হোম > সারা দেশ > খুলনা

সাতক্ষীরা সদর

নেতার ঘেরে আটকা নদীর খননকাজ

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 

আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০১: ১৪
সাতক্ষীরা সদরে বেতনা নদী দখল করে গড়ে তোলা ঘের। গতকাল কামারডাঙ্গা গ্রাম থেকে তোলা ছবি। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরা সদরে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেতনা নদীর সাড়ে ৪ কিলোমিটার অংশ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ওলামা লীগের এক নেতা নদী দখল করে মাছের ঘের করায় কামারডাঙ্গায় আটকে যায় ২৭০ মিটার অংশের খননকাজ। এর জেরে গত বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির পানি নদী দিয়ে সরতে না পারায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন চার উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ। স্রোতের তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে মাছের ঘের ও সবজিখেত ডুবে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় এলাকার চাষিদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জেলা ওলামা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাউফুজ্জামান ওরফে লাদেন কামারডাঙ্গা গ্রামের ছাগলাগেট এলাকায় নদী দখল করে মাছের ঘের করেছিলেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সেখানে তিনি নদী খননকাজ করতে দেননি। তবে গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঘের ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান রাউফুজ্জামান। কিন্তু ওই ঘেরের জায়গায় এখনো খননের উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা।

কামারডাঙ্গা গ্রামের মজিবর রহমান বলেন, ‘ঘেরপার্টিরা সব আওয়ামী লীগের লোক ছিল। তারা খুব হিংস্র ছিল। তাই তো তখন কেউ নদী কাটার সাহস পায়নি। সরকারি লোকদের সে বন্দুক উঁচিয়ে তাড়িয়ে দিত।’

ঘের নির্মাণ ও নদী খননে বাধা দেওয়ার ব্যাপারে জানতে রাউফুজ্জামানের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার বড় নদীগুলোর একটি বেতনা। সদর, তালা, কলারোয়া ও আশাশুনি উপজেলার অধিকাংশ এলাকার পানি প্রবাহিত হয় এ নদী দিয়ে। ঝিনাইদহের মহেশপুরে ভৈরব নদ থেকে এর উৎপত্তি। পরে ভারতে গিয়ে আবার যশোরের শার্শা হয়ে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে মরিচ্চাপ নদে মিশে গেছে বেতনা। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ১৯১ কিলোমিটার।

নদীপাড়ের বাসিন্দা আলিমুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের এ নদী-খাল কিছু প্রভাবশালী লোক দখল করে রেখেছিলেন। আমি এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে লাদেন নামের এক ব্যক্তি দখল করে রেখেছিলেন। আমরা ৬ মাস পানিতে ডুবে ছিলাম। ৫ আগস্টের পর এ এলাকা দখলমুক্ত হয়েছে। কিন্তু পাঁচ মাস পার হয়ে গেল, এখনো নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বছরের মধ্যে যদি নদী খনন না হয়, তবে আগামী বর্ষা মৌসুমে আমরা আবারও ডুবে যাব।’

আরেক বাসিন্দা আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পানি সরতে পারেনি, তাই বিনেরপোতায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যাওয়ায় আমরা ঘেরচাষিরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ঘের ভেসে গিয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড তাড়াতাড়ি নদী খনন করুক, না হলে আগামী বর্ষায় আবারও আমাদের ডুবতে হবে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে বেতনা নদীর সবটুকু কাজ শিডিউল অনুযায়ী শেষ করব। লাদেন নামের এক ব্যক্তি ২৭০ মিটার খনন করতে দেননি। ঘের করে দখল করে রেখেছিলেন। আমরা দখল করা জায়গা অপসারণ করেছি। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করব।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

অমর একুশে বইমেলা: স্টল বরাদ্দ নিয়ে বিভক্তি

পর্যটন মৌসুম শেষের পথে দেখা নেই বিশেষ ট্রেনের

নদীর জমি দখল, হচ্ছে বিক্রিও