হোম > অর্থনীতি

৯ হাই-টেক পার্কে ভাড়া ও বিল বকেয়া ২৭ কোটি টাকার বেশি

অর্চি হক, ঢাকা 

আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ১৪
হাইটেক পার্কের মডেল

দেশের নয়টি হাই-টেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া ২৭ কোটি টাকার বেশি। টানা চার বছর ভাড়া দেয়নি এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল দেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সব বকেয়া আদায় হচ্ছে না।

জায়গা বরাদ্দ পাওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাবি, হাই-টেক পার্কে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, সেগুলো পাচ্ছে না।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও যারা বকেয়া পরিশোধ করছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইন মেনে মামলা করা হবে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাই-টেক পার্ক রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতকে রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন জেলায় হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করেছিল সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। এরই মধ্যে ১১টি পার্কে বিনিয়োগকারীদের জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কার্যক্রম একেবারে কম। ভাড়া, বিল বকেয়াসহ পার্কগুলোর ক্ষেত্রে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, নয়টি হাই-টেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ভাড়া ও ইউটিলিটি বিলের পরিমাণ ২৭ কোটি টাকার বেশি। গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ৪৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির কাছে ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ বকেয়া ১ কোটি ৮৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা। বাকি ৪০ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে টেকনোসিটি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৫ কোটি ২০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। সামিট টেকনোপলিশ লিমিটেডের বকেয়া ৪৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে হলেও এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডকে। এই পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির বকেয়া ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভাড়া বকেয়া ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বকেয়া উৎসব টেকনোলজি লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটি ৪৭ মাস ধরে ভাড়া এবং ৪৯ মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে না। জেএসআর আইটি ও আনিকা আইটি কর্নার নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের ৪৩ মাসের ভাড়া বকেয়া। জেসিআর আইটির মোট বকেয়া ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং আনিকা আইটির বকেয়া ১৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, ভাড়া তোলা এবং পার্ক পরিচালনার দায়িত্ব টেক সিটির। কারা বকেয়া পরিশোধ করছে না, কেন করছে না, এটা ওরা বলতে পারবে।

টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডের এজিএম মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ভাড়া আদায়ে প্রতিনিয়ত নোটিশ দিই। চার বছরের মতো যাদের বকেয়া আছে, তাদের সঙ্গে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধের সমঝোতা হয়েছে।

সিলেটের হাই-টেক পার্কে ১৩ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৮ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে র‍্যাংগ্‌স ইলেকট্রনিকসের কাছেই বকেয়া ৬ কোটি ২২ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

সিলেট হাই-টেক পার্কের উপসহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন জানান, স্পেস রেট নিয়ে জটিলতার কারণে র‍্যাংগ্‌স ইলেকট্রনিকসের সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ হচ্ছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান জায়গা বরাদ্দ পেলেও এখনো পার্কে কার্যক্রম শুরু করেনি। তাই তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ১৫ প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট বকেয়া ১ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভাড়া বকেয়া ১ কোটি ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ২৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪টির কাছে মোট বকেয়া ২ কোটি ৫২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। তবে পার্কের সহকারী পরিচালক শাহরিয়ার আল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া পরিশোধ শুরু করেছে। তবে সংস্কারকাজের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে জায়গা ছাড়তে বলা হয়েছে। ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান চলে গেছে। কিছু বকেয়া পরিশোধ হয়েছে। বর্তমানে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো পাওনা আছে। সর্বোচ্চ বকেয়া ভারগো কন্ট্রাক্ট সেন্টার সার্ভিসেসের কাছে, ৩৯ লাখ টাকা। মার্স সল্যুশনের কাছে পাওনা ৩৫ লাখ টাকা। তারা দু-এক দিনে কিছু টাকা পরিশোধের কথা জানিয়েছে।

রাজশাহী হাই-টেক পার্কে ৬ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৬৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা। রাজশাহীর আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে ৫ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ১১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

নাটোরের আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে ১০ প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বকেয়া ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৬৮ হাজার টাকা।

খুলনার আইটি অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, কুয়েটে ৭ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভাড়া বকেয়া ৪ লাখ ১ হাজার, সার্ভিস চার্জ ২ লাখ ১৫ হাজার, বিদ্যুৎ বিল ৩৫ হাজার ও পানির বিল বকেয়া ২ হাজার টাকা।

গত বছরের জুলাইয়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাড়া আদায়ে অসংগতিসহ নানা অনিয়মে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ক্ষতি হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকার বেশি।

আশানুরূপ বিনিয়োগ না এলেও বিগত সরকার আরও ১২ জেলায় হাই-টেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ওই সরকারের পতনের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার আইসিটি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে করা কমিটির পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই ১২টি পার্কের মধ্যে চারটির নির্মাণ বন্ধ করেছে।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম আমিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন হাই-টেক পার্কে যাঁরা ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া রেখেছেন, তাঁদের আমরা কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। এরপরও যাঁরা বকেয়া শোধ করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন মেনে মামলা করা হবে।’ তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এবং তা প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দ্বিতীয়বারের মতো ‘স্বপ্নজয়ী নারী সম্মাননা’ পাচ্ছেন দেশে-বিদেশে সফল ২০ নারী

ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবায় কর-শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি বেসিসের

মূল্যস্ফীতি ও জনদুর্ভোগ কমাতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি

রেডিমেড ব্লেজারে বাজার মাত