‘জন্মের পর এমুন পানি কুনোসুম (কখনো) দেহি নাই। সময় যত যাইতাছে পানি তো বাড়তেই আছে। দুই পুলায় কান্দে (কাঁধে) কইরা পাতিলে বসাইয়া কাল মসজিদে নিয়া রাখছিল। না খাইয়া অইনেই রাত কাটাইছি। অহন সেনাবাহিনী আমগরে স্পিডবোটে নিয়া আইল। এইবার আটাশির চাইতেও ভয়াবহ বন্যা দেখলাম।’ আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের জহুরা বেগম (৭০)।
ঘরের বিছানার ওপর পানি ওঠায় বাড়িঘর ছেড়ে ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিসহ মসজিদে রাত কাটিয়েছেন জহুরা। শুধু জহুরাই নয়, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
আজ শনিবার সকাল থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়ছে, আবার কোথাও পানি কমতে শুরু করেছে। বেশ কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবং পানির তোড়ে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় নালিতাবাড়ীর সঙ্গে শেরপুরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ৷ পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় পৌর শহর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার পোড়াগাঁও, নন্নী, বাঘবেড় ও নয়াবিল ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন সড়ক পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেঙে গেছে। ঢলের পানিতে উপজেলার অনেক কাঁচা রাস্তা ও বাড়িঘর ভেঙে গেছে। বেশ কিছু রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে আছে। ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বাঁধ ভেঙে ও উপচে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে এলাকার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
এদিকে উপজেলার সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এতে আজ সকাল থেকে সেনাবাহিনীর ৬০ জন সদস্য ছয়টি স্পিডবোটের মাধ্যমে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। এ ছাড়া বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধার ও ত্রাণকার্য পরিচালনায় সহায়তা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা বলেন, ‘উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বাঁধ ভেঙে ও পাড় উপচে ১২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে উদ্ধারকাজ ও শুকনো খাবার বিতরণ চলছে। বিভিন্ন স্থান থেকে খাদ্যসহায়তা পাচ্ছি। তবে আমাদের আরও শুকনা খাবার প্রয়োজন।’