বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় সরকারি বরাদ্দের প্রায় ২ কোটি টাকা নিয়ে সোনালী ব্যাংকে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে গেছে। আজ রোববার ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কক্ষে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় উপজেলা প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলামকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
একপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে দণ্ড দেওয়ার প্রস্তুতি নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলা প্রকৌশলী মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাবুগঞ্জ উপজেলার একাধিক রাজনৈতিক নেতা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, জুন ক্লোজিংয়ের কারণে কাজ সম্পন্ন না হওয়া সরকারি প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ টাকা সোনালী ব্যাংকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর যৌথ হিসাব নম্বরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে আপত্তি তোলেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি তাঁর নাম যুক্ত করে তিনজনের নামে হিসাব খোলার দাবি তোলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান বিকেলে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে প্রকৌশলী শহীদুলকে ধরেন। একপর্যায়ে ইউএনও বাবুগঞ্জ থানা ও বিমানবন্দর থানা-পুলিশ ডেকে আনেন। হট্টগোলের মধ্যে সেখানে শত শত মানুষ জড়ো হয়।
সূত্র জানায়, আটকের ভয়ে একপর্যায়ে উপজেলা প্রকৌশলী শহীদুল স্বাক্ষর দিলে তাঁকে সন্ধ্যার পর মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাবুগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ নেতারা তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে চাইলে তাঁরা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রহমতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিলন মৃধা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে ঘটনাটি কেবল ভুল বোঝাবুঝি। জুন ক্লোজিংয়ের কারণে ঠিকাদারদের টাকা যেন বাদ না যায় এ জন্য ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা প্রকৌশলীকে ব্যাংকে গিয়ে ধরেন। তাঁদের কাছে মেসেজ ছিল যে উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারদের টাকা দিতে বাধা দিচ্ছেন। এ খবর পেয়ে ইউএনওর সঙ্গে আমরাও ব্যাংকে যাই। এই টাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চারটি ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার বাবদ ১০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) টেন্ডার হয়ে যাওয়া প্রায় ৬৭ লাখ টাকা রয়েছে।’
প্রকৌশলীকে কারাদণ্ড দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ইউএনওর ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল দেওয়ার কথা ছিল অনেকটা কথার কথা!’
বাবুগঞ্জ উপজেলার ইউএনও নুসরাত ফাতিমার কাছে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজকে জুন ক্লোজিং ছিল, তাই সোনালী ব্যাংকে অফিসের কাজে আমরা সবাই গিয়েছিলাম। সেখানে উপজেলা প্রকৌশলী শহীদুলকে আটক কিংবা দণ্ড দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওনার স্বাক্ষর আগেই নেওয়া হয়েছে। আমরা ব্যাংকের ম্যানেজারের কাছে গিয়েছিলাম কিছু ত্রুটি সংশোধনের জন্য।’
ইউএনও দাবি করে বলেন, ‘সরকারি তহবিলের ২ কোটি টাকার বিলে প্রকৌশলীকে জোর করে স্বাক্ষর করানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৌশলীর সঙ্গে আপনারা কথা বলেন।’
উপজেলা প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলামের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।