বরিশাল নগরের বাজার রোডে খাজা মইনুদ্দিন মাদ্রাসাঘেঁষা রংচটা ৪ তলা ভবন ‘ইয়াকুব আলী মঞ্জিলে’ সুনসান নীরবতা বিরাজ করছিল। বাড়ির মধ্যে তেমন কেউ নেই। কিন্তু এই বাণিজ্যিক এলাকার সব দোকানপাটে ‘রোজা’ নামটি সবার মুখে মুখে। গায়ক তাহসানের নববধূ এই রোজা আহমেদ। এখানেই বেড়ে উঠেছেন রোজা। বছর তিনেক আগে নিউইয়র্কে পাড়ি দেওয়ার আগে এই বাড়িতে অনলাইনে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতেন।
গত বছরও পৈতৃক ভবনে ঘুরে যাওয়া রোজাকে নিয়ে কারও তেমন উৎসাহ ছিল না এলাকায়। কিন্তু নীরবে চলা সেই রোজাকে নিয়ে বরিশালসহ দেশজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আলোচনার ঝড় বইছে। ’৯৬-এর যুবলীগ নেতা রোজার বাবা ফারুক আহমেদ ওরফে পানামা ফারুক ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বরিশালে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। স্থানীয় ও স্বজনেরা মনে করেন, বাবার সেই কালো অধ্যায় এবার হয়তো ঘুচে যাবে মেয়ের গুণে।
আজ শনিবার বিকেলে বাজার রোডে ইয়াকুব আলী মঞ্জিলের সামনে রোজার বাসায় গিয়ে স্বজনদের তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। রোজার এক চাচি দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে জানালেন, বাসায় কেউ নেই।
বাসার ঠিক বিপরীতে পান্না স্টোরসের মো. পান্নার সঙ্গে কথা হয়। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, রোজাকে দেখেছেন ছোট বয়সে এই এলাকায় বেড়ে উঠতে। তাঁর (রোজা) ছোট ভাই উৎস। লেখাপড়া করত বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এলাকায় চুপচাপ চলাফেরা করত। মাঝে মাঝে তাঁর দোকানে টাকা খুচরো করতে আসত। তবে তা ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকার নিচে নয়। এরপর শুনেছেন বাড়িতে অনলাইনে পারলারের ব্যবসা করতেন। কয়েক মাস আগে বাবার বাড়িতে এসে কয়েক দিন থেকে গেছেন রোজা। বেশ স্টাইলিস্ট এবং সুন্দরী হওয়ায় রোজা এলাকায় তেমন একটা মিশতেন না।
তিনি আরও জানান, রোজার মামারা থাকেন আমেরিকায়। সেই সূত্রে পুরো পরিবার বিদেশগামী হয়েছে। শনিবার সকালে দোকান খুলেই শোনেন রোজাকে নিয়ে মুখে মুখে আলোচনা।
রোজার চাচা মনা আহমেদ বলেন, ‘তাঁর ভাতিজি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেছে। এখন বয়স প্রায় ২৩ বছর। বরিশালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতেও ভর্তি হয়েছিল। ২০১৮ সালে পরিবারসহ মামার মাধ্যমে আমেরিকায় চলে যায়। রোজা এখানেও অনলাইনে ব্যবসা করত। আমেরিকায় তাহসানের পরিবারের সঙ্গে রোজার পরিচয়। সেই সূত্রে বিয়ে হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শুরুতে বরিশালে এসে দাদা-দাদির দোয়া নিয়েছে রোজা।
মনা আক্ষেপ করে বলেন, তাঁর ভাই পানামা ফারুক রাজনৈতিক কারণে শত্রুতাবশত ১৪ সালে মারা গেছেন। সেই ঘটনা নিয়েও মানুষ ফেসবুকে বাজে মন্তব্য করেছে। বিয়ে কি মানুষের হবে না?
কে এই পানামা ফারুক
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বরিশালে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন যুবলীগ নেতা ফারুক আহমেদ ওরফে পানামা ফারুক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ফারুকসহ অর্ধডজন সন্ত্রাসী বরিশালে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তাঁরা সাবেক এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সহযোগী ছিলেন। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আমলে এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। বাজার রোডে পানামা ট্রেডার্স নামক একটি রড-সিমেন্টের দোকান ছিল ফারুকের পরিবারের। সেই দোকানের নাম অনুসারে আলোচনায় পানামা ফারুক। তাহসানের নববধূ আলোচিত মেকআপ আর্টিস্ট রোজা আহমেদের বাবাই হলেন পানামা ফারুক।
নগরীতে আলোচনার ঝড়
বরিশাল নগরীতে এখন একটাই আলোচনা—‘রোজা’। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় এই আলোচনা ঘরে-বাইরে ছাপিয়ে ফেসবুকে ঝড় তুলেছে। স্কুলশিক্ষক মারুফ হোসাইন লাইভে এসে রোজাকে বরিশালের সন্তান হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘সবার জীবনেই কিছু ঘটনা থাকে। সেই ঘটনা সামনে আনা উচিত নয়।’
তাসনিম মোস্তফা নিম্মি লিখেছেন, ‘বিয়ের জন্য শুধু টাকা আর ভিউ দেখছে, চরিত্র দেখা ভুলে গেছে মানুষ।’ জবাবে শিমু সাহা নামের একজন লেখেন, ‘কিছু অতীত থাকলেও নতুন করে শুরু করলে দোষের কী!’
ইসমাইল হোসেন সৌরভ নামের একজন লিখেছেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর মেয়েকে বিয়ে করলেন তাহসান।’ জবাবে আরেকজন লেখেন, ‘বাবার অপরাধে মেয়েকে দোষী করতে চাই না।’