ঠাকুরগাঁওয়ে মাদ্রাসাছাত্রী মাহফুজাকে হাত-পা বেঁধে বস্তাবন্দী করে নদীর তীরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত গুলজান আক্তারকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ভোর রাতে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার কবিরাজ হাট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার গুলজান মাহফুজা খাতুনের বাড়িতে এক সময় ভাড়া থাকতেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শহরের টাংগন নদী অববাহিকার জোড়া সেতুর নিচ থেকে মাহফুজা নামের এক মাদ্রাসাছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাহফুজা ঠাকুরগাঁও শহরের ডিসি বস্তি মহল্লার খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা কাওমী মহিলা মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগ নগর ইউনিয়নের বিজয়পুর গ্রামে।
পুলিশ বলছে, একই গ্রামের আমিরের ছেলে ইয়ামিন আলীর সঙ্গে মাহফুজা খাতুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সময় তারা পরিবারের অসম্মতিতে দুজন পালিয়ে বিয়ে করে। তবে এই বিয়ে মেনে নেয়নি ইয়ামিনের পরিবার। এ বছর জুনে মাহফুজাকে ঠাকুরগাঁও শহরের খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেচ্ছা কাওমী মহিলা মাদ্রাসার কিতাব বিভাগে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করে। গত ২১ জুলাই রাত ৩টার দিকে ঘরের বাইরে থেকে মাহফুজাকে কে বা কারা ডাক দেয়। ডাক শুনে সে ঘুম থেকে জেগে ঘরের জানালার কাছে গিয়ে দেখে কয়েকজন যুবক তার ছবি দেখাচ্ছে। এ সময় ছবিগুলো সে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁরা জোর করে তাকে মাদ্রাসার ছাত্রীনিবাসের টিনের বেড়া ভেঙে টেনে বের করে। এরপর সন্ত্রাসীরা তাৎক্ষণিকভাবে তার মুখে ওড়না পেঁচিয়ে ধরে এবং হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে মাদ্রাসার কাছে টাঙ্গন নদীর ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই এমাদুল হক বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও থানায় ইয়ামিনের বাবা আমিরুল, মা জমিলা বেগম নুপুর ও ভাড়াটে গুলজানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এই মামলায় আসামি গুলজানকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত গুলজান আক্তার ইয়ামিনের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া মাদ্রাসাছাত্রী মাহফুজার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে দেন। কৌশলে গুলজান আক্তার ইয়ামিন ও মাহফুজার শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করেন। পরে স্থানীয়রা ইয়ামিন ও মাহফুজাকে শারীরিক সম্পর্কের সময় হাতে নাতে ধরে ফেললে মাহফুজার পরিবার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। ছেলে ও মেয়ের বয়স কম হওয়ায় রেজিস্ট্রি করে বিয়ে দিতে না পেরে ইজাব কবুলের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে বিয়ে দেওয়া হয় তাদের। পরবর্তীতে গুলজানকে ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করা হয়। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইয়ামিন, গুলজানসহ মামলার অন্য আসামীরা বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের জন্য খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা মহিলা কওমী মাদ্রাসায় মাহফুজা অজু করতে গেলে কৌশলে তাঁকে ধরে নিয়ে আসে এবং প্রাণে মেরে ফেলার জন্য গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বস্তায় ঢুকিয়ে টাঙ্গন নদীর ব্রিজের ওপরে আসার পর কতিপয় মুসল্লি তাদের দেখে ফেললে বস্তাবন্দী অবস্থায় মাহফুজাকে রেখে তারা পালিয়ে যায়।