় বিবিসির উর্দু ওয়েবসাইট।

এই উদ্যোগ থেকেই ডায়েরি লিখত কিশোরী মালালা। ‘গুল মাকাই’ নামের আড়ালে মালালা সেখানে লিখতেন তাঁর স্কুলের গল্প। খুব সহজ ভাষায় লেখা এক কিশোরীর সেই লেখনীতে ফুটে ওঠে তালেবানদের চাপিয়ে দেওয়া অশিক্ষা আর অবহেলার বোঝার ভাঁড়। তিনি আর স্কুলে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কার কথা বারবার ফুটে উঠেছে সেই লেখায়। প্রতি রাতে গোলাগুলির শব্দে ঘুমাতে না পারা স্বপ্নময়ী মালালার দুঃস্বপ্ন ফুটে ওঠে সেই সময়ের তাঁর লেখাগুলোয়। একসময় বিবিসির ইংরেজি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় লেখাগুলো। ক্রমেই তা জায়গা করে নেয় সংবাদমাধ্যমে। ২০০৯ সালে মালালা ও তাঁর বাবাকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করে নিউইয়র্ক টাইমস।

২০১১ সালে সোয়াত উপত্যকা থেকে তালেবানকে পিছু হটতে বাধ্য করেন পাকিস্তানি সেনারা। মালালা স্বাভাবিকভাবেই ফিরে পান তাঁর স্কুল। প্রকাশ্যে তালেবানের বিরুদ্ধে কথা না বললেও নারী শিক্ষার প্রচার নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। একটা সময় গুল মাকাই আত্মপ্রকাশ করে মালালা হিসেবে। সাক্ষাৎকার দিতে থাকেন পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। একদিকে পাকিস্তানের বাইরেও আলোড়ন সৃষ্টি করে মালালার লেখা ডায়েরির কথাগুলো। অন্যদিকে দানা বাঁধতে থাকে বিপদ। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর স্কুল থেকে ফেরার পথে স্কুলের গাড়িতে থাকা অবস্থায় হামলার শিকার হন কিশোরী মালালা ও তাঁর দুই বান্ধবী।

উন্নত চিকিৎসার জন্য মালালাকে পাঠানো হয় যুক্তরাজ্যে। চিকিৎসায় একটা সময় সেরেও ওঠেন মালালা। সুস্থ হয়ে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের এজবাস্টন হাইস্কুল ফর গার্লসে লেখাপড়া শুরু করেন। যে হাইস্কুলের শ্রেণিকক্ষে বসেই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরটা পান মালালা ইউসুফজাই। ২০১৩ সালে তিনি লিখেছেন, ‘আই অ্যাম মালালা: হাউ ওয়ান গার্ল স্টুড আপ ফর এডুকেশন অ্যান্ড চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইটি।

পাকিস্তানের প্রথম ‘জাতীয় যুব শান্তি পুরস্কার’ পান মালালা। এরপর বিভিন্ন জায়গায় নারী শিক্ষা ও অধিকার নিয়ে কথা বলে গেছেন। তাঁর নামে জাতীয় যুব শান্তি পুরস্কারের নামকরণ করা হয় ‘জাতীয় মালালা শান্তি পুরস্কার’। ২০১৬ সালের দিকে মেয়েদের জীবনের গল্প শুনতে মালালা ছুটে গেছেন উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। ২০১৭ সালে শিশুদের জন্য মালালা লেখেন ‘মালালা’স ম্যাজিক পেনসিল’ নামে একটি বই। ২০১৮ সালে শরণার্থীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে মালালার ‘উই আর ডিসপ্লেসড’ নামের বইটি প্রকাশিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাঁর স্ত্রী থেকে শুরু করে মালালা নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের রানি এলিজাবেথের কাছ থেকেও। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। কানাডার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর হাত থেকে সম্মানসূচক নাগরিকত্বের সনদ গ্রহণ করেন মালালা। ভূষিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া থেকে দেওয়া সম্মানজনক লিবার্টি মেডেল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মানজনক শাখারভ মানবাধিকার পুরস্কারে। এমনকি বিখ্যাত টাইম সাময়িকীর করা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায়ও স্থান পেয়েছিলেন মালালা।

২০১৩ সালের ১২ জুলাই তাঁর ১৬তম জন্মদিনে ‘মালালা দিবস’ ঘোষণা করে জাতিসংঘ। নারী শিক্ষার উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ওই বছরই গঠন করা হয় মালালা ফান্ড। প্রায় এক লাখ সুবিধাবঞ্চিত মেয়েকে পড়াশোনায় সহায়তা করতে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মালালা ফান্ড ও অ্যাপল যৌথভাবে একটি দাতব্য সংস্থা গঠন করার ঘোষণা দেয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পলিটিকস, ফিলোসফি অ্যান্ড ইকোনমিকস’ বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করেছেন মালালা ইউসুফজাই। ভবিষ্যতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চাওয়া মালালার অনুপ্রেরণা দেশটির দুইবারের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টো।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত