হোম > সারা দেশ > খুলনা

মুনাফার লোভ দেখিয়ে কোটি টাকা নিয়ে সপরিবারে উধাও

বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৩০
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৪
মঙ্গলবার রেনেসাঁ কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন ভুক্তভোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় লাভ দেওয়ার কথা বলে পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। লাখে প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা সুদ দেওয়ার কথা বলে কোনো কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে ৪-৫ লাখ টাকাও নিয়েছে সংগঠনটি। দুই যুগ ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসা রেনেসাঁর মালিক শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন।

প্রতিষ্ঠানের মালিক বাবা-ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকেরা। সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পেতে আইনগত সহায়তা চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা। তাঁরা মানববন্ধন, মিছিল ও সমাবেশও করেছেন।

জানা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের হালিশহর গ্রামের আনন্দমোহন বিশ্বাস ২৪ বছর আগে স্থানীয় কৃষকদের ঋণ দেওয়ার কথা বলে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি নিজ গ্রাম ও পাশের উপজেলা চিতলমারীর কৃষকদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকায় মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে টাকা সংগ্রহ করতেন। কিছুদিন পর নিজেকে নির্বাহী পরিচালক এবং ছেলে প্রবীর বিশ্বাসকে পরিচালক করে প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী এনজিওর মতো স্থানীয়দের কাছ থেকে সঞ্চয় আদায় করতে থাকেন।

চিতলমারী উপজেলার দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি অফিস এবং বিনিয়োগ সংগ্রহের জন্য বেতনভুক্ত মাঠকর্মী নিয়োগ করেন আনন্দমোহন বিশ্বাস। মাঠকর্মীরাও নানা প্রলোভন দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক গ্রাহক ও সঞ্চয় সংগ্রহ করতে থাকেন। অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটি শুধু সার ও কীটনাশক বিক্রি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিল।

১০ মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের অফিসে তালা ঝুলিয়ে বাবা-ছেলে ও মাঠকর্মীরা পালিয়ে যান। হালিশহর গ্রামের বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না রেনেসাঁর মালিকদের। কষ্টের টাকা হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। আনন্দমোহন বিশ্বাস ও তাঁর ছেলে প্রবীর বিশ্বাস তারককে আটক করে প্রতারণার শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি টাকা ফেরত চান গ্রাহকেরা।

চিতলমারী উপজেলার খড়মখালী এলাকার বাসিন্দা উত্তম হালদার বলেন, ‘২০২১ সালে রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজে প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা লাভের শর্তে ১ লাখ টাকা এককালীন জমা রেখেছিলাম। ১৪ মাস লাভের টাকা দিয়েছে। দুই বছর ধরে কোনো টাকা দেয়নি। তাঁদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকায় যে অফিস ছিল, তাও বন্ধ।’

সাবোখালী গ্রামের মলিনা বাড়ৈ নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘দুই ধাপে সাড়ে তিন লাখ টাকা রেখেছিলাম, এখন লাভও দেয় না, মূল টাকাও পাই না।’ মুদিব্যবসায়ী বিকাশ বালা বলেন, ‘আনন্দমোহন বিশ্বাসের বাবা বিজয় বিশ্বাস এই অঞ্চলের একজন সনাতনধর্মীয় গুরু ছিলেন। তাঁর অসংখ্য ভক্ত রয়েছে। বিজয় বিশ্বাসের ছেলে হওয়ায় সরলবিশ্বাসে প্রতি লাখে মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা লাভের শর্তে ১০ লাখ টাকা এককালীন রেখেছিলাম। আমাকে আর্থিকভাবে শেষ করে দিয়েছেন তাঁরা। আমি এই প্রতারকদের শাস্তি চাই।’

রেনেসাঁ এন্টারপ্রাইজের মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করা সুশাংসু শেখর সদাই ও প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছি। মালিকপক্ষ গা ঢাকা দিয়েছে। গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দেওয়ায় আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।’

এ বিষয়ে কথা বলতে আনন্দমোহন বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি তা ধরেননি। তাঁর ছেলে প্রবীর বিশ্বাসের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি হালিশহর এলাকায় আনন্দমোহন বিশ্বাসের বাড়িতে গেলেও তাঁদের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।

চিতলমারীর ইউএনও তাপস পাল বলেন, ‘রেনেসাঁ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

ইবিতে শহীদ জিয়া স্মৃতি সংগ্রহশালা স্থাপনে কমিটি গঠন

চুয়াডাঙ্গায় এক দিনে তাপমাত্রা কমল ৫ ডিগ্রি

বাগেরহাটে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে ৮ বাড়িতে আগুন, আহত ২৫

কোটচাঁদপুরে মেছো বাঘ মেরে ফেসবুকে ছবি দেওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা