বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের জাতীয় সত্তা আলাদা হতে পারে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশকে ভালোবাসি ও বাংলাদেশের জন্য কাজ করি। ক্ষুদ্র শব্দটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কারণ, আমরা জাতি গোষ্ঠী শব্দটা ব্যবহার করতে চাই এবং ব্যবহার করে বলতে চাই, সবার সমান অধিকার আছে।’
গতকাল শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সেলের আয়োজনে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে হাজং সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ জামিল এসব কথা বলেন। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) বনানী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নে আড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাজং সম্প্রদায়ের চরমাগা উদ্যাপন উপলক্ষে মহিষাসুর বধ পালা মঞ্চায়ন উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়।
ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘হাজং হিসেবে জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইতিহাসে জানি ১৯৪৬-১৯৪৯ সাল পর্যন্ত হাজংরা কমরেড মণিসিংহের নেতৃত্বে টঙ্ক আন্দোলনে শরিক হয়ে অনেকে শহীদ হয়েছেন। বড় একটা বিপ্লব ও দ্রোহের বীজ আমরা এখানে দেখেছিলাম। যেটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। আমরা সেই জাতি গোষ্ঠীর মাঝে এসে তাদের আবারও বলছি, আপনাদের ঐতিহ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমাদের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির ও বাংলাদেশে বহুত্ববাদী শহরের জন্য।’
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘এসব জনগোষ্ঠীর হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিকশিত করার লক্ষ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সেগুলো রক্ষার জন্য কাজ করছে শিল্পকলা একাডেমি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ এ প্রত্যন্ত গ্রামে মহিষাসুর বধ পালা মঞ্চায়ন করার আয়োজন করা হয়। সকলে মিলে দেশের মহিষাসুর ধ্বংস করে নতুন বাংলাদেশ যেন গড়তে পারি আমরা।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উপপরিচালক এস এম শামীম আকতার, দুর্গাপুর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক গীতিকার সুজন হাজং, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল, ডন বস্কো কলেজের পরিচালক ফাদার ফাদার পাওয়েল কোচিওলেক, কণ্ঠশিল্পী অনিমেষ হাজং, চিত্রশিল্পী রূপক হাজং, গাঁও মোড়ল হরিদাস হাজং প্রমুখ।
সন্ধ্যায় হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী চরমাগা উৎসব নিয়ে বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। শেষে বগাউড়া গ্রামের হাজং সাংস্কৃতিক দল ঐতিহাসিক ‘মহিষাসুর বধ’ ও ‘কালী যুদ্ধ’ পালা উপস্থাপন করে।